
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে না পারলে সংস্থাটি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করবে না। প্রথম কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের আগে এ শর্ত দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। সরকার রাজি হওয়ায় ঋণ অনুমোদন এবং প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
আগামী ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। এখন দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নির্দেশনা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক।
সূত্র জানায়, আইএমএফের শর্ত মানতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে আরেক দফা। রাজস্ব খাতের সংস্কারে এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একের পর এক হিসাব কষছে। আইএমএফের কথামতো অতিরিক্ত রাজস্ব কোন খাত থেকে আদায় করা সম্ভব তার যোগ-বিয়োগ করছে। আসছে বাজেটে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যহতি কমানো যায় তা নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে।
রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্তপূরণ করতে হলে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে হবে। এর মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত দিয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ অর্থবছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে।
আইএমএফের এসব হিসাব সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসের ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি সামনে রেখেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরার চিন্তা চলছে। এতে আসছে অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না তা নিয়ে চলছে বৈঠক। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে এবং ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপাস্তকে বলেন, ‘বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কাউকে খুশি করতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।’
আইএমএফের কথামতো নিয়মিত আদায়ের সঙ্গে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে এরই মধ্যে আয়কর আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত করার কাজটি দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি কাস্টমস বা শুল্ক আইনের কাজটিও দ্রুত শেষ করতে বলেছেন। ঋণদানকারী সংস্থার সন্তুষ্টিতে এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বিস্তার করতে ২০২৩ সালেই আরও ২০ লাখ করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। দাতা সংস্থার শর্ত মানতে বড়মাপের কর ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এনবিআরে তলব করে পাওনা পরিশোধে বলা হয়েছে।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা শাখার কাজে গতি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাতা সংস্থার প্রস্তাব অনুসারে সম্ভাবনাময় বৃহৎ ও মাঝারি করদাতা চিহ্নিত করার কাজে জোর বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মনিটরিং, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে, করদাতাদের সেবা বৃদ্ধি ও করদাতাদের সঙ্গে (খাতভিত্তিক) বেশি বেশি আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বাইরে থাকা অনিবন্ধিত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপে চিহ্নিত করে নিবন্ধিত কর শুরু করা হয়েছে।
ঋণ প্রদানের আগেই আইএমএফের শর্ত দেওয়া হয়েছে, নতুন করে কোনো খাতেই আর শুল্ক-ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। বর্তমানে যেসব খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, তা কমাতে হবে বা তুলে নিতে হবে। আইএমএফের এ প্রস্তাবে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে তা যাচাই-বাছাই করে এনবিআরের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। উৎপাদন খাতে পোশাকশিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোনসেট ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। ওষুধের প্রাথমিক কাঁচামাল উৎপাদনে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এভাবে জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য সেবা ভ্যাট অব্যাহতির আওতাভুক্ত থাকায় ভ্যাট জিডিপি তথা কর জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর থেকে হিসাব করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ না তৈরি করেও আইএমএফের শর্ত কতটা মানা সম্ভব।
অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোরালো চাপ দিয়েছে আইএমএফ। ঋণদানকারী সংস্থাকে সন্তুষ্ট করতে এরই মধ্যে অর্থ পাচারে কে বা কারা জড়িত তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে ৩৩টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাজে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। অর্থ পাচারকারীর এসব ব্যক্তির সন্ধানে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অতীতে পানামা, প্যারাডাইসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার সম্পর্কিত কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের নাম উঠে এসেছিল তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক খাতে সংস্কার, সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া, টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, প্রকল্পের কেনাকাটায় জবাবদিহি, স্বচ্ছতা আনাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিযোজন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংক খাতের কী সংস্কার করা সম্ভব এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন কতটা সংশোধন করা সম্ভব তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে।
আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে এ বছরের ডিসেম্বরে আর শেষ কিস্তি পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। এসব কিস্তির পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার করে।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শিরিন ম্যানশন নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনের তিনতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা ওই তলায় অবস্থিত নিউ জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মী। ভবনের একটি অংশ ধসে ছিটকে পড়ে দুপাশের সড়কে।
বিস্ফোরণে পথচারীসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। এর মধ্যে অন্তত পঁচাজন দগ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৬ জনকে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় ভবনটিতে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ছুটে যান। জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।
আগের দিনই চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বেশ কয়েকজন।
গতকাল সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ভবনটির চারদিকে ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দুপাশের সড়কে। ধসে পড়ে ভবনের তিনতলার দেয়ালের ইট-বালু ও আসবাবপত্র। কিছু সময় পর দেখা যায় কয়েকজন ভবনের সামনের সড়কের ওপর অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। ভবনটির দুই পাশ দিয়ে থাকা সড়কের অনেক পথচারীও আহত হন।
ঘটনার সময় ভবনটির নিচে ছিলেন রিকশাচালক জিয়া রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি রিকশা নিয়ে দাঁড়ায় ছিলাম। হঠাৎ এমন একটা বেকট (বিকট) শব্দ হলো, এরপর চারিদিক ধুলায় ভরে গেল। আমি রিকশা ফেলায় দিছি দৌড়। বাইচা গেছি।’
ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিক ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। নিহত তিনজন হলেন নিউ জেনারেশন কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটর শফিকুজ্জামান শফিক (৪৫) ও তুষার, অফিস সহকারী আবদুল মান্নান (৬৫)।
আহতদের অনেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ধানম-ির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গুরুতর আহত ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আয়েশা আক্তার আশা, হাফিজুর রহমান, জহুর আলী, সৈয়দ আকবর আলী ও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, পাঁচজনকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নুরনবী, তাজুদ্দিন, মেহেদী হাসান, জাকির হোসেন জুয়েল, কামাল, কবীর হোসেন, রাবেয়া খাতুন, তামান্না ও অজ্ঞাতনামা একজন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের পাশেই শিরিন ম্যানশন নামের তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটি পুরাতন ও জরাজীর্ণ। বিস্ফোরণ হওয়া তৃতীয়তলায় ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং নিউ জেনারেশন কোম্পানি অফিস। দোতলায় রয়েছে সেলুন, লন্ড্রি আর নিচতলায় খাবারের হোটেল, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের দোকান, হস্তশিল্প ও তাঁতজাত পণ্যের বিপণিবিতান। ভবনটির তিনতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেয়ালের ইট ও জানালার কাচ উড়ে গিয়ে রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় পড়েছে। আশপাশের দোকানিরা জানান, ভবনটির নিচে বেশ কয়েকজন হকার ছিল। তারাও আহত হয়েছে।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারা সবাই দগ্ধ ছিলেন বলে জানান জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। এ ছাড়া তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন। তারা হলেন মো. হান্নান, মাহাবুবুন্নবী ও স্বপ্না রানী সাহা।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ৩৫ থেকে ৪০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দুজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং একজনকে এইচডিওতে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর ও মাথা আঘাতে থেঁতলে গেছে।’
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি : গতকাল দুপুরে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। মৃত্যুর সংবাদ শুনে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা। নিহত শফিকুজ্জামান শফিকের স্বজনরা জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সাভারের গেন্ডারিয়ায়। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানার ধুলদি লক্ষ্মীপুরে। মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্ত্রী পপি জামান। তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা।
নিহত আবদুল মান্নান গত ২২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছিলেন বলে স্বজনরা জানান। তার ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন আশিক জানান, পুরান ঢাকার চকবাজার থানা এলাকার ইয়াসিন ব্যাপারীর গলিতে তাদের বাসা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মান্নান। পরে মৃত্যুর খবর পান তারা। তিনি বলেন, টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন আগে তার বোন মনিরা মারা গেছেন। সেই শোক না কাটতেই বাবার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত আরেকজন তুষারের বাড়ি নরসিংদী।
বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে সিটিটিসির বক্তব্য : ঘটনার পর সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং সিবিআরএন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো ঘরে বা আবদ্ধ স্থানে যদি কোনোভাবে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ঘনত্বে গ্যাসের অবস্থান থাকে, সে ক্ষেত্রে যেকোনো ইগনিশন সোর্সের (বৈদ্যুতিক সুইচ, শর্টসার্কিট, দেশলাই, লাইটার) মাধ্যমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ভবনের তিনতলার ফিনিক্স ইনসিওরেন্স লিমিটেডের অফিস থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিটিটিসির বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে কোনোরূপ বিস্ফোরকের উপস্থিতি ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা ও ব্যাপকতা পর্যালোচনায় গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ বলে সিটিটিসির বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মতামত দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে আসা সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমতউল্লাহ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার ভবনগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, সেখানে যেকোনো কারণে গ্যাস তৈরি হতে পারে। আমরা ধারণা করছি জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, কারণ এত বড় বিস্ফোরণ গ্যাস থেকেই সম্ভব। তবে এসির গ্যাস থেকে এমন বিস্ফোরণ হয় না। স্যুয়ারেজের লাইন বা অন্য কোনো কারণে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।’ নাশকতার কোনো আলামত এখনো মেলেনি বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর একই দাবি করে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা নয়, এটি একটি দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে আমরা একটা কমিটি করব। তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিস এবং ঘটনাস্থলে কাজ করা এক্সপার্টদের মতামত নেবে। পরে তারা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
নিউ জেনারেশন কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার শাহিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, লিরা ব্র্যান্ডের পেনসিল, রাবার, ইরেজার, জ্যামিতি বক্স, ফাইল, স্ট্যাপলারসহ এ জাতীয় বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করেন তারা। বিস্ফোরণ হওয়া অফিসটাতে কোনো মালামাল ছিল না।
ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট (পাবলিক রিলেশনস) মো. মাহাবুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমাদের ছয়জন কর্মী অফিসে ছিল বলে জানতে পেরেছি। তারা সবাই আহত হয়েছেন। অফিসে দুই টন করে চার টনের দুটি এসি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বা দাহ্য পদার্থ ছিল বলে আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পাশে থাকবে কাতার। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের পাশাপাশি গতকাল রবিবার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি কাতারের আমিরকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাতারের আমির বলেছেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
মোমেন বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কাতারের কাছ থেকে আরও বেশি জ্বালানি, বিশেষ করে বার্ষিক আরও এক মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিএ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আমরা কাতারের সাহায্য চাই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি চুক্তি নবায়ন করতে চাই। আমি আরও এলএনজি চাই। জবাবে কাতারের আমির জানতে চান বাংলাদেশ কতটা জ্বালানি চায়। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশ আরেকটি এমটিএ অর্থাৎ ১৬-১৭ কনটেইনার জ্বালানি চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমির বলেন, আপনার কাতার ছাড়ার আগে জ্বালানিমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অনুদান নয় স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রাপ্য চায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তাদের প্রাপ্য চায়। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোও দর-কষাকষিতে তাদের পক্ষ রাখবে। আমাদের দেশগুলো দান চায় না; আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীনে আমাদের পাওনা।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল কিউএনসিসিতে এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহা কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশার আরেকটি আশ্বাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এলডিসিতে বাস্তব কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসিতে উত্তরণে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। তাদের একটি বর্ধিত সময়ের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সহায়তা ভোগ করা উচিত। তাদের উন্নত বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীল সক্ষমতা কীভাবে তৈরি করা যায় তা জানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী ও ক্রান্তিকালীন অর্থায়ন ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ দ্বিগুণ করার জন্য টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর এলডিসির জন্য ওডিএ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে হবে। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঋণ টেকসই করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যম রয়েছে। এলডিসিগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। এলডিসিগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার এবং মঙ্গলের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা এলডিসিতে ২২৬ মিলিয়ন যুবকদের ব্যর্থ করতে পারি না।’
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী এবং তারপর ইউক্রেনের যুদ্ধ এলডিসি অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সংকট এবং কিছু স্বল্পোন্নত দেশে দীর্ঘকাল ধরে টানা সংঘাত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের গল্পের বেশির ভাগ অংশই আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য আলোচনা করেছিলাম এবং সহযোগিতার জন্য আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেছি। বেশির ভাগ উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি থেকে আমরা যে শুল্ক এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছি, তা আমাদের বেসরকারি খাতকে একটি দৃঢ় উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রিপস চুক্তির অধীনে প্রদত্ত পেটেন্ট মওকুফ সুবিধা স্থানীয়ভাবে আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অপর ডব্লিউটিও চুক্তির অধীনে রেয়াতগুলো আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছি, তা আমাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মহতী সমাবেশে আপনার সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি কাতার সরকার ও জনগণকে তাদের উদার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে রয়েছি। আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের জনগণের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের বেশি। কভিড-১৯ মহামারীকালে তার সরকার বাংলাদেশের জিডিপির ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ সমান অর্থব্যয়ে ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী ভিশন-২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। সম্মেলনের সভাপতি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, ইউএনজিএর সভাপতি সাবা করোসি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি লাচেজারা স্টোয়েভা এবং মালাবির প্রেসিডেন্ট ও এলডিসি গ্রুপের চেয়ারপারসন লাজারাস ম্যাকার্থি চাকাওয়েরা বক্তৃতা করেন।
অবহেলাতেই প্রাণ গেল ছয়জনের। আহত ২২ জনের মধ্যে চোখ হারাল তিনজন। অক্সিজেন সেপারেশন কলামে যখন অক্সিজেন এসে জমা হচ্ছিল, সেই অক্সিজেন বের হওয়ার জন্য যে পাইপগুলো ছিল একপর্যায়ে তা বের হতে না পেরেই প্রবল শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে কলামটি। আর ১০০ ফুট উচ্চতার এ কলামটি ছিল লোহার শিটের তৈরি। এই শিটগুলো যখন প্রবল বেগে ছোটে, তখন শেডের লোহার পাতগুলো কারখানার রডের ছাউনিগুলোকে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর লোহার আঘাতে চারপাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গতকাল রবিবার উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, এ কলামটি (অক্সিজেন সেপারেশন কলাম) বিস্ফোরিত হয়েছিল। এটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু ছিল। প্রায় ১৪ বর্গফুট আয়তনের এ কলামটিতে অক্সিজেন এসে জমা হতো। একই সঙ্গে দুটি পাইপ দিয়ে আসত বাতাস। আর দুটি পাইপ দিয়ে উৎপাদিত অক্সিজেন দুটি ডেলিভারি পয়েন্টে চলে যেত। সেই ডেলিভারি পয়েন্টে প্রায় ২৪টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা যায়। এই প্ল্যান্টে দুটি ডেলিভারি পয়েন্ট ছিল; অর্থাৎ ৪৮টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা হচ্ছিল। অক্সিজেন রিফিল হয়ে গেলে পাশেই ট্রাক দাঁড়ানো থাকত সেই ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়া হতো বলে জানান মিজানুর রহমান নামের এক শ্রমিক।
বিস্ফোরণ কেন হলো : বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক আহমদ মিয়া কলামটিকে দেখিয়ে বলেন, এই কলামে এসে অক্সিজেন জমা হচ্ছিল। সেই অক্সিজেন কোনো না কোনো কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে যাচ্ছিল না। কোথাও ব্লকেজ হয়েছিল। ব্লকেজ হয়ে যাওয়ায় কলামের ভেতরে অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যায় এবং বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু চাপ বেড়ে গেলে তো পাশের অপারেটর বসা ছিলেন। তিনি কলামের পাশের জায়গায় আঙুল প্রদর্শন করে বলেন, এখানে বসত অপারেটর। তাহলে আমার প্রশ্ন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে সিলিন্ডার রিফিল হচ্ছিল না, তা অপারেটর খেয়াল করেনি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা ফোরকান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে শ্রমিক কাজ করছিল, সে সুইচ অন করে বসেছিল, সে হয়তো খেয়াল করেনি। একইভাবে অপারেটরও বিষয়টি জানত না। আর এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
কিন্তু হঠাৎ করে ব্লকেজ কেন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান নামের আরেক শ্রমিক জানান, গত পাঁচ বছরে এই সেপারেশন কলাম চেক করা হয়নি বলে জানেন। হয়তো দীর্ঘদিন মেইনটেন্যান্স না করার কারণে তা ব্লকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অক্সিজেন সেপারেশন কলামেই বিস্ফোরণ হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে গ্যাস জ্যাম হয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তারপরও আমরা আরও কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে এর আগে কোনো অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। তাই এখানে কেন ঘটল, আমরা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’
কারখানা ব্যবস্থাপকের ভাষ্য : দুর্ঘটনার পর থেকে সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না কিংবা পরিচয় দিয়ে কেউ সামনে আসছিল না। গতকাল সকালে কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম সংবাদকর্মীদের সামনে শনাক্ত হওয়ার পর বলেন, ‘আমাদের কারখানার সরকারের সব দপ্তরের (বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস) ছাড়পত্র রয়েছে। সাধারণত অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা ঘটে না। তারপরও কেন ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
তদন্ত কমিটির ভাষ্য : সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কী পেয়েছেন, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘পুরো তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই প্ল্যান্টের পাশাপাশি আগামীতে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে এবং কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সুপারিশ থাকবে আমাদের রিপোর্টে।’
এদিকে গতকাল সকালেই উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। এমনকি কেউ আহত অবস্থায়ও ছিল না। ফলে গত শনিবারের বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু ও ২২ জন আহত হয়েছে। এই প্ল্যান্ট থেকে শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার জন্যও এই অক্সিজেন ব্যবহৃত হতো। চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে আবুল খায়ের, লিন্ডে, স্পেকট্রা, মোস্তফা হাকিম, আল রাজিসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে। এর আগে গত বছরের ৪ জুন পাশর্^বর্তী বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাত (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের পর গত শনিবার দিনভর পরিস্থিতি ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। তবে রাত ৯টার দিকে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে রাতে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় জেলা শহরের দোকানপাট। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত শহরের কদমতলায় ওয়াকার শোরুমসহ আহমদিয়াদের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে। এ ছাড়া ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জেলা শহরের প্রেস ক্লাব সড়কে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের অ্যাকশনে পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার মধ্যরাত থেকে পঞ্চগড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল।
তবে গতকাল রবিবার সকাল থেকে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির পর গতকাল সরকারি-বেসরকারি দপ্তর খোলা থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ভিড় বাড়তে থাকে। অবশ্য শহরে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলক অন্যান্য দিনের চেয়ে ছিল কিছুটা কম।
এদিকে হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে আহমদিয়াদের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। তিনটি মামলায় নামপরিচয় উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মিলে আসামির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহমদিয়াদের মামলার বাদী হয়েছেন ওসমান গনী নামে এক ব্যক্তি। এই মামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যুবক প্রকৌশলী জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে। তারা হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ গ্রেপ্তারদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে গুজব রটনার অভিযোগে পৌর যুবদল নেতা ফজলে রাব্বীকে (৩০) এবং তেঁতুলিয়া থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে সতর্ক আছেন। এখন পর্যন্ত থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গুজব ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ইন্টারনেটসেবা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অপারেটররা নিজে থেকে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করেছে। আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।’
বিএনপি-জামায়াত গুজব ছড়িয়েছে দাবি রেলপথমন্ত্রীর : আহমদিয়াদের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা গুজব ছড়িয়ে তৌহিদি জনতার নামে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবি জানান রেলপথমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে, ইসলামের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি এবং আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে হতাহত কাউকে উদ্ধারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৮ জনের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল ইসলাম। সাতজনের মধ্যে মো. মাসুদ ও প্রভাষ নামে দুই শ্রমিককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত অন্য পাঁচজন হলেন মো. আরাফাত আলম, জাহিদ হাসান, মো. ওসমান, মো. মজিবুর রহমান ও ফ্যান্সি।
আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুন নির্বাপণের পরও আগ্রাবাদ ও কুমিরা স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছিল। এখন আর দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ তদন্তসাপেক্ষে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
হাসপাতালের চিত্র: গতকাল রবিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। বিস্ফোরণে কারও থেঁতলে গেছে পা, কারও উড়ে গেছে হাত, কেউ পেয়েছেন মাথায় আঘাত। আবার কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন বার্ন ইউনিটের বিছানায়। তাদের সুস্থ করে তুলতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দেশ রূপান্তরকে জানান, বিস্ফোরণে আহত ২১ জনকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন গতকালই মারা গেছেন। বাকি ১৮ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
আহতদের কাতরাতে দেখে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড। ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে কথা হয় আহত শ্রমিক মো. ফোরকানের সঙ্গে। তার হাত ও আঙুলে ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর তার আর কিছু মনে নেই। চমেক হাসপাতালের বিছানায় জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তার বাম হাতের দুই আঙুল উড়ে গেছে। পাশের বেডে কাতরাচ্ছেন মাসুদ। তার ডান পা উড়ে গেছে। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন মো. জাহেদ। তার চিকিৎসা চলছিল চমেকের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে। জাহেদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণের পর আর কিছু মনে নেই তার। গতকাল রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে তার জ্ঞান ফেরে। তার পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসকরা জানান, জাহেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অপারেটর রিপন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। বুক, কোমর ও হাঁটুতেও আঘাত পেয়েছি।’
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আহত ১৮ জনের মধ্যে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ৭ জন, অর্থোপেডিক্স বিভাগে ২ জন, নিউরো সার্জারি বিভাগে ৬ জন ও চক্ষু বিভাগে ৩ জন। আহত অন্য শ্রমিকরা হলেন মো. নূর হোসেন (৩০), মোতালেব (৫২), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫) ও শাহরিয়ার (২৬)।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে গেলে এমন বীভৎসতার চিত্র দেখা মেলে। বিস্ফোরণে মুখম-ল থেঁতলে গেছে আকতারের। তার সারা শরীরে ঢুকেছে কাচ ও লোহার টুকরা। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে চিরতরে। দুই চোখ ও থুতনি ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখমন্ডলে রক্তের দাগ। বাম চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে গতকাল বিকেলে। চিকিৎসকরা বলেছেনÑডান চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো আর দেখবেন না আকতার। এমন খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার ছোটভাই আজাদ হোসেন। চোখের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ভাইকে কাতরাতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারছেন না আজাদ। তার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। স্বামীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে আকতারের স্ত্রীও শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মুছছেন।
চমেকের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তনুজা তানজিন জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে আজাদসহ তিনজনের একটি করে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাদের চোখে কাচ ঢুকে নার্ভ কেটে গেছে। তবে তিনজনের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাকি দুজন হলেন নাহিন শাহরিয়ার ও সোলায়মান। এর মধ্যে নাহিন ও আকতার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের শ্রমিক। সোলোয়মান ট্রাক শ্রমিক।
ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৪০০ ঘরবাড়ি: গতকালের বিস্ফোরণে কারও ঘরের চাল উড়ে গেছে, কারও ভেঙেছে জানালার কাচ। আবার কারও বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ফেটে গেছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচ, ছোট ছোট লোহার টুকরো। দেখে মনে হবে, এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা। বিস্ফোরণের পর আশপাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এমন ক্ষয়ক্ষতিই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বিএম ডিপোর ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ৯ মাসের মাথায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামের একটি প্ল্যান্টে ঘটে গেল আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা আজ (গতকাল) সকাল থেকে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেছি। সবমিলিয়ে প্রায় চারশ ঘর ও অর্ধকোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তখন ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আপনারা আরও সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি।’
সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, আমি অসুস্থ তাই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আসতে পারিনি। আমাদের কাছে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র আছে। তবে কীভাব এ ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। বিস্ফোরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেব। আর যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযান শেষে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনের কথা জানা যায়। এর মধ্যে আহত ২৪ জন এবং নিহত ৬ জন।
এদিকে, বিস্ফোরণের কারণ জানতে জেলা প্রশাসনের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিহত শ্রমিকদের দুই মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’