ইরানকে লক্ষ্য করে সামরিক হামলার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপে একটি বিল উত্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন একক সিদ্ধান্তে ইরানে সামরিক অভিযান শুরু করতে না পারেন, সে উদ্দেশ্যে গত সোমবার এ বিলটি উত্থাপন করেন ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন। বিল উত্থাপনের সময় তিনি বলেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই আরেকটি অনন্ত যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিপজ্জনক পরিস্থিতি ঠেকাতে আমাদের স্পষ্ট আইন দরকার।
গত শুক্রবার কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থিরা জোরালোভাবে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে ইরানবিরোধী হামলায় অংশ নেয়। তবে টিম কেইনের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি অনন্ত যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলতে চান না কোনো নাগরিকই। তাই এ প্রস্তাব নিশ্চিত করবে যে, আমাদের সেনাবাহিনীকে যদি কোনো সংঘাতে জড়ানো হয়, তা হবে কংগ্রেসে বিতর্ক ও ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত।
যুদ্ধক্ষমতা সীমিত করার প্রচেষ্টা : এ বিলের ভিত্তি ১৯৭৩ সালের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজল্যুশন’, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্টদের একতরফা যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা সীমিত করতে করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে থাকলেও, বিগত কয়েক দশকে একের পর এক প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে জড়িয়েছেন কিংবা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছেন। সিনেটর কেইনের প্রস্তাব এ রীতির বিরোধিতা করে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে কংগ্রেসের কাছ থেকে অনুমতি নিতে বাধ্য করতে চায়।
দ্বিদলীয় সমর্থন ও বিরোধিতা : এ প্রস্তাবটি শুধু ডেমোক্র্যাট শিবিরেই নয়, বরং রিপাবলিকানদের ভেতরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক রক্ষণশীল আইনপ্রণেতা মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী হবে। ‘ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশন’-এর মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিচালক হাসান এল-তাইয়্যাব বলেন, এ বিলটি ট্রাম্প প্রশাসনকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে ইসরায়েলকে বিনা শর্তে সমর্থন দেওয়া হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থ নষ্ট হয় এমন যুদ্ধে জড়াবে না। তিনি আরও বলেন, এটি কংগ্রেসের ভেতর ইরানবিরোধী যুদ্ধে সম্ভাব্য বিরোধিতা কতটা গভীর, তা মাপার জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের একাংশ এ যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপকারী বলে মনে করছেন। ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন দীর্ঘদিন ধরেই হোয়াইট হাউজের কাছ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আবার কংগ্রেসের হাতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে আসছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০২০ সালে, সিনেটর কেইন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য একই ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাব সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ উভয় কক্ষেই পাস হয় এবং কিছু রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থনও পেয়েছিল। তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভেটো ঠেকানোর মতো প্রয়োজনীয় ভোট পাওয়া যায়নি বলে সেটি কার্যকর হয়নি।