শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

উপদেষ্টার স্বীকার

দুর্নীতির সর্বোচ্চ অভিযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে

আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকরাও জানিয়েছেন, কাজ করতে গিয়ে তারাও জানতে পেরেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তর সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতিগ্রস্ত। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ওয়াসা আগাগোড়াই দুর্নীতিতে সয়লাব। তারা দাবি করেন, ঢালাওভাবে না বলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা উচিত দুর্নীতিগ্রস্ত সেক্টর কোনগুলো। নাগরিকদের দেওয়া অভিযোগগুলোর ধরনও তুলে ধরা উচিত। এখনো কেন অভিযোগ আসবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানান, এ-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ ও পরামর্শ প্রদানের আহ্বান জানিয়ে গত ১৯ এপ্রিল নাগরিকদের ইমেইল পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। গত ১১ মে পর্যন্ত মোট ৯০৯টি ইমেইল দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৪০০টি ইমেইল পর্যালোচনা করে মোট ১২৮টি আমলযোগ্য অভিযোগ ও পরামর্শ চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে ৪৪টি অভিযোগই এসেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত।

বিশ্লেষকরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব অভিযোগ কেন আমলযোগ্য নয় সেটাও পরিষ্কার করা উচিত। মাত্র ১২৮ অভিযোগ নিয়ে বাকি অভিযোগগুলো কোন মানদণ্ডে আমলে নেওয়া হয়নি, সেটাও পরিষ্কার করে জানানো জরুরি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনো কাজ সরাসরি করে না। এর অধীনে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তর কাজ করে। যেমন ওয়াসা, ডিএসসিসি, ডিএনসিসি ইত্যাদি। তাই অভিযোগটা কাদের বিরুদ্ধে সেটা চিহ্নিত করতে হবে। কারণ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করার মতো কিছু নেই। অভিযোগটা তো তাদের বিরুদ্ধে আসবে যারা সেবা দান করবে, মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নয়।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, স্থানীয় সরকারের ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ঠিক আছে। কিন্তু এরপর দেখতে হবে কোন ডিপার্টমেন্টের বিষয়ে কয়টি অভিযোগ এসেছে। সেগুলো প্রকাশ না করলে গলদ কোথায় বোঝা যাবে না। কারণ এখানে এলজিইডি আছে, ওয়াসা আছে, সিটি করপোরেশন আছে। ফলে কোথা থেকে অভিযোগগুলো আসছে, কার বিরুদ্ধে এবং কাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে সেটা জানতে হবে।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আসছে এটা ভালো, অভিযোগ আসবে। কারণ এখানে করাপশন অনেক বেশি আছে, সেটা ঠিক আমরা কাজ করতে গিয়েও তো দেখলাম, সিটি করপোরেশনগুলোর আগাগোড়ায় সব দুর্নীতি। কিন্তু অভিযোগ নিয়ে তো এগুলো প্রতিকার করা লাগবে। আর প্রতিকার করতে হলে তো অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট হওয়া লাগবে।’

সরকারের দিক থেকে অভিযোগ গ্রহণ ইতিবাচক দাবি করে ড. তোফায়েল বলেন, এটা কেন নিল, কীভাবে নিল, কোন সময় থেকে কোন সময়ের অভিযোগ এগুলো আরও পরিষ্কার করতে হবে। সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্মকর্তা ড. ইফতেখারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় ও গণমাধ্যমের নির্বাচিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে ধারাবাহিকভাবে দেখা গেছে, যে মন্ত্রণালয়গুলো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। আর অভিযোগটা সরাসরি স্থানীয় পর্যায়ের মানুষের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু সুযোগ হয়েছে তারা অভিযোগ করেছে আর তারই প্রতিফলন ঘটছে এখন।

তিনি বলেন, এখন যেটা করা উচিত হবে উপদেষ্টা বা মন্ত্রণালয়ের, অভিযোগ যেগুলো বাছাই করা হয়েছে, কেন সব বাছাই করা হয়নি সে সম্পর্কে একটা বিন্যাসমূলক তথ্য প্রকাশ করা উচিত ওয়েবসাইটে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, যেগুলো আমলযোগ্য চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো ছাড় না দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে। আর মন্ত্রণালয়ের যেসব বিষয় চিহ্নিত হয়েছে এবং যেসব বাদ পড়েছে সেগুলো সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় সাজা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেন, এ উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। এখানে উপদেষ্টার উচিত হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে পরিষদে সাধারণ সভা আয়োজন করে যেতে পারে।

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অভিযোগ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৪৪টি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৪টি, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সম্পর্কিত অভিযোগ ও পরামর্শ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩২টি, ভূমি মন্ত্রণালয় ১৬টি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ৮টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬টি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫টি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৫টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২টি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৪টি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৩টি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ২টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২টি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সরকারি কর্ম কমিশন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিটি সম্পর্কিত ১টি করে।

উল্লেখ্য, ১৭টি অভিযোগ ও পরামর্শ একাধিক মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব অভিযোগ নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে উপদেষ্টা জানান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তাদের সম্পর্কিত অভিযোগ ও পরামর্শগুলোর নিষ্পত্তিতে কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের বিষয় যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাকি ইমেইলগুলোর পর্যালোচনার কাজ চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত