শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বিপিএম-পিপিএম পদক

৬২ জনকে চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি 

  • অবশেষে পদক থেকে বাদ পড়লেন ওসি ডাবলু 
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

নানা সমালোনার পর অবশেষে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলুকে বাদ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোট ৬২ জনকে পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদকের জন‍্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে। ডাবলুর স্থানে র‍্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবুল কালাম আজাদকে মনোনীত করা হয়। 

পুলিশ সপ্তাহ-২৫ সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। ২৯ এপ্রিল রাজাররাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে হবে পুলিশের সর্ববৃহৎ এ অনুষ্ঠান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।

ওইদিন বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক পরিয়ে দেবেন তিনি। তবে পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক নিয়ে আগের মতোই জোরালো তদবির হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পদক পেতে অতিরিক্ত আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবলরা ইউনিট প্রধানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের কাছে তদবির করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও পুলিশ পদক পেতে নানা মহল থেকে তদবির এসেছে। বিশেষ করে একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও এসআইয়ের তদবির ছিল বেশি। এই নিয়ে আইজিপি ছিলেন অনেকটা ত্যক্ত-বিরক্ত। এবার তিনি চেয়েছিলেন তদবির যারা করবেন তাদের পদক দেবেন না। কিন্তু চাপের কাছে তিনিও পারেননি। অন্যান্যবার ঢালাওভাবে পদক দেওয়া হয়েছিল। এবার পুলিশ সদর দপ্তর চেয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ জনের পুলিশ পদক দেওয়া হবে। কিন্তু তদবিরের কারণে তালিকা লম্বা করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত হওয়া তালিকার মধ্য কেউ কেউ একাধিকবার পদক পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও যারা পদক পেয়েছেন তারাও এবার পদকের তালিকায় নাম আছেন। এই নিয়ে পুলিশের ক্ষোভ আছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পদকের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে। 

বিগত পুলিশ সপ্তাহগুলোতেও তদবির করে অনেকের পদক ‘ছিনিয়ে’ নেওয়ার নজির রয়েছে। এ নিয়ে নানা সমালোচনার ঝড় উঠলেও কেউ বাদ যাননি। এবার পুলিশের প্রতিটি ইউনিট থেকে পদকের তালিকা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নাম এসেছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম ও পিপিএম পদকপ্রাপ্তদের প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে ব্যাচ পরিয়ে দেন। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদক পরিয়ে দেবেন। বিগত বছরগুলোতে পদক ছিনিয়ে নেওয়া হতো। এবার তা নাহলেও তদবির ঠিকই হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তখন অনেকেই নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন কিন্তু তারা পদক পাননি। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। 

বিশেষ দরবারে যেসব দাবি উত্থাপন
এবারের পুলিশ সপ্তাহে যে দাবিগুলো উত্থাপন করা হবে তা হলো- স্বাধীন পুলিশ কমিশন, এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা, পুলিশের যানবাহন বৃদ্ধিকরণ, মৃতদেহের দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান, পুলিশের অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, নারী পুলিশবান্ধব কর্মপরিবেশ বিনির্মাণ, ভূমিবিরোধ, বালু-জল মহাল ও হাট-বাজার ইজারা এবং পরিবেশ আইন সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধসহ বিবিধক্ষেত্রে সৃষ্ট আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ব্যয় সংকোচনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন/নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি/অফিসিয়িটিং পদোন্নতি প্রদান (কনস্টেবল হতে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত), ডিজিটালাইজড্ পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তন ও পুলিশের দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নিয়োগের প্রচলন করতে হবে। 

অন্যান্য বছরের যেসব দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল, তার মধ্যে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন বাতিল, গ্রেড-১-এর সংখ্যা আরও বাড়ানো, ডিআইজির পদ বাড়ানো, সুপার নিউমারারি পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন আরও পুলিশ নিয়োগ, সব সদস্যের জন্য বিশেষ ভাতা চালু, পুলিশের জন্য আলাদা মেডিকেল কলেজ চালু, অ্যাভিয়েশন ইউনিট চালু, উন্নত অস্ত্রসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা, গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, আবাসন সংকট সমাধানের প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হবে। আরও কিছু নতুন দাবিও উত্থাপন করা হবে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানায়, অন্যবারের মতো এবার ঢাকঢোল পিটিয়ে জাঁকজমকভাবে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে না। অনুষ্ঠান সূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে কুচকাওয়াজ (প্যারেড) হবে না। আরও হবে না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক। ইতিমধ্যে পুলিশ সপ্তাহ সামনে রেখে কিছু দাবিদাওয়া উপস্থাপন করার সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি ও পুলিশ পদক পাওয়ার জন্য অনেকেই তদবির শুরু করে দিয়েছেন বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। এমনকি কিছু কিছু প্রশাসনের লোকজনও অমুককে পদক দিতে তদবির করছেন। পুলিশের প্রতিটি ইউনিট থেকে পদকের তালিকা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নাম এসেছে। তবে যারা তদবির করছেন তাদের নাম পদকের তালিকায় থাকবে না। বিগত পুলিশ সপ্তাহগুলোতে তদবিরের ফলে যারা যোগ্যতা নেই তারাও পদক পেয়েছেন। তদবিরের বিষয়টি আসায় আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার ৫০ জনের বেশি পদক দেওয়া হবে না। মূলত সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পদক দেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশ সপ্তাহের স্লোগানও চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশ সপ্তাহের স্লোগান চূড়ান্ত না হলেও অনুষ্ঠান সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। তাছাড়া ইউনিট প্রধানরা ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধান উপদেষ্টাকে। এছাড়াও ৩০ এপ্রিল ও ১ মে পুলিশ সপ্তাহ নিয়ে নানা অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে। 

পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচির বিষয়ে একটি রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করে এবারের পুলিশ সপ্তাহ হলেও তাৎপর্য রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। বৈঠকে এ নির্বাচনের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা আসবে। তবে আমরা পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক প্রভাবের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারব কি না জানি না। তবে আমরা সেই বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে অতিথিদের কাছে দাবি করব।এবারো তদবিরে মিলেছে পদক!

ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার পুলিশ সপ্তাহ হওয়ার কথা ছিল না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশ ছিল টালমাটাল অবস্থায়। নতুন আইজিপি আসার পর অনুষ্ঠানটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও সরকারের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আসতে দেরি হচ্ছিল। এবার প্যারেড অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। কল্যাণ সভার আয়োজন থাকছে রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়াম।

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত