
বড় সংখ্যার গণিতটাই বড় নয়, আসলটা হচ্ছে যোগফলটা নির্ভুল কি না। বলা হলো এ কারণে যে, স্বাধীনতা-উত্তর ঢাকা শহরে অসংখ্য বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বাণিজ্য পুঁজির হাত ধরে জন্ম নিয়েছে। চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় তো বটেই, প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় ও হোটেল ম্যানেজমেন্টের মতো সেবামূলক উচ্চতর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রের ‘জাতে ওঠার’ চেষ্টায় রত। অন্যদিকে উপনিবেশ যুগের অন্তিম পর্বে শিক্ষা-সুযোগ বঞ্চিত কৃষিনির্ভর পূর্ববঙ্গীয় ‘বাঙাল’ রক্তে সামন্তবাদী জীবনচর্চার বাইরে আধুনিকতার হিমোগ্লোবিন বয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ তকমা দেনেওয়ালাদের উদ্দেশ্য যে খুব মহৎ ছিল তা বলা যাবে না। সরকারি অর্থের সঙ্গে নবাব-জমিদার-ব্যবসায়ীদের দানে গড়ে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অখণ্ড দু-এক দশক শিক্ষার্থী হিসেবে ধারণ করেছিল পূর্ববঙ্গের শহর, উপশহর এবং কৃষ্টিভিত্তিক গ্রামের হিন্দু-মুসলমান অভিজাত শ্রেণির সন্তানদের। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির বদল ঘটে। শিক্ষার্থীদের বড় অংশটিই হয়ে ওঠে গ্রামের শিক্ষাবঞ্চিত কৃষক পরিবারের। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণবাদ অর্থাৎ উচ্চবর্গীয় হিন্দু শিক্ষক ও ছাত্রদের যে দাপট টিকে ছিল দীর্ঘদিন, এই অভিশাপমুক্ত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিরদিনই।
হিন্দু-মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ছাত্রাবাস থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে হিন্দু উচ্চবর্গীয় ছাত্রদের অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মতো পৃথক ছাত্রাবাস তৈরির দাবি তোলার প্রয়োজন। তৎকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। অপমানের কারণেই নিজের নামের বানান বদলে ‘মেঘনাথ’-এর বদলে ‘মেঘনাদ’ অর্থাৎ মেঘের গর্জন রেখেছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এর সাক্ষী ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল শুধু মুসলিম সমাজে শিক্ষা বিস্তার নয়, উচ্চতর দর্শন সৃষ্টি। উচ্চতর মানবিক দর্শন, আধুনিকতা, বিজ্ঞান-মনস্কতা, আধুনিক অর্থনীতি, কল্পিত নয়, বাস্তব ইতিহাসচর্চা। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রাষ্ট্রের দাপুটে আমলা হওয়ার লোভ পরিহার করে। এসব কারণেই আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মানুষ পূর্ববঙ্গের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক নবজাগরণের ধাত্রীভূমি হিসেবে সালাম জানায়। অথচ এই মহান বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে ঘিরে আজ কী হচ্ছে?
সাতচল্লিশের বাংলা ভাগের সময় ঢাকা ছিল খুবই ছোট একটি শহর। তার চারপাশ ঘিরে ছিল না ছিন্নমূল মানুষে ঠাসা বস্তি। দরিদ্র মানুষের বস্তিতে ঢাকা ঘেরাও হতে থাকে দেশ ভাগের পর। এর আগে অল্প আয়ের দরিদ্রদের বসবাস মূল শহরের সীমানা কাঠামোর ভেতর ছিল। শ্রেণির ভাগাভাগি থাকলেও এত স্পষ্ট ছিল না। নগর ঢাকার শ্রেণি ভাগাভাগিটা বেআব্রু হয়ে ওঠে একাত্তরের স্বাধীনতা-উত্তর। সারা বাংলায় যুদ্ধের ধ্বংসলীলা আর চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ কর্মহীন ক্ষুধার্ত মানুষকে বাধ্য করে বাস্তুভিটা ফেলে রাজধানী শহরে ছুটে আসতে। আর ঠিক তখনই নাগরিকের শ্রেণি-পরিচয়টা ব্যাপক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালির একাংশের ধনী হওয়ার প্রবণতা নীতিহীন প্রতিযোগিতা শ্রেণি-বদলকে উসকে দেয়। রাখঢাক নয়, ঝলমল করে ওঠে দরিদ্রের ঢাকা শহর, ধনীর শহর, মধ্যবিত্তের শহর ও ছিন্নমূলের শহর। দ্রুত ঢাকার জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। নানা পেশার শ্রমজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে রূপান্তরিত ঢাকায় বৃদ্ধি পায় ধনী আর উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে দরিদ্রের সংখ্যা।
উন্নত বিশ্ব ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই, এশিয়ার ধনী দেশগুলোতেও দারিদ্র্য আছে, দরিদ্র আছে, কিন্তু বোঝা যায় না। লজ্জাটা নানা কৌশলে ঢাকা থাকে। ঢাকার লজ্জা কিন্তু আড়াল থাকে না। আড়ালের রাজনীতিটা জানা নেই নগর ঢাকার। কেননা অনন্ত সমস্যা তার। ঢাকার ভূতলে পানীয় জল নেই। শুষে নিয়েছে নগর তৃষ্ণা। সেই কবে ভূভাগের ওপরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ মরণদশায় চলে গেছে। নগর তৃষ্ণার ড্রাগনের মতো দীর্ঘ জিহ্বা পৌঁছে গেছে পদ্মায়। পদ্মাকে শুধু ইলিশ জোগালেই হয় না, তৃষ্ণাও মেটাতে হয়। নগর ঢাকার সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। পূর্বপাশের জলাভূমি গিলে নদী শীতলক্ষ্যাকে জাপটে ধরে পূর্বতীরের ফসল ভূমি ডিঙিয়ে ছুটছে আরও আগে। পদ্মা নদীটা শীতলক্ষার মতো ছোট নয় বলে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। দখলদারির দায়িত্ব পেয়েছে এবার পদ্মা সেতু। মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরে গিলবে ঢাকা শহর। মেট্রোরেল বা পাতাল রেল নগরীর নিজের বুক খুঁড়ে পাতালে যেতে পারছে না বলে মাথার ওপরে উঠে আকাশ দখল নিচ্ছে। মেট্রোরেল বাঙালির মাথার ওপর দিয়ে ছুটবে, আর কী চাই উন্নয়ন বাঙালির?
ঐতিহাসিক কারণেই ইংরেজরা ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির আদলে গড়ে তুলেছিল কলকাতাকে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে কিছু বাঙালিকে সঙ্গী করে ইংরেজরা ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিচর্চা শুরু করে কলকাতায়। সেই সংস্কৃতির ভেতর লুকিয়েছিল আধিপত্যবাদ, আনুগত্য আর শাসকের প্রতি মুগ্ধতা। সঙ্গে ছিল তাদের শিল্প-সাহিত্য, ঐতিহ্য, সংগীত, কলাবিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদির প্রতি মুগ্ধতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলে অনিবার্য হয়ে ওঠে ঔপনিবেশিক আর উত্তর-ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। সেই দ্বান্দ্বিক বাস্তবতা যত তীব্র ছিল নগর কলকাতায়, ততটা ছিল না ঢাকায়। স্বাধীন পূর্ববঙ্গবাসীর নগর ঢাকা তখন গঠন-পুনর্গঠনে ব্যস্ত। মুসলিম লীগের ভাঙন, আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্ভব, পূর্ববঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের বিপর্যয়, কমিউনিস্ট পার্টির নিষিদ্ধকরণ ছিল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বেরই ফল। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, এর সবকিছুরই ধাত্রীভূমি ছিল নবাবি বাংলা আর কোম্পানি বাংলার এই ঢাকা শহর।
সাতচল্লিশের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরে থেকেই পূর্ববঙ্গের বাঙালির রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক রাজধানী হয়ে ওঠে নগর ঢাকা। এ ক্ষেত্রে সংকট ছিল সংস্কৃতির। প্রশ্নগুলো ছিল বাঙালি নাকি মুসলমান? ‘বাঙালি’ সংস্কৃতিটা কত পার্সেন্ট মুসলিম আর কত পার্সেন্ট হিন্দু? নির্মম সত্য এই যে, একাত্তরের শ্রদ্ধাটাও এর মীমাংসা ষোলোআনা করতে পারল না। পারার কথাও নয়। জাতীয়তাবাদ এর মীমাংসা করতে পারে না। পারে একমাত্র সমাজতন্ত্র। বাঙালিরা অনেক কিছুই করেছে। ভাষার জন্য লড়াই করেছে, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, যা অসমাপ্ত রেখেছে তা পাশ কেটে গেছে তার নাম সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সাংস্কৃতিক বিপ্লব তো দূর-অস্ত।
একাত্তরের চেতনা-স্নাত এবং দর্শনজাত বাঙালি আজ নগর ঢাকায় দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। বিবর্তনবাদে প্রজাতি বিলুপ্তের দশা যেন। কয়েকজন ক্ষমতালোভী সেনানায়ক আর ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী মহলের সামরিক অভ্যুত্থান কি লড়াকু জাতির সব অর্জন ধ্বংস করে দিতে পারে? পারে না তো! অথচ পঁচাত্তরে পারল। কেন পারল? পারল, কেননা সাংস্কৃতিক চর্চাবর্জিত কোনো জাতীয়তাবাদই টেকসই হয় না। ক্ষণভঙ্গুর হতে বাধ্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদে শুধু ছিল রাজনীতি। ছিল না শক্ত ভিতের সাংস্কৃতিক শক্তি। রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে থাকে যে সংস্কৃতির পোক্ত ভিতের ওপর তা না থাকলে সামান্য চাপেই পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের হিসাব দরকার। দেখতে হবে কীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে একাত্তরের বাঙালিত্ব। শূন্যস্থান পূর্ণ করছে যুদ্ধের ভেতর দিয়ে পরিত্যাগ করা বা বর্জন করা বর্জ্যপদার্থ। মৌলবাদ।
রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক দর্শন নড়বড়ে হয়ে যায় যদি সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র গড়ে না ওঠে। অন্যদিকে চর্চার কেন্দ্রগুলোর দুয়ার বন্ধ করে দিলে একসময় অন্ধকার ঘরটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ইঁদুর-উই পোকার দাপটে। যেমনটা ঘটেছিল সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার পতনের আগেই। সংস্কৃতি শুধু তো নাচ-গান-যাত্রাপালা চর্চা বা উপভোগ করা নয়, মূল চর্চাটা হচ্ছে মৌলবিজ্ঞানচর্চা, বস্তুবাদী দর্শনচর্চা। জ্ঞানচর্চার সর্বক্ষেত্রে নিত্যনতুন জিজ্ঞাসা ও উত্তরের জন্য গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা একটি আধুনিক নগরের লক্ষণ। ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় শহরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনি গবেষণা কেন্দ্র আছে। ওসবেই তৈরি হয় নোবেল বিজয়ীদের। সংস্কৃতি ক্ষেত্রের নানা অভিনতুন তত্ত্বও সৃষ্টি হয় তাতে। একটি নগর সেই কেন্দ্রগুলোকে লালন-পালন করে। অন্যদিকে নগর ঢাকা? দেখেশুনে মনে হচ্ছে পুরো ঢাকা শহরটাকেই দখল করে আছেন রাজনীতি আর রাজনীতিবিদরা। গলি, রাজপথ যেখানেই চোখ যায় শুধু রাজনৈতিক দলের ছোট-বড় ক্লাব-অফিস, নেতা-পাতি নেতা। দেয়ালগুলো ভরে আছে ভুল বানানে লেখা রাজনৈতিক সেøাগান। অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকার শহরে হেঁটে হেঁটে কালঘাম ছুটে যাবে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় খুঁজে পেতে।
ইউরোপের নগরগুলোকে কেন্দ্র করে যেমনি মধ্যযুগ, তেমনি আধুনিক যুগেও বিশ্বসভ্যতার চিন্তা ও মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে। আশ্চর্য এটাও যে পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক ধর্মীয় অবতারদের জন্মও নগরে। আসলে নগরকেন্দ্রিক সমাজ ও জীবনসভ্যতার বিকাশের অন্যতম উচ্চস্তর। শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে বিজ্ঞান মনস্কতার চর্চা, সমাজচিন্তার নানা রকম মতবাদের উদ্ভব ঘটে নগর জীবনকে কেন্দ্র করে। বাস্তব সত্য হচ্ছে বাঙালির কাছে শিল্পবিপ্লবের কনসেপ্টটাই অনার্জিত এবং অজানা। স্বাধীন বাঙালির নব নব গবেষণার নগরী হয়ে উঠল না। ঢাকা শুধু শাসকশ্রেণির বসবাসের নগরী, লুটেরা নব্য ধনীদের ভোগবাদের নগরী হয়েই রইল। প্রাচীন এথেন্স কিংবা আধুনিক লন্ডন এবং আরও অনেক নগরীর দূরবর্তী এক নগরের নাম ঢাকা। বাঙালিকে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক যুগ ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল বিদ্যাসাগর, রামমোহন, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জগদীশ বসু, সত্যেন বসু, কাজী আবদুল ওদুদের মতো মহান ব্যক্তিদের পেতে। বিশ্ব যেমনি অপেক্ষা করেছিল সক্রেটিস, মার্কস, লেনিন, নিউটন, আইনস্টাইন, শেক্সপিয়ারকে পেতে। কোথায় বসে? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো নগর ঠিকানায়। বাঙালিরাও কি নগর ঢাকায় বসে এমনি কারও অপেক্ষায় আছে? কে বা কারা এবং কত দিন?
লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক
‘মধ্যবিত্ত’ শুধু মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাকে নির্দেশ করে না, বরং, মধ্যবিত্ত একটা কালচার বা সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে। মধ্যবিত্ত কালচারের ওপর ভিত্তি করে ইউরোপে রেনেসাঁর জন্ম হয়েছিল। উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও ছিল মধ্যবিত্তদের নেতৃত্ব আর মনস্তত্ত্ব। এ দেশের মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক চেতনা বা আন্দোলনের শক্তি অত জোরদার না হলেও, সামাজিক কালচারে তারা কিন্তু কখনোই পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু, বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনমনে, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আর ঝুঁকিতে মধ্যবিত্তরাই।
দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ে মারাত্মক আলোচনা আর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছু জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে বা ভবিষ্যতে আরও হবে, যার সুফল দেশের দরিদ্র মানুষ পেলেও মধ্যবিত্তরা খুব একটা পাবে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশের সরকাররা সাধারণত খুব একটা বেশি জনকল্যাণমূলক সরকার হয় না। হলেও তাদের গৃহীত স্কিমগুলো বড়জোর দরিদ্র শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
এ দেশের মধ্যবিত্ত কারা? এ দেশে এই প্রশ্নের উত্তর বহু দিন ধরেই ফয়সালা হয়নি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে, ‘মধ্যবিত্ত’দের সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেসব সংজ্ঞা ত্রুটিমুক্ত নয়। অর্থনীতি যেহেতু আমার বিষয় নয়, তাই আমার বাস্তবিক জ্ঞান থেকে, আমি আমার এই লেখাতে মধ্যবিত্তদের সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা ‘মধ্যবিত্ত’ বলতে সাধারণত বুঝি, যারা কিছুটা বা ক্ষেত্রবিশেষে খানিকটা শিক্ষিত; মাঝারি বা স্বল্প বেতনের চাকরি অথবা ব্যবসা করে; অথবা চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে, পেনশনের টাকাগুলো দিয়ে বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। এই ধরনের সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থাসম্পন্ন মানুষগুলো আমাদের সমাজে সংখ্যায় যদিও অনেক, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অবহেলিত। সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এদের জীবনকে শুধু জীবিকার ক্ষেত্রেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলেনি, বরং এদের অনেক সামাজিক লাইফস্টাইলকে বিপন্ন করছে। কিন্তু, এ বিষয়টাকে এত হেলাফেলা করে দেখার কিছু নেই। কারণ মধ্যবিত্তদের ব্যবহারিক জীবনযাপন রাষ্ট্রের অর্থনীতি, রাজনীতি ও মূল্যবোধকেও প্রভাবিত করে।
এবার দেখা যাক, মধ্যবিত্তদের ব্যবহারিক জীবনযাপন কেমন হয়? গত ২০১৫ সাল থেকে মধ্যবিত্তদের লাইফস্টাইল একটা মাত্রা পেয়েছিল। কারণ, সরকার তখন বাজার মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করেছিল। এর ফলে, সরকারি ও বেসরকারি খাতে চাকুরেদের বেতন বাড়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এবং তাদের বহুদিনের রুচির বাস্তবায়ন ঘটানোর সুবিধা হয়। গণপরিবহনের যাচ্ছেতাই অবস্থার কারণে মধ্যবিত্তরা মেল বা লোকাল ট্রেন ছেড়ে, ইন্টারসিটির তাপানুকূল কম্পার্টমেন্টে চড়া শুরু করে। এদের কল্যাণে দূরপাল্লায় বহু এসি বাসের সূচনা হয়। এরা দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানে চড়ে সেলফি তোলা শুরু করে। ছুটি-ছাঁটাতে এরা কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির হোটেলগুলো ভরিয়ে ফেলে। সরকারি হসপিটালের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দেড় মিনিটের সেবা নেওয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে এনে, প্রাইভেট হসপিটালে সেবা নেওয়া শুরু করে। এরাই লোকাল বাস আর লেগুনা ছেড়ে, পুরো সিএনজি বা ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে আত্মীয়বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায়। এরা স্যাঁতসেঁতে আর দুর্গন্ধময় কাঁচাবাজার ছেড়ে, কিছুটা বাড়তি দাম দিয়েও সুপার স্টোরে গিয়ে বাজার করা শুরু করেছিল। তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে এরা কিস্তিতে এসি আর আইপিএস কিনেছিল। মাসের কোনো এক ছুটির দিনে এরা পুরো পরিবার নিয়ে বাইরে যেত, সিনেমা দেখত, রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি কিনে খেত। এরাই ছিল বইমেলার আর বাণিজ্য মেলার সবচেয়ে বড় ক্রেতা গোষ্ঠী। তারপরও এরা মাস শেষে কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করে, নিজেদের ছোট ছোট সাধ পূরণের চেষ্টায় ছিল।
কিন্তু অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মধ্যবিত্তদের যাপিত জীবনের অনেক কিছুকেই আজ ব্যাহত করেছে। এরাই সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত। এরা পারছে না রাতারাতি এদের জীবনের অনেক চর্চাকে ত্যাগ করতে, না পারছে ঊর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে তাল মেলাতে। এদের জন্য নেই কোনো রেশন কার্ড, ফেয়ার প্রাইস কার্ড, ভিজিএফ কার্ড, কিছুই। এরা চাইলেও দৌড়াতে পারে না টিসিবির ট্রাকের পেছনে। দিনে দিনে অনেক সাধ-আহ্লাদ ত্যাগ করে, এরা আজ ক্ষুব্ধ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে। কোনো সন্দেহ নেই যে, সাম্প্রতিক মহামারি ও যুদ্ধের বৈশি^ক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি এই হঠাৎ দ্রব্যমূল্যের পেছনে আছে রাষ্ট্রের আর্থিক খাতে অনেক দিনের জমে থাকা দুর্নীতি, অনিয়ম আর জবাবদিহিহীনতা। তাই তো প্রতিনিয়ত অনিয়মের বিরুদ্ধে আজ এরা সজাগ সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন অনাচারের ওপর ট্রল ভিডিও, প্যারোডি আর গান বানিয়ে, এরা এদের প্রতিবাদের জানান দিচ্ছে। মধ্যবিত্তরা এমনিতেই এদের অবস্থানের কারণেই প্রাকৃতিকভাবে খানিকটা ক্রিয়েটিভ থাকে। রাজপথে নামার মতো তীব্র সাহস আর তেজ যদিও এরা দেখাচ্ছে না, কিন্তু তাই বলে এদের আওয়াজ বন্ধ নেই। মানুষের সাধারণত পেটে খেলে, পিঠে সয়; কিন্তু পেটের খাবারেই যদি টান পড়ে, তখন আর তার হারানোর কোনো ভয় থাকে না। মধ্যবিত্তদের এই সামাজিক মাধ্যমের আওয়াজ যদি রাজপথে নেমে আসে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত হবে, মধ্যবিত্তদের বাছাই করে, তাদের জন্য কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করা। সরকারের উচিত নতুন পে-স্কেল প্রদান করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ওপর ভর্তুকি দেওয়া। মধ্যবিত্তদের জন্য ফেয়ার প্রাইস কার্ড চালু করা বা রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা। মধ্যবিত্তদের অবহেলা করা উচিত নয়। দেশে এবং বিদেশে বেশির ভাগ রাজনৈতিক আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ মধ্যবিত্তদের মধ্য থেকে উত্থিত হতে দেখা গেছে।
লেখক : শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
গত মাসে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের সময় একাধিকবার বেশ কিছু গোলা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরেও এসে পড়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের আকাশসীমাও লঙ্ঘন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই গোলা ছুড়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এমনকি গোলাগুলোর কয়েকটি ইচ্ছাকৃতভাবেই ছোড়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা হয়তো বাংলাদেশকে বিশেষ কোনো বার্তা দিতে চায়। হতে পারে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ব্যাপারে বাংলাদেশকে সাবধান করতে চায় এবং রাখাইন ও চীন প্রদেশের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশকে কঠোরভাবে নিরপেক্ষ থাকার জন্য বলছে। কারণ, সম্প্রতি আরাকান আর্মি ইঙ্গিত দিয়েছে, বাংলাদেশ যদি তাদের স্বীকৃতি দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে তারাও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
তবে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশ নিরপেক্ষই রয়েছে। এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই যে, রাখাইনের ভেতরের ঘটনাবলিতে বা চীন প্রদেশের বিদ্রোহেও বাংলাদেশ কোনো পদক্ষেপ বা ভূমিকা নিয়েছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পরও বাংলাদেশ রাখাইন থেকে দূরে এবং নিরপেক্ষ অবস্থানেই রয়েছে। তার পরও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এমন উসকানিমূলক আচরণ করছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের উত্তাপ বাংলাদেশেও এসে পড়বে। আর এখন শুধু বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন বা চীন প্রদেশেই নয় বরং পুরো মিয়ানমারেই রীতিমতো গৃহযুদ্ধ চলছে। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গড়ার জন্য এক হয়ে লড়াই শুরু করেছে।
অনেক বিশ্লেষক আবার বলছেন, এই উসকানির পেছনে চীন দেশের হাতও থাকতে পারে। একদিকে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোয়াড জোটে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে, চীন চায় বাংলাদেশ যেন তাদের নেতৃত্বাধীন গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভে (জিএসআই) যোগ দেয়। এখন মিয়ানমারকে দিয়ে বাংলাদেশে গোলাবর্ষণের মাধ্যমে চীন হয়তো ইঙ্গিত দিচ্ছে, অবাধ্য হলে তারা চাইলে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
তবে চলমান এই ভূরাজনৈতিক খেলার আরও বহু বছর আগে থেকেই মিয়ানমার ভূ-অর্থনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছিল। এমনকি ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে মিয়ানমার বাংলাদেশের স্বার্থের বিপরীতে ব্যবহৃত হওয়ার ক্ষেত্র প্রায় প্রস্তুত। ফলে মিয়ানমার ইস্যুতে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন অনেক বেশি নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছি। কারণ মিয়ানমারের মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রায় বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।
রাখাইন প্রদেশসহ পুরো মিয়ানমারেই চীন ও ভারতের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। রাখাইন প্রদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে চীন হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ভারতও এর ভাগীদার হতে চায়। ভারত অবশ্য, ২০১৬ সালেই রাখাইনের রাজধানী সিত্তের উপকূলে একটি সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করেছে। চীন ও ভারত উভয় দেশই বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর হয়ে রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যের জন্য মিয়ানমারের বন্দরগুলো ব্যবহার করছে। রাখাইন প্রদেশে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরেরও মিয়ানমারে বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক গভীর করেছে। ফলে জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক বা আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক কোনো বহুজাতিক ফোরামের কাছ থেকেও বাংলাদেশ সামান্যতম সাহায্যও আশা করতে পারে না।
মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা চীনের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার আগে থেকেই মিয়ানমার ও চীন পরস্পরকে ‘সহোদর’ ভাই বলে সম্বোধন করত; যা থেকে তাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা অনুমান করা যায়। মিয়ানমারের দিক থেকে ঐতিহাসিকভাবেই চীন তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। কারণ চীনের সঙ্গে দেশটির রয়েছে ১৩৪৮ মাইলের এক বিশাল সীমান্ত। মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও অন্যান্য বহুমুখী দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নেয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধও আরোপ করে। ফলে মিয়ানমার তার টিকে থাকার জন্য আরও বেশি চীনমুখী নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের দুই লাইনের সম্পর্ক ছিল, দ্বিরাষ্ট্রিক সম্পর্ক এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক। চীনে ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর চীন মিয়ানমারেও কমিউনিস্টদের ক্ষমতায় আনতে চাইলে দেশ দুটির দ্বিরাষ্ট্রিক সম্পর্কে অবনতি ঘটে। তবে ১৯৮৫ সালে চীন মিয়ানমারের কমিউনিস্টদের সহায়তা দেওয়ার নীতি ত্যাগ করে এবং ১৯৮৯ সালে এক অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বার্মিজ কমিউনিস্ট পার্টিও খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়। এই সুযোগে মিয়ানমারের সামরিক সরকার চীন সীমান্তবর্তী কমিউনিস্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে সমর্থ হয়। রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্কুল, হাসপাতাল তৈরি, বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদান এবং সীমান্ত-বাণিজ্য প্রভৃতি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার বিনিময়ে কমিউনিস্টরাও তাদের সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে। এরপর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা থান শুয়ে ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে চীন ভ্রমণ করেন এবং চীনের সঙ্গে গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন।
তারপর থেকেই মূলত মিয়ানমার পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র আমদানি না করে নিরপেক্ষ থাকার নীতি ত্যাগ করে এবং চীনের অস্ত্র দিয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। একই সঙ্গে চীনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহায়তাও আদায় করে নেয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মিয়ানমার চীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়। চীনের সঙ্গে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্কের ফলেই মিয়ানমারের বর্তমান সেনা সরকারও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও টিকে থাকতে পারছে। এমনকি মাঝখানের অং সান সু চির কথিত বেসামরিক সরকারও টিকে থাকার জন্য সম্পূর্ণতই চীনের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। কারণ পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীই সব কলকাঠি নাড়ছিল।
চীন মিয়ানমারের তিনটি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়Ñ অবকাঠামো উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনৈতিক উদ্যোগ এবং জ্বালানি খাত। এর মধ্যে ‘আইয়েয়াওয়াদ্দা সড়ক প্রকল্প’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ইউনান থেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের থিলওয়া বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এর অধীনে ভামো পর্যন্ত নদী পথের ড্রেজিং, ভামোতে একটি কনটেইনার পোর্ট নির্মাণ এবং সেখান থেকে চীনের সীমান্ত বন্দর মুজে বা লিউজেল পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ। যার মূল উদ্দেশ্য, মিয়ানমারের ওপর দিয়ে সরাসরি বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। এতে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সঙ্গে চীনাদের বাণিজ্যের পরিবহন খরচ ও সময় অনেক বেঁচে যাবে এবং মালাক্কা প্রণালির সংঘাত এড়িয়ে চলা যাবে। তা ছাড়া বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও সহজেই প্রবেশ করা যাবে। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধের ক্ষেত্রে চীন যেই কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে, তার পেছনে এটি এবং রাখাইনের গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটিও অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ এখনো মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের হাতেই রয়েছে। চীনও সেখানে ভাগীদার হতে চায়। ফলে এক মহাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়ে গেছে। এখন এই তিন শক্তির কার কী অবস্থান এবং কার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কী সেসবের ওপর আমাদের অবিলম্বে গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের রাজনীতিক বিশ্লেষণে অতিসরলীকরণ আর গৎবাঁধা সূত্র দিয়ে সবকিছু বোঝাপড়ার চেষ্টার যে ধরাবাঁধা একটা প্রকট প্রবণতা আছে, সেখান থেকেও বের হয়ে এসে বাস্তব তথ্য-উপাত্তনির্ভর বিশ্লেষণের সঙ্গে পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বিপদগুলো কী তা নির্মোহভাবে শনাক্ত করাটাও জরুরি।
এ ছাড়া পরাশক্তিগুলোর সম্পর্কে মোড় বদল বা নতুন উপাদান যুক্ত হলে কী ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তাও আগাম আন্দাজ করতে না পারলে আমাদের নিরাপত্তা ভাবনা এবং পররাষ্ট্রনীতির সঠিক অভিমুখ নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। অনেকেই প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য আর ভরকেন্দ্রের জায়গাগুলো গুলিয়ে ফেলছেন। বাস্তব স্বার্থগত সম্পর্কের জড়াজড়ি আর শক্তির মেরুকরণের গতি প্রক্রিয়ায় নতুন যে উপাদানগুলো যুক্ত হতে পারে বা হচ্ছে তার দিকেও নজর রাখছেন না। একই সঙ্গে সম্ভাব্য মিত্র অনুসন্ধান ও নিরাপত্তা ভারসাম্যের অনুকূল পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের কাজও করতে হবে এই বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখেই। আর কূটনীতির পাশাপাশি সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, জনগণকে সমগ্র পরিস্থিতি জানিয়ে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু করা। কারণ, দিন শেষে নিজের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লড়াইটা বাংলাদেশকে একাই লড়তে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক
এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়ল দেশ। আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তা সাধারণত বিদ্যুৎকেন্দ্র, সোলার প্ল্যান্ট, জলবিদ্যুৎ, বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ একই জায়গায় যুক্ত করা হয়, যা গ্রিড নামে পরিচিত। এই গ্রিড বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগত বিদ্যুৎকে ম্যানেজ করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। আর জাতীয় গ্রিড হলো প্রতিটি গ্রিডের সঙ্গে অন্য একটি গ্রিডকে যুক্ত করে রাখা, যা পরিচালনা করে সরকারি সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। কোনো কারণে জাতীয় গ্রিড ফেইল করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অসংখ্যবার নানা মাত্রায় ঘটনাটি ঘটেছে। ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর সারা দেশে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল। যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দেয়। ২০১৭ সালের ৩ মে আকস্মিক গ্রিড বিপর্যয়ে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩২টি জেলা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় গ্রিডের আরেকটি সঞ্চালন লাইনের বিভ্রাটে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৩২টি জেলায় ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এতে মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি কলকারখানায় উৎপাদন ও অফিস-আদালতে কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়। হাসপাতালগুলোতে সেবা ব্যাহত হয়। জেনারেটর চালাতে জ্বালানি তেল কিনতে পেট্রোলপাম্পগুলোতে ভিড় করে মানুষ। মোবাইল সেবা বিঘিœত, ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ হয়ে যায়। পূজামণ্ডপে নিতে হয় বাড়তি সতর্কতা।
এ কথা ঠিক যে, বিদ্যুৎ গ্রিডে সমস্যা হতে পারে। বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরনো ও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনে (গ্রিড) ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হলে গ্রিডের সার্কিট পুড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে। সঞ্চালন লাইনে ছিদ্র দেখা দিলে, তা থেকে স্পার্ক করে গ্রিড বন্ধ হতে পারে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ফ্রিকোয়েন্সিতে হেরফের হলে গ্রিড বন্ধ হতে পারে। এমনকি চালু বা সক্রিয় অবস্থায় সঞ্চালন লাইনে কোনো পাখি বসলে কিংবা কোনো গাছ বা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়লেও গ্রিড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ ছিল লাইনের নিচে বেড়ে ওঠা একটি গাছ সঞ্চালন লাইনটি স্পর্শ করা। ২০১২ সালে ভারতের গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষকরা সেচের জন্য অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছিল। ফলে সঞ্চালন লাইন ওভারলোডেড হয়ে বিপর্যয় ঘটে। বাংলাদেশে গত ৬ সেপ্টেম্বর সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণ জানা যায়নি। ২০১৪ সালের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ কর্র্তৃপক্ষ জাতীয় বিদ্যুৎ ‘সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি’ কমে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু গ্রিডের কোথায়, কী কারণে এ সমস্যা হয়েছিল সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকালের ঘটনার সূত্রে বারবার কেন জাতীয় গ্রিডে সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণেই এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ওভারলোডের কারণে সমস্যা হয়নি। তবে আরও কোনো কারণ আছে কি না, তা বুঝতে সময় প্রয়োজন।’ ঘটনা অনুসন্ধানে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আশা করি, তদন্ত কমিটি এবার কী এবং কোথায় সমস্যা হয়েছিল, তা জানাবে।
গ্রিডে সমস্যা হলেও তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি রয়েছে। যেমনÑ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে গ্রিডের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা যায়, যাতে গ্রিড বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্রিড থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে গ্রিড বন্ধ হলেও কেন্দ্রটি বন্ধ হবে না। গ্রিড মেরামতের পর কেন্দ্রটি আবার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। এই ব্যবস্থায় গ্রিডে সমস্যার কারণে কখনোই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। দেশে এখন এ ব্যবস্থাটি সক্রিয় নেই। বারবার জাতীয় গ্রিডে ছোট-বড় বিপর্যয়ের ঘটনার পরও এ ব্যবস্থাটি কেন এখনো সক্রিয় করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তা একটি বড় প্রশ্ন। স্বয়ংক্রিয় গ্রিড না থাকায় বিপর্যয়ের উৎস খুঁজে পেতেও দেরি হচ্ছে পিজিসিবির। দ্রুত মানোন্নয়ন করা না হলে সামনে আরও বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো অনেক পুরনো। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। এটার আধুনিকায়নের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও কাজ হচ্ছে না।
১৮৯৩ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ মেঘনাদ সাহা। তার বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ১৯০৫ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। তবে বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫-১৯১১) প্রতিবাদ সভায় যোগ দেওয়ায় স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর ঢাকা জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০৯ সালে তিনি পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়ে এন্ট্রান্স পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসিতে তৃতীয় এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে অনার্সসহ বিএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯১৮ সালে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেন। আলোর চাপের ওপর গবেষণা করে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ‘অ্যাস্ট্রাফিজিকস’-এর ওপর গবেষণা করে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি পান ১৯২০ সালে। ১৯২৩ সালে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। একই বছর তিনি কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাপের প্রভাবে কীভাবে বৈদ্যুতিক শক্তিসম্পন্ন অণু গঠিত হয় তত্ত্বটি তার। পরমাণুবিজ্ঞান, আয়নমণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যার প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা-সংক্রান্ত বিষয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘সায়েন্স অ্যান্ড কালচার’ নামক বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক পত্রিকার অন্যতম প্রকাশক। কলকাতায় ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকস’ (১৯৪৮) তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর এটির নামকরণ হয় ‘সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকস’। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘The Principle of Relativity, Treatise on Heat, Treatise on Modern Physics’ ইত্যাদি। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বুধবার বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, স্যার ডাকতে হবে এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে হারিয়ে দিয়েছে।
হিরো আলম বলেন, এমপি হলে আমাকে স্যার বলতে হবে। এ জন্য কিছু শিক্ষিত মানুষ আমাকে আগে থেকেই মানতে পারছিলো না। আমাকে স্যার বলতে কষ্ট হবে এমন লোকেরাই ফলাফল পাল্টে আমাকে পরাজিত করেছেন। তারা আমাকে ইভিএম কারসাজিতে হারিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি এমপি হলে নাকি বাংলাদেশের সম্মানহানী হবে। এমন ভাবনা থেকেও আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। আমি কাহালু-নন্দীগ্রাম আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জোগসাজশে গণনায় আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এ ফলাফল মানি না।
হিরো আলম বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব বলেন।
তিনি আরো বলেন, সারাদিন মাঠে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না। হঠাৎ এত ভোট কোথা থেকে এল বুঝতে পারছি না। মশাল মার্কার অস্তিত্ব ছিল না। তাদের নির্বাচনী প্রচার ছিল না। মানুষের তাদের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর কীভাবে আমার চেয়ে বেশি ভোট পেল বিষয়টি পরিস্কার নয়।বগুড়া সদর আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, সেখানে অনেক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। ফলে সকালেই ওই আসনের ভরসা ছেড়ে দিই।
ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলব না। পরে জানান হবে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আমাকে নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি ভোটে হারলেও সারাজীবন মানুষের পাশে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত থাকব।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বান্ধবীর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উঠেছে এক ব্যক্তির (২৬) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
জানা গেছে, একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ওই নারী বাড়িতে তার তিন বছরের মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন। সেই সময় শিশুটিকে দেখভাল করতেন তার প্রেমিক। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি বাড়ি এসে শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ বলছে, শিশুটির মায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কাজ শেষে শিশুটির মা বাড়ি ফিরলে তার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তিনি এবং ওই ব্যক্তি মেয়েটিকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ওই নারী মেয়ের মৃত্যু নিয়ে প্রেমিককে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে মারধর করেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই ব্যক্তি শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।