বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হাসিনার সঙ্গে আসামি বিএনপি নেতাও

  • মিথ্যা মাদক মামলায় জামিন পেলেও মুক্তি মেলে না কারাগার থেকে
  • জেলহাজতে থেকেও ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালানোর অভিযোগ
  • পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে : আইনজীবী
  • ১৬ বছরে অর্ধশতাধিক মামলা, নতুন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মামলা, এ মামলা যেন পিছুই ছাড়ছে না: ভুক্তভোগী পরিবার 
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫০ এএম

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের দারুস সালাম থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব শান্তনুর হোসেন রুবেল (৩৩)। গত ১৬ বছর রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন প্রতিহিংসায় প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা ছিল তার নামে। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোতে জামিন হলেও এখন নতুন করে রুবেলকে গ্রেপ্তার দেখাতে দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন মামলা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর নামে মামলায় রুবেলকে পুনঃগ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করেছেন পুলিশের এক এসআই। এর আগে রাজনৈতিক মামলাগুলোতে জামিন পান রুবেল। সবশেষ গত বছর ৭ জুলাই মাদক দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো মামলাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। রুবেল সেখানেও জামিন পান। কিন্তু তাকে ফের গ্রেপ্তার দেখাতে নতুন করে ছক তৈরি করছে পুলিশ।

রুবেলের আইনজীবী বলেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসাতে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। জামিনে মুক্তি পেলেও ফের হচ্ছে আরেক মামলা। এখানে পুলিশের পেছনে অন্য কোনো চক্র কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপির এ নেতাকে পুনঃগ্রেপ্তার দেখাতে গত ১৩ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন মিরপুর মডেল থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘২০২৪ সালের ৭ জুলাই মাদক মামলায় রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আটক আছে। তাকে পুনঃগ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হচ্ছে। গত ২০ জুলাই দুপুরে মিরপুর-১০ এলাকায় মো. কবির ও তার শ্যালক সিরাজ নামে দুজন ভ্যানগাড়িতে কাপড় বিক্রয় করছিলেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা রাইফেল, বন্দুক, পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সাধারণ ছাত্রদের ওপর গুলি করলে কবির ও সিরাজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেট লাগে ও মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কবির ও সিরাজকে ওই সময়ই মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনায় কবির বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক কাদেরসহ ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।’ এ মামলায় রুবেলকে পুনঃগ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করেছেন বলে উল্লেখ করেন এসআই মামুন।

আবেদনে এসআই মামুন আরও উল্লেখ করেন, প্রাথমিক তদন্তে উল্লিখিত আসামির এ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আসামিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা বেপরোয়াভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আক্রমণ করে ও তাদের নির্বিচার এলোপাতাড়ি গুলিতে মামলার বাদী কবির আহত হন এবং আসামিদের রাইফেল, বন্দুক ও পিস্তলের গুলিতে বাদীর শ্যালক সিরাজ বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আসামির (রুবেল) যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে। তাই আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, যে লোকটি কারাগারে ছিলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই লোক কীভাবে এ হামলায় জড়িত হন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় পুনঃগ্রেপ্তার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদালত এর পক্ষে-বিপক্ষে রায় দেবেন। কেউ উপস্থিত থেকে হামলা করেন আবার কেউ কারাগারে থেকেও হামলার পরিকল্পনা করেন। এখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে আবেদন করতেই পারি। বিষয়টি আদালত দেখবেন।’

এদিকে ভুক্তভোগী রুবেলের মা মায়াজান বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৬ বছর রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলার কারণে ঘরে আসতে পারে নাই। জেলহাজতের ভয়ে সবসময় দূরে রেখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আমার ছেলের মুক্তি হয় না। একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে আমার ছেলের বিরুদ্ধে। জালিম বিদায় হবে আমার বুকের মানিক ফিরে আসবে এই ছিল আশা। কিন্তু তাও আমার ছেলেকে আমার কাছে আসতে দিচ্ছে না। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। তাকে আর মিথ্যা মামলা দিয়েন না।’

রুবেলের আইনজীবী খলিলুর রহমান খলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে রুবেলকে বারবার ফাঁসানো হচ্ছে। মিথ্যা মাদক মামলা থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি হওয়ার আগে পুনঃগ্রেপ্তারে আরেক মামলা যুক্ত করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত