বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

চলন্ত অটোরিকশায় পেট্রোল বোমা: হামলার পেছনে বার্মা সাইফুলের অনুসারী

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম

নগরে চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ‘পেট্রোল বোমা’ নিক্ষেপের ঘটনায় স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলের অনুসারীরা জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার (২০ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে অটোরিকশা আরোহী দুজন নারী দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন, চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার শান্তিনগর সিটিপাড়া এলাকার কবির আহমদের মেয়ে লায়লা বেগম (৫০) এবং তার পুত্রবধূ একই উপজেলার জালালিহাট উজির আলী মাঝির বাড়ির বাদশা মিয়ার মেয়ে ঝরণা আক্তার (৩০)। 

আহত অবস্থায় দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় লায়লা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোববার দুপুরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। লায়লা বেগমের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। অপরদিকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর লায়লা বেগমের পুত্রবধূ ঝরণাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

ঘটনার পরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি ইউনিটের সদস্যরা আতুরার ডিপোর তিন রাস্তার মোড়ে চামড়া গুদাম এলাকায় যান। প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদারদের সাথে কথা বলে উক্ত ঘটনাটি নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত ৩৫ মামলার আসামি বার্মা সাইফুলের অনুসারীরা ঘটিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে ইউনিটটি।

ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনাটি নাশকতা নাকি পূর্বশত্রুতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে নগর পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদা বেগম এবং উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলামের মোবাইলে কল করা হলেও সাড়া দেননি তারা।

একই বিষয়ে রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ভিকটিমের বাড়িতে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। এটা কি দুর্ঘটনা, পূর্বশত্রুতা নাকি নাশকতা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’ 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অটোরিকশাটি (চট্ট মেট্রো জ- ১১-১১৪৯) আতুরার ডিপো অতিক্রম করার সময় মুখে কালো কাপড় বাঁধা অজ্ঞাত তিন দুর্বৃত্ত পেট্রোল বোমা মেরে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।  এ সময় দুই নারী যাত্রী দগ্ধ হন। আগুনে সিএনজি অটোরিকশার কভার ও বসার সিট পুড়ে গেছে। বিষয়টি নজরে আসার পর বায়েজিদ বোস্তামি থানার মোবাইল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো অপরাধীকে খুঁজে পায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয় অনুসন্ধানে হামলাকারীরা সন্ত্রাসী সাইফুল ওরফে বার্মা সাইফুলের অনুসারী হতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুল ও তার অনুসারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. জমির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাউজান পৌরসভা এলাকা থেকে আমার সিএনজিতে দুই শিশু ও তিন নারীসহ মোট ছয়জন আরোহী ওঠেন। তারা কক্সবাজারের পেকুয়া মালেক শাহ’র দরবার শরীফে যাচ্ছিলেন।  ভোর চারটার দিকে তাদের নিয়ে রওনা হই।’

‘রাস্তার উপরে তিনজন মুখোশ পরা ব্যক্তি হঠাৎ পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। একটি বোতল সিএনজির পেছনে লাগলে আগুন ধরে যায়। যাত্রীদের চিৎকার শুনে আমি গাড়িটি থামিয়ে পানি ঢেলে আগুন নিভাই। এতে দুই নারী দগ্ধ হন এবং আমার সিএনজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়’।

লায়লা বেগমের স্বামী আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্ত্রীর শরীর পুড়ে গেছে আর ছেলের বউয়ের হাতের আংগুল পুড়ে গেছে।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘দগ্ধ দুজনকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়।’ বার্ন ইউনিটের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. খালেদ বলেন, ‘লায়লা বেগমকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, তার অবস্থা গুরুতর।’

নগর পুলিশ জানায়, বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও খুলশী থানা এলাকায় বার্মা সাইফুল যেন আতঙ্কের নাম। জায়গা দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণ থেকে মানুষ খুন যেন তার বাঁ হাতের খেল। সাইফুল ছাড়াও তার অন্য দুই ভাই সবুজ ও ফাহিমের আলাদা বাহিনী রয়েছে।

উক্ত তিন ভাই বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন বার্মা কলোনির নুরুল আমিনের ছেলে। সবুজ পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং তার ভাই সাইফুল নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক। বার্মা সাইফুল ও তার ভাই বার্মা সবুজ বায়েজিদ থানার বার্মা কলোনি, হিলভিউ, মোহাম্মদ নগর, আমিন জুট মিলস, আলীনগর, পাঁচলাইশ থানাধীন ফরেস্ট, রংপুর কলোনি ও হামজারবাগ এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত।

বার্মা সাইফুল ২০২১ সালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন। সাইফুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ৩৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত