বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

আশ্বস্ত শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্ত আজ

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৩৬ এএম

নিরাপদ আবাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল সোমবারের এই বৈঠকের আলোচনাকে ফলপ্রসূ হিসেবে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন নিয়ে আজ মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে সচিবালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাত সদস্যের একটি দল অংশ নেয়। এ সময় ডা. ফজলে রাব্বি হলের সহকারী প্রভোস্ট ডা. শহিদুল ইসলাম আখন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সচিবালয় থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কে-৮০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদীন তানভীর গণমাধ্যমকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে এবং তা ফলপ্রসূ। বিশেষ সহকারীর কথায় তারা মোটামুটি আশ্বস্ত হয়েছেন। বৈঠকে তাদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘দুটি নতুন হল করার প্রস্তাবনা আসবে। এর বাজেট করা আছে, একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) প্রথম সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপিত হবে। সায়েদুর রহমান স্যার এটি আশ্বস্ত করেছেন যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অগ্রগতি বাজেট হিসেবে আমাদের এটি উপস্থাপন করা হবে।’

আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তৌহিদুল আবেদীন তানভীর বলেন, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। মিটিং হলে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব কর্মসূচি সম্পর্কে। আমরা আসলে এ রকম অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে চাই না। দ্রুত একটা সমাধান চাচ্ছি। মিটিং হলে আশা করি একটি সিদ্ধান্তে চলে আসা যাবে।’

এর আগে গতকাল সোমবার সকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সে ঙ্গ বৈঠকের উদ্দেশ্যে সচিবালয়ে যান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ‘উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়নি। এর পরিবর্তে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

গত শনিবার পাঁচ দফা দাবিতে ঢামেক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। এদিন অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি কলেজ প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে একই কারণে ১৭ জুন ওরিয়েন্টেশন বর্জন করেন নবাগত কে-৮২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের জন্য দ্রুত বাজেট পাস, আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নতুন একাডেমিক ভবনের জন্য আলাদা বাজেট পাস করা, আবাসন ও একাডেমিক ভবনের বাজেট পৃথকভাবে অনুমোদন ও দ্রুত দৃশ্যমান বাস্তবায়ন এবং সব প্রকল্প ও কার্যক্রমের অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়োগ।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শনিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে কর্র্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে রবিবার দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ‘শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

যেসব বিষয়ে আলোচনা : গতকালের বৈঠকে বর্তমান ও নবাগত শিক্ষার্থীদের আবাসন, নতুন হল নির্মাণ এবং অ্যানাটমি বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম নিউক্লিয়ার ভবনে স্থানান্তরের বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বর্তমান শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা ও ঝুঁকি নিরীক্ষণের জন্য বিশেষায়িত টিম প্রেরণের কথাও বলেছেন, যাতে ঝুঁকি বিবেচনায় আগে থেকেই সরে আসা যায়। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে নবাগত কে-৮২ ব্যাচের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কলেজ কর্র্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করবে। তবে নবাগত ব্যাচের বিকল্প আবাসন তৈরি হতে যে সময় লাগবে, সে সময়টুকু তারা কীভাবে ক্লাস করবে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ছেলেদের জন্য ডা. ফজলে রাব্বি হলের মাঠে ও মেয়েদের জন্য অডিটোরিয়ামের পাশের ফাঁকা জায়গায় আবাসন তৈরি করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে। এর বাজেট আছে, তবে স্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। বিকল্প আবাসনের ক্ষেত্রে বাইরে ভাড়া নেওয়ার জন্য এখনো নিকটবর্তী কোনো ভবন খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও জানানো হয়েছে। আর দূরবর্তী কোনো ভবন পাওয়া গেলেও যাতায়াত ব্যবস্থা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নতুন হলের কাজ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশব্যাপী মেডিকেল কলেজগুলোতে ১৯টি হল তৈরির একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে তাদের জানানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হল ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ‘এর বাজেট ট্রান্সফার হয়নি। এ বিষয়টি আগামী মাসের প্রথম একনেক সভায় তোলা হবে। এই বাজেট ট্রান্সফারের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট খসড়ায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

মেডিকেলের অ্যানাটমি বিভাগে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, দুর্ঘটনার পর কলেজ কর্র্তৃপক্ষ অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্ট নিউক্লিয়ার বিল্ডিংয়ে শিফট করে। তাদের ক্লাসরুমের জন্য একাডেমিক ভবনের ওপর তলায় ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। তাই পাঠদান কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার জন্য অ্যানাটমি বিভাগের দাপ্তরিক কাজ অন্যত্র স্থানান্তর করে নিউক্লিয়ার ভবনে ক্লাসরুম স্থানান্তর করার নির্দেশনা আসবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত