
দেশ থেকে যে টাকা পাচার হয়েছে, তা ফেরত আনার উদ্যোগকে ‘দিবাস্বপ্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব ও প্রশাসনবান্ধব হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে এবারের বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আমরা একটি জনবান্ধব বাজেট পাব। কিন্তু এই বাজেট হয়েছে দুর্নীতি ও অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় ও বৈধতা দেওয়ার বাজেট, একটি সংবিধানবিরোধী বাজেট। যারা বেআইনি পদ্ধতিতে উপার্জন করছে, তাদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা টাকা পাচার করে ফেলেছেন, তারা আবার এই টাকা দেশে আনবেন, এটা দিবাস্বপ্নের মতো। এর আগে সরকার একাধিকবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলেও তেমন সাড়া মেলেনি।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই বাজেট থেকে গরিব মানুষ কিছু পায়নি, বরং বিদেশে যারা বেনামে সম্পদ করেছেন, তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে হঠকারী ও অর্থনৈতিকভাবে অনুপযোগী। একজন একবার চুরি করল, আবার সেই টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়ে দিল। এই দুবার চুরির অপরাধীকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলো। অথচ সৎ করদাতারা বছরের পর বছর ৩০-৩২ শতাংশ কর দিয়েছেন। বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনা অলীক কল্পনা। এটা কার্যকর হবে না।
বাজেটকে পর্যবেক্ষণ করে দেবপ্রিয় বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য মূল্যস্ফীতিকে মূল সূচক হিসেবে ধরতে হবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্বৈত বিনিময় হার এবং সুদের হারে সমতা আনতে হবে। এর পাশাপাশি বাজেটে কৃষি খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং টিসিবিকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। সাধারণত নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক অভিঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের আয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ে না। আগামী অর্থবছরে তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায় তা বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি মনে করেন, মেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে ভর্তুকি বাড়ানোর সুযোগ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বেশি হতে হবে, যেটি এই অর্থবছরে কমে গিয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে। অতিমারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সামনে রেখে এবারের বাজেটকে অনেকেই বলছেন সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বব্যাপী খাদ্য, সার ও জ্বালানিÑ এই তিনটি প্রধান পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমদানি ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো অতিমারীর পূর্ব পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে পারেনি। প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবিকা এবং ক্রয়ক্ষমতা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ওপর এসব অভিঘাত তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই প্রেক্ষাপটে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গতকাল ব্র্যাক সেন্টার-এ ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ : পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে’ শীর্ষক একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন। তিনটি মূল বিষয়ের প্রতিফলন বাজেটে কতখানি হয়েছে তা তিনি আলোচনা করেন। প্রথমত, অতিমারীর প্রভাব স্বাস্থ্যগতভাবে আমরা পার করে এলেও এর আর্থসামাজিক যে প্রভাব নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ওপর পড়েছে, তা আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। দ্বিতীয়ত, গত ১০-১৫ বছরে সামষ্টিক অর্থনীতি এরকম চাপে পড়েনি এবং তৃতীয়ত, বিশ্বে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এই তিনটি বিষয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব কিছু মোকাবিলা করার জন্য অনেক চিন্তা, দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।
সরকারি ব্যয় সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে আলাদা কর্র্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। এই কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে ব্যয়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতি দূর হবে বলে মনে করেন তিনি। গতকাল রবিবার এক ওয়েবিনারে ডিসিসিআই সভাপতির আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবে ইতিবাচক মত দেননি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইনটিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনাবিষয়ক ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
ওয়েবিনারে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘সরকারি ব্যয়ের অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা নেই। এমনকি ব্যবসায়ীদেরও কারও কারও মধ্যে জবাবদিহিতার ঘাটতি আছে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আলাদা একটি কর্র্তৃপক্ষ হওয়া উচিত, যাতে দুর্নীতি দূর হয়।’
একই ওয়েবিনারে ‘সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানান প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আলাদা কর্র্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মত না দিলেও পরিসংখ্যানসংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের সহায়তাকে স্বাগত জানান। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের দেওয়া সুবিধা তেমন উপকারে আসবে না বলে মনে করেন তিনি।
এমএ মান্নান বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য টাকা পাচার করেনি। কোনো চোর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা চুরি করে না। সরকারের সুযোগ দেওয়ার ফলে টাকা ফিরে আসার সম্ভাবনা কম বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সর্বনাশ আর সুইজারল্যান্ড-বাহামার পৌষ মাস। সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনা আমার জীবদ্দশায় আশা করি না। বরং মাঝেমধ্যে যাওয়া-আসা হবে, কিছু মিটিং-সিটিং হবে। কিছু খরচ হবে...। বাস্তবতার নিরিখে মন্দের ভালো হিসেবে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টাকা এলে ভালো, না এলে ক্ষতি নেই। যা ছিল তাই থাকবে।’
আসন্ন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশাল এ ব্যয় মেটানোর জন্য তিনি আসন্ন অর্থবছরে একটি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে বিদেশ থেকে সম্পদ ও টাকা দেশে আনার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কর দিলে ওই সম্পদ ও টাকার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। তবে এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানাননি দেশের বিশ্লেষক ও গবেষকরা। তাদের মতে, এ ধরনের সুযোগ দেওয়া কোনো দিক দিয়েই গ্রহণযোগ্য বা যুক্তিযুক্ত নয়।
পরের অর্থবছরে যাতে এ ধরনের সুযোগ আর না দেওয়া হয় সেই প্রস্তাব রেখে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আর যাতে (টাকা বাইরে) না যায়, সেজন্য শক্ত করে দরজা বন্ধ করতে হবে।’
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে রেপিডের চেয়ারম্যান ড. এমএ রাজ্জাক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণে সতর্কতার ওপর গুরুত্ব দেন। মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যয় বেশি হওয়ায় সঞ্চয় কমে গিয়ে বিনিয়োগ কমতে পারে। এর মধ্যে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। খোলা বাজারে বিক্রি বা ওএমএস, ফুড প্রোগ্রামের মতো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বর্তমান বছরের তুলনায় কমে যাওয়াকে (জিডিপির বিবেচনায়) অবাক করা বিষয় উল্লেখ করেন তিনি।
বাজেট জনবান্ধবের চেয়ে ব্যবসাবান্ধব বেশি হয়েছে উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান সিলেটের চলমান বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এ সময় তিনি বাজেটে ২.৫০ শতাংশ করছাড় পেতে ১২ লাখ টাকার ওপরে ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, ‘এবার কেউ এই সুবিধা নিতে পারবে না। এই শর্ত বাস্তবসম্মত নয়।’ একই সঙ্গে কর কর্মকর্তা কর্র্তৃক ৫০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাবের সঙ্গেও দ্বিমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে রাজস্ব আসবে না বরং কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বাড়বে, সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কর দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হবেন। রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন হলে হয়রানি কমে যাবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রেপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ আগামী অর্থবছরের জন্য ম্যাক্রো ইকোনমির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য সচিব ড. মো. কাউসার আহমেদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মো. তৌহিদুল আলম খান রেডমানি কর্তৃক ৩০ জুন অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ‘আইএফএন রোড শো বাংলাদেশ-২০২২’-এর অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামিক ফাইন্যান্স ও ব্যাঙ্কিংয়ের ওপর আয়োজিত এই রোড শোর এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘বিল্ডিং মোমেনটাম : ইসলামিক ফাইন্যান্স ইন বাংলাদেশ’। ২০২১-এ অনুষ্ঠিত রোড শোতে অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য রোড শোর আয়োজক কমিটি তৌহিদুল আলমকে দ্বিতীয়বারের জন্য ওই পদে মনোনীত করল। আইএফএন রোড শোতে বাংলাদেশে ইসলামিক আর্থিক পরিষেবা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। তৌহিদুল আলম খান রোড শোর মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিজ্ঞপ্তি
দেশের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেবে এফবিসিসিআই। গতকাল রবিবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার ও বন্ডবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে এ কথা বলেন কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. আমজাদ হুসেইন।
তিনি বলেন, দেশে শিল্প স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের ভালো কোনো সুযোগ নেই। তাই বন্ড মার্কেটের প্রসার হলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। অভ্যন্তরীণ শিল্প বিকশিত হলে এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। এছাড়াও পুঁজিবাজারে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। বন্ড মার্কেট উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে আমজাদ হুসেইন বলেন, বন্ড বাজারের উন্নতি হলে পুঁজিবাজার এবং ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। দীর্ঘমেয়াদে তহবিল সংগ্রহে বৈচিত্র্য বাড়বে।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে পরিকল্পিত কর্মকৌশলের বিকল্প নেই। পুঁজিবাজারকে আরও বিকশিত করতে এ সম্পর্কিত তথ্য ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্ট্যান্ডিং কমিটির উদ্যোগে জেলা চেম্বারের মাধ্যমে তৃণমূলের উদ্যোক্তা ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান কমিটির চেয়ারম্যান শাকিল রিজভী। বৈঠকে করপোরেট বন্ড চালু করা, লেনদেনের খরচ কমানো, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ানো, মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেন কমিটির সদস্যরা।
এছাড়াও বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর পরিচালক নাসির মজুমদার, হাফেজ হারুন, প্রীতি চক্রবর্তী, নিজাম উদ্দিন, কমিটির কো-চেয়ারম্যান শরীফ আনোয়ার হোসেন, রিচার্ড ডি রোজারিও, সাজেদুল ইসলাম, মো. সাইফুদ্দিন, মজিবুল ইসলাম, ফারজানা চৌধুরীসহ অন্যরা।
বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনায় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎসংযোগ ব্যাহত হওয়ায় এ অঞ্চলগুলোর মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো পুনরায় সচল করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এ তিন জেলার ৪৫ শতাংশ সাইট (বিটিএস) অচল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা দিতে শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের তত্ত্বাবধানে এই মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। ওই সেল বন্যাদুর্গত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যান্ডউইথ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সরেজমিনে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনের পর বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনায় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এবং পানির অবাধ প্রবাহের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো পুনরায় সচলের কাজটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএন অপারেটর, আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জেনারেটর, অপটিক্যাল ফাইবার ও পর্যাপ্ত জ¦ালানি তেলের জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা চলমান আছে।
গত ১৭ জুন থেকে ভারী বর্ষণ ও অতিবৃষ্টির ফলে সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা এই তিন জেলা বন্যা প্লাবিত হয় এবং ওই জেলাগুলোর অধিবাসীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। ওই সব এলাকায় চারটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের মোট ২ হাজার ৫২৮ সাইট (বিটিএস) রয়েছে। বন্যা প্লাবিত এলাকায় অবস্থিত ১ হাজার ১৫৯টি বিটিএস বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই সাইটভুক্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। মোবাইল অপারেটরদের প্রচেষ্টায় ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৮ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১৫৭টি সাইট পুনরায় সচল করা হয় এবং অবশিষ্ট সাইটগুলো সচল করার জন্য জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় ওই সব স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে সেসব এলাকায় জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক চালু রাখার চেষ্টা করছে মোবাইল সেবাদাতারা। তবে সড়ক যোগাযোগের পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ায় সাইটগুলোতে জেনারেটর পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সাইটগুলোতে জেনারেটরের তেল পৌঁছানোও দুষ্কর হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সহযোগিতায় মোবাইল অপারেটররা টেলিযোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমটব জানিয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার প্রায় ৪৫ শতাংশ সাইট এখনো ডাউন। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলেও চার্জ দিতে পারছেন না।
বর্তমানে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে বিটিআরসির উদ্যোগে টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হয়েছে, যেসব নম্বরে কথা বলতে গ্রাহকদের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না।
টোল ফ্রি নম্বরগুলো হলো বিভাগীয় বন্যা মনিটরিং সেল : ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৫১৩৯১৮০৯৬;
সিলেট জেলা : ০১৯৯৫৭৮১১৪৪, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮;
সুনামগঞ্জ জেলা : ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৫১৩৯১৮০৯৭।
সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার পানি বাড়ছে। অনেক স্থানে ব্যাংকের শাখা, উপশাখা, অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যেসব ব্যাংক শাখা ও উপশাখায় লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে না তা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একই সঙ্গে বন্ধ রাখা শাখা ও উপশাখার গ্রাহকদের নিকটবর্তী শাখা থেকে জরুরি ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য কয়েকটি জেলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। যেসব শাখা ও উপশাখায় বন্যাজনিত কারণে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, সেই সব শাখা ও উপশাখার কার্যক্রম বন্ধ রেখে গ্রাহকদের নিকটবর্তী শাখা থেকে জরুরি ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ব্যাংক।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরপরই গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট শাখা ও উপশাখা থেকে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেও নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে গত শনিবার সিলেট ও সুনামগঞ্জের চারটি শাখা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। শাখাগুলো হলো সিলেট উপশহর, বিশ^নাথ, দক্ষিণ সুরমা ও সুনামগঞ্জ শাখা।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।