ইরানের তেল খাতকে লক্ষ্য করে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। খবর: বিবিসি।
তিনি বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও যুক্তরাষ্ট্র সফল হবে না, যা তারা একের পর এক আগে থেকেই দিয়ে আসছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের অর্থনীতি তেল রফতানির ওপর নির্ভরশীল। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গত ২০১৫ সালে ছয় দেশের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির কারণে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতায় আসার পর এই পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মে মাসে এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় দেশটি। এরপর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তবে এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালু রাখার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। পরমাণু চুক্তির সব শর্ত ইরান মেনে চলছে বলে মনে করছে তারা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নতুন নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ইরান থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ইরানের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে পতন ঘটবে।
কঠোর এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এছড়া ইরানে বাণিজ্য করে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ থাকলে তাকেও শাস্তির আওতায় আসতে হবে।
সোমবার থেকে ব্যাংকিং খাতের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গত আগস্টে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয় স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু ও খুচরা যন্ত্রাংশ খাত।
বার্তা সংস্থা এপির (অ্যাসোসিয়েট প্রেস) বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ইরান থেকে তেল আমদানিতে সাময়িকভাবে আটটি দেশকে এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইতালি, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক অংশীদাররা। এসব দেশকে ইরানের তেল কেনা বন্ধে সময় দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে আমদানি বন্ধ না করলে দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
এদিকে ইরানের সঙ্গে সুরক্ষিত লেনদেনের জন্য ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি)’ কার্যকরের পরিকল্পনা করছে ইইউ। এ নতুন বিনিময় পদ্ধতি ব্যবহার করে ডলারের ব্যবহার এড়াতে পারবে ইরানের সঙ্গে ব্যবসায় ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলো। এসপিভির মাধ্যমে ইইউর দেশগুলো সহজেই ইরান থেকে তেল আমদানি করতে পারবে। ইইউর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলেও চাপে পড়তে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান।
কানাডার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ গবেষক রিচার্ড নিফিউ বলেন, ইরানের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল নয়। কিন্তু ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সুযোগ হারাতে পারে। এক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এসপিভি ব্যবহার নিরাপদ হবে।
ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বলছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়ে যাবে, জানান যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নীতি বিভাগের অধ্যাপক স্কট লুকাস।
২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইরানের তেল শিল্প আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। সেসময় দেশটির তেল রপ্তানি কমে যায় অর্ধেকের বেশি। এবারও ইরানের তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে এ ধাপে ইরান ও তার অংশীদাররা বাণিজ্য যোগাযোগ রক্ষায় আরো সক্রিয় হবে তা স্পষ্ট। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এর আগেও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে ইরান। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশটিকে এখন তেল বিক্রির নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে।