বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

'আমরা সাফ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গেছি'

হাভিয়ের কাবরেরা, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের চেয়ারে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন বছর। অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী এই স্প্যানিয়ার্ড। মনের দুয়ার খুলে দেশ রূপান্তর'র সুদীপ্ত আনন্দ'র সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা আর আগামীর স্বপ্ন, যার গণ্ডি দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে আরও দূরে

আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ০৯:৫০ এএম

বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন সাড়ে তিন বছর। দীর্ঘ যাত্রা পথের অভিজ্ঞতাগুলো জানতে চাই-

হাভিয়ের কাবরেরা : সাড়ে তিন বছর অনেক অভিজ্ঞতাই হয়েছে। অনেক আনুষ্ঠানিক ম্যাচ, সাফ, এশিয়ান গেমস, বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের অনেক ম্যাচে ডাগআউটে দাঁড়িয়েছি। অনেকগুলো ট্রেনিং সেশন কাটিয়েছি। পাশাপাশি লিগগুলো দেখতে এবং ফুটবলারদের পারফরম্যান্স পরখ করতে দেশ জুড়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি। আমার জন্য এ সব কিছু অনেক বড় অভিজ্ঞতা। প্রথম বছরটা বুঝে উঠতে সময় চলে গেছে। এরপর ধীরে ধীরে আমার ভাবনা ও দর্শন সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং এর সঙ্গে মানানসই ফুটবলারদের খুঁজে নিয়েছি। ধীরে ধীরে দলকে উন্নতির পথে রাখার চেষ্টা করেছি। চতুর্থ বছরে এসে আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত কারণ দলে হামজার মতো ফুটবলার পেয়েছি। হামজা আসার আগেও দল ভালো খেলেছে। এখন দেখার ওর সংযুক্তিতে দল আরও কতটা এগিয়ে যায়। আমাদের লক্ষ্য অন্য উচ্চতায় জাতীয় দলকে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে এখন ফেডারেশনের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করছি। আমি সব ব্যাপারে ভীষণ ইতিবাচক।

ফুটবল নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ কতটা সহায়ক, বিশেষ করে একজন স্প্যানিশ কোচের জন্য?

কাবরেরা : আমি খুব নিবিড়ভাবে ফেডারেশনের নতুন সভাপতি তাবিথের সঙ্গে কাজ করছি। একই সঙ্গে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ আগের সভাপতি সালাউদ্দিনের প্রতি। তিনি আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। অনেক সমর্থন পেয়েছি তার কাছ থেকে। কাজ করার ক্ষেত্রে এবং যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি শতভাগ স্বাধীনতা পেয়েছি এবং পাচ্ছি। আমার ধ্যান-ধারণাগুলো সবসময় জাতীয় দল কমিটির সভায় উপস্থাপন করি। সাপোর্টিং স্টাফদের কাছেও জানাই। তবে দল গঠন, একাদশ নির্বাচন থেকে শুরু করে সব সিদ্ধান্ত আমি একাই নিই। যা আমার কাজকে অনেক বেশি সহজ করেছে।

হাভিয়ের কাবরেরা। ছবি: মোশারফ হোসেন

সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই তো?

কাবরেরা : সাড়ে তিন বছর আগে যেমনটা ছিল, তার চেয়ে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। এখন আমি বিশেষজ্ঞ কোচ পাচ্ছি, ট্রেনার পাচ্ছি, ফিজিও পাচ্ছি। ট্রেনিংয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বেশিরভাগ সময় আমরা ট্রেনিং করি, যার সুযোগ-সুবিধা সর্বোচ্চ মানের। তাছাড়া দল এখন ভালো মানের হোটেলে থাকছে, দেশের বাইরে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং কোনো কিছু নিয়েই অভিযোগ করার সুযোগ নেই।

আর যদি ফুটবলারদের মান সম্পর্কে বলতে বলা হয়?

কাবরেরা : ফুটবলারদের মান নিয়েও আমার কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। অনেক তরুণ উঠে আসছে। বিপিএল নিয়মিত হচ্ছে, এছাড়া বয়সভিত্তিক দলগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলছে। এখন এই ফুটবলারদের জন্য একটা ভালো অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আরও উন্নতি করতে পারব, যদি ভালো মানের বেশ কিছু মাঠ পাই। আমি জানি ফেডারেশন চেষ্টা করছে সামনের দিনগুলোর জন্য বেশ কয়েকটি মাঠকে উন্নত করতে। ভালোমানের ফুটবলার পেতে আমাদের ভালো মাঠ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ আরও বাড়াতে হবে। আমি আবারও বলছি ফুটবলারদের প্রতিভা ও সামর্থ্য নিয়ে আমার কোনো শঙ্কা নেই।

স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে কতটা আশাবাদী?

কাবরেরা : একটি দেশের ফুটবলের ভিত গড়ে ওঠে স্থানীয়দের দিয়ে। তারাই মূল স্তম্ভ। আমাদের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে লাইন আপে ১১ জনের মধ্যে ৯ জন ছিল স্থানীয়। অর্থাৎ নব্বই ভাগ ফুটবলারই স্থানীয় পর্যায়ের। এর সঙ্গে প্রবাসীদের নিয়ে আসাটা ভীষণ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তাতে করে দলের শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে স্থানীয়রা অনেক বেশি মনোযোগী থাকে খেলার প্রতি, যা আমাদের দলীয়ভাবে অনেক বেশি সংঘবদ্ধ করে তোলে।

সবাই এখন হামজা স্তুতিতে ব্যস্ত। এটা ঠিক যে, হামজা অন্য পর্যায়ের খেলোয়াড়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এসেছেন বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে। তবে ভারতের বিপক্ষে স্থানীয়দেরও অসাধারণ ফুটবল খেলতে দেখা গেছে। বিশেষ করে রাকিব, শাকিল আহাদ তপুরা ছিলেন দুর্দান্ত...

কাবরেরা : রাকিব অসাধারণ একজন ফুটবলার। কেবল বল নিয়ে দ্রুত আক্রমণে ওঠা কিংবা বল নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, রাকিব আমার কাছে একজন সত্যিকারের যোদ্ধা, যে জয় ছাড়া কিছুই বোঝে না। সে আমার দলের অন্যতম অস্ত্র। তবে আমি আরও অনেকের কথা বলতে পারি। তপু (শাকিল আহাদ) তার ক্লাবে খুব বেশি খেলার সুযোগ পেত না। জাতীয় দলে নিয়মিত খেলানোর ফলে ও এখন নিয়মিত ক্লাবে ম্যাচ টাইম পাচ্ছে। এছাড়া মিতুল মারমাকে দেখুন, কী পরিমাণ আত্মবিশ্বাস এখন ওর! অথচ দুই বছর আগে ওকে খেলানো নিয়ে কত প্রশ্নই না উঠেছিল। এছাড়া হৃদয়, ফাহিম, জুনিয়র সোহেলরা আছে। আমি মনে করি দলে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের দারুণ একটা মিশেল আছে। তপু বর্মণ, তারিক কাজী, জামাল, সিনিয়র সোহেল, রহমত, সাদ, বিশ্বনাথরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ভূমিকা রাখছে। এদের সঙ্গে হামজা, শমিতের মতো উচুমানের ফুটবলার যোগ হওয়ায় দলটা এখন অনেক সংঘবদ্ধ।

জাতীয় দলে আপনি যে ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, সেটা কতটুকু পেরেছেন?

কাবরেরা : পুরোপুরি না হলেও অনেকটুকুই হয়েছে। উন্নতিটা কিন্তু দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন জাতীয় দলের ফুটবলাররা অন্য ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলছে। অনেক বেশি প্রেসিং ফুটবল খেলছে। ছেলেরা বল কেড়ে নিতে পারছে, পায়ে রাখতে পারছে। বল হারালে ঘাবড়ে যাচ্ছে না। ভয়ডরহীন ফুটবল খেলছে। তবে এটাও ঠিক উন্নতির কোন শেষ নেই। আমাদের আরও অনেক কাজ করার আছে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট না পাওয়া কতটা কষ্টের?

কাবরেরা : ওই সময়টাতে এটা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন ছিল। কারণ আমরা জয়ের জন্য খেলছিলাম এবং জয়ের পথেই ছিলাম। সত্যি বললে আমরা গোলের অনেকগুলো সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছি। সেটা না হলে অন্যের মাঠে আমরা একটা ঐতিহাসিক জয় পেতে পারতাম এবং গ্রুপের সবার ওপরে থাকতে পারতাম। তারপরও সেই ম্যাচ থেকে আমাদের অর্জণ অনেক। ওইদিন গ্রুপের টপ ফেভারিট ভারতের চেয়ে আমরা ভালো খেলেছি। যা আমাদের অনেক ইতিবাচক করে তুলেছে এবং বিশ্বাস জুগিয়েছে যে এরচেয়েও ভালো ফুটবল খেলার সামর্থ্য আমাদের আছে এবং জেতার সামর্থ্য আছে।

হামজা যোগ দেওয়ায় দল কী আরও শক্তিশালী হয়েছে?

কাবরেরা : সবার আগে দেখার ছিল আমরা যে ভাবনাটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছি, সেটা হামজা কত দ্রুত আত্মস্থ করতে পারে। ইতিবাচক দিক হলো হামজা সেই চিন্তার সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিয়েছে এবং তার অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব এবং সর্বোপরি বন্ধুবৎসল আচরণ দিয়ে দলে অনেক বড় ছাপ রাখতে পেরেছে।

 

এখন তো আরও কয়েকজন প্রবাসী পেতে যাচ্ছেন। শমিত সোম, ফাহমেদুল ইসলামকে পাচ্ছেন। কিউবা মিচেলের কথাও শোনা যাচ্ছে। তাদের আসাটাও নিশ্চয় ইতিবাচক হবে?

কাবরেরা : অবশ্যই। তবে আমি বিষয়টাকে দুই ভাবে দেখছি। প্রথমত হামজার কথা বলব। ও আসলে একেবারেই অন্য পর্যায়ের ফুটবলার। দ্রুত দলে এসে দ্রুত প্রভাব ফেলেছে সে। ওর সঙ্গে কারও তুলনা চলবে না। এরপরেই শমিত। যে কানাডা দলের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছে। শীর্ষ পর্যায়ের লিগে খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৫-৬ মৌসুম মেজর সকার লিগে খেলেছে। এখন কানাডার শীর্ষ ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলছে। আমি নিশ্চিত সেও দলে দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারবেন। তবে তাকে কিছুটা মানিয়ে নেওয়ার সময় ও সুযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো হামজার মতো সেও অনেকদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবে। এরপর বলব এমন দুজন তরুণের কথা, যারা ইতিমধ্যে তাদের সামর্থ্যের ছাপ রেখেছে। দুজনেরই বয়স ১৯-এর কোঠায়। কিউবা মিচেল একটি শীর্ষ দেশের (ইংল্যান্ড) যুব লিগে খেলছে। ফাহমেদুল ইতালিতে খেলছে চতুর্থ ধাপের লিগে। আমার মনে হয়, এদের দুজনকে নিয়ে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। তাদের দুজনের মধ্যেই ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সবকিছু আছে। তবে হামজার সঙ্গে তাদের কারোই তুলনা চলবে না। বাকিদের ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়েছে ঠিক, তবে তাদের সময় দিতে হবে। আর ভুলে গেলে চলবে না আমাদের স্থানীয়দের কথা। মনে রাখতে হবে এ দেশেও অনেক ভালোমানের খেলোয়াড় আছে।

বাইরে অনেক গুঞ্জন শুনতে পাই। স্থানীয়দের মধ্যে প্রবাসীদের নিয়ে কোনো আতঙ্ক কাজ করছে না তো?

কাবরেরা : যদি সবাই মনে করে বিদেশ থেকে এসেই সবাই স্থানীয়দের চেয়ে ভালো খেলে ফেলবে, সেটা বড্ড ভুল বোঝা হবে। আমি জোর গলায় বলতে চাই, স্থানীয়দের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। তাদের প্রতিভা, সামর্থ্য এবং লড়াকু মনোভাবে আমার আস্থা শতভাগ। আমরা কিছু খেলোয়াড় বাইরে থেকে আনছি যাতে তারা দলকে আরেকটু এগিয়ে নিতে পারেন। আমি মনে করি না স্থানীয় ও প্রবাসীদের মিশ্রণ ঘটানো কঠিন, তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই। স্থানীয়দের মধ্যে প্রবাসীদের নিয়ে বিন্দুমাত্র আতঙ্ক দেখিনি। বরং তারা তাদের সাদরে গ্রহন করেছে। জায়গা হারানোর ভয় তাদের মধ্যে দেখিনি। দলের মধ্যে ভীষণ স্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এটা ঠিক জাতীয় দল এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি পারফর্ম করতে না পারলে সরে যেতেই হবে। আপনি ইতালি থেকে আসলেন, নাকি সিলেট থেকে সেটা দেখা হবে না। দেখা হবে শুধু পারফরম্যান্স। 

বাংলাদেশে আসার আগে আপনার ভারতে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। দুদেশের ফুটবলের কী কী পার্থক্য চোখে পড়েছে?

কাবরেরা : ফুটবলারদের যোগ্যতা যদি বলেন, আমি বলব দুদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রতিভা ও সামর্থ্য একই পর্যায়ে। তবে অবকাঠামোর দিক দিয়ে ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অনেক কাজ হয়। তাদের অনেক উন্নতমানের স্টেডিয়াম আছে, অনেকগুলো ফুটবল অ্যাকাডেমি আছে, বয়সভিত্তিক দলগুলোর খেলার সুযোগও অবারিত। ফলে তাদের তরুণ ফুটবলারের ঘাটতি নেই। আরেকটা পার্থক্য হলো পেশাদারিত্বে। বিশেষ করে দুই দেশের শীর্ষ লিগে আছে বড় ব্যবধান। আইএসএল--এর কথা যদি বলি, আয়োজন, বিপণন, স্পন্সর, চুক্তি, ভেন্যু, প্রচার থেকে শুরু করে সবকিছুই ইউরোপিয়ান মানের খুব কাছাকাছি পর্যায়ের। তারপরও ভারতীয় ফুটবলারদের কোনোভাবেই বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারবেন না। যার প্রমাণ পেয়েছি সর্বশেষ ম্যাচে। ভারতের কিছু ভালো দিক থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তাদের মাঠ, তাদের যুব ফুটবল শীর্ষ পর্যায়ের।

বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর অবস্থা অথৈবচ। বেশিরভাগের নিজস্ব ভেন্যু নেই। মোহামেডান শিরোপা জিতেছে, অথচ তাদের নিজস্ব একটা ট্রেনিং গ্রাউন্ডও নেই। এমন ফুটবল সংস্কৃতি কী বিশ্বের আর কোথায় দেখেছেন?

কাবরেরা : তার আগে আমি তো বলব, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা দেখেছি, এমনটা অনেক দেশেই আপনি খুঁজে পাবেন না। বিশেষ করে জাতীয় দল যখন খেলে, তখন গ্যালারিতে ঢল নামে। ফুটবলপাগল এই জাতিকে ফুটবলারদের এমন কিছু দিতে হবে, যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে। কেবল জাতীয় দল নয়। এই সমর্থকদের একটা আকর্ষণীয় লিগ উপহার দেওয়া বড্ড জরুরি। যেখানে ভালো মানের দেশি-বিদেশি ফুটবলাররা খেলবে, জমজমাট লড়াই হবে প্রতিটি ম্যাচে। এখানেই আমাদের খামতি আছে। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলো বেশিরভাগ দর্শকশূন্য মাঠে হয়। অথচ সমর্থকরাই আন্তর্জাতিক ম্যাচে গ্যালারি ভরিয়ে তোলে। বুঝতে হবে তারা ভালোমানের ঘরোয়া ফুটবল দেখতে চায়। এদেশের সমৃদ্ধ একটা ক্লাব সংস্কৃতির কথা শুনেছি। আমি মোহামেডান, আবাহনী এমনকি রহমতগঞ্জের কথা বলতে পারি, যাদের বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী আছে। তাদের ঐতিহ্যের পাশাপাশি সোনালী অতীত আছে। বসুন্ধরা তুলনায় নতুন হলেও চেষ্টা করছে। তাই এখানে কেন ঘরোয়া ফুটবল আকর্ষণীয় হবে না, সেটা আমার মাথায় ঢোকে না।

বাংলাদেশীদের অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে খেলতে হয়। তাদের জন্য ভালোমানের মাঠ নেই। ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই। ফেডারেশন ও ক্লাবগুলোতে অর্থ সংকট লেগেই থাকে। এ রকম একটা দেশে আপনার কাজ করাটা নিশ্চয় চ্যালেঞ্জিং?

কাবরেরা : একজন পেশাদার কোচকে সর্বপ্রথম কাজের ক্ষেত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখতে হয়। বাস্তবতা ও পরিস্থিতি বুঝে তার পরিকল্পনা সাজাতে হয়। এরপর অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে সে দেশের ফুটবল উন্নয়নের চেষ্টা করতে হয়। আমিও সেটাই করছি। আসলে সুযোগ-সুবিধা তো কিছু বাড়াতেই হবে। তার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। ফেডারেশন তাদের সাধ্য মতো করছে, ক্লাবগুলোও চেষ্টা করছে। যদিও তাদের কোন স্থায়ী আয়ের ক্ষেত্র নেই। ফেডারেশনও চেষ্টা করছে একটা শক্তিশালী লিগ আয়োজন করতে। আমাদের আসলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তবেই দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে। এবারের বিপিএল ভেন্যুগুলোর কথা যদি বলেন, এ্টা নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। আমাদের ভালো ফুটবলার তুলে আনতে হলে ভালোমানের মাঠ লাড়বেই।

আমাদের খেলোয়াড় সংকট আছে। সেভাবে প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে আসছে না। এ অবস্থায় প্রবাসীদের দিয়ে কি সাফল্যখরা কাটানো পুরোপুরি সম্ভব?

কাবরেরা : আমি আবারও বলতে চাই, স্থানীয়রা ফেলনা নয়। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিলে তারাও ভালো করবে। আর বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এখন বেশ ভালো কাজ হচ্ছে। খেলার সংখ্যাও বাড়ছে। তাতে সামগ্রিক মানের উন্নতি ঘটছে। আবার এটাও ঠিক, আমাদের যদি সুযোগ থাকে ভালোমানের প্রবাসী খেলানোর, সেটা কেন আমরা নেব না? আমি খুব ইতিবাচক মানুষ। আমাদের নিজেদের লিগটাকে আকর্ষণীয় করতে হবে এবং যুব ফুটবল উন্নয়নে আরও মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বাইরে থেকে এ রকম ফুটবলার বেছে নিতে হবে যারা অনেক বেশি নিখুঁত, কার্যকর এবং প্রতিভাবান।

তারপরও ফুটবল বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ওপরের সারিতে। মানুষ ফুটবলের সাফল্যে ভাসতে ভালোবাসে, আবার ব্যর্থতায় আবেগি হয়ে ওঠে। অনেক সময় তারা তীব্র সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে। তখন তারা কোনো যুক্তি মানে না। কোচ হিসেবে এ বাস্তবতার সম্মুখীন আপনার হতে হয়েছে...

 

কাবরেরা : আমি যে কোনো ধরনেরই সমালোচনা ও পরামর্শ নিতে রাজি আছি। অনেকে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করে মতামত দেয়, অনেকে হয়তো একটু অন্যরকম করে ভাবে। অনেকের কাছে দল নির্বাচন, একাদশ পছন্দ নাও হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। সবখানেই এসব নিয়ে কথা হয়। তবে কিছু সময় এটা মেনে নেওয়া কঠিন হয় যখন শ্রদ্ধাবোধটা থাকে না। আমি প্রতিটি পরামর্শ নিতে রাজি আছি, যেটার সঙ্গে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ জড়িয়ে থাকে। আমি যে সিদ্ধান্ত নিই, এটা ভেবে নিই যা দলের জন্য, খেলোয়াড়ের জন্য ভালো হবে। মনে রাখতে হবে, কোচ যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় এবং দিনশেষে সব কিছুর জন্য তাকেই জবাবদিহি করতে হয়। কখনো কখনো আমারও ভুল হতে পারে। বড় ব্যাপার হলো, যখন আপনি ভালো খেলবেন তখন অনেক সমর্থন পাবেন। আবার খারাপ খেললে সমালোচনা শুনতেই হবে।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলা কেমন লেগেছে?

কাবরেরা : তারা অসাধারণ খেলেছে। মজার ব্যাপার হলো এই দলের অনেককেই আমি আগে থেকে চিনি। যখন প্রথম এসেছিলাম, তখনই এলিট অ্যাকাডেমিতে তৎকালীন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির অধীনে ফয়সাল, মুর্শেদদের খেলতে দেখেছি। চোখের সামনে ওরা বড় হয়ে উঠছে। আমাদের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। বরং দেখতে হবে ওরা পারফরম্যান্স কেমন করছে এবং সঠিক পথে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারছে কিনা। ফয়সাল এর মধ্যে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছে, মুর্শেদও তাই। কেবল তারা নয়, স্যামুয়েল, আশিক, মিঠু, রিফাত, মানিকের মধ্যেও অনেক সম্ভাবনা দেখেছি। তাদের ধারাবাহিক থাকতে হবে। তাদের নিয়েও কোনো তাড়াহুড়ো করা চলবে না।

হাভিয়ের কাবরেরা

মোহামেডান লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো। তাদের সাফল্যের নেপথ্যে কী ছিল মনে হয়?

কাবরেরা : ওই যে বললাম, ফুটবলে ধারাবাহিকতা থাকাটা বড্ড জরুরি। মোহামেডান একটা স্কোয়াড অনেকদিন ধরে রেখেছে। তাদের কোচিং স্টাফও বদলায়নি। এক কোচের দর্শনে একটা দল দীর্ঘদিন খেলেছে বলেই সাফল্য তাদের প্রাপ্য ছিল। তাছাড়া বসুন্ধরা কিংস এবার আগের মতো দল গড়তে পারেনি নানা কারণে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি মোহামেডান ভালো খেলার পুরস্কার পেয়েছে।

মোহামেডানের মালির ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতেকে জাতীয় দলে খেলানোর ব্যাপারে অতীতে অনেক কথা হয়েছে। আপনি কি মনে করেন তাকে খেলানোটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হবে?

কাবরেরা : তার আগে আমি বলতে চাই, দিয়াবাতেকে নাগরিকত্ব বদলে খেলানো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অত সহজ নয় বিষয়টা। নিঃসন্দেহে দিয়াবাতে অসাধারণ একজন স্ট্রাইকার। তবে এটাও মাথায় রাখা উচিত তার বয়স বাড়ছে।

এটা বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরকে হারাতে পারবে?

কাবরেরা : অবশ্যই এবং এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমাদের জিততে চাই এবং জিততে যে পারি, সেটা বোঝাতে চাই। তাছাড়া চার বছর পর জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলবে বাংলাদেশ। এখানে আমারও অভিষেক হতে যাচ্ছে, সেটা ৩০ ম্যাচ ডাগআউটে থাকার পর। আমি খুব করে চাইব সুযোগটা কাজে লাগাতে। এটা কেবল দলের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য বড় সুযোগ। অবশ্যই সিঙ্গাপুর শক্তিশালী দল। তবে বিশ্বাস করতে হবে আমরাও ভালো দল।

গ্রুপ সেরা কে হবে বলে মনে হয়?

কাবরেরা : অবশ্যই বাংলাদেশ (হাসি)। আর এটাই আমাদের বিশ্বাস। যদিও বাইরের কাউকে এই প্রশ্ন করলে কেউই বাংলাদেশের নাম বলবে না। কিন্তু আমাদের এটা বিশ্বাস করতে হবে। আর এই বিশ্বাসটা হৃদয়ে গেঁথে দিতে ছেলেদের সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। বিশ্বাস করতে হবে, আমরা দুর্দম্য। দলের মানসিকতা এখন অনেক শক্ত। তবে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগুতে চাই। এখনই ২০২৬ সালের মার্চে কী হবে তা নিয়ে ভাবতে চাই না। একটা ভালো শুরু করেছি। এখন সিঙ্গাপুর নিয়ে ভাবার সময়। নিজেদের মাঠে তিন পয়েন্ট পাওয়ার দিকেই এখন সব মনোযোগ।

জাতীয় স্টেডিয়ামে অনেক দিন পর ম্যাচ হতে যাচ্ছে। দুটি ম্যাচ নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের উন্মাদনা চরমে পৌঁছেছে। এটা নিশ্চয় আপনাকে আনন্দিত করে?

কাবরেরা : আমি নিজেও খুব রোমাঞ্চিত হয়ে আছি। ৪ জুন আমরা ভুটানের সঙ্গে খেলব। এরপর ১০জুন সিঙ্গাপুরের সঙ্গে। নতুন মাঠে খেলার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে। একটা ভালো পরিবেশে ম্যাচটা আয়োজনের জন্য ফেডারেশনও কঠোর পরিশ্রম করছে। আমাদের সামনে তাই বড় একটা সুযোগ। ৩০-৩৫ হাজার দর্শককে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেওয়ার সুযোগটা নিশ্চয় দলের কেউ হাতছাড়া করতে চাইবে না। এখনই সময় সমর্থকদের কিছু উপহার দেওয়া। যদি তাই হয়, আমার বিশ্বাস দেশের ফুটবলে একটা বিস্ফোরণ ঘটবে।

বাংলাদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো আক্ষেপ বা অপ্রাপ্তি আছে?

কাবরেরা : সত্যি বললে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। এমন একটা দলের নেতৃত্ব দেওয়ার বিশাল সুযোগ আমি পেয়েছি। মানুষ আমাকে অনেক ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। বলতে পারেন, আমি ৯৫ ভাগ সন্তুষ্ট। কিছু আক্ষেপ থাকবেই। তবে সেগুলো একেবারেই গৌণ। এরমধ্যে ২০২৩ সাফের ফাইনালে খেলতে না পারা একটা। বলতেই হবে, আমরা সেই টুর্নামেন্টে অন্য ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলেছি। সেমিফাইনালটা যদি টাইব্রেকারে নিতে পারতাম, তবে আমরা নিশ্চিতভাবে ফাইনাল খেলতাম এবং ফাইনালে ভারতকে হারাতাম।

তার মানে কি ভারতকে হারানোর খুব কাছে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ? গত দুই দশক যাদের হারানো যায়নি?

কাবরেরা : কেবল ভারতকে হারানো নয়, আমরা সাফ জয়ের খুব কাছে পৌঁছে গেছি বলে মনে করি। এ বছরের সাফ পিছিয়ে গেছে। আশা করছি আগামী বছর আমরা সাফ জিতব। এটা আমার একটা স্বপ্ন। এক সময় যখন দায়িত্ব ছাড়ব, তখন যাতে সবাই বলে, আমি বাংলাদেশকে সাফ জিতিয়েছি।

হাভিয়ের কাবরেরা। ছবি: মোশারফ হোসেন

আপনার চুক্তি তো আগামী বছর এপ্রিলে শেষ হবে। এরপর?

কাবরেরা : আমি তো নিজেকে ২০২৬ এপ্রিলের আরও অনেক পর পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। আশা করি আরও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাব। নতুন সভাপতির সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে। তিনি জানেন, জাতীয় দল সম্পর্কে আমার গভীর ধারণা আছে। এ অবস্থায় কেন তিনি কোচ পরিবর্তন করবেন? দলটা এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে। বিশেষ করে হামজা আসার পর সবাই নড়েচড়ে বসেছে।

একটা সাফল্য কিংবা শিরোপা নিশ্চয় দেশের ফুটবলকে বদলে দেবে?

কাবরেরা : দেশের ফুটবল কিন্তু বদলে গেছে। তা উন্নতির সঠিক পথেই আছে। তবে এটা ঠিক একটা সাফ শিরোপা কিংবা এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব উতরে যাওয়া হবে বিশাল ব্যাপার।

আপনার দলে রাকিবের মতো অসাধারণ একজন রাইট উইঙ্গার আছে। তবে লেফট উইংয়ে একটা শূন্যতা দেখা যায়।

কাবরেরা : আমি সেটা মনে করি না। আমাদের দলে ফাহিম আছে। সে অনেক গতিময় এবং দ্রুত বক্সে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া এই পজিশনে ফাহমেদুল একটা বিকল্প হতে পারে। শাহরিয়ার ইমনও দুই উইং ধরে খেলতে পারে। অভিজ্ঞ ইব্রাহিমও আছে। আমাদের দলে উইঙ্গারের কোনো কমতি নেই। যা কিছু ঘাটতি নাম্বার নাইন পজিশনে (স্ট্রাইকার)। তবে এখানে রাকিব আমাদের অন্যতম পছন্দ। এবারও লিগে ও ১০ গোল করেছে। শেষ ম্যাচে চার গোল করেছে। জাতীয় দলে ও নাম্বার ১০ পজিশনে দারুণ কার্যকর এবং স্বাচ্ছন্দ্যও।

আপনার দলের কারও মধ্যে কী দেশের বাইরের সম্ভাবনা দেখতে পান?

কাবরেরা : আমি তো মনে করি দলে একাধিক ফুটবলার আছেন, যারা বিদেশের লিগে খেলার সামর্থ্য রাখেন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ক্লাবগুলোতে বাংলাদেশিদের খেলার সামর্থ্য আছে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর অনেকেই আমার সঙ্গে কথা বলেছে। অনেক কোচ, অফিসিয়াল, এনালিস্ট কয়েকজনের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। আমি তাদের ধারণা দিয়েছি, তবে বিশেষ করে কারও নাম এখানে বলতেচাচ্ছি না। কেবল ভারত নয়, মালয়েশিয়াসহ আরও অনেক দেশেই সুযোগ পাওয়া উচিত অনেকের। তবে তাদের পারফরম্যান্সগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। ফুটবলারদের পারফরম্যান্স যাতে চোখে পড়ে, তাই আবারও বলছি ঘরোয়া লিগ শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত