মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পশ্চিমা কূটনীতিকদের লুৎফে সিদ্দিকী

আইএলওর রোডম্যাপ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে

আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম

পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। গত আট মাসে শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও সরকারের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরিতে সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার পূর্ণাঙ্গ সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন লুৎফে সিদ্দিকী। এসময় উপস্থিত ছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলওর কূটনীতিক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞরা।

গত আট মাসে সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আইএলও’র রোডম্যাপ কেবল একটি নির্দেশিকা নয়— এটি একটি প্রতিশ্রুতি। এটি বাস্তবায়নে আমরা সময়, শ্রম ও সদিচ্ছা দিয়ে চেষ্টা করছি।’

শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জুলাই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এই প্রক্রিয়াটিকে ‘অভূতপূর্ব’ অভিহিত করে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি— প্রচুর আলোচনা হয়েছে এবং সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। আমরা খসড়া আইন তৈরি ও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছি। এটি ইইউ বাজারে প্রবেশাধিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকারের এমন অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই এবং অতীতে আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতাও দেখতে চাই।’

কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করা কাজ প্রশংসনীয় এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি উত্তরণে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে শক্তিশালী শ্রম মানদণ্ড থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে তার জন্য আমি অন্যদের সঙ্গে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

আইএলও-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিয়াইনেন বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়নের খুব কাছাকাছি। এখন যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল— এটি এমনভাবে করা যা দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবে।’

আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, ‘আমরা যথেষ্ট আইনি অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।’

এসময় লুৎফে সিদ্দীকী পূর্ববর্তী সরকারের সময়কার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আদালতে জট এড়াতে নিষ্পত্তি ব্যবস্থার উন্নতি এবং পরিদর্শকের ক্ষমতা ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সম্পর্কেও অবহিত করেন।

লুৎফে বলেন, ‘এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। শ্রম অধিকার এখন বৈশ্বিক বাণিজ্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক এজেন্ডাও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’

বৈঠকে কূটনীতিকরা একমত হয়েছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শ্রম সংস্কার ও জবাবদিহিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। অনেকেই বাংলাদেশের উত্তরণকে সমর্থনের জন্য তাদের দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত