ভ্যাটিকানে নিজের প্রথম ভাষণে বিশ্ব নেতাদের প্রতি যুদ্ধ-বিগ্রহ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। গত বৃহস্পতিবার প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর ভ্যাটিকান সিটিতে দুদিনের গোপন কনক্লেভের মাধ্যমে ক্যাথলিক চার্চের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন পোপ লিও। এরপর প্রথম রবিবার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে ভার্জিন মেরির সম্মানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রার্থনা পাঠ করেন তিনি। এ সময় ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক শত্রুতার অবসানের চুক্তিকে স্বাগত জানান পোপ। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার প্রধান বারান্দা থেকে জনতার উদ্দেশে পোপ বলেন, আমি বিশ্বের ক্ষমতাধর মানুষদের প্রতি একটি অনুরোধ পুনরায় জানাতে চাই ‘আর যুদ্ধ নয়’। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশাল ট্র্যাজেডি ৮০ বছর আগে শেষ হয়েছিল। এখন আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের খণ্ড খণ্ড ট্র্যাজেডির মুখোমুখি। পোপ বলেন, আমি প্রিয় ইউক্রেনীয় জনগণের দুর্ভোগ হৃদয়ে বহন করি। আর গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে, তাতে আমি গভীরভাবে আহত। অবিলম্বে যেন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যেন বেসামরিক জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারে এবং যেন সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে আমি খুশি হয়েছি শুনে যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যৎ আলোচনার মাধ্যমে আমরা দ্রুত একটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।
পোপ লিও আগামী সপ্তাহে ১৮ মে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। গত রবিবার তিনি শুধু তার পূর্বসূরি ফ্রান্সিসের শান্তির আহ্বানকেই প্রতিধ্বনিত করেন। এর আগে শনিবার তিনি রোমের বাইরে একটি উপাসনালয়ে যান এবং পরে সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে ব্যাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিসের সমাধিতে প্রার্থনা করেন। কার্ডিনালদের সঙ্গে এক বৈঠকেও মিলিত হন। এ ছাড়া শুক্রবার তিনি সিস্টিন চ্যাপেলে প্রথম পোপ হিসেবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
তিনি আগামী সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং পরবর্তী রবিবার তার অভিষেক অনুষ্ঠানে অসংখ্য রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে ধর্মোপদেশ দেবেন। ৬৯ বছর বয়সী লিও হলেন সেন্ট পিটার্সের সিংহাসনের ২৬৭তম অধিষ্ঠাত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ। তিনি বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটি ক্যাথলিক অনুসারীর নেতৃত্ব দেবেন। রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট নামে জন্ম নেওয়া লিও শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বহু বছর পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি পেরুর নাগরিকত্বও পেয়েছেন। যদিও লিও আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, ভ্যাটিকান তাকে আমেরিকা মহাদেশ থেকে দ্বিতীয় পোপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। আর্জেন্টিনার পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন প্রথম।