১৯৪৭ সালের ১৩ মে মৃত্যুবরণ করেন প্রগতিশীল চেতনার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায়। তার পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ায়। তার বাবা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য কলকাতায় পুস্তক ব্যবসা করতেন। কলকাতার কমলা বিদ্যামন্দিরে তার বাল্যশিক্ষা শুরু হয়। পরে তিনি বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার কিশোরসভা বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। তার রচনাবলির মধ্যে ‘ছাড়পত্র’, ‘পূর্বাভাস’, ‘মিঠেকড়া’, ‘অভিযান’, ‘ঘুম নেই’, ‘হরতাল’, ‘গীতিগুচ্ছ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার সাহিত্য সাধনার মূলক্ষেত্র ছিল কবিতা। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তার কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু। তার রচনাকর্মে গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে। রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাদের রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, তিনি তাদের অন্যতম। কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে বয়সের বিবেচনায় তার রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ।