চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদকে মহাসচিব করে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নতুন এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘৩২ বছর আমি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনো সরকারের সহযোগিতা পাইনি। আমার এই আন্দোলনকে সফল করতে পারিনি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া আন্দোলন সফল করা সম্ভব না। এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ দেশের জন্য কাজ করতে চাই। ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবেন।’
এ সময় নতুন দলের লিখিত ইশতেহার পাঠ করেন দলের মহাসচিব শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা উদার গণতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী মধ্যপন্থি একটি দল। মধ্যপন্থা মানে এই নয় যে সব মতের মধ্যে একটি আপসমূলক অবস্থান। বরং পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার-১৪৩ আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী মধ্যপন্থিরা হচ্ছে ঈমানে বলিয়ান, মানবীয় মর্যাদা ও সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভারসাম্যপূর্ণ এক সম্প্রদায় যারা ভালো কাজের কথা বলবে, মন্দকে নিরুৎসাহিত করবে; জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।’ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদে আমরা দৃঢ়সংকল্প। ন্যায্যতা, সমতা, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’
শওকত মাহমুদ বলেন, শুধু নির্বাচন সর্বস্ব গণতন্ত্রকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। জীবনযাপনের প্রতিটি স্তরে ও ক্ষেত্রে প্রতিদিন আমরা গণতন্ত্রের চর্চা চাই। অপরাজনীতিকে জিইয়ে রেখে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশের সর্ব পর্যায়ে সংস্কার আবশ্যক। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের হাতে সংস্কারের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া মানে আত্মহনন এবং জনগণকে আশাহত করা। সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্রীয় বন্দোবস্ত সাব্যস্ত করা জরুরি। সব সংস্কার প্রস্তাবের নির্মোহ মূল্যায়ন আবশ্যক। সব ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তপরায়ণতা রুখতে বড় ধরনের নৈতিক জাগরণ প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, হাজারো শহীদের রক্তে গড়া ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট রয়েছে এসবের বাস্তবায়নে ছাত্রদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরা ও জনতার সংকল্পও এই সরকারের অন্যতম ভিত্তি।
নতুন দলের বিভিন্ন পদে আছেন যারা : নতুন এ দলের আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন দলটির চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এর মধ্যে নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র পদে গোলাম সরওয়ার মিলন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রফিকুল হক হাফিজ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ, এম এ ইউসুফ, নির্মল চক্রবর্তী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে এম আসাদুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব পদে অ্যাডভোকেট রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আলামিন রাজু ও নাজমুল আহসানের নাম ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান।
এ ছাড়া নতুন দলটিতে সমন্বয়কারী পদে নুরুল কাদের সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মুরাদ আহমেদ, সদস্য পদে মেজর (অব.) ইমরান, কর্নেল (অব.) সাব্বির, প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন, প্রচার সম্পাদক পদে হাসিবুর রেজা কল্লোল, উপদেষ্টা পদে শাহ্ মো. আবু জাফর, মেজর (অব.) মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ডা. ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিক, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী ও মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।