আগের ম্যাচেই গায়ে উঠেছে বাংলাদেশের ওয়ানডে জার্সিটি। সেই ম্যাচে ৭৭ রানের ব্যবধানে হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে। অভিষেক ম্যাচে বল করে দিয়েছিলেন ৪৪ রান, নিয়েছিলেন মাত্র একটি উইকেট। দুদিনের ব্যবধানে রিশাদ হোসেনকে না খেলিয়ে তার ওপরেই ভরসা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই ভরসার প্রতিদান পাঁচ উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে দিয়েছেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এ অর্থোডক্স স্পিনারের ৩৯ রানে ৫ উইকেট শিকারের মধ্য দিয়েই ভেঙে যায় লঙ্কানদের ব্যাটিং স্তম্ভ। শেষ দিকে অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও আসে ১৬ রানের জয়। যা প্রেমাদাসায় বাংলাদেশের প্রথম। ম্যাচসেরা তানভীর গড়েছেন আরও এক কীর্তি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখন বাংলাদেশের সেরা বোলিংটাও তার। আরেক বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের রেকর্ড ভেঙেছেন তানভীর। ২০১৩ সালে পাল্লেকেলেতে ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রাজ্জাক।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটিতে মসৃণ পথেই এগোচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। ঠিক ওই সময়েই প্রথম আঘাতটা হানেন তানভীর ইসলাম। নিশান মাদুশকাকে ফিরিয়ে ভাঙেন ভয়ংকর হতে থাকা সেই জুটি। এরপর একে একে ফেরান কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, দুনিথ ভেল্লালাগে ও মাহিশ থিকশানাকে। ম্যাচ শেষে তানভীর বলেছেন, ‘ভালো লাগছে, ঠিক জায়গায় বল করেছি। আগের ম্যাচের চেয়ে আজ ভালো উইকেট ছিল। অধিনায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যিনি ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাস দিয়েছেন।’
এই ম্যাচে বোলিং শুরুর আগে মানসিক অবস্থা কেমন ছিল জানতে চাইলে তানভীর বলেন, ‘আমরা ফিল্ডিংয়ে নামার আগেই বিশ্বাস করছিলাম, এই রানটা আমরা ডিফেন্ড করতে পারব। এমন উইকেটে আমাদের উইকেট যদি এভাবে পড়ে যেতে পারে, তাহলে ওদেরকেও ফেরানো সম্ভব। ক্যাপ্টেনও আমাদের সে কথাই বলছিলেন। আমরা ম্যাচ জিতব এই বিশ্বাসটা আমাদের সবার মধ্যে ছিল। আমি প্রথম দুই ওভারে যখন বেশ রান হজম করি, তখন মিরাজ ভাই এসে আমাকে সাহস দিয়েছেন। উনি বলেছিলেন, তানভীর তুই পারবি, তোর ডিফেন্সিভ বোলিং করার প্রয়োজন নেই। সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা কর। তোর উইকেট নেওয়ার মতো করে বোলিং করতে হবে। আমি ওভাবেই চেষ্টা করেছি আর সফল হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মিরাজ বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান করাটাও কঠিন। আমাদের বিশ্বাস ছিল ২৪৮ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারব। তারা খুব ভালো খেলছিল আর আমাদের তখন উইকেট দরকার ছিল। আমি তানভীরকে বলেছি- আমাদের উইকেট দরকার, ইতিবাচক থাকে যেন। এ ছাড়া আমরা জিততে পারব না।’ দারুণ কিপটে বোলিংয়ে লঙ্কানদের রানের চাকা আটকে রাখায় কৃতিত্ব রয়েছে লিটন দাসের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া শামীম পাটোয়ারীর। অধিনায়কের কাছ থেকে প্রশংসাও পেয়েছেন তিনি। মিরাজ বলেন, ‘বিসিবি সভাপতি বুলবুল ভাই আমাদের অভিনন্দিত করেছেন। শামীম পাটোয়ারী অনেকদিন পর দলে এসেছে। ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে। বোলিং করেছে। এটা আমার কাছে মনে হয় অবিশ্বাস্য।
ম্যাচ নিয়ে অধিনায়ক জানান, ‘আজকেও দেখেন আমারা আজও অনেক রকম ব্যাটিং ধস হয়েছে। তারপরও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বিশেষ করে আমি অবশ্যই। একটা কৃতিত্ব দিতেে চাই তানজিম হাসান সাকিবকে। ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে। শেষের দিকে। কারণ ঐ সময়ে ওর রানটা দারুণ দরকারী ছিল। ও যেভাবে হাসারাঙ্গাকে আক্রমন করেছে। আমার কাছে মনে হয় ওর ৩৩ রানটা দলের জয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এই উইকেটে শেষ উইকেটে ২২০ রান যদি হতো। আর ২৫০ রান দুইটা দুইরকম চিত্র তো। তাই কৃতত্ব ওর জন্য প্রাপ্য। আমাদের দলের ভেতর সবার আত্মবিশ্বাস ছিল। সবাই সবাইকে মাঠের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী করেছে। এই জিনিসটা ভালো লেগেছে। সবার ভেতরে ঐ আত্মবিশ্বাসটা ছিল। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। এরজন্যই আমরা পেরেছি।’
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিতে নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আরও ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাঠে নামার প্রতিশ্রæতিও দিয়েছেন অধিনায়ক।