গত ৩৩ বছরে দেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনসংক্রান্ত রেকর্ড (নথি) প্রকাশে ব্যর্থতা প্রশ্নে রুল দিয়েছে উচ্চ আদালত। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল দেয়। রুলে ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন (দন্ড স্থগিত বা মওকুফ, হ্রাস) সংক্রান্ত নথি প্রকাশে ব্যর্থতা কেন বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলেছে আদালত।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যেকোনো দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যেকোনো দন্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। গত ৩৩ বছরে দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রপতিরা কতজনের দন্ড মাফ করেছেন, তা জানতে গত বছর ২৫ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের (রিট মামলার বিবাদী) উদ্দেশে আইনি নোটিস পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর ফারুক। এতে ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি কতজন আসামির দন্ড স্থগিত বা মওকুফ করেছেন, এর তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার অনুরোধ জানান আইনজীবী। নোটিসের জবাব না পেয়ে গত মাসে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এ আইনজীবী। আদালতে আবেদনের পক্ষে তিনি নিজে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার।
ব্যারিস্টার ওমর ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ৩৩ বছরে যারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন তাদের প্রায় সবাই দাগি আসামি, খুনি ও ধর্ষণকারী। রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের ক্ষমা করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা হয়, কিন্তু এর কিছু উপাদান থাকে। যেমন দাগি আসামি, খুনি ও ধর্ষকদের ক্ষমা হয় না। আর ক্ষমা করতে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রয়োজন যেটি আমাদের দেশে নেই।’ তিনি বলেন, ‘শুনানিতে বলেছি, এটা (ক্ষমা) অবারিত হতে পারে না। আদালত এ বিষয়ে রুল দিয়েছেন।’ আইনজীবী বলেন, জনগণের অভিগম্যতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রপতি যেসব মামলায় ক্ষমা প্রদর্শন করে দন্ড মওকুফ বা কমিয়েছেন, সব মামলার তালিকা সংবলিত একটি তথ্যভা-ার (ডেটাবেজ) প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির কোনো অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সুপারিশের জন্য বিচারক, ফৌজদারি আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন কেন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।