জুলাই গণহত্যা, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদি সমাবেশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ঐকমত্য পোষণ করেন।
সমাবেশ থেকে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো ১. আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাহী আদেশ, আদালতের রায় ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ২. শাপলা চত্বরের ঘটনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ৩. পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। ৪. দেশের সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচারের বিষয়ে স্পষ্ট ধারা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, এ দাবিতে আগামী ১০০ দিন দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ চালানো হবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ‘মার্চ ফর বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ থেকে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে।
সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো এক আহত যোদ্ধা বলেন, আমি চোখহারা জুলাইযোদ্ধা হয়ে বলতে চাই, এই দেশে আওয়ামী লীগের কোনো পুনর্বাসন হতে পারে না। যারা তাদের পুনর্বাসন করতে চায় তাদের এ দেশে জায়গা হবে না। যারা দিল্লি বা পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে দেশ চালাতে চায় তারা যেন ভারত বা পাকিস্তানে চলে যায়। আমরা বাংলাদেশপন্থিরা নতুন দেশ গঠন করব। এ সময় তিনি জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা এবি জোবায়ের বলেন, আমাদের জুলাই শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। আমরা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে লড়াই করে যাব। আমরা দেখছি, কেউ কেউ টাকার পাহাড় গড়ছে। কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছে। আমরা আজকে শপথ নেব, তারা যাই করুক না কেন, আমরা আমাদের লড়াই থেকে সরে যাব না। আমরা জুলাই নিয়ে ভাঁওতাভাজি করতে দেব না। কাউকে জুলাই বিক্রি করতে দেব না।
শহীদ সায়েমের মা বলেন, আমার ছেলের কী দোষ ছিল যে ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? আমি শহীদের মা হয়ে বলতে চাই, এ দেশে যেন আওয়ামী লীগ আর থাকতে না পারে। এই হত্যাকারীদের যেন ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়।
শহীদি সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ উসমান বিন হাদী, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন পুসাবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জাকারিয়া, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আবদুল ওয়াহেদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি সেখ মাহবুবুর রহমান, শহীদ সজলের মা-সহ জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।