
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে পাশে থাকবে কাতার। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের পাশাপাশি গতকাল রবিবার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি কাতারের আমিরকে উদ্ধৃত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাতারের আমির বলেছেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
মোমেন বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কাতারের কাছ থেকে আরও বেশি জ্বালানি, বিশেষ করে বার্ষিক আরও এক মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটিএ) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আমরা কাতারের সাহায্য চাই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি চুক্তি নবায়ন করতে চাই। আমি আরও এলএনজি চাই। জবাবে কাতারের আমির জানতে চান বাংলাদেশ কতটা জ্বালানি চায়। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশ আরেকটি এমটিএ অর্থাৎ ১৬-১৭ কনটেইনার জ্বালানি চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আমির বলেন, আপনার কাতার ছাড়ার আগে জ্বালানিমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অনুদান নয় স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের প্রাপ্য চায় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তাদের প্রাপ্য চায়। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোও দর-কষাকষিতে তাদের পক্ষ রাখবে। আমাদের দেশগুলো দান চায় না; আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীনে আমাদের পাওনা।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল কিউএনসিসিতে এলডিসি ৫ : সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহা কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশার আরেকটি আশ্বাস। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এলডিসিতে বাস্তব কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসিতে উত্তরণে তাদের পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। তাদের একটি বর্ধিত সময়ের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সহায়তা ভোগ করা উচিত। তাদের উন্নত বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীল সক্ষমতা কীভাবে তৈরি করা যায় তা জানতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী ও ক্রান্তিকালীন অর্থায়ন ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ দ্বিগুণ করার জন্য টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলোর এলডিসির জন্য ওডিএ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে হবে। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঋণ টেকসই করার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যম রয়েছে। এলডিসিগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। এলডিসিগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার এবং মঙ্গলের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা এলডিসিতে ২২৬ মিলিয়ন যুবকদের ব্যর্থ করতে পারি না।’
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী এবং তারপর ইউক্রেনের যুদ্ধ এলডিসি অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু সংকট এবং কিছু স্বল্পোন্নত দেশে দীর্ঘকাল ধরে টানা সংঘাত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের গল্পের বেশির ভাগ অংশই আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য আলোচনা করেছিলাম এবং সহযোগিতার জন্য আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেছি। বেশির ভাগ উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতি থেকে আমরা যে শুল্ক এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছি, তা আমাদের বেসরকারি খাতকে একটি দৃঢ় উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রিপস চুক্তির অধীনে প্রদত্ত পেটেন্ট মওকুফ সুবিধা স্থানীয়ভাবে আমাদের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অপর ডব্লিউটিও চুক্তির অধীনে রেয়াতগুলো আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছি, তা আমাদের সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মহতী সমাবেশে আপনার সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি কাতার সরকার ও জনগণকে তাদের উদার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে রয়েছি। আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। আমাদের জনগণের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের বেশি। কভিড-১৯ মহামারীকালে তার সরকার বাংলাদেশের জিডিপির ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ সমান অর্থব্যয়ে ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী ভিশন-২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। সম্মেলনের সভাপতি ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস, ইউএনজিএর সভাপতি সাবা করোসি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সভাপতি লাচেজারা স্টোয়েভা এবং মালাবির প্রেসিডেন্ট ও এলডিসি গ্রুপের চেয়ারপারসন লাজারাস ম্যাকার্থি চাকাওয়েরা বক্তৃতা করেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে না পারলে সংস্থাটি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করবে না। প্রথম কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের আগে এ শর্ত দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। সরকার রাজি হওয়ায় ঋণ অনুমোদন এবং প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে সংস্থাটি।
আগামী ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। এখন দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নির্দেশনা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক।
সূত্র জানায়, আইএমএফের শর্ত মানতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে আরেক দফা। রাজস্ব খাতের সংস্কারে এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একের পর এক হিসাব কষছে। আইএমএফের কথামতো অতিরিক্ত রাজস্ব কোন খাত থেকে আদায় করা সম্ভব তার যোগ-বিয়োগ করছে। আসছে বাজেটে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যহতি কমানো যায় তা নিয়েও বিশ্লেষণ চলছে।
রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্তপূরণ করতে হলে আগামী তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে হবে। এর মধ্যে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত দিয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ অর্থবছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে।
আইএমএফের এসব হিসাব সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসের ১৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি সামনে রেখেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরার চিন্তা চলছে। এতে আসছে অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে কি না তা নিয়ে চলছে বৈঠক। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে এবং ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপাস্তকে বলেন, ‘বাস্তব অবস্থার ওপর নির্ভর করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কাউকে খুশি করতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।’
আইএমএফের কথামতো নিয়মিত আদায়ের সঙ্গে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে এরই মধ্যে আয়কর আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত করার কাজটি দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি কাস্টমস বা শুল্ক আইনের কাজটিও দ্রুত শেষ করতে বলেছেন। ঋণদানকারী সংস্থার সন্তুষ্টিতে এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বিস্তার করতে ২০২৩ সালেই আরও ২০ লাখ করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। দাতা সংস্থার শর্ত মানতে বড়মাপের কর ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এনবিআরে তলব করে পাওনা পরিশোধে বলা হয়েছে।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট গোয়েন্দা শাখার কাজে গতি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাতা সংস্থার প্রস্তাব অনুসারে সম্ভাবনাময় বৃহৎ ও মাঝারি করদাতা চিহ্নিত করার কাজে জোর বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মনিটরিং, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণা ও অবমূল্যায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে, করদাতাদের সেবা বৃদ্ধি ও করদাতাদের সঙ্গে (খাতভিত্তিক) বেশি বেশি আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে রাজস্ব জালের বাইরে থাকা অনিবন্ধিত নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপে চিহ্নিত করে নিবন্ধিত কর শুরু করা হয়েছে।
ঋণ প্রদানের আগেই আইএমএফের শর্ত দেওয়া হয়েছে, নতুন করে কোনো খাতেই আর শুল্ক-ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। বর্তমানে যেসব খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে, তা কমাতে হবে বা তুলে নিতে হবে। আইএমএফের এ প্রস্তাবে কোন কোন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে তা যাচাই-বাছাই করে এনবিআরের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা সেবা খাতে কোনো ভ্যাট নেই। উৎপাদন খাতে পোশাকশিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোনসেট ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। ওষুধের প্রাথমিক কাঁচামাল উৎপাদনে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এভাবে জিডিপির প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য সেবা ভ্যাট অব্যাহতির আওতাভুক্ত থাকায় ভ্যাট জিডিপি তথা কর জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর থেকে হিসাব করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ না তৈরি করেও আইএমএফের শর্ত কতটা মানা সম্ভব।
অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোরালো চাপ দিয়েছে আইএমএফ। ঋণদানকারী সংস্থাকে সন্তুষ্ট করতে এরই মধ্যে অর্থ পাচারে কে বা কারা জড়িত তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে ৩৩টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাজে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। অর্থ পাচারকারীর এসব ব্যক্তির সন্ধানে তৎপরতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অতীতে পানামা, প্যারাডাইসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার সম্পর্কিত কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের নাম উঠে এসেছিল তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক খাতে সংস্কার, সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া, টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, প্রকল্পের কেনাকাটায় জবাবদিহি, স্বচ্ছতা আনাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিযোজন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংক খাতের কী সংস্কার করা সম্ভব এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন কতটা সংশোধন করা সম্ভব তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে।
আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে এ বছরের ডিসেম্বরে আর শেষ কিস্তি পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। এসব কিস্তির পরিমাণ ৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার করে।
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শিরিন ম্যানশন নামের একটি বাণিজ্যিক ভবনের তিনতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা ওই তলায় অবস্থিত নিউ জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মী। ভবনের একটি অংশ ধসে ছিটকে পড়ে দুপাশের সড়কে।
বিস্ফোরণে পথচারীসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। এর মধ্যে অন্তত পঁচাজন দগ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৬ জনকে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় ভবনটিতে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ছুটে যান। জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার।
আগের দিনই চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বেশ কয়েকজন।
গতকাল সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ভবনটির চারদিকে ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দুপাশের সড়কে। ধসে পড়ে ভবনের তিনতলার দেয়ালের ইট-বালু ও আসবাবপত্র। কিছু সময় পর দেখা যায় কয়েকজন ভবনের সামনের সড়কের ওপর অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। ভবনটির দুই পাশ দিয়ে থাকা সড়কের অনেক পথচারীও আহত হন।
ঘটনার সময় ভবনটির নিচে ছিলেন রিকশাচালক জিয়া রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি রিকশা নিয়ে দাঁড়ায় ছিলাম। হঠাৎ এমন একটা বেকট (বিকট) শব্দ হলো, এরপর চারিদিক ধুলায় ভরে গেল। আমি রিকশা ফেলায় দিছি দৌড়। বাইচা গেছি।’
ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিক ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। নিহত তিনজন হলেন নিউ জেনারেশন কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটর শফিকুজ্জামান শফিক (৪৫) ও তুষার, অফিস সহকারী আবদুল মান্নান (৬৫)।
আহতদের অনেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও ধানম-ির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গুরুতর আহত ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আয়েশা আক্তার আশা, হাফিজুর রহমান, জহুর আলী, সৈয়দ আকবর আলী ও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, পাঁচজনকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই থেকে তিনজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন নুরনবী, তাজুদ্দিন, মেহেদী হাসান, জাকির হোসেন জুয়েল, কামাল, কবীর হোসেন, রাবেয়া খাতুন, তামান্না ও অজ্ঞাতনামা একজন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের পাশেই শিরিন ম্যানশন নামের তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটি পুরাতন ও জরাজীর্ণ। বিস্ফোরণ হওয়া তৃতীয়তলায় ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং নিউ জেনারেশন কোম্পানি অফিস। দোতলায় রয়েছে সেলুন, লন্ড্রি আর নিচতলায় খাবারের হোটেল, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের দোকান, হস্তশিল্প ও তাঁতজাত পণ্যের বিপণিবিতান। ভবনটির তিনতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেয়ালের ইট ও জানালার কাচ উড়ে গিয়ে রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় পড়েছে। আশপাশের দোকানিরা জানান, ভবনটির নিচে বেশ কয়েকজন হকার ছিল। তারাও আহত হয়েছে।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারা সবাই দগ্ধ ছিলেন বলে জানান জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। এ ছাড়া তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন। তারা হলেন মো. হান্নান, মাহাবুবুন্নবী ও স্বপ্না রানী সাহা।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ৩৫ থেকে ৪০ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দুজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং একজনকে এইচডিওতে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর ও মাথা আঘাতে থেঁতলে গেছে।’
হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি : গতকাল দুপুরে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। মৃত্যুর সংবাদ শুনে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা। নিহত শফিকুজ্জামান শফিকের স্বজনরা জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সাভারের গেন্ডারিয়ায়। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানার ধুলদি লক্ষ্মীপুরে। মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্ত্রী পপি জামান। তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা।
নিহত আবদুল মান্নান গত ২২ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছিলেন বলে স্বজনরা জানান। তার ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন আশিক জানান, পুরান ঢাকার চকবাজার থানা এলাকার ইয়াসিন ব্যাপারীর গলিতে তাদের বাসা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মান্নান। পরে মৃত্যুর খবর পান তারা। তিনি বলেন, টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন আগে তার বোন মনিরা মারা গেছেন। সেই শোক না কাটতেই বাবার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত আরেকজন তুষারের বাড়ি নরসিংদী।
বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে সিটিটিসির বক্তব্য : ঘটনার পর সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট এবং সিবিআরএন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গ্যাস ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো ঘরে বা আবদ্ধ স্থানে যদি কোনোভাবে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ঘনত্বে গ্যাসের অবস্থান থাকে, সে ক্ষেত্রে যেকোনো ইগনিশন সোর্সের (বৈদ্যুতিক সুইচ, শর্টসার্কিট, দেশলাই, লাইটার) মাধ্যমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনাস্থল বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত ভবনের তিনতলার ফিনিক্স ইনসিওরেন্স লিমিটেডের অফিস থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিটিটিসির বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে কোনোরূপ বিস্ফোরকের উপস্থিতি ছিল না বলে নিশ্চিত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা ও ব্যাপকতা পর্যালোচনায় গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ বলে সিটিটিসির বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মতামত দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে আসা সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমতউল্লাহ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার ভবনগুলো অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, সেখানে যেকোনো কারণে গ্যাস তৈরি হতে পারে। আমরা ধারণা করছি জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, কারণ এত বড় বিস্ফোরণ গ্যাস থেকেই সম্ভব। তবে এসির গ্যাস থেকে এমন বিস্ফোরণ হয় না। স্যুয়ারেজের লাইন বা অন্য কোনো কারণে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।’ নাশকতার কোনো আলামত এখনো মেলেনি বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর একই দাবি করে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনাটি নাশকতা নয়, এটি একটি দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের ঘটনাটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে আমরা একটা কমিটি করব। তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিস এবং ঘটনাস্থলে কাজ করা এক্সপার্টদের মতামত নেবে। পরে তারা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
নিউ জেনারেশন কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার শাহিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, লিরা ব্র্যান্ডের পেনসিল, রাবার, ইরেজার, জ্যামিতি বক্স, ফাইল, স্ট্যাপলারসহ এ জাতীয় বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করে বিক্রি করেন তারা। বিস্ফোরণ হওয়া অফিসটাতে কোনো মালামাল ছিল না।
ফিনিক্স ইনসিওরেন্স কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট (পাবলিক রিলেশনস) মো. মাহাবুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমাদের ছয়জন কর্মী অফিসে ছিল বলে জানতে পেরেছি। তারা সবাই আহত হয়েছেন। অফিসে দুই টন করে চার টনের দুটি এসি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোনো গ্যাস সিলিন্ডার বা দাহ্য পদার্থ ছিল বলে আমার জানা নেই।’
অবহেলাতেই প্রাণ গেল ছয়জনের। আহত ২২ জনের মধ্যে চোখ হারাল তিনজন। অক্সিজেন সেপারেশন কলামে যখন অক্সিজেন এসে জমা হচ্ছিল, সেই অক্সিজেন বের হওয়ার জন্য যে পাইপগুলো ছিল একপর্যায়ে তা বের হতে না পেরেই প্রবল শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছে কলামটি। আর ১০০ ফুট উচ্চতার এ কলামটি ছিল লোহার শিটের তৈরি। এই শিটগুলো যখন প্রবল বেগে ছোটে, তখন শেডের লোহার পাতগুলো কারখানার রডের ছাউনিগুলোকে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর লোহার আঘাতে চারপাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গতকাল রবিবার উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, এ কলামটি (অক্সিজেন সেপারেশন কলাম) বিস্ফোরিত হয়েছিল। এটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু ছিল। প্রায় ১৪ বর্গফুট আয়তনের এ কলামটিতে অক্সিজেন এসে জমা হতো। একই সঙ্গে দুটি পাইপ দিয়ে আসত বাতাস। আর দুটি পাইপ দিয়ে উৎপাদিত অক্সিজেন দুটি ডেলিভারি পয়েন্টে চলে যেত। সেই ডেলিভারি পয়েন্টে প্রায় ২৪টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা যায়। এই প্ল্যান্টে দুটি ডেলিভারি পয়েন্ট ছিল; অর্থাৎ ৪৮টি সিলিন্ডারে একসঙ্গে অক্সিজেন রিফিল করা হচ্ছিল। অক্সিজেন রিফিল হয়ে গেলে পাশেই ট্রাক দাঁড়ানো থাকত সেই ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়া হতো বলে জানান মিজানুর রহমান নামের এক শ্রমিক।
বিস্ফোরণ কেন হলো : বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক আহমদ মিয়া কলামটিকে দেখিয়ে বলেন, এই কলামে এসে অক্সিজেন জমা হচ্ছিল। সেই অক্সিজেন কোনো না কোনো কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে যাচ্ছিল না। কোথাও ব্লকেজ হয়েছিল। ব্লকেজ হয়ে যাওয়ায় কলামের ভেতরে অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যায় এবং বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু চাপ বেড়ে গেলে তো পাশের অপারেটর বসা ছিলেন। তিনি কলামের পাশের জায়গায় আঙুল প্রদর্শন করে বলেন, এখানে বসত অপারেটর। তাহলে আমার প্রশ্ন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে সিলিন্ডার রিফিল হচ্ছিল না, তা অপারেটর খেয়াল করেনি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা ফোরকান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ডেলিভারি পয়েন্টে যে শ্রমিক কাজ করছিল, সে সুইচ অন করে বসেছিল, সে হয়তো খেয়াল করেনি। একইভাবে অপারেটরও বিষয়টি জানত না। আর এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
কিন্তু হঠাৎ করে ব্লকেজ কেন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান নামের আরেক শ্রমিক জানান, গত পাঁচ বছরে এই সেপারেশন কলাম চেক করা হয়নি বলে জানেন। হয়তো দীর্ঘদিন মেইনটেন্যান্স না করার কারণে তা ব্লকেজ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অক্সিজেন সেপারেশন কলামেই বিস্ফোরণ হয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে গ্যাস জ্যাম হয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তারপরও আমরা আরও কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে এর আগে কোনো অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। তাই এখানে কেন ঘটল, আমরা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’
কারখানা ব্যবস্থাপকের ভাষ্য : দুর্ঘটনার পর থেকে সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না কিংবা পরিচয় দিয়ে কেউ সামনে আসছিল না। গতকাল সকালে কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম সংবাদকর্মীদের সামনে শনাক্ত হওয়ার পর বলেন, ‘আমাদের কারখানার সরকারের সব দপ্তরের (বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস) ছাড়পত্র রয়েছে। সাধারণত অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুর্ঘটনা ঘটে না। তারপরও কেন ঘটল তা আমরা বুঝতে পারছি না।’
তদন্ত কমিটির ভাষ্য : সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কী পেয়েছেন, সে বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, ‘পুরো তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এই প্ল্যান্টের পাশাপাশি আগামীতে যাতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে এবং কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সুপারিশ থাকবে আমাদের রিপোর্টে।’
এদিকে গতকাল সকালেই উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকে আর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। এমনকি কেউ আহত অবস্থায়ও ছিল না। ফলে গত শনিবারের বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু ও ২২ জন আহত হয়েছে। এই প্ল্যান্ট থেকে শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার জন্যও এই অক্সিজেন ব্যবহৃত হতো। চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে আবুল খায়ের, লিন্ডে, স্পেকট্রা, মোস্তফা হাকিম, আল রাজিসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে। এর আগে গত বছরের ৪ জুন পাশর্^বর্তী বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাত (কাদিয়ানি) আয়োজিত সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের পর গত শনিবার দিনভর পরিস্থিতি ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। তবে রাত ৯টার দিকে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে রাতে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় জেলা শহরের দোকানপাট। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত শহরের কদমতলায় ওয়াকার শোরুমসহ আহমদিয়াদের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে। এ ছাড়া ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। জেলা শহরের প্রেস ক্লাব সড়কে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের অ্যাকশনে পিছু হটে বিক্ষোভকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার মধ্যরাত থেকে পঞ্চগড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল।
তবে গতকাল রবিবার সকাল থেকে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির পর গতকাল সরকারি-বেসরকারি দপ্তর খোলা থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে ভিড় বাড়তে থাকে। অবশ্য শহরে মানুষজনের উপস্থিতি তুলনামূলক অন্যান্য দিনের চেয়ে ছিল কিছুটা কম।
এদিকে হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ট্রাফিক পুলিশ অফিস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে আহমদিয়াদের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। তিনটি মামলায় নামপরিচয় উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাতপরিচয় মিলে আসামির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহমদিয়াদের মামলার বাদী হয়েছেন ওসমান গনী নামে এক ব্যক্তি। এই মামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যুবক প্রকৌশলী জাহিদ হাসানকে হত্যার ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে। তারা হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ গ্রেপ্তারদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
অন্যদিকে গুজব রটনার অভিযোগে পৌর যুবদল নেতা ফজলে রাব্বীকে (৩০) এবং তেঁতুলিয়া থেকে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের সঙ্গে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে সতর্ক আছেন। এখন পর্যন্ত থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘গুজব ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ ইন্টারনেটসেবা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অপারেটররা নিজে থেকে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করেছে। আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।’
বিএনপি-জামায়াত গুজব ছড়িয়েছে দাবি রেলপথমন্ত্রীর : আহমদিয়াদের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা গুজব ছড়িয়ে তৌহিদি জনতার নামে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গতকাল বিকেলে পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবি জানান রেলপথমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ধর্মের নামে, ইসলামের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি এবং আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে হতাহত কাউকে উদ্ধারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৮ জনের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল ইসলাম। সাতজনের মধ্যে মো. মাসুদ ও প্রভাষ নামে দুই শ্রমিককে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। গুরুতর আহত অন্য পাঁচজন হলেন মো. আরাফাত আলম, জাহিদ হাসান, মো. ওসমান, মো. মজিবুর রহমান ও ফ্যান্সি।
আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুন নির্বাপণের পরও আগ্রাবাদ ও কুমিরা স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছিল। এখন আর দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ তদন্তসাপেক্ষে পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
হাসপাতালের চিত্র: গতকাল রবিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। বিস্ফোরণে কারও থেঁতলে গেছে পা, কারও উড়ে গেছে হাত, কেউ পেয়েছেন মাথায় আঘাত। আবার কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন বার্ন ইউনিটের বিছানায়। তাদের সুস্থ করে তুলতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দেশ রূপান্তরকে জানান, বিস্ফোরণে আহত ২১ জনকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন গতকালই মারা গেছেন। বাকি ১৮ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
আহতদের কাতরাতে দেখে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড। ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে কথা হয় আহত শ্রমিক মো. ফোরকানের সঙ্গে। তার হাত ও আঙুলে ব্যান্ডেজ। তিনি জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর তার আর কিছু মনে নেই। চমেক হাসপাতালের বিছানায় জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তার বাম হাতের দুই আঙুল উড়ে গেছে। পাশের বেডে কাতরাচ্ছেন মাসুদ। তার ডান পা উড়ে গেছে। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন মো. জাহেদ। তার চিকিৎসা চলছিল চমেকের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে। জাহেদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবার বিকেলে কারখানায় কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণের পর আর কিছু মনে নেই তার। গতকাল রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে তার জ্ঞান ফেরে। তার পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসকরা জানান, জাহেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অপারেটর রিপন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। বুক, কোমর ও হাঁটুতেও আঘাত পেয়েছি।’
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আহত ১৮ জনের মধ্যে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে ৭ জন, অর্থোপেডিক্স বিভাগে ২ জন, নিউরো সার্জারি বিভাগে ৬ জন ও চক্ষু বিভাগে ৩ জন। আহত অন্য শ্রমিকরা হলেন মো. নূর হোসেন (৩০), মোতালেব (৫২), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫) ও শাহরিয়ার (২৬)।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে গেলে এমন বীভৎসতার চিত্র দেখা মেলে। বিস্ফোরণে মুখম-ল থেঁতলে গেছে আকতারের। তার সারা শরীরে ঢুকেছে কাচ ও লোহার টুকরা। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে চিরতরে। দুই চোখ ও থুতনি ব্যান্ডেজে মোড়ানো। মুখমন্ডলে রক্তের দাগ। বাম চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে গতকাল বিকেলে। চিকিৎসকরা বলেছেনÑডান চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো আর দেখবেন না আকতার। এমন খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার ছোটভাই আজাদ হোসেন। চোখের যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় ভাইকে কাতরাতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারছেন না আজাদ। তার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে। স্বামীর শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে আকতারের স্ত্রীও শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মুছছেন।
চমেকের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তনুজা তানজিন জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে আজাদসহ তিনজনের একটি করে চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাদের চোখে কাচ ঢুকে নার্ভ কেটে গেছে। তবে তিনজনের চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাকি দুজন হলেন নাহিন শাহরিয়ার ও সোলায়মান। এর মধ্যে নাহিন ও আকতার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের শ্রমিক। সোলোয়মান ট্রাক শ্রমিক।
ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৪০০ ঘরবাড়ি: গতকালের বিস্ফোরণে কারও ঘরের চাল উড়ে গেছে, কারও ভেঙেছে জানালার কাচ। আবার কারও বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ফেটে গেছে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাচ, ছোট ছোট লোহার টুকরো। দেখে মনে হবে, এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকা। বিস্ফোরণের পর আশপাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এমন ক্ষয়ক্ষতিই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বিএম ডিপোর ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ৯ মাসের মাথায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামের একটি প্ল্যান্টে ঘটে গেল আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকা জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা আজ (গতকাল) সকাল থেকে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেছি। সবমিলিয়ে প্রায় চারশ ঘর ও অর্ধকোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তখন ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আপনারা আরও সুস্পষ্টভাবে জানতে পারবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি।’
সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, আমি অসুস্থ তাই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আসতে পারিনি। আমাদের কাছে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র আছে। তবে কীভাব এ ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। বিস্ফোরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেব। আর যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সঙ্গে নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রথম দিনের উদ্ধার অভিযান শেষে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনের কথা জানা যায়। এর মধ্যে আহত ২৪ জন এবং নিহত ৬ জন।
এদিকে, বিস্ফোরণের কারণ জানতে জেলা প্রশাসনের সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিহত শ্রমিকদের দুই মন্ত্রণালয় থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।