
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) এবারের নির্বাচন যে সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত হচ্ছে না তা অনুমিতই ছিল। সেই আশঙ্কা সত্যি হলো গতকাল বুধবার। ভোটের প্রথম দিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা গণমাধ্যমকর্মী ও আইনজীবীদের ওপর পুলিশের হামলা, ভোটকেন্দ্র ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ-বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর, বিচারপ্রার্থীদের আতঙ্ক সব মিলিয়ে নজিরবিহীন পরিস্থিতি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। হতবিহ্বলতায় বিচারপ্রার্থীরা আতঙ্কে দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্ট ও ভোটকেন্দ্রের (সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তন) আশপাশে কয়েকশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়, যা অতীতে কখনো হয়নি বলে জানান উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের মতো সুরক্ষিত জায়গায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ সচরাচর থাকে উৎসবমুখর। কিন্তু গতবার থেকে (২০২২-২৩) সেই পরিবেশ অনেকটাই আর নেই। এবারের নির্বাচন নিয়েও কয়েক দিন ধরে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে নানা শঙ্কা ছিল। গত সোমবার পদত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। ভোটের আগের রাতে (মঙ্গলবার) আওয়ামী লীগপন্থি ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সাব-কমিটির আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করলে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর পর্যায়ে চলে যায়। ওইদিন রাতে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ব্যালটে সিল দেওয়া ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো অভিযোগ তোলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচনে লড়ছেন।
গতকাল সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় অন্তত দুই ঘণ্টা পর। সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা তাদের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনের ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর চেষ্টা করেন। তবে, তারা নীল প্যানেলের আইনজীবীদের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর অন্তত দুই ঘণ্টার বেশি সময় নির্বাচনে অচলাবস্থা চলে। ভোটকেন্দ্রের বাইরে চলতে থাকে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের সেøাগান-পাল্টা সেøাগান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নীল প্যানেলের প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল কেন্দ্রের বাইরে এসে অভিযোগ করেন, তাদের কোনো প্রার্থী ও এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ (মাহবুব উদ্দিন খোকন) বেশ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধর পুলিশের : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে ভোটকেন্দ্রে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। বুট দিয়ে লাথি মারে। পরিচয়পত্র দেখানোর পরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এ সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আক্তার, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদাউস তানভী, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম নূর মোহাম্মদ, অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এর মধ্যে এটিএন নিউজের জাবেদ আক্তারকে মেঝেতে ফেলে পেটানো হয়। এ ছাড়া বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমকে লাঠিপেটাসহ গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জাবেদ আক্তারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে নিয়ে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
জাবেদ আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে এগিয়ে যাই। কিন্তু অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে আমার পায়ে সমস্যা। হাঁটতে কষ্ট হয়। হাতজোড় করলেও তারা ক্ষান্ত হয়নি।’
সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহ করি। আজকে (গতকাল) সেখানে (ভোটকেন্দ্রে) ঝামেলা হচ্ছে শুনে খবর সংগ্রহে যাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় সাংবাদিকরা কেন অনিরাপদ থাকবেন?’
এ সময় নির্বাচনে নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সহসভাপতি প্রার্থী হুমায়ুন কবির মঞ্জুসহ অন্তত ১৫ আইনজীবী পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন নারী আইনজীবীকেও মারধর করা হয় বলে জানান তারা। গতকাল প্রথম দিনের বিশৃঙ্খল ভোটে ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ২১৭ জন ভোট দিয়েছেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির।
সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইন, আদালত ও মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা। সংগঠনের সাবেক সভাপতি এম বদিউজ্জামান, বর্তমান সভাপতি আশুতোষ সরকার, সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
নির্বাচন অলিখিতভাবে বর্জন বিএনপিপন্থিদের : ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি অবগত করতে বিকেল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ শতাধিকের বেশি আইনজীবী ছিলেন। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে কত ব্যালট থাকবে এবং কতগুলো ব্যবহার হবে তা সব প্রার্থীকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আগের রাতে (মঙ্গলবার) আমাদের চোখের সামনে ব্যালটে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে সিল দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে পুলিশ মোতায়েন করতে হলে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতির অনুমতি ছাড়াই এত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে কখনো দেখিনি।’
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘যেহেতু এটি কোনো ভোটের পর্যায়ে পড়ে না তাই বর্জনের প্রসঙ্গ আসছে না। আমাদের কথা হলো এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষের কিছুক্ষণ পর অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন আইনজীবী সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে হামলা চালায়। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে থাকা প্যান্ডেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এরপর সেখান থেকে মিছিল করে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিচতলায় অন্তত দুটি আইনজীবী চেম্বারের দরজা ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন তারা। এর একটু পর পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা সটকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর সরকারপন্থি আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে মিছিল নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিএনপিবিরোধী সেøাগান দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। এ সময় একজন আইনজীবীর চেম্বারের দরজার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টে সংঘর্ষের ঘটনায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। এতে মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ওসি নুর মোহাম্মদ।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে।
সাংবাদিক নিপীড়ন নিন্দার ঝড় : সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে এলআরএফ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। ডিআরইউ সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গতকাল কমিশনের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এ ধরণের হামলা স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায়। হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে কমিশন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের যুবসমাজকে নার্সিং শিক্ষা গ্রহণ এবং বৃহৎ পরিসরে সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নার্সের শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান হবে। উন্নত সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে পারলে নিজেরও একটা আত্মতৃপ্তি আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরে ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজ’-এর দ্বিতীয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান-২০২৩-এ প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে যারা আজ গ্র্যাজুয়েট হলেন, ডিগ্রি পেলেন, তাদের জনগণকে সেবা দেওয়ার কথা সব সময় মনে রাখতে হবে। একজন রোগী চিকিৎসা এবং ওষুধে যতটা না সুস্থ হবে, ডাক্তারদের সহানুভূতি এবং নার্সদের সেবা পেয়েই কিন্তু তার চেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে। তাদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘যারা চার বছর কঠোর অধ্যবসায়ের ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জনগণের সেবায় নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন। আপনাদের অর্জিত জ্ঞান আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন। সব ক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে, এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাবে, সেটাই আমি চাই।’ তিনি এ সময় সেবাধর্মের প্রতীক বিশ্বের খ্যাতনামা নার্স ও মানবসেবী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা উল্লেখ করেন, যিনি মানব সেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। খবর বাসসের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা এই নার্সিং কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করবেন বলেও জানান। এ জন্য জমিও নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌফিক বিন ইসমাইল এবং দ্বিতীয় ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থী আনামুল হক। স্নাতক বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেপিজে হেলথকেয়ার বেরহাদের সভাপতি নরহাইজাম বিনতি মোহাম্মদ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে নার্সিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ মল্লিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কলেজের ২১০ জন স্নাতকের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন। তিনি ছয়জন স্নাতক শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য একাডেমিক রেকর্ডের জন্য ‘প্রাইমিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ড’ও তুলে দেন।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আমরা এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগে এক নম্বরই থাকব।’
গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ে নির্মাণাধীন ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
এর আগে সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছান পিটার হাস। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চেয়ারম্যান মো. নূর আলীসহ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা এবং জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক) গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কমকর্তা দীপেশ নন্দা প্রমুখ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিস প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা টিম পিটার হাস ও অন্যান্য অতিথির নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়। কেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার ক্যালাম ডেভিড কর্নফোর্থ পিটার হাসকে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থার বর্ণনা দেন।
রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়, সব আইন মেনেই ইউএমপিএলের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চমান বজায় রাখছে। প্রকল্প কোম্পানি পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করার জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদী ঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের অ্যাপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সহায়তা করা।
ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার জন্য পিটার হাসের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাস টারবাইন সরবরাহে জিইসহ মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানেরও প্রশংসা করেন।
নাফিজ সরাফাত বলেন, ইউএমপিএল, জিই এবং নেব্রাসসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এসইআরভি, এআইআইবি, ডিইজি ও ওপেক তহবিল থেকে প্রকল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগ এখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জনগণকে সাশ্রয়ীমূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প। কেন্দ্রটি অন্যান্য বিদ্যমান কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গত করবে।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ কেন্দ্রটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। কেন্দ্রটিতে জিই-এর অত্যাধুনিক গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ৬২ শতাংশের বেশি দক্ষতায় কাজ করে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে।
ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মো. নূর আলী বলেন, সর্বোচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন উচ্চপ্রযুক্তির বিদ্যুৎপ্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। কমদামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণেই বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষস্থান দখল করবে এই কেন্দ্র। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান ও ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
জিই গ্যাস পাওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দিপেশ নন্দা বলেন, জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় অবদান রেখে চলেছে। ইউএমপিএলের প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে জিই গর্বিত। কেন্দ্রটিতে জ¦ালানি কম ব্যবহার হওয়ায় গ্যাস সাশ্রয় হবে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
২০১৮ সালের ২৫ জুন কেন্দ্রটি নির্মাণের স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড ও জিই-এর কনসোর্টিয়ামকে সম্মতিপত্র দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে নেব্রাস পাওয়ার কিউপিএসসির প্রতিষ্ঠান নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভি. ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব নিয়ে এ প্রকল্পে যুক্ত হয়। পরের বছরের ২৪ জুলাই প্রকল্প কোম্পানি ইউএমপিএলের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রকল্প বাস্তবায়ন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ক্রয় চুক্তি বা পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই সময়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি (জিএসএ) হয়। উদ্যোক্তা কোম্পানির সঙ্গে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট টার্ন-কি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) ঠিকাদারি চুক্তি হয়। জিই এই বিদ্যুকেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোক্তাদের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিই-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করবে।
শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তর দখলে নিচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। শিক্ষা প্রশাসনেই শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা টিকতে পারছেন না। ইতিমধ্যে বেশ কটি শিক্ষা দপ্তর প্রায় শূন্য; শিক্ষা ক্যাডারের লোকজন বলতে গেলে নেই। আরও কয়েকটি দপ্তরে যে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তাতে শিগগির শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘শিক্ষা’ একটি বিশেষায়িত দপ্তর। এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কেউ এলে তার পক্ষে তাল মেলানো সহজ নয়। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা চাকরির শুরুতেই ‘শিক্ষা’ নিয়ে কাজ করেন। তাদের এ-বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণও থাকে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তারা যেভাবে শিক্ষা-প্রশাসনের কাজ সামলান, অন্য ক্যাডারের সদস্যদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরে খুব অল্প সময়ের জন্য আসে। আবার ভালো পদায়ন হলেই চলে যায়। অল্প সময়ে একটা দপ্তরের কাজ পুরোপুরি বোঝে ওঠা সম্ভব নয়।
এ কারণে শিক্ষার মানেরও যথা উন্নয়ন হচ্ছে না।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে। ফলে শিক্ষার নতুন দপ্তর হবে, এটাই স্বাভাবিক। যে দপ্তরই হোক, তাতে শিক্ষা ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, আমাদের পদগুলো দখল করা হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। আমরা তা চাই না। আমরা চাই সরকারকে সহযোগিতা করতে। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত এর সমাধান না হলে ফুঁসে উঠতে পারেন শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা।’
সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) প্রায় পুরোটা চলে গেছে প্রশাসন ক্যাডারের দখলে। একজন মহাপরিচালক, দুজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ১০ জন বিভাগীয় পরিচালকের সবাই প্রশাসন ক্যাডারের। তারা অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পদমর্যাদার। বিভিন্ন উপপরিচালক পদেও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন। শিক্ষা ক্যাডারের দু-একজন কর্মকর্তাও আছেন। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক পদে একজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। বেশির ভাগ পরিচালক পদে রয়েছেন যুগ্মসচিবরা। এখানে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য নেই বললেই চলে। এমনকি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদটিও দখল করে নিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।
সাত বছর আগে মাদ্রাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগে মাদ্রাসাবিষয়ক কাজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকেই হতো। ফলে মাদ্রাসার কাজ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের জানা। কিন্তু এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন অতিরিক্ত সচিব। পরিচালক পদেও এখন প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়িত হচ্ছে। অন্যান্য পদে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা থাকলেও তারা একে একে প্রত্যাহৃত হচ্ছেন। সম্প্রতি এই অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা ক্যাডারের ১৯ জনকে প্রেষণে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাতথ্য ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান একজন অতিরিক্ত সচিব। এই দপ্তরের পরিচালক পদগুলোতেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা রয়েছেন। বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেলও প্রশাসন ক্যাডারের। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানেও প্রশাসন ক্যাডারের দু-একজন সদস্য আছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) পদগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখনো শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের হাতে। সেখানেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। শিক্ষার একাধিক প্রকল্পে পিডি প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা।
মাদ্রাসা অধিদপ্তর নিয়ে বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডার ও প্রশাসন-ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরের নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, নবম গ্রেডের ওপরে যারা তারা এখানে পদায়ন পাবেন। শুরুতে মহাপরিচালক পদে একজন যুগ্মসচিবকে পদায়িত করলেও এখন আছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা আদালত পর্যন্ত যান। আদালত এ বিষয়ে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের বাইরে কাউকে পদায়ন করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে সরকার আপিল করলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এবং মামলাটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়। এই সুযোগে শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ কর্মকর্তাকে মাদ্রাসা অধিদপ্তর থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে নিয়মিত বেঞ্চে মামলার শুনানি হলে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু তা না মেনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ক্যাডারের আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা চালান, তাই তারা প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষেই থাকেন। শিক্ষা দপ্তরগুলোতে যে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের আধিক্য থাকা উচিত সে কথা তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে তুলেও ধরেন না।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শওকত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার বিভিন্ন দপ্তরের পদগুলো শিক্ষা ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত। মাদ্রাসা অধিদপ্তর কিছুদিন আগেও মাউশি অধিদপ্তরের অংশ ছিল। ফলে মাদ্রাসা অধিদপ্তর মাউশির আদলেই হওয়া উচিত। দুই অধিদপ্তরের কাজের ধরনও এক। কিন্তু একটা বিশেষ ক্যাডার মাদ্রাসা অধিদপ্তরে দখলদারিত্ব করছে। এমনকি আদালত শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষে রায় দিলেও তারা মানছেন না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দপ্তর নিয়েও মামলা চলছে।’
ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) থেকে গত ৮ বছরে আরও ৩২৪ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। দৈনিক দেশ রূপান্তরের ২০২২ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশিত খবরে ২০০১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৮১২ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য প্রকাশ করা হয়। তা ২০২৩ সালে জানুয়ারিতে এসে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বেনামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিএজি) তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০০১ সালে ইইএফ গঠনের পর গত প্রায় দুই যুগে ১ হাজার ৪৫টি প্রকল্পে ১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ৪৯৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। বাকি ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। এসব ঋণগ্রহীতার অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএজি।
সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল অথচ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত সফটওয়্যার শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে উদ্যোক্তা সম-মূলধন সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে ইক্যুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ফান্ড (ইইএফ) গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল এই তহবিলের মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত ও কর্মক্ষম যুব শ্রেণির কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও সুদবিহীন এই তহবিল প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিধি অনুযায়ী বিতরণকৃত অর্থ ৮ বছর পরেই সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে। কিন্তু ২০ বছরে সিংহভাগ অর্থ অনাদায়ী রয়েছে। এমনকি বিতরণকৃত অর্থ আদায়ে আদালতে মামলার সুযোগও পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা আইসিবি। সম-মূলধন সরবরাহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার সরকারের নামে বরাদ্দ দিতে হয়, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর অর্থ ফেরত দিয়ে সরকারি অংশের শেয়ার ফেরত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মূলধন আত্মসাতের পর অস্তিত্বহীন ও বেনামি কোম্পানিগুলো সরকারি অংশের শেয়ারগুলো আর ফেরত নেয়নি। মূল্যহীন কাগুজে এসব শেয়ার নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে আইসিবি।
জানা গেছে, সুদবিহীন কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য গঠিত ইইএফ তহবিলের অর্থ পেতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুয়া কাগজপত্র ও বেনামি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের অধিকাংশই মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তহবিল পেয়েছেন এবং অনেকেই অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। উদ্যোক্তাদের ইইএফ তছরুপে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কিছু কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি জড়িত বলে সিএজির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ইইএফ তছরুপ নিয়ে সিএজির তৈরি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ নেওয়া উদ্যোক্তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করছেন না। অনেক প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের তথ্যও নেই। বারবার নোটিস দিলেও সাড়া নেই উদ্যোক্তাদের। এ কারণে বলা হয়েছে, প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ বাস্তবায়ন না করেই গ্রাহকের অনুকূলে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। কোম্পানির নামে জমি রেজিস্ট্রেশন ও শেয়ার রিটেন অব অ্যালটমেন্ট বাদ রেখে এবং ভিত্তিহীন ভুয়া কাগজপত্রের অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এমনকি আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির প্রকৃত দাম ও মান নিরূপণ করা হয়নি। বিনিয়োগকৃত জমির মান যাচাই না করে ভুয়া ডকুমেন্টের বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ফান্ডের টাকা নিয়ে অন্য প্রকল্পে ব্যবহারের প্রমাণও মিলেছে। তাছাড়া প্রকল্পের নামে ব্যাংকে ঋণ থাকা সত্ত্বেও আবার অর্থ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির প্রকল্প মূল্যায়নকারী কর্মকর্তার যোগসাজশে জমির দলিল না দিয়েই টাকা ছাড় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি কোনো সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছেনি। যদি পৌঁছে তাহলে প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তে গ্রাহক পর্যায়ে যদি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো তদন্ত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি এসএমএসের মাধ্যমে প্রশ্ন লিখে পাঠানো হলেও তিনি তার উত্তর দেননি।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫৭ জন উদ্যোক্তা ইইএফ ফান্ডের অর্থের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু এই অর্থ ছাড়ের ৮ বছরেও ওই উদ্যোক্তারা কোনো অর্থ পরিশোধ করেননি। এসব প্রকল্পের অধিকাংশই উৎপাদনে নেই। আবার দুই-একটি উৎপাদনে থাকলেও অর্থ ফেরত দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ হোসেন হ্যাচারি অ্যান্ড পোলট্রি কমপ্লেক্স, সালমান ফিশারিজ, প্রেজেন্টার ফুড ইন্ড্রা., কোয়ালিটি এ্যাকুয়া কালচার, বলেশ্বর হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ, অঞ্চল এ্যাগ্রো প্রসেসিং ও আল সরদারনী ফুডের নামে কোম্পানি থাকলেও তারা উৎপাদনে নেই। আর গানকি লিমিটেড, ইনসার্ট সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আইজেন সফটওয়্যার লিমিটেড ও রিসোর্সেস টেকনোলজি নামক কোম্পানির কোনো অস্তিত্বই নেই। এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আংশিক চালু থাকলেও নেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
সিএজির পরিদর্শনের তথ্য বলছে, ভুয়া কোম্পানি খুলে সরকারের এই ফান্ড থেকে অর্থ নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আবার এসব কোম্পানির বিপরীতে অর্থ ছাড়ের সময় বিনিয়োগকারী আইসিবি কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রিকৃত মূল দলিল সংরক্ষণ করেনি। এছাড়া অস্তিত্বহীন এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রথম তিন বছর শুরু না হওয়ার পরও আইসিবি কর্তৃক অবশিষ্ট অর্থ ছাড় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলেও মনে করে সিএজি।
সিএজির অপর এক পরিদর্শন তথ্য দেখা যায়, ২০১৫ সালের একই সময়ে ইইএফ থেকে ৫৯টি কোম্পানিতে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪৯ শতাংশ সম-মূলধন সহায়তা বাবদ ৯৯ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইইএফ নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এসব বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা আর ফেরত আসেনি।
ইইএফ নীতিমালা ও বিনিয়োগ চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ১ম কিস্তি বিতরণের ৮ বছরের মধ্যে ৪৯ শতাংশ সরকারি শেয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা ক্রয়পূর্বক ফেরত নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্য এবং ব্রেকআপ ভ্যালুর মধ্যে যেটি বেশি হবে সেই মূল্যে ওই শেয়ারগুলো ফেরত নিতে হবে। শেয়ারহোল্ডাররা সরকারি শেয়ার ফেরত নিতে ব্যর্থ হলে ইইএফ বিভাগ ওই শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে ইইএফ সহায়তার অর্থ শেয়ারহোল্ডারদের নামে ঋণে রূপান্তর করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদ নির্ধারণ করে দেবে। কিন্তু ওই ৫৯টি কোম্পানি ৮ বছর মেয়াদের মধ্যে সরকারি অংশের কোনো শেয়ার ফেরত নেয়নি বা বাইব্যাক করেনি। এমনকি শেয়ারগুলো বিক্রি বা সুদ নির্ধারণের মাধ্যমে ঋণে রূপান্তর করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবি। তবে ৫৮ কোম্পানি তাদের গ্রহণ করা অর্থ থেকে তহবিলে ১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে, যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাত্র ১৯ শতাংশ।
এছাড়া ইইএফ নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পের ত্রৈমাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন, আয়-ব্যয় বিবরণী, বীমা কভারেজ এবং কোম্পানি আইন অনুযায়ী বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও বছরে ন্যূনতম ৪টি বোর্ড সভার কার্যবিবরণী লিয়েন ব্যাংক ও ইইএফ কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেনি। এতে কোম্পানিগুলো থেকে চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ পাওয়া যায়নি। যাচাই-বাছাই না করেই প্রকল্পের অর্থ ছাড়, অর্থ ছাড়ের পর কোনো ধরনের মনিটরিং না করা এবং সরকারের অর্থ আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ইইএফ সহায়তার সুদবিহীন সরকারি অর্থের ৮৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সিএজির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুতুবুল আউলিয়া মৎস্য খামারের নামে ইইএফ ফান্ড থেকে ৬৩ লাখ টাকা মঞ্জুর করা হয়। পরে প্রথম কিস্তির টাকা বাবদ ৩১ লাখ বিতরণ করা হলেও নিরীক্ষাকালীন পর্যন্ত অবশিষ্ট অর্থ বা প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে, ২০১২ সালে সালমান পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সম-মূলধন সহায়তা বাবদ ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা মঞ্জুর করা হয়। ওই বছরের ১২ নভেম্বর প্রথম কিস্তির টাকা বিতরণ করা হয়। প্রথম কিস্তি বিতরণের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও উৎপাদনে যেতে পারেনি কোম্পানিটি।
অপরদিকে, প্যাসিফিক এনার্জিটিক প্রা. লি., হাজী শরীয়তউল্লাহ অ্যাগ্রো. কমপ্লেক্স লি. এবং রেনেসাঁ ফিশারিজের অনুকূলে প্রথম কিস্তি বিতরণের পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ টাকা বিনিয়োগ করতে না পারায় প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি, যা বিনিয়োগ চুক্তির পরিপন্থী। ফলে প্রকল্পগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যেতে ব্যর্থ হওয়ায় বিনিয়োগের সব টাকাই আদায় অনিশ্চিত।
এছাড়াও অন্য আরও ৩০টি প্রকল্পে প্রথম কিস্তি বিতরণের পর থেকে ৪ বছর পার হলেও সম্পূর্ণ বিনিয়োগে ব্যর্থ প্রকল্পগুলো বাণিজ্যকভাবে উৎপাদনে যেতে পারেনি। এতে বিতরণকৃত সব টাকাই আদায়যোগ্য। উদ্যোক্তার ইক্যুইটি এবং সম-মূলধন সহায়তার মঞ্জুরিকৃত টাকা প্রকল্পে বিনিয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় এবং প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়া সত্ত্বেও আইসিবি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আপত্তিকৃত টাকা আদায়ের জন্য কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে আদায় না হওয়ায় ৯১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার।
ইইএফের বিনিয়োগ আত্মসাৎ কিংবা তছরুপ হলেও অর্থ আদায়ে আদালতে মামলার সুযোগও পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা আইসিবি। পরে অর্থ উদ্ধারের আইনের সুযোগ রেখে ঋণ তহবিলের নাম পরিবর্তন করে এন্ট্রাপ্রেনারশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) গঠন করা হয়। এই তহবিল থেকে গত ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ শতাংশ সুদে ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়। যা আদায়ে এখনো সময় হয়নি।
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
অনুসন্ধানে কমিশন বাণিজ্য, ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে একজনের ক্ষতিপূরণ অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়ার, প্রকৃত মালিকদের মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে আটকে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানান দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ওই চক্রের সমন্বিত একটি তালিকাও করেছে সংস্থাগুলো। ওই চক্রে আছেন বর্তমান এবং সাবেক কিছু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী, চেইনম্যান, জারিকারক, উমেদার, আইনজীবী কথিত দালাল।
এর আগে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট এলএ অফিসে ক্ষতিপূরণ বাণিজ্যে জড়িত ২৩টি সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। ওইদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শহীদ শাহ আলম বীরউত্তম অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে তিনি এ কথা বলেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, কতিপয় দালাল কর্তৃক দায়ের করা দেওয়ানি মামলা, অভিযোগ, আপত্তিসমূহ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগোরা।
দুর্নীতির বেশি অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে : গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তারা হলেনÑ কানুনগো সেকান্দার আলী, মো. জাহাঙ্গীর, সার্ভেয়ার যথাক্রমে আব্দুল মমিন, মো. ইমাম হোসেন গাজী, আবু কাউসার সোহেল, মোক্তার হোসেন, শহীদুল ইসলাম মুরাদ, জোবায়ের, মো. শহীদুল হাসান, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল মাওলা, মজিবুর রহমান, নূর চৌধুরী। এরমধ্যে কোনো কোনো সার্ভেয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় কারাভোগও করেছেন।
জানা গেছে, সার্ভেয়ার মুরাদ, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল, মজিবুর, নূর চৌধুরী ছাড়া বাকি ছয় সার্ভেয়ার এবং দুই কানুনগো বর্তমানে এলএ অফিসে কর্মরত। অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন সার্ভেয়ার খাজা উদ্দিন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তদরিব করে তারা ফিরে এসেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ অফিসে।
চলতি বছরসহ সাম্প্রতিক সময়ের মামলা-অভিযোগ : চলতি বছর ৭ মার্চ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে জমির ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মিরসরাই উপজেলার মগাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন মো. সলিমুল্লাহ ওরফে দিদার নামে এক ব্যক্তি।
সলিমুল্লাহর অভিযোগ, আবুল খায়ের নামে একজনকে তার বাবা মৃত শফিউল্লাহ’র ওয়ারিশ বানিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকার চেক উত্তেলন করে নিয়েছেন অভিযুক্তরা। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মোক্তার আহমদ এবং সার্ভেয়ারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ। সম্প্রতি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার সেকান্দর আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে (সিআর-৩৭২) মামলা দায়ের করেন আরেক ভুক্তভোগী।
কর্ণফুলী টানেলের জন্য আনোয়ারা উপজেলার ছাতুরি ও বেলছুড়া মৌজায় পৃথকভাবে অধিগ্রহণ করা (এলএ কেইস নং-৩০/২০১৬-২০১৭) ১৬ শতক জমির প্রকৃত মালিক মৃত মোহাম্মদ শেখের ওয়ারিশ নাজিম উদ্দিন। তার অভিযোগ, ২০২২ সালের নভেম্বরে এলএ অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ ও কমল দাশ ক্ষতিপূরণের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেক অন্য ব্যক্তিদের দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় পটিয়া আদালতে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন। দুর্নীতির অভিযোগে সার্ভেয়ার কমল ও আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। নাজিম উদ্দিন বলেন ‘জামাল রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের দেওয়া টাকা ফেরত আনার কথা বলে আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চান সার্ভেয়ার কমল’।
ফরিদুল আলম নামে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জাল দলিল তৈরি করে কর্ণফুলী টানেলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন মুছা নামে এক ব্যক্তি। আদালতে মামলা এবং এলএ অফিসে আপত্তি দেওয়া সত্ত্বেও এলএ মামলায় (৩৫/২০১৮-২০১৯) ১০ শতক জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬১ লাখ টাকা আবু সাদেক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সার্ভেয়ার আবু কাউসার সোহেল ও মোক্তার হোসেন জড়িত।
মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ মগাদিয়া মৌজায় অধিগ্রহণ করা (এলএ মামলায় নম্বর ১৩/২০১৮-২০১৯) বিএস ১১৯৮ দাগের ৫ দশমিক ২১ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকা পেতে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে অপর মামলা (৩৪৮/২০) দায়ের করেন জমির প্রকৃত মালিক নুরুল গণি।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় লিখিত আপত্তিও দেন তিনি। নুরুল গণির অভিযোগ, মামলা ও আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এলএ অফিসের সার্ভেয়ার মমিন ও ছায়েদুল হক মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে ক্ষতিপূরণ বাবদ তার প্রাপ্য ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকার চেক দিয়ে দেন জনৈক সৌদামিনি বণিককে।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ঘুষ দাবি, জোরপূর্বক আটক, ছবি তুলে পুলিশে দেওয়া এবং দুদকের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকির অভিযোগে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা (এএলও) এহসান মুরাদসহ ছয়জন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ এ মামলা করেন মো. হেমায়তে হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।
ভুয়া দলিল যাচাই না করে মিজানুর রহমান মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে দেন সার্ভেয়ার আমানাতুল মওলা, মো. মজিবুর রহমান ও আশীষ চৌধুরী। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দুদক। ওই মামলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আলোচ্য তিন সার্ভেয়ারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা।
যেখানে ভাগ-বাটোয়ারা হয় : গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুসন্ধান বলছে, এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীরা অফিস শেষ করে রাতে সুবিধামতো সময়ে নগরের চকবাজার, মেহেদীবাগ, জিইসির মোড়, গোল পাহাড় মোড়, বাদুরতলা, সদরঘাট কালিবাড়ী মোড়, প্রবর্তক মিমি সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড, ষোলশহর নম্বর গেইট, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, এমইএস কলেজ ও মহিলা কলেজ সংলগ্ন মোড়, সানমারের সামনে, ভিআইপি টাওয়ার, কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম মোড় ও বহদ্দারহাট, শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় দালাল চক্রের আইনজীবীদের চেম্বারে টাকা ভাগাভাগি হয়। এছাড়াও এলএ অফিসের সাবেক অফিস সহকারী মো. আনোয়ার হোসেনের দেব পাহাড়ের বাসায় ও সার্ভেয়ার আ. মমিনের মেহেদীবাগের সরকারি বাসায়, মো. গাজীর পূর্বকোণ অফিস সংলগ্ন বাসায় ও শহীদুল হাসানের বাসায় দালাল চক্রের সদস্যরা সরাসরি কাজ বুঝিয়ে দেওয়াসহ কমিশন বাণিজ্যের লেনদেন করে।
কোষাগারে পড়ে আছে হাজার কোটি টাকা : একটি মামলার ফাঁদে আটকা পড়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না নগরের শত শত ভূমি মালিক। চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে করা ওই মামলার কারণে বে-টার্মিনাল এবং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে সরকারি কোষাগারে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় জমির মালিকদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। মামলাটি করেছেন ব্রিটিশ আমলের জমিদারের বংশধর দাবি করা হালিশহর এলাকার মো. রকিবুল হাসানসহ কয়েকজন। ভুক্তভোগীরা আট বছর ধরে এলএ অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলার কারণে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, শত শত ভুক্তভোগীকে মামলার ফাঁদে আটকে দিয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যে নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যারা ক্ষতিপূরণের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা হাতে দিতে রাজি হচ্ছেন, তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে রাকিব চক্র। রকিবুল হাসানের দাবি, তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলার (৬২১/২০১৪) ৬৮ জন বাদী ব্রিটিশ আমলের জমিদার শেখ আবদুল আলী মালুমের বংশধর। ১৮৮৫ সালের একটি দলিল এবং আবদুল আলী মালুমের পাঁচ শতাধিক উত্তরাধিকারীর তালিকা আছে। আর এ তালিকাকে পুঁজি করেই আদালতে মামলা করেছেন রাকিব। মামলার বিবাদীর সংখ্যা এক হাজার ৫৬৮ জন।
সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের অসদাচরণ : ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত ১৬ মার্চ বিকাল ৪টা ৫৯ মিনিটে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের মুঠোফানে কল করেন দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদক। ফোন রিসিভ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য সমেত তার (ডিসি) দপ্তরে গিয়ে কথা বলতে ওই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। কথামতো বক্তব্য নিতে গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের দপ্তরে গিয়ে এলএ অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে চলতি বছরসহ আগের বছরগুলোয় বর্তমান এবং সাবেক কয়েকজন কানুনগো, সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার (দুদকের করা) রেফারেন্স উল্লেখ করা একটি কাগজ জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। এ সময় তার দপ্তরে জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসারসহ কিছু লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। কাগজে উল্লেখ করা তথ্যগুলো পড়ে দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করেন জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কী করছি আপনি জানেন। খবর নেন। এসব অভিযোগ-মামলা পুরনো। আপনি (প্রতিবেদক) দালালি করতে এসেছেন। যান, আমি ঢাকায় দেশ রূপান্তরে কথা বলব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’