মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

প্রবাসীদের ভোটে একমত, পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩০ এএম

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে পোস্টাল, অনলাইন ও প্রক্সি এ তিন পদ্ধতি নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটাধিকার বাস্তবায়নে সবাই একমত হলেও কোন পদ্ধতি কার্যকর হবে, তা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। কেউ কেউ সরাসরি পদ্ধতি নিয়ে মতামত জানালেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নিজের মতামত প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘ভোটিং সিস্টেম উন্নয়ন’-সংক্রান্ত একটি সেমিনার শেষে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অন্তত ২১টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উদ্বোধীন বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিই, প্রথম থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং আগামী নির্বাচনে চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হই। আমরাও ওয়াদাবদ্ধ, প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাও জাতির কাছে একই ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞরা কয়েক মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিছু সাজেশন দিয়েছেন। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা যদি সমর্থন না দেন, আমাদের যত এক্সারসাইজ আছে ইট উইং অল অ্যান্ড ইন ফিউটিলিটি।

নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে উন্মুক্ত আলোচনায় অন্য দলের মতামত ও পরামর্শ শুনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেমিনারে প্রবাসীদের ভোটিংয়ের জন্য তিন প্রস্তাব (অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির ভোটিং সিস্টেম) উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেব। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয় সে মতামত দেব। তিনি বলেন, এই দুনিয়ায় কোনো সিস্টেমই ফুল প্রুফ না। ফুল প্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিবেচনা করব সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারব বলে আশা করি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে জামায়াতে আমির এর আগেও কথা বলেছেন। এটি ভালো উদ্যোগ। ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মধ্যে এগিয়ে যেতে হবে। দলীয় ফোরামে পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে মতামত জানানো হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার আগ্রহ বেশ দেখছি। ইসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন অর্ধেক নয়, পরিপূর্ণ এফোর্ট দিয়ে যেন তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। প্রক্সি ভোট হলে কোথাও কোথাও বেশ ভোট আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে এটা একটা থ্রেট হতে পারে। আমরা দলীয় ফোরামের আলোচনা করে ইসিকে মতামত জানাব।

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, প্রবাসে দেড় থেকে দুই কোটি ভোটার রয়েছে। মানুষের জন্য সুবিধা হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেভাবে দিতে হবে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল; তিনটি পদ্ধতিরই সুবিধা, অসুবিধা আছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে আরও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তাই ইসির উচিত দলগুলোকে আস্থায় এনে যেন কাজ করে।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার জানান, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। এ ছাড়া বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা প্রক্সি ভোটের পক্ষে। অনলাইন ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আগ্রহ নেই।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আলোচনা অংশ নেন এলডিপি, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, এনপিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিত, সাংস্কৃতি মুক্তিজোট, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাসদ, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিসহ সংবাদমাধ্যম, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত