ভোগান্তির শেষ নেই পাবনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। দালাল ও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে হয়রানি ও জিম্মি করে গ্রাহকদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে পাবনা পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায় দুদক পাবনার তদন্ত দল।
অভিযানে প্রথমিকভাবে গ্রাহক হয়রানি ও অফিস কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিকাশে টাকা নিয়ে কাজ করার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা সিরাজগঞ্জ দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সুত্রধর।
তিনি জানান, বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অফিসের কম্পিউটার অপারেটর আমিনুলের বিরুদ্ধে বিকাশে টাকা নিয়ে পাসপোর্ট করে দেবার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এছাড়া আমরা লক্ষ্য করেছি, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালদের মাধ্যমে আসা আবেদনগুলোতে একটি বিশেষ চিহ্ন বা সিল রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই সাইন থাকলে সেই ফাইলটি সাথে সাথে অনুমোদন পায়। এই সাইনের বিষয়ে অফিসের সহকারী পরিচালকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের শুরুতেই আমরা বিভিন্ন সেবা প্রত্যাশীর সাথে কথা বলেছি। তারাও নানা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন এবং বেশকিছু অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে। আমরা গত সাত দিনের সকল আবেদন যাচাই করে একটি প্রতিবেদন দুদক প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করবো এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযান চলাকালে পাসপোর্ট অফিসের নানা অনিয়ম ও ভোগান্তির বিষয়ে জানতে কথা হয় উপস্থিত কয়েকজন আবেদনকারীর সাথে।
ভুক্তভোগী শাহিন জানান, দালাল ধরা ছাড়া কোনো কাজ হয় না পাসপোর্ট অফিসে। দালাল ছাড়া আসলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। দালাল ধরলেই সব সহজ। এ দালাল চক্রের সাথে এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত। কম্পিউটার অপারেটর আমিনুল আমার একটি পাসপোর্ট করার জন্য বিকাশে ২ হাজার ৪০০ টাকা নিয়েছে। টাকা দেবার আগে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে। বিকাশ লেনদেনের তথ্য আমি দুদককে দিয়েছি।
ঈশ্বরদী থেকে আসা তৌশিক বলেন, সেই ঈশ্বরদী থেকে এসে বারবার ঘুরতে হচ্ছে। এর আগে সকাল ১১টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত বসে থেকেও সংশোধনের কাজ হয়নি। অথচ ২টার পর কয়েকজন এসে কাজ করে নিয়ে চলে গেল। কারণ তারা দালাল ধরেছে। আমি দালাল ধরিনি বলে একটার পর একটা সমস্যা দেখিয়ে ঘুরিয়েছে। এখন আপনাদের (দুদক ও সাংবাদিক) দেখে কাজ করে দিল।
সদর উপজেলার হাজিরহাট এলাকার গাফফার হোসেন, ছবি ওঠার পর আমাকে ১৪ দিন ধরে বিভিন্নভাবে ঘুরাচ্ছে। একেকদিন একেক সমস্যা দেখিয়ে ঘুরানো হয়। এটি সর্বোচ্চ ৩ দিনের কাজ। অথচ আমাকে এতোদিন ঘুরানো হয়েছে। কারণ আমি দালাল ধরিনি। যারা ধরেছে তাদের এতো ঘুরতে হয়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আহসান উদ্দিন বলেন, এখানে কোনো দালাল চক্র নেই। সব নিয়মিত পরিচালনা হয়ে থাকে। দুদক অভিযান করছেন। আমরা আইনগত ভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করব।