১৬ বছর আগে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকান্ডের ঘটনার পর করা বিস্ফোরক মামলায় আরও ৪০ আসামি জামিন পেয়েছেন। তারা পিলখানা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। গতকাল সোমবার এ জামিনের আদেশ দেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। আদালতের আদেশের বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ৪০ জনের জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল আদালত। তবে, ওইদিন আদালতের কার্যসময় শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল আদেশটি আজ (গতকাল) হয়েছে।’
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন আসামি একই আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন। তারা একই ঘটনায় হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিস্ফোরক মামলায় ২১৮ জন জামিন পেলেন। পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ চলছে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ অস্থায়ী আদালতের এজলাসে। মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ১ হাজার ৩৫৭ জনকে। অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন জানান, গত ৮ মে পর্যন্ত ২৮৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই দিন পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত হন আরও ১৭ জন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ১৬০ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড। ২৫৬ আসামিকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এরপর ফাঁসির আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন), আপিল, জেল আপিল, অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুই দিন হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ রায়ে বিচারিক আদালতে ফাঁসির সাজা পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ আসামির দন্ড- বহাল রাখে। এ ছাড়া আটজনকে মৃত্যুদন্ড থেকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাবাসের। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনকে খালাসের রায় দেওয়া হয়। আর বিচারিক আদালতে ১৬০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে হাইকোর্টে ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকে। এ সাজা থেকে খালাস দেওয়া হয় ১৪ জনকে। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে ৬৯ জনের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল মঞ্জুর করে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টে ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।