
শরিয়তের দৃষ্টিতে ভুল একটি স্বাভাবিক বিষয়। এক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা হলো, একজন মুমিনের ভুল সংশোধন করে দেবে অপর একজন মুমিন, যা গুরুত্বের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামের বিধানে ভুল শোধরানোর নীতিমালা রয়েছে। এই নীতি অবলম্বন না করায় হিতে বিপরীত হয়। সম্পর্কে ফাটল ধরে, বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’ -সুরা আল হুজরাত : ১০
বর্ণিত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ভুল সংশোধন করে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক দৃঢ় করার উপায় বাতলে দিয়েছেন। নবী কারিম (সা.) ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে অনন্য নজির রেখে গেছেন। ভুল শোধরানোর ক্ষেত্রে কখনো তিনি প্রশ্ন করেছেন, আবার কখনো উপমা দ্বারা ভুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, কখনো ইশারা-ইঙ্গিতে ভুলকারীকে সংশোধন করেছেন, আবার কখনো রাগও করেছেন। এভাবে তিনি ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে সংশোধন করেছেন।
অনেকেই ভুল শোধরাতে তিরস্কারের পথ অবলম্বন করেন। এটা কোনো কার্যকর পথ নয়, কারণ তিরস্কার কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। এ জন্য তিরস্কার পরিহার করে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়াটাই অধিক শক্তিশালী ও কল্যাণকর। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, এক যুবক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এটা শুনে লোকজন তার প্রতি উত্তেজিত হয়ে ধমক দিল এবং চুপ করতে বলল। তখন রাসুল (সা.) তাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, বসো। যুবকটি বসার পর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি কি এটা তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তেমনি মানুষও তাদের মায়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, অনুরূপভাবে মানুষ তাদের মেয়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য সেটা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তদ্রƒপ লোকেরাও তাদের বোনের জন্য তা পছন্দ করে না। (এভাবে রাসুল (সা.) তার ফুফু, খালা সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলেন আর যুবকটি একই জবাব দিল)। এরপর রাসুল (সা.) তার বুকে হাত রেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তার গোনাহ ক্ষমা করে দিন, তার মনকে পবিত্র করুন এবং তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর এ যুবককে কারও প্রতি তাকাতে দেখা যেত না। -শোয়াবুল ইমান : ৫৪১৫
ভুল শোধরানোর ক্ষেত্রে সর্বদা নরম ভাষায় বোঝানো ও রাগের সময় ভুল শোধরাতে না যাওয়া। ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভুল সংশোধন করে দেওয়ার পরে তাকে সঠিক পথ সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিন, যাতে তার সামনের দিনে পথচলা সহজ হয়। আর সব ভুল সংশোধন করা নিজের ঘাড়ে না নেওয়া। বরং যেটা সাধ্যের বাইরে সেটা অন্যের জন্য ছেড়ে দেওয়া। ‘সব ভুল সংশোধন নিজের কাঁধে বা ঘাড়ে না নেওয়া’র বিষয়টি নিয়ে একটু পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, ভুল শোধরানোর ক্ষেত্রে অনেকের এমন মনোভাব হিতে বিপরীত হচ্ছে। অনেকেই অন্যের ভুল সংশোধন করতে চান, এটা অবশ্যই ভালো উদ্দেশ্য, মহৎ কাজ ও চিন্তা। দয়াময় আল্লাহ তো এমন কাজ করতে বলেছেন যে, ‘তোমরা পরস্পরে পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে সাহায্য করো।’ -সুরা আল মায়িদা : ২
তাহলে একজন মানুষ পাপকাজে নিমজ্জিত ও ভুলে জর্জরিত, যা নিঃসন্দেহে পাপ। আমি তাকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে কাজ করছি তা তো নিশ্চিত পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে সাহায্যেরই শামিল। তাহলে এতে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা হলো পদ্ধতিতে। আমরা আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করতে চাই কিন্তু নিজ পদ্ধতিতে। তাহলে কীভাবে সম্ভব? দেখুন, আল্লাহতায়ালা ওই একই আয়াতের পরবর্তী অংশে কতই না সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘তবে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পকে সহযোগিতা কোরো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ -সুরা মায়িদা : ২
যে আয়াতে আল্লাহতায়ালা এত সুন্দর করে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করতে বললেন, আবার ওই একই আয়াতে আল্লাহ পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করতে নিষেধের পাশাপাশি শাস্তির কথা কেন আলোচনা করলেন? ইসলামি স্কলাররা বলেন, একটি উত্তম কাজ (ভুল সংশোধন) করতে গিয়ে মানুষ এমন কিছু কাজ করে ফেলে, যা সীমা অতিক্রম করে ফেলে। আর এই সীমালঙ্ঘনের কারণেই ভুলকারী সংশোধনের পরিবর্তে জেদের বশবর্তী হয়ে আরও ভুল করতে থাকে, ফলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট হওয়ার পরিবর্তে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়।
কোনো পরিচিতজন কিংবা মুমিন-মুসলমানকে ভালো পরামর্শ এবং কোনো ভুল দেখতে পেলে তা সংশোধন করে দেওয়ার অধিকার ইসলাম অবশ্যই আপনাকে দিয়েছে। কোনো মতামতের সঙ্গে যদি সবার মতামত না মেলে, তাহলে ওই মতামতের বিপরীতে অন্যের মতামত ব্যক্ত করার অধিকারও ইসলাম দিয়েছে। তবে পরামর্শ দেওয়ার নামে, ভুল ধরিয়ে দেওয়ার নামে, সংশোধনের নামে, মতামত ব্যক্ত করার নামে যদি অন্যকে আক্রমণ করেন, ছোট করেন, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, গালাগালি করেন, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন- তাহলে অবশ্যই এর জন্য আপনাকে গোনাহগার হতে হবে, আপনি নিন্দিত হবেন। আর যদি ভুলকারীকে আক্রমণ না করে, ছোট না করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করে, গালাগালি না করে, সম্মান রক্ষা করে সুন্দর ভাষায়, আন্তরিকতা রেখে ভুল ধরিয়ে সংশোধন করে দেন, ভালো কোনো পরামর্শ দেন, তাহলে অবশ্যই এর জন্য নেকি পাবেন, প্রশংসিত হবেন। এবার সিদ্ধান্ত নিন, ভুল শোধরাতে কোনটি কার্যকর পন্থা এবং কোনটি গ্রহণ করা উচিত।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
হাজার বছরের বিদেশি শাসনের নিগড়ে আর্থ-সামাজিক শোষণ-বঞ্চনা আর বণ্টন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাঙালির ঐতিহাসিক ‘মুক্তির সংগ্রাম’ দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে চূড়ান্ত বিজয়ে বিভূষিত হয়। সমতটের এই ভূখন্ড ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রকৃতির মিশ্র সহযোগিতাপ্রাপ্ত একটি দেশ। কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান হয়েও মাথার ওপর হিমালয় পর্বত এবং পায়ের নিচে বঙ্গোপসাগর থাকায় বাংলাদেশ মৌসুমি বায়ুমন্ডল ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াবলয় নিয়ে সুজলা-সুফলা। প্রকৃত অর্থে ‘এমন দেশটি (অন্য) কোথাও খুঁজে পাওয়ার নয়। ছিলও না। এ কারণেই দেশটির প্রতি বিদেশি বর্র্গী, হার্মাদ, হায়েনার আধিপত্যের আকাক্সক্ষা অতীতে প্রবল ছিল তো বটেই, হাজার বছরের ঔপনিবেশিক শাসন তার প্রমাণ। দেশটির আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা-ব্যবস্থায় বিদেশিদের বিদ্যমান আগ্রহ ও ভূমিকা সে নিরিখেই।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের শতকরা ২৯ ভাগ আসে কৃষি ও তদসংশ্লিষ্ট খাত থেকে। সমতল ভূমির মোট জমির শতকরা ৯২ ভাগ ব্যবহার হয় কৃষিকাজে আর কৃষিকে অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে শতকরা ৬৪ ভাগ মানুষ। কৃষি খাতে দেশের সিংহভাগ ভূমি ব্যবহৃত এবং এ খাতই কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস। এ প্রেক্ষিতে কৃষিব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ, উচ্চ ফলনশীল শস্যের উৎপাদনে সহায়তাকারী বীজ, উপকরণ, সার ইত্যাদি সরবরাহ, কৃষককে সহজ শর্তে মূলধন জোগান এবং তার উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিপণনব্যবস্থা তদারকি করে কৃষিব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং কৃষি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষিকেই দেশের জিডিপির অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে পাওয়া গিয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং কৃষির উন্নয়নকামী পদক্ষেপ; নদীমাতৃক দেশে পানি সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং নদীশাসন ও নৌযোগাযোগ; জনবহুল জনপদের জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় কাঁচামালের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশজ সম্পদের সমাহার ঘটিয়ে উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণে স্থানীয় সঞ্চয়ের বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ, ব্যক্তি তথা বেসরকারি খাতের বিকাশ, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সম্ভাবনার বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের অন্যতম, বাঞ্ছিত ও কাক্সিক্ষত উপায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অনিষ্টকারী প্রভাব ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করে কৃষিব্যবস্থাকে সম্ভব মতো নিরাপদ সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ আশানুরূপ হলেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধি সাধনে অনিশ্চয়তা ও ভবিতব্যের হাতে বন্দিত্বের অবসান ঘটবে। গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল শস্যের উৎপাদনে প্রযুক্তির বিবর্তন ঘটাতে হবে, শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে সাময়িকভাবে উৎপাদন বাড়ানোর ফলে জমির উর্বরা শক্তির অবক্ষয় ঘটতে থাকলে আখেরে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। খাদ্যশস্যের বর্তমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিশেষ করে কৃষি এবং সার্বিকভাবে পরিবেশের ভবিষ্যৎ যাতে বিপন্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশের নদীশাসনের উদ্যোগকে কার্যকর তথা পানিপ্রবাহ যথাযথ রেখে নদীর নাব্য বজায় রাখা আবশ্যক হবে। পানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়া হলে কৃষিকাজ তো বটেই, সুপেয় পানির অভাবসহ পরিবেশ বিপন্নতায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে কৃষিজমির যথেচ্ছ ব্যবহার দুঃসহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। বন্যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের শোচনীয় অবস্থা দেখে এবং হাওরের মাঝ দিয়ে উঁচু বাঁধ দেওয়ার কর্মফল ইতিমধ্যে মিলেছে। নৌপথে যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক নদীমাতৃক বাংলাদেশের, তা অত্যন্ত স্বল্পব্যয়ের হওয়া সত্ত্বেও, উপযুক্ত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগের অভাবে সেটিও ক্রমে হাতছাড়া যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। দ্রুত এবং সহজ যোগাযোগের উপায় হিসেবে সড়ক নেটওয়ার্কের তুলনামূলক উপযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় আসার অর্থ এই হতে পারে না যে, নৌপথ বিলুপ্তির মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হতে হবে। নৌপথের ন্যায্য বিকাশ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও মৌসুমি বলয়ে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যও অতি জরুরি।
মাছ-ভাতের বাঙালির প্রধান দুই উপজীব্যের অস্তিত্ব ও বিকাশও তো দেশের অগণিত খাল-বিলের নাব্যের ওপর নির্ভরশীল। শত শত সেতু নির্মাণকে উন্নয়নের প্রতিভূ ভাবা বাস্তবসম্মত নয়। সেতু নির্মাণে ধারকর্জের হিসাব কষলে সেতুর উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ যাতে না হয় সে ব্যাপারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় উপযুক্ত গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক হবে। সড়ক নির্মাণের তাৎক্ষণিক উপযোগিতা টেকসই হওয়ার ওপর নজর দেওয়া দরকার। নতুবা সড়ক বানানো ও মেরামত করার কাজকে কার্যকর পাওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতকে স্বয়ম্ভর করতে গিয়ে পরনির্ভরশীলতায় ঘাঁটি যাতে গাড়তে না হয় সে আশঙ্কার প্রতি সুবিচার করতে হতে পারে। সব কিছুর ওপরে জেনারেশনের পর জেনারেশন প্রকৃত শিক্ষা ও উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছে কিনা সেটা দেখা আরও জরুরি। মানসম্মত শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার বিকাশধর্মী বিদ্যাচর্চা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি না হলে বেকারের ভারে ন্যুব্জ দেশে বিদেশিরা এসে রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি জাতীয় দায়িত্ববোধের আওতায় আসার বিকল্প নেই।
দেশীয় শিল্প সম্ভাবনাকে উপযুক্ত প্রযতœ প্রদানের মাধ্যমে স্বয়ম্ভর শিল্প ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব। দেশজ কাঁচামাল ব্যবহার দ্বারা প্রয়োজনীয় ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরিতে দেশের শিল্প খাতকে সক্ষম করে তুলতে হবে এবং এর ফলে বিদেশি পণ্যের ওপর আমদানিনির্ভরতা তথ্য মহার্ঘ বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে। শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগে আর বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহারে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশিত অগ্রগতির হিসাবসংক্রান্ত তুলনামূলক সারণিগুলোর সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান, সম্পর্কের শুমার ও বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশ অর্থনীতির অগ্রগতি ও গতিধারা শনাক্তকরণে অসুবিধা হয় না। দেখা যায়, আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ জিডিপির অংশ হিসেবে ক্রমে বৃদ্ধি পেলেও রপ্তানির মিশ্র প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। অস্থিতিশীল ও ভিন্ন মাত্রিক ট্যারিফ স্ট্রাকচারের প্রভাব পড়েছে বহির্বাণিজ্যে ভিন্ন অনুপাতে। এতে বোঝা যায়, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্য সাধারণ সূত্র অনুসরণ করতে দ্বিধান্বিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রাভা-ার ব্যবস্থাপনায় আত্মঘাতী পদক্ষেপ, ব্যাংকিং খাতকে অন্তঃসারশূন্য করার পরিণতি দেখার জন্য অপেক্ষারও অবকাশ নেই। উৎপাদন না বাড়লেও সরবরাহ সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়ে মূল্যস্থিতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। আবার ইনফরমাল বর্ডার ট্রেডের ফলে দেশজ উৎপাদনের বিপত্তি ঘটতেই পারে। ইনফরমাল ট্রেড বাংলাদেশের বহির্বাণিজ্যের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অদৃশ্য এক অন্ধগলি ও কালো গর্ত হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের পুঁজি, মানবসম্পদ, ব্যাংকের টাকা এবং আমদানিকৃত সামগ্রী অন্য দেশে পাচার হয়েছে, আবার কোনো কোনো বিদেশি পণ্যের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে আরোপিত ট্যারিফে দেশি সামগ্রী উৎপাদন ব্যবস্থার স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে।
বুদ্ধি ও বিবেচনা প্রয়োগ করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা বাস্তবায়নে চাই আন্তরিক ও নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস। সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ঠুনকো কার্যকরণকে উপলক্ষ করে নেওয়া পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী ফল বয়ে আনে না। শুধু নিজের মেয়াদকালে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণ করলে, ধারাবাহিকতার দাবিকে পাশ কাটিয়ে ইতিপূর্বে গৃহীত কার্যক্রমকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার রেওয়াজ শুরু হলে টেকসই উন্নতির সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়ে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রূপকল্প প্রণয়নকারীর প্রগাঢ় প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ়প্রত্যয়। সমস্যা গোচরে এলে ব্যবস্থা নিতে নিতে সব সামর্থ্য ও সীমিত সম্পদ নিঃশেষ হতে দিলে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য পুঁজি ও প্রত্যয়ে ঘাটতি তো হবেই। তেল আনতে নুন ফুরায় যে সংসারে সেখানে সমৃদ্ধির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। সমস্যারা পরস্পরের মিত্র একটার সঙ্গে একটার যেন নাড়ির যোগাযোগ। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যক্তি নিরাপত্তার, ব্যক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার, সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে আয় উপার্জনের সব কার্যক্রমের কার্যকারণগত সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চাই আয়-উপার্জনের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। শিক্ষা কর্মদক্ষতাকে, স্বাস্থ্যসেবা কর্মক্ষমতাকে, কর্মদক্ষতা ও কর্মক্ষমতা উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে এটাই প্রত্যাশা। সর্বত্র সেই পরিবেশের সহায়তা একান্ত অপরিহার্য, যেখানে সীমিত সম্পদের ও সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব। একটাকে উপেক্ষা মানে যুগপৎভাবে অন্যান্য অনেক সমস্যাকে ছাড় দেওয়া। সমস্যার উৎসে গিয়ে সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে। এ কাজ কারও একার নয়, এ কাজ সবার। সমস্যার মোকাবিলায় প্রয়োজন সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা পরিপোষণের জন্য নয়। যেকোনো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য জনমত সৃষ্টিতে, আস্থা আনয়নে ও একাগ্রতা পোষণে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। সংস্কার বাস্তবায়ন কোনো মতেই সহজসাধ্য নয় বলেই সর্বত্র দৃঢ়চিত্ততা আবশ্যক। এখানে দ্বিধান্বিত হওয়া, দ্বিমত পোষণ কিংবা প্রথাসিদ্ধবাদী বশংবদ বেনিয়া মুৎসুদ্ধি মানসিকতার সঙ্গে আপস করা বা রাখার সুযোগ থাকতে নেই।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
১২১ কোটি মানুষের আফ্রিকায় বাজারটি তত বড় নয়, যতটা বিশাল ও দামি সেখানকার খনিজ ভা-ার। বিশ্ব মুরব্বিদের এ মহাদেশ নিয়ে আগ্রহের মূলে রয়েছে সেটিই। ইউক্রেন ও সাহিল অঞ্চলে সংঘাতের পেছনের খেলোয়াড়রা একই চেহারার হলেও দুই অঞ্চলের মধ্যে একটি ভিন্নতাও আছে। শেষোক্ত এলাকায় দামি সব খনিজ দখল-বেদখলের ব্যাপার আছে। নাইজার, মালি ও বুরকিনা ফাসো তিন দেশেই আছে সোনার খনি। প্রথম দুটি দেশে রয়েছে ইউরেনিয়ামও। বছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ তোলা হয় আফ্রিকা থেকে। এর বড় একটি অংশ থাকে পশ্চিম আফ্রিকার। বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ইউরেনিয়ামের মজুদ আছে নাইজারে। ফ্রান্সের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নাইজারের ইউরেনিয়ামে চলে। ফলে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান ভ-ুল করতে বদ্ধপরিকর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। নাইজেরিয়াকে দিয়ে নাইজার ও মালির শাসক বদলাতে চান তিনি।
চুয়ান্ন দেশের বিশাল আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত পশ্চিমাংশে। সেদিকে আছে প্রায় পনেরো থেকে ষোলোটি দেশ। আরবিতে এই অঞ্চলকে সাহিলও বলা হয়। বিশ্বজুড়ে এ এলাকার পরিচিতি সামরিক অভ্যুত্থান উপদ্রুত অঞ্চল হিসেবে। এই অভ্যুত্থান এখানকার ভাইরাল আইটেম। সর্বশেষ যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে এখানে নাইজার ও মালির সামরিক অভ্যুত্থানকে ঘিরে। নাইজার স্বাধীন হয় ১৯৬০ সালে। তারপর বহুবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে এখানে। সফলভাবে হয়েছে পাঁচবার। সর্বশেষ ২৬ জুলাই এক অভ্যুত্থানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজোমকে উৎখাত করেন তার পাহারাদার বাহিনীর কর্মকর্তা আবদোরাহমানে চিয়ানি। পাশের দেশ মালি এই অভ্যুত্থানের সমর্থক। একই সময়ে স্বাধীন হয়েছিল এই দুই দেশ। অনেক বিষয়ে তাদের মিল। স্বাধীনতার পর গত প্রায় ছয় দশকে মালিতেও শান্তিতে ক্ষমতার বদল হয়েছে মাত্র একবার। এসব পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান এত দিন গতানুগতিক ঘটনা হিসেবে থাকলেও এবার সেটি থাকছে না। কারণ, এখনকার ক্যুতে পরোক্ষে যুক্ত হয়ে পড়েছে রাশিয়া।
১৯৪৫ সালে কলোনি থাকার সময় শুরু হওয়া যৌথ মুদ্রা আজও আফ্রিকায় ফরাসি দখলদারিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। সিএফএ ফ্রাঙ্ক ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যাংক অব ফ্রান্সে আফ্রিকার দেশগুলোকে সম্পদ জমা রাখার নিয়ম আছে। এটিও আজকের আফ্রিকা আর মেনে নিতে পারে না। এই রাগ পড়ছে ভাষা হিসেবে ফরাসির ওপরও। নাইজারেও ফরাসি দাপ্তরিক ভাষা। মালি ফরাসিকে দাপ্তরিক ভাষার বদলে কাজের ভাষার মর্যাদায় নামিয়ে এনেছে সম্প্রতি। এতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিশোধের একটি বার্তা আছে, যা বুঝতে প্যারিসে কারও অসুবিধা হয়নি। মালি ও নাইজারে অভ্যুত্থানের পরপর নতুন নেতারা তাদের দেশ থেকে ফরাসি সৈন্যও সরাতে বলেছেন। মালি থেকে সেটি সরিয়ে প্রথমে নাইজারে আনা হলেও সেখান থেকেও সরাতে হতে পারে।
নাইজার এ বছর ৬৩ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। গত সপ্তাহে বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্রান্স নিপাত যাক সেøাগান দিতে দিতে ফ্রান্স দূতাবাস আক্রমণ করে। তারা ঢিল ছুড়ে দূতাবাসটির জানালার কাচ ভেঙে ফেলে এবং সীমানা প্রাচীরে আগুন ধরিয়ে দেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজোমেকে গৃহবন্দি করায় প্যারিসে তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা এই ভেবে ভয় পেয়ে যান যে, নাইজারে পশ্চিমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কি না। এলিসি প্রাসাদ থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বুলিবাগিশ বিবৃতি দিয়ে বলেন, ফ্রান্স ও এর স্বার্থের ওপর কোনো আঘাত বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, ‘যদি কারও গায়ে আঘাত লাগে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই বিবৃতি দুই হাজার মাইল দূরের উপনিবেশের অবাধ্য প্রজাদের উদ্দেশে কোনো এক সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর দেওয়া কঠোর হুঁশিয়ারির মতো শুনিয়েছে। নাইজারে এখনো ফ্রান্সের দেড় হাজার সেনার একটি পুরো গ্যারিসন অবস্থান করছে। এর সঙ্গে জঙ্গি বিমানসহ একটি বিমান ঘাঁটি ও ড্রোনও রয়েছে। এসব কিছুই মনে করিয়ে দেয়, উপনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার দীর্ঘ ও রক্তাক্ত ইতিহাসের পরও ফ্রান্স গোপনে আফ্রিকায় আধা-ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা চালু রেখেছে এবং সেখানে এখন এমন হুমকির মুখে পড়েছে, যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আগে তারা হয়নি। নাইজারের বর্তমান সংকটের সঙ্গে ফ্রান্সের আগেকার ঔপনিবেশিক সম্পর্কের যোগসূত্র রয়েছে। উপনিবেশ-উত্তরকালে ফ্রান্স নতুন করে ফ্রঙ্কাফ্রিক ধারণা চালু করে। এর মানে হলো ফ্রান্সের ভাষা ও মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী নব্য-উপনিবেশবাদী প্রভাব বলয় গড়ে তোলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল ফ্রঙ্কাফ্রিকের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্বে ফ্রান্সের ক্ষমতা এবং আফ্রিকায় ফ্রান্সের ক্ষমতা অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। ফ্রান্সের নেতারা আফ্রিকাকে ফ্রান্সের বাড়ির পেছনের আঙিনা বলে মনে করেন। নাইজার এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
নাইজারের ইউরেনিয়ামের প্রধান আমদানিকারক ফ্রান্স। প্যারিসের সামরিক ও সরকারি উপদেষ্টারা নাইজার প্রশাসনে খুব সফলভাবে প্রভাব তৈরি করে আসছেন। শুধু বাজোমের সরকার নয়, আগের সব সরকারের ক্ষেত্রেই তা সত্যি। ফ্রান্সের সাবেক কলোনিগুলোতে উপনিবেশ-উত্তরকালের শাসন টিকে থাকার অন্যতম ভিত্তি হলো বেপরোয়া দুর্নীতি। নাইজারসহ আফ্রিকায় ফ্রান্সের প্রভাব বলয়ের দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত। বিশাল অঙ্কের সহায়তা কর্মসূচির বিনিময়ে সেখানকার আজ্ঞাবহ পুতুল নেতারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেননি। অস্ত্র চুক্তি ও নিরাপত্তা-সহায়তার নামে ঘুষ লেনদেন চলেছে। আর ঘুষের সেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। অবৈধ অর্থের এই লেনদেন সব সময় দুই দিক থেকেই হয়েছে। ফ্রান্সের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের আফ্রিকা থেকে স্যুটকেসভর্তি টাকা দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি এ ক্ষেত্রে একজন দণ্ডিত অপরাধী। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও সারকোজি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাব-সাহারা অঞ্চলে ফ্রান্সের মুদ্রা ফ্রাঙ্কের সঙ্গে সম্পর্কিত সিএফএ ফ্রাঙ্কের প্রচলন করা হয়েছিল। এখন সেখানে ইউরো চালু আছে। এর ফলে নাইজারসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে অর্থনৈতিকভাবে ফ্রান্স আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই শোষণমূলক ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সমর্থন জানিয়ে গেছে। এর কারণ হলো, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শীতল যুদ্ধের সময় ফ্রান্সের এই সাবেক উপনিবেশগুলো ওয়াশিংটনের ভূরাজনৈতিক ও মতাদর্শিক দুর্গ হিসেবে কাজ করত।
ফ্রান্সের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আরও অনেক আফ্রিকাবাসীর মতো নাইজারের মানুষেরাও এখন ফ্রাঙ্কাফ্রিক ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করছেন। এর অর্থ হচ্ছে তারা ফ্রান্স সাম্রাজ্যকে প্রত্যাখ্যান করছেন। এই অর্থে বলা যায়, ঐতিহ্যবাহী বলয় হিসেবে পরিচিত আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রভাব আলগা হয়ে পড়ছে।
গত দুই বছরে উন্নয়ন খাতে দুই বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা পাওয়ার পরও নাইজার বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ। সেখানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৩৭ শতাংশ। ২০২২-২৪ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাইজারের জন্য ৫০৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিলেও দারিদ্র্য, তরুণদের বেকারত্ব ও কভিড মহামারী মোকাবিলার ব্যর্থতার জন্য নাইজারের ওপর ফ্রান্স ও এর মিত্রদের প্রভাবকে দায়ী করা হয়। ওই অঞ্চলে নাইজার একমাত্র দেশ নয়, যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান হলো। ২০২০ সালে মালিতে এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে বুরকিনা ফাসোতে দুই দফা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। এই দুটি দেশও ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়। সবাই বলছেন, ওই অঞ্চলে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চাইছে রাশিয়া, তুরস্ক ও চীন। বুরকিনা ফাসো ও মালির সামরিক শাসকরা এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যদি নাইজারে বাজোম সরকারকে ক্ষমতায় ফেরানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়, সেটাকে তারা যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করবেন। রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ভাগনার গ্রুপের সেনারা নাইজারের প্রতিবেশী দেশগুলোতে কাজ করছে। তারা নাইজারের বিদ্রোহীদের সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
নাইজার ও আফ্রিকার অন্য দেশগুলো যদি স্বশাসিত সরকার ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করে, সেটাই হবে সবচেয়ে ভালো পথ। আফ্রিকার উপনিবেশিকতার পথ। কিন্তু এসব দেশে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সর্বব্যাপী যে অব্যবস্থাপনা, তাতে করে সেখানে নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হবে। পশ্চিম আফ্রিকায় শান্তি কায়েম করতে জাতিসংঘ বহুবার শান্তি মিশন পাঠিয়েছে। নাইজার, বুরকিনা ফাসো ও মালির মধ্যে শেষেরটিতে এখনো বড় আকারে মিশন রয়েছে। জাতিসংঘ এই অঞ্চলে শান্তির জন্য বছর বছর ব্যাপক তৎপরতা চালালেও প্রত্যাশার পুরোটা পূরণ হয়নি। এর মাঝে সর্বশেষ জটিলতা বেঁধেছে মালির সামরিক শাসকদের সিদ্ধান্তে। তারা জাতিসংঘ বাহিনীকে সরে যেতে বলেছে। যা আফ্রিকার অন্যত্রও জাতিসংঘের অনুরূপ ভূমিকা কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মীয় জঙ্গিদের হাতে মালিতে জাতিসংঘের প্রায় তিনশ সৈনিক জীবন দিয়েছেন গত এক দশকে।
মালির শাসকরা এখন জাতিসংঘকে যে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলছেন, তার পেছনে অভ্যুত্থানকারী নেতৃত্বের সঙ্গে রাশিয়ার সুসম্পর্কেরও একটি কারণ হিসেবে আছে। রাশিয়া মনে করে, আফ্রিকায় জাতিসংঘের বিভিন্ন তৎপরতা পশ্চিমা প্রভাবের হাতিয়ার মাত্র। রাশিয়ার ওই মনোভাবেরই প্রতিফলন মালির সিদ্ধান্ত। এর ফল হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে হয়তো মালি ছাড়বেন শান্তিরক্ষীরা। এই মিশনে বাংলাদেশিরাও আছেন বড় সংখ্যায়। আফ্রিকায় ইউক্রেন-যুদ্ধের পার্শ্বফল এবং রুশোফিলিয়া এভাবেই বাংলাদেশকেও আঘাত করল নীরবে। এখন শুধুই অপেক্ষার প্রহর, সময়ই বলে দেবে আফ্রিকায় ফ্রান্স সাম্রাজ্যের দিন কি শেষ হয়ে আসছে, নাকি পেছনে আরও কিছু আছে তা সময়ই বলে দেবে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
আধুনিক বাংলা নাটকের অন্যতম সফল নাট্যকার সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস এবং মা ফিরোজা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে যোগদান করেন। খ্যাতিমান অধ্যাপক ও নাট্যকার পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তরকালে ‘ঢাকা থিয়েটার’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি এবং নাট্য-নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার গড়ে তোলেন এবং দেশব্যাপী কাজ করতে থাকেন। তার অনুবাদ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নন্দিকেশ্বরের অভিনয় দর্পণ (১৯৮২)। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার গবেষণা গ্রন্থ ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’। তার কাব্যগ্রন্থ : কবি ও তিমি (১৯৯০), উপন্যাস : অমৃত উপাখ্যান (২০০৫)। সেলিম আল দীনের উল্লেখযোগ্য নাটক ও নাট্যগ্রন্থ সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক (১৯৭৩), জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন (১৯৭৫), বাসন (১৯৮৫)। তিনটি মঞ্চনাটক : মুনতাসির, শকুন্তলা ও কিত্তনখোলা (১৯৮৬)। কেরামতমঙ্গল (১৯৮৮), প্রাচ্য (১৯৯৮), হাতহদাই (১৯৯৭), যৈবতী কন্যার মন (১৯৯৩), চাকা (১৯৯১), হরগজ (১৯৯২), একটি মারমা রূপকথা (১৯৯৫), বনপাংশুল (১৯৯৬), নিমজ্জন (২০০২), ধাবমান, স্বর্ণবোয়াল (২০০৭), ঊষা উৎসব ও স্বপ্নরমণীগণ (নৃত্যনাট্য, ২০০৭), পুত্র (২০০৮) ইত্যাদি। তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘নান্দীকার পুরস্কার’, ‘খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার’, ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। সেলিম আল দীন ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
দেশের ইতিহাসে আগস্ট মাসটাই যেন শোক-বেদনা-আতঙ্ক এবং সতর্কতার। পরিবারসহ বঙ্গবন্ধু হত্যা, শেখ হাসিনাকে কয়েকবার হত্যাচেষ্টা, জঙ্গিদের নানামুখী আক্রমণ এবং এই আগস্ট মাসেই জঙ্গিরা ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল, ২০০৫ সালের ১৭ তারিখ। কিন্তু সাংগঠনিক এমন শক্তির পেছনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া কখনোই তা সম্ভব নয়। অথচ সেই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত তো দূরের কথা, নিজ দেশে তদন্ত করে অপরাধীদেরই আইনের হাতে সোপর্দ করা সম্ভব হয়নি। নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে রয়েছে, তা আমাদের অজানা। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে একযোগে দেশব্যাপী বোমা হামলা হয়েছে। অবশ্য আমাদের দেশে এমন অনেক ঘটনাই রয়েছে, যা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব।
২০০৫ সালে জঙ্গিরা ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার আগে নিজেদের দীর্ঘসময় নিয়ে প্রশিক্ষিত করেছে। ২০০০ সালে বান্দরবানের দুর্গম এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও ক্যাম্পে জেএমবির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর তারা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বাংলাদেশকে ৬টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করে শুরু করে তাদের কার্যক্রম। পরে দাওয়াত ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। এভাবেই সারা দেশে শুরু হয় কর্মী সংগ্রহ।
জেএমবি প্রথম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার একটি সিনেমা হলে বোমা হামলা চলে। পরের বছর ২০০২ সালের ১ মে নাটোরের একটি সিনেমা হলে, একই বছরের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ৪টি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা করে। এরপরই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সেই সময় ৬৩টি জেলায় ১৫৯টি মামলা হয়। তবে এতদিনেও মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে তদন্তকারী। সেইসঙ্গে তদন্তকারীদের বিরুদ্ধেই আবার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুঃখজনক এবং বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে খোদ পুলিশই খোঁজ নিতে শুরু করেছে! কারণ হচ্ছে, কেন দেড় যুগেও নির্দেশদাতা খলনায়কদের চিহ্নিত করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা? যে কারণে সম্পন্ন হয়নি ৪৩টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে বৃহস্পতিবার ‘তদন্তকারীদের বিরুদ্ধেই তদন্ত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, প্রভাবশালী নির্দেশদাতারা জঙ্গিদের আবারও সামনের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ নাখোশ। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের তদন্তে গাফিলতির কারণে বোমা হামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হচ্ছে না। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কারা লালন-পালন করেছে বা কাদের নির্দেশে বোমা হামলা হয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মূলত এসব কারণেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই এখন তদন্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ চাপে পড়ে তদন্ত করেছিল কি না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
দেশ্যব্যাপী এমন জঘন্যতম ঘটনার তদন্ত যদি ১৭ বছর পরও খতিয়ে দেখতে হয় তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। আর যেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না হয়। নাকি তারপরও তদন্ত হবেকে জানে? চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অপরাধী দ্রুত শনাক্ত হবে এমনটিই চাওয়া।
এমন জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া জরুরি। না হলে ভবিষ্যতে এর জন্য খেসারত দিতে হতে পারে।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।