
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ ভোট দিলে আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমি কখনই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না। আমি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলেন, তার সরকার সবসময় খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারপ্রধান তার নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরে বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন পাস হয়েছে এবং সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে।
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভিত্তি নেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, গত ১৪ বছরে সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
সৌজন্য সাক্ষাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে বলে জানান স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কারণ এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধ কখনই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনার মাধ্যমে এই বিরোধের মীমাংসা হতে পারে।
রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি হচ্ছে এবং ওখানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকের কারণে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা মাদক পাচার, মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পাঁচ বছর ধরে তারা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। আর তাই এখন তাদের সেখানে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আত্মসংস্থানমূলক কাজসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে সরকার। বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে।
এ সময় শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও অনুকূল পরিবেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। মিয়ানমারে আবারও কোনো গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কয়েকজন উচ্চপদস্থ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার সফর দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে শোলে বলেন, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। আমি দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ব্যাপারে আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে সাবসিডিয়ারি তিন কোম্পানির কাঁচামালের আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে ২০২২-২৩ হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আয় বাড়লেও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে লোকসানে পড়েছে ডরিন পাওয়ার। একই অবস্থা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানিরও। সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য আমদানি করা কাঁচামালে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হওয়ায় শাহজীবাজার পাওয়ারও ব্যাপক লোকসানে পড়েছে।
বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও কাক্সিক্ষত নোট মার্কিন ডলার। আমদানি ব্যয়ের ধকল সামলাতে গিয়ে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রিজার্ভ বাড়াতে ব্যাপক সংস্কারের শর্ত মেনে বিদেশি ঋণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে সরকার। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বাড়তি থাকায় গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২২ শতাংশের বেশি। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এলসি খোলার পর তা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। সাধারণত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ৩ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এ ব্যবধানের কারণেই বিনিময় হারে বড় লোকসান দিয়েছে পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো।
ডলার সংকটে শুধু ডরিন কিংবা শাহজীবাজার পাওয়ার নয়, রানার, ইফাদ, সিঙ্গার, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম লিমিটেড, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এসিআইর মতো ব্র্যান্ড ভ্যালুর বড় কোম্পানিগুলোও শত শত কোটি টাকার লোকসান দিচ্ছে। বিনিময় হার, কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে মূলত উৎপাদনমুখী কোম্পানিগুলো মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হারে বাড়লেও একই হারে পণ্যমূল্য বাড়াতে পারেনি কোম্পানিগুলো। বিনিময় হারের কারণে ইলেকট্রনিকস খাতের জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটনের নিট মুনাফা ৯৭ শতাংশ কমে গেছে।
শক্ত মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানি নতুন করে লোকসানে পড়ায় মন্দায় থাকা পুঁজিবাজারের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে। তালিকাভুক্ত ৭০ শতাংশ কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। নতুন করে লোকসানে পড়েছে তালিকাভুক্ত ২৫ কোম্পানি। আর বিনিয়োগ করা ১৬৯ শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় ১৮টি মিউচুয়াল ফান্ডও নতুন করে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। অবশ্য এখনো বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে সর্বনিম্ন মূল্যসীমায় আটকে রয়েছে। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অনীহা রয়েছে। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক লেনদেন তলানিতে নামছে।
বিশ্ববাজারের জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বাড়ায় গত বছর ৫ আগস্ট সরকার দেশেও সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। জ্বালানি তেল ছাড়াও সম্প্রতি গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে সরকার। এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকে জাহাজ ভাড়া ও কাঁচামালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনমুখী শিল্পের ব্যয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব ইয়াসিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার কোম্পানির জন্য এইচএফও আমদানি করতে গিয়ে প্রায় শতকোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। তিনি জানান, যখন এইচএফও আমদানির জন্য এলসি খোলা হয় তখন ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৪ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত মার্চে খোলা এলসি ডিসেম্বরে পরিশোধের সময় ডলারের বিনিময়মূল্য দাঁড়ায় ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। ফলে এলসি পরিশোধের সময় অতিরিক্ত প্রায় শতকোটি টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। একটি সাবসিডিয়ারির কারণে বড় লোকসানে পড়তে হয়েছে শাহজীবাজার পাওয়ারকে।
শাহজীবাজার পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, যার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড। এটি ১৫০ মেগাওয়াটের এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি। আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে কোম্পানিটি। শাহজীবাজার পাওয়ার ও এর অধীন অন্যান্য কোম্পানি কিছুটা লাভজনক অবস্থায় থাকলেও শুধু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ারের কারণে চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের দ্বিতীয়ার্ধে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ২১ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল। প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা মুনাফা থাকায় চলতি প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) শাহজীবাজার পাওয়ারের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৫৮ কোটি টাকা। ডলারের কারণে ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি এই প্রথম লোকসানে পড়ল।
বিনিময় হারের কারণে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড। তিন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এইচএফও আমদানি করতে গিয়ে আর্থিক ব্যয় ৯৮ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ব্যবধানের কারণে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ডরিন পাওয়ারের নিট লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকারও বেশি, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার নিট মুনাফায় ছিল কোম্পানিটির।
ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলসি নিষ্পত্তি করতে গিয়েই বিপত্তি তৈরি হয়েছে। এলসি খোলার সময়ে ডলারের যে দর ছিল নিষ্পত্তির সময়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ব্যয় সমন্বয় করতে গিয়েই দ্বিতীয় প্রান্তিকে লোকসানে পড়ে কোম্পানিগুলো।
চলতি প্রথমার্ধে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের আর্থিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা প্রায় ৮০ শতাংশই হয়েছে ডলারের বিনিময় হারের লোকসান থেকে। গত বছর একই সময়ে আর্থিক ব্যয় ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। আর্থিক ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় কোম্পানিটি ৫৯ কোটি টাকার কর-পূর্ববর্তী লোকসানে পড়েছে। কর পরিশোধের পর কোম্পানির সমন্বিত নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ২৪২ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় এমনিতেই উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম। কিন্তু পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে দাম পুরোপুরি সমন্বয় সম্ভব হয়নি। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আর্থিক ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, যা লোকসানে যাওয়ার প্রধান কারণ। ডলারের সংকট এখনো শেষ হয়নি। ব্যাংকগুলো আমাদের ডলার সংগ্রহ দিতে বলছে। কিন্তু এ সময়ে এটি খুবই কঠিন।’
ইস্পাত শিল্পের আরেক জায়ান্ট কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত চলতি প্রথমার্ধে ৮৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল। চলতি প্রথমার্ধে ডলারের কারণে কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ১৫৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির লোকসান হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৩ কোটি টাকা। এতে করে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমে ৯৭ শতাংশ গেছে। একই খাতের আরেক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের নিট মুনাফা ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি থেকে আয় বাড়লেও নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৮৬ শতাংশ কমে গেছে।
সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, গত দেড় বছর সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫০-৪৫০ শতাংশ, ডাইস ও কেমিক্যালের খরচ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। গত বছরের শুরুতে মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে পোশাকশিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে চলমান জ¦ালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল নিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে বড় সংকটে রয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক।
চলতি প্রথমার্ধে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টাইলক্র্যাফট, রহিম টেক্সটাইল, সায়হাম টেক্সটাইল, দুলামিয়া কটন, প্রাইম টেক্সটাইল, সাফকো স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, জাহিন টেক্সটাইল লোকসানে পড়েছে। এর বাইরে রপ্তানি আয়ের ডলার থাকার পরও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ বস্ত্র খাতের কোম্পানির আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
কানাডার টরন্টোতে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের একমাত্র ছেলে কুমার নিবিড় গুরুতর আহত হয়েছেন। টরন্টোর স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশের (ওপিপি) বরাত দিয়ে সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, টরন্টোর হাইওয়ে ৪২৭-এর দুনদাস স্ট্রিট ওয়েস্টে সোমবার মধ্যরাতে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক বিভাজনে ধাক্কা খেয়ে গাড়িটি উল্টে যায় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে ভেতর থেকে আরোহীদের বের করে হাসপাতালে পাঠান।
অন্টারিও প্রাদেশিক পুলিশ এক টুইটে জানিয়েছে, ওই গাড়িতে থাকা চারজনই বাংলাদেশি। শিক্ষার্থী ভিসায় তারা টরন্টোতে থাকছিলেন। নিহতদের মধ্যে একজন তরুণী এবং একজন তরুণ, দুজনেরই বয়স ২০ বছর। আর অন্যজনের বয়স ১৭ বছর। আর আহত ২১ বছর বয়সী একজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ হতাহতদের নাম প্রকাশ না করলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে সিবিসি নিউজ। তবে কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈ ও আরিয়ান দীপ্ত। আর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কুমার নিবিড় বিএমডব্লিউ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। গাড়িটি চলছিল প্রচণ্ড গতিতে। কুমার নিবিড় বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ^জিতের ছেলে।
এদিকে বিষয়টি জানার পরপরই কুমার বিশ^জিৎ ও তার স্ত্রী কানাডার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একাধিক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করে নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দুই পক্ষ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায়। রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদারের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল মিয়ানমারে এবং এ সংকট সমাধানে দেশটি বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে। ঢাকা সফরে এসে এমন বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে। এ ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়ে টেকসই সংস্কারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। তবে র্যাবকে একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য কার্যকরী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেন, র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে সফররত সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের আলাদা বৈঠকে এ আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত যৌথ ব্রিফিংয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও ডেরেক শোলে। শোলে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের সম্পর্কের যে ধারাবাহিকতা, সেটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই, একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা এ নিয়ে আশাবাদী।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা শোলে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ছে। অনেক মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং আমি এখন এসেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমাদের খুব ভালো বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করার সমান সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তা অনুসরণীয়। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা প্রতিদিন কাজ করছি, বাংলাদেশকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এ সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং বাংলাদেশের জন্য আমরা আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘উনি এসেছেন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ভালো করার জন্য, শক্তিশালী করার জন্য। গত ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু এই সম্পর্ক আমরা আরও সামনে নিয়ে যেতে চাই, সলিডিফাই করতে চাই। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর। তারা সিঙ্গেল কান্ট্রি আমাদের গার্মেন্টসে, তারা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য নেয়। আমরা এটা থেকে আরও ওপরে যেতে চাই। বাংলাদেশে নতুন গড়ে তোলা ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে আমাদের সাহায্য করছে এবং করে যাচ্ছে। সিঙ্গেল কান্ট্রি, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা গ্রেটেস্ট কন্ট্রিবিউটর। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত, রোহিঙ্গাদের জীবনমান আরও উন্নত করতে হবে, তাদের হৃদয়ে একটা হোপ দিতে হবে। তারা আমাদের সঙ্গে আছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল (সেইফ জোন) প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে তারা জানতে চাননি। আমরা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করব, কীভাবে স্বাধীন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করেছি এবং ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা বানিয়েছি, এগুলো তাদের জানিয়েছি। বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে জ¦ালাও-পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাস ঘটিয়েছে তার একটি ডকুমেন্ট তাদের দিয়েছি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৫ ফেব্রুয়ারি ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেন, এই আইনের কারণে দেশটির ২০০০-এরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, এ বিষয়ে আলাপ হয়নি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা বলেছি যে এই আইনের যেখানে যেখানে প্রয়োজন আমরা সংশোধন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তাদের আহ্বান জানিয়েছি।’
বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডেরেক শোলে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে গতকাল প্রাতরাশ বৈঠক করেন। ডেরেক শোলের এ সফরের বৈঠকগুলোতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, যৌথ অগ্রাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকার, জলবায়ু, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপ হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই সফর নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘র্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠকে আলাপ হয়েছে। র্যাবকে আরও শক্তিশালী এবং পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলতে তাদের সহায়তা চেয়েছি, বিশেষ করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে।’
বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বলেন, ‘বাংলাদেশ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে এবং আমি সম্মানিত বোধ করছি যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির পরপরই আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে; যা কয়েক দশকের সহযোগিতা ও সমর্থনের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও যৌথ অগ্রাধিকারের অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার অপেক্ষায় রয়েছি।’
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এ সফর নিয়ে এক বিবৃতিতে গতকাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক প্রতিনিধিদল ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বাংলাদেশে থাকাকালে কাউন্সেলর শোলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকগুলোতে কাউন্সেলর শোলে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকারের সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সহযোগিতা ও একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের উভয় দেশের জন্য আরও বেশি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও মানবিক সহযোগিতার পূর্ণ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যে দৃঢ়বন্ধন গড়ে তোলার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় খাতরা। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বিনয় খাতরা বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত।
বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি- ২০) শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি-২০’র সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে ভারত। এ সময়ে গ্রুপটির সব বৈঠকে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় বলে বর্ণনা করে বিনয় খাতরা বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যা ইতিমধ্যেই কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এই বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশই কাজ করতে পারে।
সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) শর্তাবলি সহজ করার চেষ্টা করছেন যাতে বাংলাদেশ সহজেই ঋণ নিতে এবং তা পরিশোধ করতে পারে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই পরিচালনা করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।
পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতকে ফের তাগাদা :তিস্তা ও কুশিয়ারায় পানিবণ্টন চুক্তিতে ভারতকে আবারও তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে তিস্তায় পানি নিয়ে ভারতে যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা আছে সেটি দেশটির পক্ষ থেকেও বাংলাদেশকে আবার জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। দুই বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা ভারতকে তিস্তা ও কুশিয়ারা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেছি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সই করা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ভারতকে বলেছি। কিন্তু তিস্তা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তিনি বলেন, পানিবণ্টন ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় অনিষ্পন্ন ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে ভারতের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। মোটাদাগে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ট্যারিফ বাধা দূর করা, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি-বিএসএফের ভূমিকা বাড়ানো, দ্রুত সেপা চুক্তি করা, গঙ্গা চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়াসহ আঞ্চলিক পর্যায়ে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম বেগবান করতে একমত হয়েছি। এছাড়া পর্যটকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণে ভারতের আরও সহযোগিতা চেয়েছি। পাশাপাশি এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আদানির বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে আলাদা করে আলাপ হয়নি। তবে বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আলাপ হয়েছে। তারা নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে সহযোগিতা করবে। তবে এ জন্য আমাদের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেপ্টেম্বরে জি-২০ এর মূল সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলার আদালতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় আইন ও বিচারাঙ্গনে উদ্বেগ ও শঙ্কা বেড়েছে। গত চার মাসে পিরোজপুর, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির ৩১ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণ, বিচারককে হুমকি দেওয়া, অদালতে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় স্লোগান এবং বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, অতীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও এখনকার মতো কখনো হয়নি। বিচারপ্রার্থীরা যাতে জিম্মি না হয়ে পড়েন সে জন্য বিচারক-আইনজীবীদের আরও সহনশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। কারণ বিচারাঙ্গন ও আইনাঙ্গনের পরিপূরক হচ্ছে আইনজীবী (বার) ও আদালত (বেঞ্চ)।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে অস্থির পরিস্থিতির অনেকটাই অবসান হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক বিচারকাজ চলছে। যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের এজলাস বর্জন অব্যাহত রয়েছে। তিনি ছুটিতে থাকায় এ আদালতের বিচারকাজ পরিচালনা করছে অন্য একটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপ্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থলে কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা জানতে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের শীর্ষ আইনজীবী এবং আদালতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালতের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতি; কিছু আইনজীবীর প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস, কিছু আইনজীবীর বাড়াবাড়ি আচরণ; আইনজীবী ও বিচারকদের ‘ইগো’ সমস্যা বা নিজ সিদ্ধান্তে স্থির থাকা, কোনো কোনো বিচারকের বিচক্ষণতার ঘাটতি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুজ্জ্বল ভূমিকা এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার নেপথ্যে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ও আইনজীবীদের আদালত বর্জনের ঘটনার নেপথ্যে নানা কারণ আলোচিত হচ্ছে। জেলা ও দায়রা আদালতের নাজির মো. মোমিনুল ইসলামের (ইতিমধ্যে বদলি হয়েছেন) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও জেলার শীর্ষ বিচারকদের ভুল বুঝিয়ে পরিস্থিতি অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেছেন আইনজীবীরা। জেলার প্রবীণ ও শীর্ষ আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, বিচারক ও আইনজীবীদের ইগো বা ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা পরিস্থিতি অন্যদিকে নিয়ে গেছে। আবার আইনজীবীদের অনেকে অত্যুৎসাহে উদ্ধত আচরণ করেছেন।
আইনজীবীরা বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলাম আদালত চত্বরে ১৫-২০ জন ভেন্ডারকে অবৈধভাবে বসান। ভেন্ডারদের কোর্ট ফি দেওয়ার জাল সিøপ ও জাল স্ট্যাম্প বিক্রি, ২ টাকার কোর্ট ফি ১০ টাকায় বিক্রি করার বিষয়ে আপত্তি তুললেও মোমিন মাসোহারা নিয়ে তাদের পক্ষেই অবস্থান নেন। তার বিরুদ্ধে আদালতের রায়, আদেশ ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে আইনজীবীদের। এসব বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মোমিনের বিরুদ্ধে বিচারক শারমিন নিগারকে ভুল বোঝানোর অভিযোগ তুলেছেন বারের শীর্ষ আইনজীবীরা। মোমিনের বিরুদ্ধে গত বছর ৭ ডিসেম্বর জেলা বারের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তের নিরিখে দুদকে ১০ ডিসেম্বর অভিযোগ করা হয়।
আইনজীবীরা বলেন, বার ভবন থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত পর্যন্ত যেতে একটি রেইনশেড নির্মাণের চেষ্টা করে জেলা বার। জেলা জজ ও জেলা প্রশাসককে জানিয়ে গত বছর ২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়। জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯টি খুঁটি বসানোর পর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা অপারগতা প্রকাশ করি। ভেন্ডারদের কাছ থেকে মোমিনের মাসোহারা নেওয়ার বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজকে অবহিত করি। কিন্তু আমাদের বলা হয়, মোমিন মসজিদের জন্য এ টাকা নেন। এ ছাড়া শহরের পুরাতন কাচারি এলাকায় টিনশেডসহ চার শতাংশ জায়গা কোটি টাকার বিনিময়ে নাজির মোমিন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে কয়েকজনকে শত বছরের জন্য লিজ দেন, যা তার এখতিয়ারের বাইরে।’
কয়েকজন আইনজীবী বলেন, গত বছর ১ ডিসেম্বর অবকাশ ছুটি শুরুর আগে আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আইনজীবীরা চাপাচাপি করলে তাদের প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সাধারণ সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে ওই বিচারকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১ জানুয়ারি আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে বিচারক আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আইনজীবীরা মনে করেন, তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুক রীতির বাইরে গিয়ে পুলিশি পাহারায় এজলাসে ওঠেন। ওইদিন বেশ কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে অশোভন আচরণ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩ জানুয়ারি বিচারকরা আদালতে প্রতীকী বিচারকাজ করে চলে যান। ওইদিন শীর্ষ বিচারকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এরপরই তারা আদালতের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। আইনজীবীরাও পাল্টা কর্মসূচি দেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৫ জানুয়ারি জেলা বারের কয়েকজন আইনজীবীকে হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল দিয়ে তলব করলে আইনজীবীদের একাংশ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জাল কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প বিক্রয়কারীদের উচ্ছেদ করেছিলাম। নাজির মোমিন তাদের আবারও বসানোর ব্যবস্থা করেন এবং জেলা ও দায়রা জজকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়সংগত কারণে মাঠে আছি। মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তার আদালত বর্জন চলবে।’
বার কাউন্সিলের অনুজ্জ্বল ভূমিকা : সারা দেশে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পর এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে তার উদ্যোগ নেয় বার কাউন্সিল। গত ২৮ জানুয়ারি বার কাউন্সিল ভবনে জেলা বারের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা করেন নেতারা। কিন্তু সেখানে বক্তব্য দেওয়া নিয়ে বিবাদে জড়ান সরকারপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ওইদিন বার কাউন্সিল থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি। বার কাউন্সিলের একজন সাধারণ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতীতে আদালতে অপ্রীতিকর ঘটনায় বার কাউন্সিলের সিনিয়র নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন। এবার তেমনটি হয়নি।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (অ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিন উদ্দিন ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বার কাউন্সিলের কমপ্লেইন অ্যান্ড ভিজিল্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলা বারের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন আদালতে অসহিষ্ণু আচরণ না করেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বিচারক-আইনজীবী উভয়ই অনড় অবস্থানে থাকেন। আইনজীবীদের অনেকেই হয়তো বাড়াবাড়ি করেছেন। এজলাসে বিচারকদের গালি দেওয়া, হুমকি দেওয়া ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু তারা কেন এমন করছে তা খুঁজে বের করা উচিত। আমার মনে হয়, উচ্চ আদালত দুপক্ষকেই ডেকে তাদের বক্তব্য শুনে সমাধান দিতে পারে। বার কাউন্সিলরকেও আরও বলিষ্ঠ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে এখন মূল সমস্যা দুর্নীতি। প্রায়ই এ প্রসঙ্গটি উঠছে। বিচারকদের অধস্তনরা যে দুর্নীতি করে এতে সন্দেহ নেই। এর ফলে আইনজীবীর মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ ফকির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জুডিশিয়ারি ও আইনজীবী মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটা পরিবারের মতো। পরিবারে যেমন ঝগড়া হয় তেমনি আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যেও মাঝেমধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। আশা করি, পরিস্থিতি আর খারাপের দিকে যাবে না। সত্বর সমস্যার সমাধান হবে।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।