
ব্যবস্থাপনায় ড. তোফায়েল আহমেদ। স্থানীয় শাসন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে কুমিল্লা ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আগে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নির্বাচন কমিশন, ইভিএম মেশিন এবং রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত দুই লাখ নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প স্থগিত হওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ড. তোফায়েল আহমেদ : কেন স্থগিত হয়েছে, তার কারণটা দেখতে হবে। কারণটা আমাদের কাছে পরিষ্কার জানা নেই।
দেশ রূপান্তর : বলা হচ্ছে তো অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাড়তি খরচ কমাতে, কৃচ্ছ্র সাধনের কথা।
ড. তোফায়েল আহমেদ : সেটা ঠিক আছে। এটা ইমিডিয়েট রিজন। যেটা সবাই দেখছে যে, এই পরিস্থিতিতে বাড়তি টাকা জোগাড় করা সরকারের জন্য কঠিন। কিন্তু সরকার যখন ইভিএম কেনার কথা বলছিল, তখনো কিন্তু দেশে টাকার সংকট ছিল। কিন্তু তারা ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট হবে, মেশিন কেনা হবে এমন কথাই বলে আসছিল। প্রথম কথা হচ্ছে- এখন ইমিডিয়েট রিজন যেটা বলছে যে টাকার অভাব সেটা হতে পারে। তবে, আরেকটা হতে পারে যে সরকার হয়তো কৌশলগতভাবে পিছু হটেছে, যেহেতু সবাই এটা চাচ্ছে না। ইভিএমের বিষয়ে ঐকমত্য নেই। কারণ এটার জন্য আবার নির্বাচনে না যাওয়ার মতো রিজন দাঁড় করানো হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকার হয়তো কৌশলগতভাবে পিছিয়েছে। আর তৃতীয়ত, ম্যানেজমেন্ট প্রবলেম। কারণ, শুধু টাকা দিলেই তো হবে না। এই যন্ত্রগুলো আনা, সেগুলো ঠিকঠাক করা এবং এম মধ্যে এসব নির্বাচনের জন্য রেডি করা...। এসবে তো অনেক ঝক্কি আছে। সেটা সরকার নিতে চাচ্ছে কি না বা নির্বাচন কমিশনও এটা নিয়ে কতটুকু এগ্রিড, কারণ, পুরো নির্বাচন কমিশনই যে এটাই চাচ্ছিল তা মনে হয়নি। বিশেষ করে সিইসির কথায় এমন মনে হচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে সময় বলে দেবে এটা কৌশলগত কারণেও হতে পারে আবার ইমিডিয়েট রিজন অর্থের অভাবেও হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনে সবগুলো আসনেই ইভিএম মেশিন ব্যবহারে বিভিন্ন বিরোধিতা থাকার পরও একরকম একরোখা মনোভাব দেখানো হচ্ছিল। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, তবে সিইসি তো সম্ভব হবে না এমন কথাও বলেছেন। কারণ হচ্ছে কি, সরকারের মনোভাবটাই সিইসির মনোভাব। সরকার যেহেতু শক্তভাবে বলেছিল ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট হবে, সেজন্যই ইসিও তখন অন্য কথা ভাবতে চায়নি বা গ্রহণ করতে চায়নি। এখন সরকার তাদের না জানিয়েই এটা স্থগিত করেছে। কারণ তারা তো প্রস্তাব দিয়েছিলই। সরকার ইভিএমের পক্ষে দেখেই তারাও দৃঢ় মত দেখিয়েছে এবং প্রস্তাবও দিয়েছে। সরকারের বাইরে নির্বাচন কমিশনের শক্ত কোনো মতামত আছে এটা মনে করার কোনোই কারণ নেই।
দেশ রূপান্তর : নতুন মেশিন কেনার প্রস্তাব স্থগিত ঘোষণার পর সিইসি বলছেন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। এতে কি কোন আসনে ইভিএমে আর কোন আসনে ব্যালটে ভোট হবে তা নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হবে না?
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, এটা নিয়ে একটা নতুন বিতর্ক তৈরি হবে। কারণ বিরোধীদের অনেকেই চাইবে না যে তার আসনে ইভিএমে ভোট হোক। আবার সরকারি দলের কেউ চাইতে পারে যে হোক। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টি তারা তো ইভিএমকে না বলেই দিয়েছে। অন্যরাও একই কথা বলবে হয়তো। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্যরকম মনে করি ইভিএমকে, মানে প্রযুক্তিকে টোটালি না করাটা একটা খারাপ বার্তা দেয়। কম্প্রোমাইজড ফর্মুলার যে প্রস্তাবটা আসছিল, তারা সে কাজটা করেনি। এখনে প্রযুক্তিকে ভিলেন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানে, প্রযুক্তির যে ত্রুটিগুলো আছে, ধরেন, এই যে পেপার ট্রেইল নেই, তারপর আঙুলের ছাপ না মেলা, ভোটদানের মেশিনে দেরি হওয়া প্রভৃতি শুধরে নেওয়ার দরকার ছিল। সেগুলো তারা করেনি। বরং তারা আরও দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছিল। তো এসব খুব একটা ভালো দৃষ্টিভঙ্গি না আর কি।
দেশ রূপান্তর : হ্যাঁ, ইভিএমে ভোটারকে পেপার ট্রেইল দেওয়ার ব্যাপারটি তো নাগরিক সমাজেরও কেউ কেউ বলেছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসি কোনো কথাই বলেনি।
ড. তোফায়েল আহমেদ : এটা নিয়ে কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায় না ইসির। কিন্তু মেশিন কেনায় তাদের অনেক আগ্রহ। কিন্তু এসব মেশিন গুদামে মেইনটেন্যান্স ছাড়া পড়ে থেকে নষ্ট হলে তার দায় কে নেবে? আগের কেনা অনেকগুলো মেশিন যে এখন কাজ করছে না, তার দায় তো কেউ নিল না। আবার নতুন মেশিন কেনা হলে সেগুলো যে ওয়ার্কেবল থাকবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া আবার ত্রুটিপূর্ণ মেশিন আমি কেন কিনব? তাছাড়া মেশিনের দামের প্রশ্নেও অনেকের দ্বিমত আছে। যে দামে এটা কিনছি, সেটাই এই মেশিনের আসল দাম কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ফলে অনেকগুলো কন্ট্রাভার্সি রয়ে গিয়েছে। এটার ইভাল্যুয়েশনগুলো হয়নি। মানে আগে যে মেশিনগুলো কিনেছি এবং সেগুলোর যে কার্যক্ষমতা সেটার ইভাল্যুয়েশন করে তার ভিত্তিতে যে আমরা নতুন জায়গায় যাব সে পরিস্থিতি তো তৈরি করা হয়নি।
দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি ইভিএমে ভোটগ্রহণকালে কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরায় দেখা গেল যে ভোটবুথে আগে থেকে অবস্থান করা বহিরাগত ভোট দিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা থেকে এ দৃশ্য দেখে ভোটও বাতিল করা হয়েছিল। তো ভোটকেন্দ্র কি সিসি ক্যামেরা রাখা উচিত?
ড. তোফায়েল আহমেদ : আপনার দেশে যেহেতু মানুষ এভাবে ভোট সেন্টারে অনুপ্রবেশ করে ভোট দিয়ে দিচ্ছে এমন ইতিহাস আছে, সেহেতু এসব শনাক্তের জন্য অবস্থা বিবেচনায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের দরকার আছে। এখানে অনেক ক্ষেত্রে ইভিএম মেশিন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে তার বেশিরভাগ প্রশ্নই কিন্তু মেশিনের এফিশিয়েন্সি নিয়ে না। মেশিনের দক্ষতা নিয়ে না। এটা হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের ম্যানেজমেন্টের সমস্যা। ভোটকেন্দ্রে মেশিনে ভোটার শনাক্ত হওয়ার পরে অবাঞ্ছিত মানুষ ঢুকে তারা বাটন টিপে দিচ্ছে অথবা ভোটারকে নির্দেশ দিচ্ছে যে এখানে ভোট দাও। এগুলো তো গুরুতর অপরাধ। এখানে মেশিনের প্রশ্নের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই প্রশ্ন কেন কাজ করছে না যে ভোটকেন্দ্রে তো অবাঞ্ছিত কেউ ঢুকতে পারবে না। এটাকে উৎসাহ না দেওয়া বা এটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য দেখা যায় না। বিশেষ করে রুলিং পার্টির মধ্যে। অপজিশন এবং অন্যদের ভয়টা তো এখানে। প্রশাসন, পুলিশ এবং দলীয় কর্মীরা একসঙ্গে হয়ে যখন রিগিং করে তখন মেশিন কিংবা নো মেশিন কোনো কিছুই কাজে আসছে না। এগুলো সবই মিস ম্যানেজমেন্ট। অনিয়ম করেই করা হচ্ছে। এবং জানাশোনার মধ্যে, ইচ্ছেকৃতভাবেই এসব হচ্ছে। প্রবলেম তো ওখানে, মেশিনে তো এত প্রবলেম দেখি না। প্রথম সমস্যা হচ্ছে ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায়, ম্যানেজমেন্টে।
দেশ রূপান্তর : এটা কি কেবল ইসির ওপর নির্ভর করে? রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা সংস্কৃতির ভূমিকা কতটা?
ড. তোফায়েল আহমেদ : রাজনৈতিক সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে হবে না। প্রশাসন কেন এমন করবে, পুলিশ কেন এর সঙ্গে যুক্ত হবে? আর ইসি-ইবা কেন চোখ বন্ধ করে থাকবে? রাজনৈতিক দল এটা করতে চাইবে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট যখন ঠিক থাকবে তখন তারা এটা করতে পারবে না। একটা ভোট বাতিল হয়ে গেল না? এই জাতীয় জিনিস, দৃষ্টান্তগুলো তাদের ইন্সট্যান্ট ক্রিয়েট করতে হবে তো। কিন্তু আপনি যদি বলেন, আমি দেখিনি, আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি এটা তো কোনো কথা না। তার মানে আপনি সব জানেন এবং আপনি এটা অ্যালাউ করেছেন। সমস্যাটা এখানেই।
দেশ রূপান্তর : বলা হয়ে থাকে বা আইন অনুযায়ী তো নির্বাচনকালীন প্রশাসন ইসির হাতে...
ড. তোফায়েল আহমেদ : এগুলো তো সব কথার কথা হিসেবে বলা আছে। হাতে থাকলে তাদের কথা শোনে না কেন?
দেশ রূপান্তর : ইসির তো সেই দৃঢ়তা দেখাতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ : হ্যাঁ, কিন্তু তারা যখন ইসির কথা শুনল না তখন কমিশন কী করেছে? এই যে গাইবান্ধার ইলেকশনে ইসির যে ফাইন্ডিংস, তার সঙ্গে সরকারের মানে প্রশাসনের যে ফাইন্ডিংস, তার মধ্যে তো বিরাট পার্থক্য। এখানে কোনো অ্যাকশন হয়েছে? হয়নি তো। যদি অ্যাকশন হতো, তাহলে শুধু নির্বাচন বাতিল করে দিলেই তো সব হবে না। বাতিলের পর কী কারণে এটা বাতিল হলো, কারা রেসপন্সিবল সেটা ফিক্সড করতে হবে। দায়িত্ব কার ছিল আর কে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে সেটা বের করে উপযুক্ত শাস্তির বন্দোবস্ত করতে হবে তো। এটা হলে আর ওই ঘটনার রিপিট হবে না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচনী আইন, আচরণবিধি ভঙ্গে শাস্তির নজির তো মনে পড়ে না।
ড. তোফায়েল আহমেদ : আচরণবিধিটা ধরেন কেবল প্রার্থীর জন্য। কিন্তু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে কেউ, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিল, ভোট কাস্টিংয়ের দায়িত্বে যারা ছিল, ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব যাদের ছিল তারা তাহলে ফেইল করেছে। তারা দায়িত্বে থাকলে ভোটকেন্দ্রে অবাঞ্ছিত লোক কীভাবে ঢোকে! সিসি ক্যামেরায় কীভাবে শনাক্ত হলো? সিসি ক্যামেরায় যারা শনাক্ত হলো, তাদের কি কেউ অ্যারেস্ট করেছে? শাস্তি দেওয়া হয়েছে? যাদের দায়িত্বে অবহেলায় অবাঞ্ছিত লোক ঢুকল, তাদের কোনো শাস্তি হয়েছে? এটার ফাইন্ডআউট করা হয়নি। এসব হচ্ছে, এ কারণেই হচ্ছে। এবং এটা জেনেবুঝেই করা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : নতুন ইভিএম কেনা বাতিল, বিরোধীদের সভা-সমাবেশে অপেক্ষাকৃত নমনীয়তা দেখানোর মধ্য দিয়ে কি বিরোধীদের নির্বাচনে আসার আস্থা তৈরি করা হচ্ছে?
ড. তোফায়েল আহমেদ : আপনার প্রশ্নের সঙ্গে আমি একমত না। আপনি কে যে আপনি ছাড় দেবেন, নমনীয়তা দেখাবেন? ধরে রাখবেন, আবার ছাড়বেন, এগুলো কী? এগুলো কি জাতির সঙ্গে তামাশা? মিটিং, মিছিল করার রাইট আছে, করবে। আপনি ছাড় দেওয়ার বা না দেওয়ার কে? এসব বেশিদিন রাখা যায় না। আমি না মানলে আপনি কী করবেন, আমি মিছিল করব। হ্যাঁ, আপনি হয়তো অ্যারেস্ট করবেন। কিন্তু এসব দেশকে একটা সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। একটা দল যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা যখন কতগুলো দাবি করছে এটা র্যাশনালি নিতে হবে। তাদের সব দাবি মানতে হবে তা না। সব দাবি কোনো সময়ই মানা হয় না। কিন্তু একটা মাঝামাঝি অবস্থায় আসতে হবে। অন্যদিকে, তারাও কালকেই সরকারকে ফেলে দিতে হবে, পদত্যাগ করতে হবেএরকম বলছে, যা ঠিক না। আবার সরকার বলছে যে সংবিধানে যা আছে তাই-ই হবে, এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেটাও ঠিক না। দুই পক্ষকেই ছাড় দিয়ে একটা জায়গায় আসতে হবে। সমাজটাকে, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য এক জায়গায় আসতে হবে। কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না, এমন একরোখা মনোভাব, এটা একদমই ঠিক না, সম্ভব না।
বেশ আগের একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা মনে পড়ে, ‘পানি নিয়ে ভাবনা আর না আর না’। আমরা সবাই জানি পানিই জীবন এবং সেটা আক্ষরিক অর্থেই। কারণ পানি ছাড়া প্রাণের কল্পনা করা যায় না, এটা সম্ভবও না। সুপেয় পানি মানুষ ও মানব সভ্যতার জন্য যারপরনাই দরকারি, যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর সংকট প্রকট। যেখানে সুপেয় পানি নেই সেখানে মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি কল্পনা করা যায় না। সাধারণভাবে পানির উৎস বিবিধ যেমন সাগর, নদী, খাল, বিল ইত্যাদি। আবার ভূগর্ভে হাজার হাজার বছর ধরে সঞ্চিত পানি ব্যবহার করতে কুয়া ও টিউবওয়েল তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে ব্যবহার উপযোগী পানির মূল উৎস নদী। প্রধানত হিমালয় অঞ্চল, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক অববাহিকা থেকে বাহিত পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। আমাদের এই ভূমির একটি বড় অংশ তৈরি নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে। নদীর দ্বারাই সৃষ্টি পৃথিবীর বাংলা নামের এই বৃহত্তম এখনো সক্রিয় ব-দ্বীপ। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে আটশোর মতো নদী ছিল যাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এবং এই নদীগুলো আমাদের দেশকে মমতায় আগলে রেখে ভূমিকে সজীব ও সবুজ করে রাখছে।
শুধু আমাদের দেশ না, পৃথিবীতে মানবসংস্কৃতির ইতিহাস নদীর তীর ও পানির অববাহিকা ধরে বিবর্তিত ও সমৃদ্ধ। নদী শুধু জলের ধারা বয়ে নিয়ে আসে না অজানা কাল থেকেই নদী যোগাযোগ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও পবিত্রতার ধারণার সঙ্গে যুক্ত। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন গ্রন্থসমূহে নদীকে প্রাণ ও আত্মা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নদী যেখানে পানির প্রবাহের ধারাকে বয়ে নিয়ে চলে এর পাশাপাশি অন্যান্য সুপেয় পানির অন্যান্য উৎস যেমন পুকুর, খাল, বিল, নালাকে সমৃদ্ধ করে পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির প্রাকৃতিক সঞ্চয়ন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখে। অতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও ধারাবাহিক সঞ্চয়ন ব্যাহত হলেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। আমাদের দেশের পরিবেশের বিবেচনায় কোনো কোনো অঞ্চলে সেই প্রবণতা আমরা ইতিমিধ্যে দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পানির উৎস নিয়ে নানা ধরনের সংকট থাকলেও আমাদের দেশের প্রকৃতি যেন দুহাত ভরে দিয়েছে। যেটা এ দেশের মানুষকে যেমন নির্ভার করেছে এবং একইসঙ্গে আমাদের সংস্কৃতিকেও করেছে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি আমাদের দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মিষ্টি পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এর উৎস কমে গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে, খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। অনেক সময় উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হয়ে যায়। ইদানীং কোনো কোনো বছর এমনকি আমন ধান উৎপাদনের সময়ও সেচের পানির ব্যবস্থা করতে হয়। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যদ্রব্যের প্রাপ্তি কমে যায়। অন্যদিকে মৎস চাষ, খামার তৈরি সব কিছুই পানির সহজলভ্যতা ও প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে।
প্রাকৃতির দান যেকোনো বিবেচনায়ই সম্পদ, তবে তা নির্ভর করে এর যথাযথ ব্যবহারের ওপর। প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্বশীল ও পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমেই টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। তা না হলে প্রকৃতিই ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসবে সময়ে-অসময়ে এবং কারণে-অকারণে। নদীর ক্ষেত্রেও তাই। নদী তখনই সম্পদ যখন এটাকে নদী হিসেবে থাকতে দেওয়া হয়। এর প্রবহমানতা অব্যাহত থাকে, এর পানি মানুষের ও প্রকৃতির জন্য ব্যবহারযোগ্য থাকে, এবং পলি বয়ে নিয়ে আসে নতুন ভূমি গঠনের জন্য। নদীর নিজস্ব যে সত্তা তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনগতভাবে বাংলাদেশে সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয় আদালতের রায় অনুযায়ী।
আর এখানেই আমাদের সংকট। নিজস্ব সত্তা হিসেবে নয় নদী, খাল, বিলকে আমরা ড্রেন ও ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে দেখতে ও ব্যবহার করতে শুরু করেছি। আবার দখলদারদের পাল্লায় পরে সুপেয় পানির উৎস যেমন নদী, খাল, বিল বেদখল হয়ে যায়। মানুষের বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও শিল্পের রাসায়নিক নদীর পরিবেশ ও মূল্যবান পানি দূষিত করে দেয়, প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এমনভাবে দূষিত করে যাতে কোনো ধরনের জলজ প্রাণী ও অনুজীব বেঁচে থাকতে পারে না, নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় না। যে নদী নিরাপদ পানির আধার না, প্রাণের সঞ্চার করে না, সেই নদী আমাদের জন্য সম্পদ না বরঞ্চ বোঝা। নদী ও পানি যেমন মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই পানির প্রবাহ যখন বন্ধ হয়ে যায় বা দূষিত হয়ে যায় সেটা শুধু মানুষের জীবনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, ক্ষতিগ্রস্ত করে সংস্কৃতি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে। অন্যদিকে নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে দিলে তার প্রকাশ ঘটে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যেমন প্রলয়ঙ্করী বন্যা, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি।
নদীকে শুধু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে ভাবলেই হবে না। মানুষ নদীর ব্যবহারকারী মাত্র। নদীকে দেখতে হবে প্রকৃতির একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ হিসেবে, যার বিনাশে প্রকৃতির ধ্বংস। আর নদী যখন মানুষের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ, এর সঙ্গে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন ধারণ ও জীবিকা যুক্ত তাই নদীর নিরাপদ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ইস্যুগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে যে অপার সম্ভাবনা তৈরির সুযোগ আছে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেটাই এখন সুদূরপরাহত। অনেক সময় শুধু আমাদের অসচেনতা ও কিছু মানুষের লোভই এর জন্য দায়ী। পাশাপাশি রয়েছে নদী নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও হঠকারী পরিকল্পনা আর এসবের কারণেই আজ কয়েকটি আন্তঃদেশীয় নদীর প্রবাহ বন্ধ হওয়ার পথে, যেমনটা হয়েছে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে।
নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় এর নিজস্ব সত্তাকে স্বীকার করা, এ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, রাষ্ট্রযন্ত্রকে সক্রিয় করা পাশাপাশি এই অঞ্চলের সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে হবে। যাতে কোনোভাবে নদীর প্রবহমানতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করা হয় এবং কোনোভাবে পানি দূষিত না হয়। আন্তঃদেশীয় নদীর প্রবহমানতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশগুলোর সঙ্গে দেনদরবার করতে হবে এবং এর সঙ্গে সচেতন মহলকে যুক্ত করতে হবে। কারণ নদীর বিনাশে ভুক্তভোগী নদীর সঙ্গে যুক্ত সব দেশের মানুষ। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই, এসব প্রতিবন্ধকতার কারণেই একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে মরে যাচ্ছে এর সত্তা। সূত্রমতে গত অর্ধশত বছরে বাংলাদেশে প্রায় দেড়শতাধিক নদী মরে গেছে এবং নর্দমায় পরিণত হয়েছে অসংখ্য। আর এভাবে যদি একের পর এক নদী নর্দমায় পরিণত হতে থাকে ও মরতে থাকে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কী হবে, সেই ভাবনা কে ভাববে?
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অভিভাবকের জায়গায় বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবককে রাখার নির্দেশ দিয়ে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। এতদিন অভিভাবকের ক্ষেত্রে শুধু বাবার নাম দেওয়ার সুযোগ ছিল। এ রায়ের ফলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান যাদের বাবার পরিচয় নেই তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে, সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। শুধু বাবার নাম না থাকলে একজন শিশু ফরম পূরণ করতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না এটা ঠিক না। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যেকোনো ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন পূরণ করার অধিকার পাবে। এই রায়ের ফলে বাবা-মা উভয়ের নাম লেখার বাধ্যবাধকতা থাকল না। শুধু মায়ের নাম লিখেও ফরম পূরণ করা যাবে। পরীক্ষা ও পাসপোর্টসহ সব ফরম পূরণে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে।
এই রায়ের প্রেক্ষাপট বেশ পুরনো। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মা ও সন্তানকে কোনোরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবা চলে যাওয়ার পর ওই তরুণী তার মায়ের একার আদর-স্নেহে বড় হয়েছেন। পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনবাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ এবং বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থী ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থী এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করে।
এরপর প্রায় এক যুগ চলে গেছে। আইনি প্রক্রিয়ার নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে পরীক্ষা ও পাসপোর্টসহ সব ফরম পূরণে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখার স্বীকৃতি এলো। এই রায়টি নানা দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে বাবাই ছিলেন সর্বেসর্বা। প্রচলিত ধ্যান-ধারণা নারীকে অভিভাবক হিসেবে দেখতে বা মানতে নারাজ। তাইতো সব ধরনের নথিপত্রেও দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে শুধু বাবার নাম লেখার রীতি ছিল। ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে কোনো ব্যক্তির পরিচিতির ক্ষেত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম উল্লেখ রাখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের নাম লেখার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন এবং ২০০০ সালের ২৭ আগস্ট এই বিধান কার্যকর হয়।
কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, নানা পারিবারিক ও সামাজিক কারণে মানুষের ব্যক্তিগত সংকট বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। এতে করে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। এখনো আমাদের প্রচলিত আইনে মা শুধু সন্তানের জিম্মাদার, অভিভাবক নন! বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাকে সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্বের জন্য আইনি লড়াই করতে হয়। মায়ের একক অভিভাবকত্বের আইনি স্বীকৃতি বাংলাদেশে এখনো অধরাই রয়ে গেছে। অভিভাবক ও প্রতিপাদ্য আইন অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানকে নাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব মুসলিম শরিয়া আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এবং অভিভাবক এবং প্রতিপালন আইন, ১৮৯০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব আইন ও বিধির কোনোটিতেই মাকে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। যে মা তার জীবনের সব শখ ও স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে লড়াই করতে থাকেন, তাকে বিবাহবিচ্ছেদের পর আদালত অভিভাবকত্ব দেয় না, দেয় জিম্মাদারি। বাংলাদেশ অভিভাবক এবং প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০-এর ১৭ [ক] ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তানের জিম্মাদার করা হয়েছে মাকে আর বাবাকে অভিভাবক। ছেলেসন্তান ৭ বছর পর্যন্ত আর মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে। এমনকি আমাদের দেশে এখনো যদি কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে তাকে নির্যাতনকারী ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পরে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে কোনো একজন পুরুষের নাম লেখা যায়। এটা অত্যন্ত জঘন্য এক মানসিকতা। এমন মানসিকতার কারণে পুরুষের লাম্পট্যের সামাজিক স্বীকৃতি মিলে যাচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশে ও অনেক ধর্মে কোনো কারণে মা-বাবা আলাদা হয়ে গেলে দুজনকেই অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যেন একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কেউ যদি স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ না করতে চান, সেটি তার বিষয়; আর দুজন একসঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তা পারিবারিক বা সামাজিকভাবে আলোচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায়, যিনি সন্তানের কোনো দায়িত্ব নিলেন না, শুধু কাগজে-কলমে মা অথবা বাবা হয়ে থাকলেন, সে ক্ষেত্রে সন্তান মহাবিপদে পড়ে যায়, উন্নত চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইলে দুজনেরই সম্মতির প্রয়োজন হয়; আর যদি তাদের একজনকে না পাওয়া যায়, তাহলে দ্বারস্থ হতে হয় আদালতের।
আধুনিক যুগে নারীরা সব ক্ষেত্রে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এমনকি বিভিন্ন ইসলামিক দেশ কিংবা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নারীরা ভূমিকা পালন করছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে, মহাকাশ মিশনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু আইন এখনো নারীদের সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সমানাধিকার দিচ্ছে না। বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের যৌথ হেফাজত ও অভিভাবকত্বের বিষয়টির আইনগত স্বীকৃতি আছে কিছু দেশে। এই স্বীকৃতি প্রথম মেলে সুইডেনে ১৯৭৬ সালে। এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হচ্ছে, সন্তানের প্রতি বাবা-মা উভয়ের রয়েছে অধিকার। এটা তো অবশ্যই সত্য যে, সাধারণভাবে সন্তানের প্রতি মায়ের পাশাপাশি বাবার স্নেহ-ভালোবাসাও অসীম। পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় সন্তানের যৌথ হেফাজতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু যদি একক অভিভাবকত্বের প্রশ্ন চলেই আসে, তাহলে উন্নত বিশ্বে বাবার আগে মাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাকে সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্বের জন্য আইনি লড়াই করতে হয়, ঠিক উলটোভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাবাকে এমন অধিকারের দাবিতে আদালতে ঘুরতে হয়।
অভিভাবক হওয়ার অধিকার যদি মা-বাবার সমান থাকত, তাহলে কোনো একজন অভিভাবক মারা গেলে বা পালিয়ে গেলে অন্য একজন সহজে দায়িত্ব নিতে পারতেন। বাস্তবতা বিবেচনায় ও সময়ে দাবি অনুযায়ী অভিভাবকত্বের সেকেলে আইন বদলে ফেলার সময় এসেছে। মনে রাখা দরকার যে, মা শুধু জন্মদাত্রী নন, পালন-পোষণ, দায়িত্ব গ্রহণ, সব ব্যাপারে সন্তানের সঙ্গে তিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকেন। তাই অভিভাবক হিসেবে তারই নাম প্রথমে থাকা উচিত। যতই আমরা, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’ বলি, অভিভাবক হিসেবে তাকে সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টা দেখা যায় না।
মহামান্য হাইকোর্ট সব পরিস্থিতিতে অভিভাবক হিসেবে মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার রায় দিয়েছে। এখন দরকার সমাজ-মানস পরিবর্তন করা। আমাদের দেশে নারীর কর্র্তৃত্ব, নেতৃত্ব, অধিকার, অভিভাবকত্বকে সামাজিকভাবে মেনে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। সমাজে পুরুষতন্ত্রান্ত্রিক চিন্তাভাবনা এখনো ছড়ি ঘুরিয়ে চলছে। সমাজের সবখানে ‘অভিভাবকত্ব’ ও ‘পৌরুষ’ আজও একই হুঁকোর নল নিয়ে টানাটানি করছে। এই অবস্থার আশু পরিবর্তন দরকার। স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিক্ষা বা কর্মজীবনে যেখানেই দরকার, মায়ের নাম অভিভাবক হিসেবে প্রথমেই রাখতে হবে। ‘অভিভাবক’ কে? যিনি ব্যক্তি বা সম্পত্তির যতœ নিতে পারেন, নিরাপত্তা বিধান করতে পারেন। মা যদি সেই কাজে পারঙ্গম হন, তবুও তাকে কেন ‘অভিভাবক’ মানা হবে না?
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রবণতা বা চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এটি সরাসরি কোনো মানসিক রোগ না হলেও বেশ কিছু মানসিক রোগের শক্তিশালী উপসর্গ। ফলে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যার আগে নিজের সম্পর্কে, অন্যের সম্পর্কে বা পৃথিবী সম্পর্কে যেভাবে চিন্তাভাবনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সেটি সবসময় যৌক্তিক বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র নাও হতে পারে। কোনো একটি পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক, সেই পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক বা একাধিক বিকল্প থাকে। কিন্তু মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত ও বিপর্যস্ত অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল যতটা উদ্দীপ্ত থাকে, যৌক্তিক অঞ্চল ততটাই নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে সেই মুহূর্তে মানুষ সমস্যা সমাধানের যৌক্তিক ও সহায়ক রাস্তাগুলো দেখার বা আবিষ্কার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে এবং মস্তিষ্কের আবেগীয় অঞ্চল দ্বারা তাড়িত হয়ে এলোমেলো কিংবা জীবন বিপন্নকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন আত্মহত্যা প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন বা তুচ্ছ করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। বিচ্ছিন্নতার এ শহরে লাভ নেই মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে নানা মন্তব্য আর জ্ঞানগর্ভ কথা বলে। বরং আত্মহত্যার মতো ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে ফলপ্রসূ সমাধান প্রয়োজন। কারণ প্রতিটি প্রাণই অমূল্য এবং দেশের সম্পদ এই বিবেচনা করে সেই প্রাণের রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
শনিবার দেশ রূপান্তরের ‘মাসে ৪৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা’ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং জরিপের তথ্যানুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এছাড়া পারিবারিক মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। খেয়াল করা দরকার, শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা বলছেন, বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত। পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। আইনজীবী বাবা রাজকুমার সেনগুপ্তের কর্মস্থল ছিল নোয়াখালীতে। অচিন্ত্যকুমার ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় বড় ভাই জিতেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কাছে চলে যান। আশুতোষ কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বিএ পাসের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও ল’ পাস করেন। অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে সাবজজ, জেলা জজ ও ল’ কমিশনের স্পেশাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পর কল্লোল যুগের যেসব লেখক সাহিত্য জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেন, অচিন্ত্যকুমার তাদের অন্যতম। ১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’। তার গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৭০। ১৯২৫ সালে তিনি কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তার স্মৃতিচারণামূলক রচনা ‘কল্লোল যুগ’ বেশ সাড়া জাগায়। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘জগত্তারিণী পুরস্কার’, ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ও ‘শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেন।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’