
পরস্পরকে ঘায়েল করতে গিয়ে রাজনীতির মাঠে এখন ননস্টপ সার্কাস আর ভাঁড়ামির শোডাউন। বাকস্বাধীনতার এই আচানক মেগা শোতে, যার মুখ দিয়ে যা আসছে বলছেন। ধিক্কার জানানোর কেউ নেই। বরং মিলছে করতালি। সঙ্গে মিডিয়া কাভারেজ। রুচি-শিষ্টাচার এখানে একদম অপ্রাসঙ্গিক।
দেশে ডেঙ্গুতে প্রতিদিন কত মানুষ মরছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে কতজন সর্বহারা হচ্ছেন; তার চেয়ে ‘উন্নয়নের গীত’ আর ‘গণতন্ত্রের ছবক-বয়ান’ই গুরুত্বপূর্ণ খবর। সামনে যে সার সংকটের ভয়ানক শনি ঘুরছে, এটিও সংবাদ নয়। এর চেয়ে দামি সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সাপোর্ট কোনদিকে বেশি, ভারত এবার কী ভূমিকা নেবে, কার মামলা ঠেকাতে কে চিঠি দিল, সেলফিতে কে বেশি হিট ভাইরাল? মানুষ কেবলই দশর্ক-শ্রোতা। নইলে বিনোদিত। যেমন বিনোদিত বুবলি-শাকিবের ছেলে বীর আজ কী খেয়েছে, সেই সংবাদে।
ভাঁড়ামির সমান্তরালে সম্প্রতি তারা আতঙ্ক ছড়ানো ও রটানোর কাজেও নেমেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, হাজারো নেতাকর্মী প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় ঘুরছে। এক-দেড় মাসের মধ্যে হয়তো তাকেও জেলে যেতে হতে পারে। বিএনপি মহাসচিবের জেল আতঙ্কের বার্তা দেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিবৃতি। মির্জা ফখরুল কোনো অপরাধ করে না থাকলে কি জেল আতঙ্কে ভোগেন? এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগবিরোধী মত দমন কিংবা কোনো ধরনের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করে না বলে দাবি করেন তিনি। এর সপ্তাহখানেক আগে ওবায়দুল কাদেরের ছড়ানো আতঙ্ক ছিল, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথম রাতেই আওয়ামী লীগকে বিনাশ করে দেবে।
রাজনীতির মাঠে বহু কথারই জবাব দিতে হয় না। বলে দিলেই হয়। প্রয়োজনে পরে কথা পাল্টে আরেকটা কথা বাজারে ছেড়ে দিলেই হয়ে যায়। বাস্তবতাটাই এমন। চাইলে মির্জা ফখরুলদের গ্রেপ্তার করতে এক-দেড় মাস অপেক্ষা করতে হবে না সরকারকে। সকাল-সন্ধ্যা, যখন-তখনই তাদের কয়েদ করার মতো বেশুমার মামলা তৈরিই আছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নামে নাশকতা-জ¦ালাও-পোড়াও, সরকারি কাজে বাধা, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ হরেক কঠিন-কঠিন মামলা রয়েছে। যার কোনো কোনোটি দিয়ে বিএনপি নেতাদের গোটা জিন্দেগি কারাগারে রেখে দেওয়া যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা ওবায়দুল কাদেরের এক রাতেই বিনাশ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কেন? যেখানে তারা বিএনপিকে মরা গাঙ, মুসলিম লীগের দশাগ্রস্ত ভাবেন, বিএনপির নেতা কে-কই? বিএনপিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো লোক কই? এ ধরনের প্রশ্নও আছে তাদের।
এমন একটি দল ক্ষমতায় চলে আসবে এবং ক্ষমতায় এসে পয়লা রাতে আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করে দেবে এ আতঙ্ক কেন? ‘এক রাতে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া’র ক্ষমতা বিএনপির আছে? এ প্রশ্ন নিষ্পত্তিহীন রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মরণ আতঙ্ক সাধারণ মানুষকেও ভাবিয়ে তুলেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ভর করবে কেন? আওয়ামী লীগ দেশের বড় ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল। বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন তার পেছনে। উপরন্তু গত তিন মেয়াদে ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের যেসব ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে, তাদেরও সমর্থন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। তাহলে আওয়ামী লীগের কেন এক রাতেই বিএনপি মতো নিঃস্ব একটি দলের হাতে বিনাশ হয়ে যাওয়ার ভয়? যে দলটি টানা ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে; দলটির শীর্ষ দুই নেতার একজন বিদেশে, আরেকজন শারীরিকভাবে অসুস্থ; যে দলটির ভেতরে নেতৃত্বের কোন্দলের কথা মোটামুটি সবার জানা সেই দলের হাতে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এ ধরনের আতঙ্ক অর্থহীন? বিএনপি এই ক্ষমতা পেল কই? এর বিপরীত প্রশ্ন আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী-ক্ষমতাসীন দল এত ক্ষমতা হারাল কোথায়?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরস্পরকে বিনাশের চেষ্টা বরাবরই আছে। হালে তা নতুন মাত্রা পেল কিনা, ভাবনার অবকাশ রয়েছে। মির্জা ফখরুলের জেলে পচে মরা এবং ওবায়দুল কাদেরের এক রাতে বিনাশ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কমাখা বুলি সেই ভাবনাকে আরও গুরুত্ববহ করে তুলেছে। এর মাঝে অথর্মন্ত্রী বলে দিয়েছেন, যারা বলেন দেশের অবস্থা ভালো নয়, তারা অর্থনীতি জানেন না। নিত্যপণ্যের সঙ্গে কথার চাতুরী ও মুখপাণ্ডিত্যের বাজারও আবার গরম। অভিধানও পাল্টে যাওয়ার দশা। একই বিষয়ে আজ এক কথা, কাল আরেক কথার চাতুরী। এই চাতুরী এখন একটা স্মার্টনেস। মিথ্যাচারীর প্রতিশব্দ ‘সুবক্তা’। এদিকে-সেদিকে ঢু মারলে আগে বলা হতো, ডিগবাজ। হাল আমলে তা চমক-ক্যারিশমা। একেকটি ঘটনায় মানুষের কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার মতো কথার তীর আসছে এই চমক ও স্মার্টনেসধারীদের কাছ থেকে। কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, তেল-চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের কষ্টের সময়টাতেও।
বারবার সিঙ্গাপুর-লন্ডন থেকে মেডিকেল চেকআপ করে ফিরে মাননীয়রা মানুষকে চিকিৎসার জন্য বাইরে না গিয়ে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। কোথাও থেকে প্রশ্ন আসছে না এ মশকরার বিষয়ে। মাননীয়দের জন্য কথার মাঠ ফাঁকা। তারা যেন একেকটা কথার মেশিন। বলা মাত্রই প্রচার। গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হয়ে চলে আসছে গণমাধ্যমে। মানুষের কাটা ঘায়ে কাঁটা বসানোর মতো অবারিত সুযোগ-অধিকার তাদের। গত প্রায় সোয়া এক যুগে এই মান্যবরদের বচনগুলো নিয়ে একটি বই সংকলন করলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুখপাঠ্য হতে পারে। তারা জানতে পারবে, এ দেশটিতে একদা কিছু রাজমান্যবর ছিলেন। যাদের ছিল অনেক কদর-আদর। রাজ্যের কেউ কখনো তাদের ভুল ধরার সাহস পায়নি। তাদের সতর্ক করেননি তাদের সিনিয়ররা। সংশোধনের তাগিদ আসেনি হাইকমান্ড থেকেও। বরং ধন্য ধন্য বলে সাহস-প্রণোদনা জোগানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ, স্মার্ট, লয়েল, করিতকর্মা, একের মাল, অরিজিনাল, পিওর, পরীক্ষিত, সাহসী ইত্যাদি কত অভিধা!
আইনের শাসনের বদলে শাসনের আইন কায়েম হলে মহোদয়রা যা ইচ্ছা বলতে পারেন। করতেও পারেন। সেই দৃষ্টেই তারা এই কঠিন দিনেও বলে চলছেন উন্নয়ন হলে দুর্নীতি হবেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মানুষ দেখে তার মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। ঢাকার টয়লেটগুলো ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। হাতিরঝিল গেলে মনে হয় প্যারিস শহর, আকাশ থেকে ঢাকা শহরকে মনে হয় লস অ্যাঞ্জেলেস। আগামীতে টেমস নদী দেখতে লন্ডন নয়, বুড়িগঙ্গা গেলেই হবে। বহু দেশের মানুষেরই উড়োজাহাজে চড়ার সামর্থ্য নেই, সেখানে আমরা প্লেনে করে পেঁয়াজ নিয়ে আসি এমন কথা পর্যন্ত বাদ দেননি তারা। বিদেশের মন্ত্রীরা এখন বাংলাদেশের মন্ত্রীদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য বসে থাকে এই গর্ব পর্যন্ত জানান দিয়েছেন একজন মন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় বা দলীয় সিনিয়ররাও জুনিয়রদের সঙ্গে পেরে উঠতে নামছেন এ প্রতিযোগিতায়। সুফলও পাচ্ছেন। একেক ঘটনায় হাতেনাতে প্রমাণ হচ্ছে মুখের জোরের বরকত।
মুখের জোরের এই সংস্কৃতি রাজনীতির মাঠ গড়িয়ে এখন অন্যদেরও পেয়ে বসেছে। ফুটপাতের ফেরিওয়ালা-দোকানদার থেকে শুরু করে শিক্ষক, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম-খতিব পর্যন্ত কাজের চেয়ে মুখপাণ্ডিত্য রপ্ত করতে মনোযোগী। মুখের সঙ্গে তাদের শরীরী ভাষাও সেই বার্তাই দিচ্ছে। তারা বিশেষ আদর-সমাদর, আদাব-সালাম, তোয়াজ-কুর্নিশ, যত্ন-আত্তি আদায় করে নিচ্ছেন। ঘুষকে স্পিড মানি, দুর্নীতির সঙ্গে যানজটকে উন্নয়নের প্রমাণ, জনভোগান্তিকে উন্নয়নের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো বচনে জায়েজ করার আর বাকি রাখেননি।
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে ভিন্নতা থাকতে পারে। বাজারে জ¦লতে থাকা আগুন বা দুর্নীতি-অনিয়ম পাচারকাণ্ড একেবারে লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকার তা নেভানো-দমানো বা থামানোর চেষ্টা করছে না এমনও নয়। সাফল্য যাই আসুক না আসুক, গোলমালটা বেশি বাধছে মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন কারও কারও মুখপাণ্ডিত্যের জেরে। তাদের ভ্যাংচি-খিঁচুনি, আবৃত্তি কাটা গায়ে নুনের ছিটার মতো বিঁধছে কষ্টভোগী মানুষের বুকে। এ প্রবণতার মাঝে শিক্ষা-শিষ্টাচার বা সুস্থ বুদ্ধিবৃত্তিক কিছুই নেই। পুরোটাই দেউলিয়াত্ব। চিন্তাজগতে চরম খরার প্রকাশ।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
কোটা আন্দোলনের ঝড় থেকে জন্ম একটা পার্টির। দেশবাসীকে তারা ভাষা দিলেন। জয় করে নিলেন দেশের তরুণচিত্ত। পার্টির নাম ‘গণ অধিকার পরিষদ’। যার সঙ্গে কিছুটা তুলনীয় কেবল সর্বহারা পার্টি ও জাসদ।
সিরাজ সিকদারকে নিয়ে আহমদ শরীফ বলেছিলেন, কোনো তরুণ বিপ্লবী নেতার মধ্যে স্বল্পকালের মধ্যে এমন জাদুব্যক্তিত্বের পরিচয় মেলেনি। একই কথা সিরাজুল আলম খান ও আ স ম রবের বেলায়ও সত্য। তাদের নিয়ে সেরা কবিরা কবিতাও লিখেছেন।
জাসদের নেতাদেরও জন্মের একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া আছে। তাদের ছিল একদল তাত্ত্বিক। যারা রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছিলেন। তার ভিত্তিতে ছিল কর্মসূচি। কর্নেল আবু তাহেরের ভাষায় আগুন জ্বালাতে এসেছিলাম, জ্বালিয়ে গেলাম।
তরুণ দত্ত ১৯৭০ সালের ৪ জুলাই সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় লিখলেন, দুটো কথা খুব শোনা যাচ্ছে। এক. এই সমস্ত বিপ্লবী ভ্রান্ত কিন্তু গভীরভাবে আন্তরিক। দুই. বাঙালি যুবকদের যেটি সবচেয়ে মেধাবী অংশ, তারাই এই আন্দোলনের মধ্যে নিমগ্ন। অর্থাৎ সমাজের বিকাশের পক্ষে সেই সবচেয়ে মূল্যবান শ্রেণি যারা ধীসম্পন্ন ও অনুভূতিপরায়ণ, তারাই এই বিপ্লবের নেতা। এদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সেই ছাপ নুরুল হক নুর ফেলতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।
বিদ্যমান রাজনীতি পাল্টাতে পার্টিগুলোর মধ্যে দেখেছি। শুধু থিসিস নয়, রীতিমতো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বিদ্যমান রাজনীতি বদলাতে হয়তো পারেনি, কিন্তু কর্মীবাহিনীসহ ব্যাপক পাঠক সমাজের মনোজগৎ নির্মাণে এই প্রকাশনাগুলোর ভূমিকা আছে। এইসব পার্টির বদলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এসেছে এবং জনসমর্থনও বেশি, তাদের কাছে রাজনীতিতে থিসিস ও তত্ত্বচর্চার গুরুত্ব ছিল না। তবুও প্রতিষ্ঠা সময়ে মওলানা ভাসানীর ২১ দফা, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা ও এরশাদের ১৮ দফা ছিল।
২
গণ অধিকার পরিষদ যেন তত্ত্বহীন যুগের সংগঠন। তত্ত্ব ছাড়া সংগঠন হলো খুঁটিহীন ঘর। ঝড় এলে ভেঙে পড়াই যার নিয়তি। ১৯ মের সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদ যে কর্মসূচি নিয়েছিল, সেখানে দাবি ছিল, দুর্নীতি ও দুঃশাসন। অর্থাৎ স্পষ্ট থেকে বিমূর্ত কর্মসূচির দিকে যাত্রা। রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচিও বাদ দিয়েছে। ক্ষমতার জন্য তারা এমন ঘর বেঁধেছে, যে ঘরের গোড়ায় খুঁটি ও মাটি নেই। সবে মাত্র খুঁটি, আর তা ছিল কোটার ইস্যু। যা আজ অতীত।
কোটা আন্দোলনের সময় ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক সমাজ’-এর ব্যানারে রাস্তায় দাঁড়ানো, আইনি সহযোগিতা, ডাকসু নির্বাচনে অর্থ ও অফিস দিয়ে নানান ধরনের সহযোগিতা করেছে রাষ্ট্রচিন্তার বন্ধুরা, তাদের ভূমিকাও নুররা ভুলে গেল। পরে ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদের নেতারা ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মীরা এক মেসে থাকা, যুব অধিকারে নেতৃত্ব বণ্টন পর্যন্ত হলো। সিদ্ধান্ত হলো, মূল পার্টির নাম হবে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’। হাসনাত কাইয়ূম আহ্বায়ক ও নুরুল হক নুরের সদস্য সচিব হয়ে রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত, অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নামও এসেছিল পরে। তা আর পরিণতির দিকে গেল না। ডেকে আনলেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা রেজা কিবরিয়াসহ সামরিক বাহিনীর সাবেক কয়েকজন কর্তাকে।
সর্বহারা পার্টি, জাসদের ছিল তাত্ত্বিক ফ্রন্ট। যারা বিশ্লেষণ হাজির করতেন। যারা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। জুলফিকার আলি ভুট্টো, মাত্র আড়াই বছরে পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রিয়তম পার্টিতে পরিণত করেছিলেন। এই পার্টির প্রধান তিনজন উদ্যোক্তা ছিলেন। ছিল ভুট্টোর নিজের ক্যারিসম্যাটিক চরিত্র, নীতিগত দলিলগুলো লিখতেন আরেকজন। তার নাম জালালুদ্দীন আব্দুর রহিম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চরতর ডিগ্রি নেন, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রেও পড়েন। গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন পিপলস পার্টির সেক্রেটারি। আরেকজন ছিলেন মুবাশ্বির হাসান, যার ছিল নেতা ভেড়ানোর ক্ষমতা। গণ অধিকার পরিষদে এরকম কিছু নেই।
এরপর ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণসংহতি, ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে কর্মসূচি পালিত হতে থাকল। কথা উঠল, এই ৪টি সংগঠন একটি পার্টিতে পরিণত হওয়া যায় কি না। তাও হলো না।
রেজা কিবরিয়া ও নুরদের সম্পর্কে এতদিন কানাঘুষা ছিল। তদন্ত রিপোর্টে ১০ শতাংশও সত্য হলে বাংলাদেশের জন্য তা দুঃসংবাদ। প্রশ্ন ওঠা দরকার, কেন যৌথ মালিকানা ব্যক্তিগত হয়ে যায়? আসলে সংগঠনের ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার পরিণতি এটাই। দলটি ভেঙে গেল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাহলে ভাঙছে না কেন, সে আরেক আলোচনা।
৩
লেখাটি যখন লিখেছিলাম, তখন সংগঠনটি কেবল বিভক্ত হয়েছে। দুটি অংশই নিজ নিজ জমায়েত বাড়াতে মনোযোগী। জনগণের আলোচনায় তারা আর নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও আর তাদের নাম মুখে নিচ্ছে না। ধর্মপন্থি দলগুলোও না। ফরহাদ মজহারের মতো তাত্ত্বিকরা সম্ভাবনাময় মনে করেছিলেন, তিনি গণতন্ত্র মঞ্চ ভাঙার অভিযোগ তুলেছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও অধ্যাপক আসিফ নজরুলের মতো প্রবীণরা ছিলেন। আছেন এখন আসিফ নজরুল। ৫৪-এর নির্বাচনী জনসভায় ভাসানী হুজুরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুও গেছেন ময়মনসিংহে। ঢাকায় ফিরে আলাপের মাঝখানে কর্মীদের জানালেন, আমরা ওখানে জিতব না। কর্মীরা জানতে চাইল, কেন? তখন বললেন, জনসভায় সব চেংরা বেংরা, মুরব্বি কই?
তরুণরা আগামীর মানুষ। সেই তরুণরা ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। গণ অধিকার পরিষদও সম্ভবত তাই হলো।
লেখক : লেখক ও সংগঠক
বাসা থেকে বেরুতে আজ একটু দেরি হলো। রিকশায় বাসস্ট্যান্ডে এসে বাসে চড়লাম। অধিকাংশ দিনই ট্রাফিক-সংক্রান্ত ঝামেলা থাকে। তবু আশা করি, সময়মতো অফিসে পৌঁছে যাব। রাস্তায় ভিআইপির গ্যাঁড়ায় পড়ব কে জানত! ট্রাফিক জ্যাম নিত্য ঝামেলা। ভিআইপি বা ভিভিআইপি-জাতীয় গ্যাঁড়া সপ্তাহে অন্তত একদিন থাকেই। কোন দিন থাকবে তা অবশ্য কেউ বলতে পারে না। আজ রেকর্ড সময় লাগছে। খামারবাড়ির ঠিক আগে বসে আছি অনেকক্ষণ।
জ্যামটা লেগেছিল টাউন হল পেরুতেই। আজ শ্যামলী দিয়ে যাইনি, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা দিয়েছি। শ্যামলীর রুটেও একই অবস্থা হওয়ার কথা; কথা নয়, সত্যিই ছিল এবং এখনো আছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকেই দেখছি, বাসের সিটে বসে এক লোক ঘুমুচ্ছে। এখনো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। গ্রিন হেরাল্ড স্কুল থেকে ফার্মগেট পার হতেই এক ঘণ্টার বেশি লেগে গেল। টাউন হলের পর জ্যামের প্রভাব বাড়তে থাকল। জ্যামের কারণ ও উৎস জানা গেল, খামারবাড়ির কাছে এসে। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে কৃষিবিদদের এক অনুষ্ঠান চলছে। মন্ত্রী আছেন, সরকারের অন্য রথীরাও আছেন। সরকারি দলের সমর্থকরাও বিপুল সংখ্যায়। নেই কেবল কৃষিজীবীরা। অনুষ্ঠান তাদের ব্যাপারে নয়।
বাসের পিঁপড়াগতি। চলতে চলতেই দেখছি এবং শুনছি, ইনস্টিটিউটে উদ্দীপক-সঞ্জীবক ভাষণ চলছে। মুহুর্মুহু করতালি। বাসে বসে যাত্রীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। সরকারের লোকদের কর্মকাণ্ডে, আচরণে তারা বিরক্ত। এ পথেরই বাসে কয়েকদিন আগে একলোক বলছিল, এ সরকার ছাড়া এত উন্নয়ন কে কবে করেছে! অবশ্য কথাটি তিনি এখানে বলেননি, ফার্মগেটের পরের অংশে বলেছিলেন।
কারওয়ান বাজারে এক ছেলে উঠল বাসে। সে সুপার ভিআইপি। মোবাইল সেটে কি যে দেখছে, আল্লা মালুম। সেলফোন মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর করে তুলেছে। এটাও হয়তো একদিক দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য ইতিবাচক। এখন মানুষ পারতপক্ষে রাজনীতি নিয়ে ঝড়োৎপাদক আলোচনা করে না। সাধারণ মানুষ এখন স্থবির হয়ে থাকতেই পছন্দ করছে। এ ছাড়া দৃশ্যত কোনো উপায়ও নেই। মানুষের সর্বতা উবে গেছে। মোবাইল ফোন নাকি উন্নয়নের যন্ত্রণা? না-কি মানুষ অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়ে গেছে? তারা হয়তো ভাবে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি নিয়ে ভেবে কী লাভ! ভাবনেওয়ালারাই ভাবুক।
২
আরেক দিনের ঘটনা। স্কুলজীবনের এক বন্ধু আসছিল আমার বাসার দিকে। আমাকে নিয়ে যেতে, যাব বনানীর ক্যাপ্টেন’স হলে। সেখানে আরও তিন বন্ধু অপেক্ষা করছে। শ্যামলী রিং রোড থেকে ১২ নম্বরের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে আদাবর ১৭ নম্বরে আসছিল সে। আদাবরের (১২ নম্বরের কাছেই) রাস্তার দিকে মোড় নিতেই এক লোক হঠাৎ তার গাড়ির সামনে পড়ল। গাড়ি আস্তেই চলছিল, সামনে লোক দেখে দাঁড়ও করানো হয়েছিল। কিন্তু লোকটি হাতে ব্যথা লাগার ভান করে, কাতরাতে শুরু করল (অবশ্য ভানের বিষয়টি পরে বোঝা গেল। ‘রাম ধরা’ খাওয়ার পর।)। লোকটি বলল, তার ওপর নাকি গাড়ি তুলে দেওয়া হয়েছে। তার হাতে প্রচণ্ড ধাক্কা লেগেছে। সে বলল, তার বাড়ি ১২ নম্বরের কাছেই। সে উহ্ আহ্ করতে লাগল। গাড়ির চালক বন্ধুটিকে সাবধান করার চেষ্টা করল। বলল, স্যার আপনি গাড়ি থেকে নামবেন না। গাড়ি তো আমি জোরে চালাচ্ছি না। লোকটি ভান করছে। আমার বন্ধুটির নাম ওয়াহিদ খান। পেশায় প্রকৌশলী। একটি বেসরকারি প্রকৌশল ফার্মে কাজ করে। উচ্চপদস্থ, নিপাট ভদ্রলোক। সে তার চালককে থামিয়ে দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
লোকটির প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে বলল, সরি ভাই। গাড়িটি আপনার গায়ে লেগে গেছে। কিছু মনে করবেন না, প্লিজ। এ কথাই তার কাল হলো। লোকটি বলল, আমি কিন্তু আমার বাপ-ভাইদের ডেকে আনতে পারি। যাই হোক, আপনাকে দেখে ভদ্রলোক মনে হচ্ছে। আমাকে হাতের চিকিৎসা করানোর জন্য তিন হাজার টাকা দিন। বন্ধুটি তাকে তিন হাজার টাকা দিতে চাইল। লোকটি বলল, আমার পরিচিত ক্লিনিক আছে সেখানে চলুন, ব্যান্ডেজ করতে হবে। সেখানে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো। অতঃপর এ কথা সে কথা বলে, লোকজন ডাকার ভয় দেখিয়ে বন্ধুটির কাছ থেকে দশ হাজার টাকা আদায় করা হলো। আমি তার অপেক্ষাতেই ছিলাম। ক্যাপ্টেন’স হলে যেতে হবে তো। সেখানে আমাদের তিন বন্ধু অপেক্ষা করছে। আমরা সবাই ক্লাসমেট। এই বন্ধুটি ছাড়া চারজনই প্রাইমারি স্কুল থেকে ক্লাসমেট। সে হাইস্কুলে উঠে আমাদের ক্লাসমেট হয়েছিল। এখনো আমরা বন্ধু। প্রায় দুই ঘণ্টা বিলম্বে ক্যাপ্টেন’স হলে পৌঁছলাম। বিলম্বের কারণ সবাইকে বলা হলো। কারণ শুনে সবার হাসাহাসি। সবাই বুঝলাম, বন্ধুটিকে ‘মদন’ বানানো হয়েছে। ভদ্রতার খেসারত দিতে হয়েছে তাকে।
৩
‘আধুনিক বিজ্ঞান ও হিন্দুধর্ম’ শিরোনামের লেখায় অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা লিখেছিলেন, ‘সবই ব্যাদে আছে।’ এ রকম লেখার জন্য তার সময়ের অনেক পাঠক অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, তিনি বেদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন। তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, এই বাক্যটির প্রয়োগ সম্বন্ধে একটু ব্যক্তিগত ইতিহাস আছে।
‘প্রায় ১৮ বৎসর পূর্বেকার কথা, আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরনিবাসী (অর্থাৎ আমার স্বদেশবাসী) কোনো লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাহাকে আমার তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে (অর্থাৎ, সূর্য ও নক্ষত্রাদির প্রাকৃতিক অবস্থা, যাহা Theory of Ionisation of Elements দিয়া সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায়) সবিশেষ বর্ণনা দেই।’ তিনি দুই-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, এ আর নূতন কি হইল, এ সমস্তই ব্যাদে আছে। আমি বলিলাম, ‘মহাশয়, এসব তত্ত্ব বেদের কোন অংশে আছে, অনগ্রহপূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?’ তিনি বলিলেন, “আমি ত কখনও ‘ব্যাদ’ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস, তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবী কর, সমস্তই ‘ব্যাদে’ আছে। অথচ এই ভদ্রলোক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতম পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন।”
মেঘনাদ সাহা লিখেছেন, ‘... আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে। সকল প্রাচীন সভ্যদেশের পণ্ডিতগণই বিশ্বজগতে পৃথিবীর স্থান, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহাদির গতি, রসায়নবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ইত্যাদি সম্বন্ধে নানারূপ কথা বলিয়া গিয়াছেন, ... কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চতুর্দিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে এ কথা বলেন নাই। ... কোথায়ও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর ও অপরাপর গ্রহের ভ্রমণ কক্ষ নিরূপণ করা যায়।’
বেদে বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ভিত্তি খোঁজার কোনে মানে নেই। থাকলে চন্দ্রাভিযান বিষয়ক তত্ত্বাদিরও ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যেত। বাস্তবে পাওয়া যায় কি? বর্তমান ভারত সরকার চন্দ্রাভিযানতত্ত্ব বেদে খুঁজেনি। চান্দ্রবিজ্ঞান বেদে খুঁজলে চন্দ্রযান আর উৎক্ষিপ্ত হতো না।
চন্দ্রবিজয়ের দৌড়ে ভারত চতুর্থ দেশ। এ দৌড়ে প্রথম দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়াকে তার উত্তরসূরি বলা যেতে পারে, ১৯৭৬ সালের সর্বশেষ সোভিয়েত অভিযানের পর ২০২৩ সালে রাশিয়া চাঁদে নামার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে), দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র এবং তৃতীয় চীন। ১৯৫৯ সাল থেকে চলছে এ দৌড় এবং চলবে। চাঁদে যাওয়ার ফজিলত হয়তো শত বছর পার হলে পাবে মানবজাতি। যারা চাঁদে যাবে তারা বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার দৌড়েও এগিয়ে থাকবে। আর থাকবে মানবের কীর্তির ইতিহাসে। ভারত চাঁদে গেলে আমাদের কী লাভ সে কথা ভেবে লাভ নেই। একটু উদার হতে পারলে আমাদের প্রতিবেশী দেশ চাঁদে যাচ্ছে, এটা ভেবে আনন্দ পেতে পারি। আবার এটাও ভাবতে পারি, কল্যাণী বামপন্থিদের মতো, কোটি মানুষকে অভুক্ত রেখে চাঁদে যাওয়ার অর্থ হয় না। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে তবেই চাঁদে গেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র গেছে অনেক মানুষকে গৃহহীন রেখে, ফুটপাতে শুইয়ে রেখে; মানুষকে এ দশায় রেখে ভারতও গেছে। তাতে দোষ কী? বিজ্ঞানের জয় হয়েছে এটাই মোদ্দা কথা।
ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গেছে। রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ যেখানে নামতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে, ভারত সেখানে সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে চাঁদে এসব রাষ্ট্রই প্রাধান্য বিস্তার করবে। ভারতের চাঁদে যাওয়ার খরচ খুব বেশি নয়। বাসনা থাকলে বাংলাদেশের পক্ষেও চন্দ্রযান পাঠানো সম্ভব।
আমরা আগামী চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে কীভাবে চলব, তা-ই ঠিক করতে পারিনি। তবে পারব না তা-ও ঠিক নয়। তার জন্য চাঁদে প্রিয়তমার বা বুজুর্গ ব্যক্তির নূরানী চেহারা দেখতে পাওয়ার স্বপ্নতরিকা বাতিল করতে হবে।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায়
‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে
আমরা তখনো বসে,
বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি
ফিকাহ ও হাদীস চষে।
...
বাহিরের দিকে মরিয়াছি যত
ভিতরের দিকে তত,
গুণতিতে মোরা বাড়িয়া চলেছি
গরু ছাগলের মতো।’
চাঁদে যেতে চাইলে এ রকমের বিশ্বাস খারিজ করতে পারলেই ভালো। ভারত চাঁদে গেছে বলে খুশিতে লাফানোর কিছু নেই। হিংসায়-ঈর্ষায় জ¦লে পুড়ে মরারও কিছু নেই। সেটা যদি করি তাহলে ব্যাদে সব আছে এ কথা বলার চেয়ে ভিন্ন কিছু ভাবা হবে কি! বিবি তালাকের ফতোয়া খোঁজার চেয়ে ভিন্ন কিছু করা হবে কি! ভারত শুধু চাঁদেই যাচ্ছে না, সূর্যের উদ্দেশেও রওনা দিয়েছে। তাদের নভোযান ‘আদিত্য’ সূর্যের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে ‘স্থিত’ হবে। ভারত পারল আমরা কি পারব না?
লেখক: সাংবাদিক
জীবকুল যা খায়, সেই খাদ্য থেকে নির্গত হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তি। মানে খাদ্যদ্রব্য জারিত হয়ে, শরীরে তাপশক্তি ছড়িয়ে পড়ে। আমরা জানি, তাকে বলা হয় ‘তাপনমূল্য’। উদ্ভিদকুল এই শারীরবৃত্তীয় খাদ্য প্রক্রিয়ার কথা জানে না। সুস্থ শরীর সেটা আপনাআপনি করে। কিন্তু প্রাণিকুলের একমাত্র প্রাণী ‘মানুষ’ ছাড়া এটা অন্য কোনো প্রাণী জানে না। তাতেই হয়েছে বিপত্তি। যে কারণে কিছু মানুষ ‘তাপনমূল্যের’ একটা মূল্য নির্ধারণ করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ। ফলে বিশ^ব্যাপী খাদ্যমূল্য কমলেও, বাংলাদেশে তার উল্টোচিত্র। প্রতিনিয়ত এখানে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়ে। সম্ভবত মজুদদারদের মধ্যে কোনো চিকিৎসক (!) রয়েছেন, যিনি মনে করেন খাদ্যদ্রব্য জারিত হয়ে যে তাপশক্তি পাচ্ছে মানুষ, তার একটা ‘দাম’ নির্ধারণ করা দরকার। যে কারণে পৃথিবীতে খাদ্যের মূল্য কমলেও, বাংলাদেশে বাড়ে। এর ফলে সাধারণ মানুষের তাপনশক্তি কমে শরীরে কম্পনশক্তি তৈরি হয়েছে। এতে মানুষ ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। আর মজুদদারের গোষ্ঠী ভালো-মন্দ খেয়ে, শরীরে তৈরি করছে উচ্চমাত্রার তাপনশক্তি। কিন্তু এই দুর্র্বৃত্তদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য, সাধারণ মানুষের পক্ষে যেন কেউ নেই। ফলে সব জিনিসের দাম হু হু করে বাড়ছেই। পৃথিবীর বাইরের কোনো ভিনগ্রহের মানুষ যেন এসবের নিয়ন্ত্রক। যে কারণে তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন কথা। বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে ধার দেওয়াটা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সুদহার বাড়িয়ে যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, সেখানে বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে কৌশলে সুদহার কমিয়ে রাখা হয়েছে। তাছাড়া বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সোমবারের দেশ রূপান্তর বিস্তারিত এমনটিই জানাচ্ছে ‘খাবারের দাম কমেছে সারা বিশ্বে, দেশে রেকর্ড বৃদ্ধি’ শিরোনামের সংবাদে। বলা হচ্ছে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে জানুয়ারিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর পর থেকেই সূচকটি ধারাবাহিকভাবে বাড়তে শুরু করে এবং চলতি বছরের মে মাসে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয় সার্বিক মূল্যস্ফীতি। এ সময় অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে এলেও গত আগস্টে বাংলাদেশে সামান্যই কমে। তবে আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়েছে, আগের মাস জুলাইয়ে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে বিবিএস খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের যে চিত্র দিয়েছে, তার সঙ্গে বাজারের কোনো মিল নেই। বেশিরভাগ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেরই দাম লাগামের বাইরে চলে গেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা আছে। উৎপাদক স্তর থেকে ভোক্তা স্তর এবং আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তরে বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা প্রকট। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার ব্যবস্থাপনায় যে নজরদারি ও খবরদারি দরকার সেগুলো ঠিকমতো করতে পারছে না বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, নজরদারির ক্ষেত্রে আমদানি কত, উৎপাদন কত, গ্যাপ কত এসব তথ্য-উপাত্তনির্ভর নীতিমালা দরকার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দুর্বলতার কারণে আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারছেন না। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ।
গত আগস্টে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যসারণি দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন অবস্থানে আসে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মূল্যসারণিতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় এমন খাদ্যপণ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আগস্টে মূল্যসারণির গড় ছিল ১২১.৪ পয়েন্ট, যা আগের মাসে ছিল ১২৪ পয়েন্ট। ২০২১ সালের মার্চের পর গত আগস্টেই সর্বনিম্ন ছিল জাতিসংঘের খাদ্য মূল্যসারণির গড়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের মার্চে এটি সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়, আগস্টে এর চেয়ে ২৪ শতাংশ কমেছে। কিন্তু, বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই অবস্থার প্রতিফলন হয়নি। বরং, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্য সহায়তার মাত্রা কমায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
দেশে আদৌ খাদ্যের তাপনমূল্য কমবে নাকি আরও বাড়বে সে বিষয়ে অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। শরীরে প্রচুর তাপ দরকার, কিছুদিন পরই তো আসছে তীব্র শীত। সরকারের কী দায়িত্ব, তা না বলাই ভালো।
২০০৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বাউল শাহ আবদুল করিম। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ইব্রাহীম আলী, মায়ের নাম নাইওরজান। দারিদ্র্য ও জীবন-সংগ্রামের মধ্যে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। দারিদ্র্যের কারণে কৃষিকাজ করলেও গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখা যায়নি। তিনি বাউলগানের দীক্ষালাভ করেছেন সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকে। তিনি শরিয়তি, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউলগান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন। স্বশিক্ষিত বাউল শাহ আবদুল করিম পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও কয়েক বছর আগেও এসব গান শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আবদুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। বাউল শাহ আবদুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘ভাটির পুরুষ’। তাকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা ‘মহাজনের নাও’ নাটকের প্রদর্শনী করেছে সুবচন নাট্য সংসদ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।