শেষ ওভারে ঢাকা ডায়নামাইটসের দরকার ১৩। আক্রমণে আসলেন আঙুলের ইনজুরিতে পড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দারুণ খেলতে থাকা রাসেলকে আটকে, এক রানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে জিতিয়ে বনে গেলেন নায়ক।
শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কুমিল্লার বিপক্ষে এই হারের পর বিপিএলের প্লেঅফ খেলতে নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সাকিবের ঢাকাকে। খুলনার বিপক্ষে ওই ম্যাচটি তারা হারলে প্লেঅফে চলে যাবে রাজশাহী কিংস। কুমিল্লা আগেই শেষ চারে উঠে গেছে।
এদিন টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১২৭ রানে অলআউট হয় কুমিল্লা। শুরু থেকে উইকেট হারাতে থাকা ঢাকা ম্যাচ শেষ ওভারে নিলেও আটকে যায় ১২৬ রানে।
১৮তম ওভারে আঙুলে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়া সাইফউদ্দিন শেষ ওভারে বল করতে চলে আসেন। প্রথম বলেই ফেরান রুবেলকে। পরে শাহাদাত হোসেন এক নিয়ে স্ট্রাইক দেন রাসেলকে। রাসেল দুই বল ডট দিয়ে পঞ্চম বলে ছয় হাঁকান। শেষ বলে দরকার পড়ে ছয়। রাসেল চার মারতে সক্ষম হন!
শেষের এই রোমাঞ্চ শুরু হয় মূলত ম্যাচের পাঁচ ওভার বাকি থাকতে। ওই ৩০ বলে জয়ের জন্য ঢাকার দরকার ছিল ৩৮ রান। ক্রিজে তখন রাসেল-পোলার্ড। ১৬তম ওভারে আফ্রিদি মেডেন নিলে দলটি আরও চাপে পড়ে যায়। পরের ওভারে আক্রমণে আসেন সাইফউদ্দিন। প্রথম তিন বলে পোলার্ড কোনো রান নিতে ব্যর্থ হন। চাপের মুখে লো-ফুলটসে কাভারে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। ৩৩ বলে দুই চার এবং দুই ছয়ে ৩৪ রান করেন এই ‘হার্ডহিটার’। ঠিক পরের বলে বিদায় নেন নুরুল হাসান সোহান। ডাউন দ্য উইকেটে এসে তুলে মারতে গিয়ে লুইসের চোখজুড়ানো ক্যাচে দলকে হ্যাটট্রিকের শঙ্কায় ফেলে পথ ধরেন।
হ্যাটট্রিক বল সামলে নেন শুভাগত হোম। সাইফউদ্দিন ইয়র্কার মারতে গিয়ে ফুলটস করলে এক রান নেন নতুন ব্যাটসম্যান।
১৮তম ওভারে রাসেল আফ্রিদিকে দুই ছয় হাঁকিয়ে খেলা আবার জমিয়ে দেন। এই ওভারে আফ্রিদি ১৭ দিয়ে যান। শেষ দুই ওভার থেকে ঢাকার দরকার পড়ে ২০।
১৯তম ওভারে আক্রমণে আসেন রিয়াজ। দ্বিতীয় বলে থার্ডম্যানে রাসেল ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি ‘নো’ ছিল! পঞ্চম বলে বিদায় নেন শুভাগত (৪)। বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে মোশাররফের হাতে ধরা পড়েন। শেষ বলে রাসেল ডিপ-ফাইন লেগের গ্যাপ ব্যবহার করে চার বের করেন। ছয় বলে তখনো ঢাকার দরকার পড়ে ১৩। যেটা আর নিতে দেননি ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হওয়া সাইফউদ্দিন।
এর আগে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঢাকার প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মিজানুর রহমান ছাড়া কেউ থিতু হতে পারেননি। ওপেনার মিজানুর আবার ১৬টি বল খেলেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। আসরে প্রথম খেলতে নামা মোশাররফ হোসেন রুবেলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তার আগে দুই চারে ১৬ রান করতে পারেন। আরেক ওপেনার উপুল থারাঙ্গা ফেরেন শূন্য রানে। তাকে এলবিডব্লিউ করেন ২৪ বছর বয়সী স্পিনার মেহেদী হাসান। এরপর রনি তালুকদারকে (১) ফেরান সাইফউদ্দিন। অফস্টাম্পের বল কাট করতে গিয়ে প্লেডঅন হন এই ব্যাটসম্যান।
আগের ম্যাচে ৫৩ রানের ইনিংস খেলা সাকিব নেমেই চালিয়ে খেলতে থাকেন। ষষ্ঠ ওভারে মেহেদীকে ছয় হাঁকানোর পরের বলেই দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড হন। সাকিব রুম করে মেহেদীকে মিডউইকেট দিয়ে স্লগ-সুইপে ছয় হাঁকান। পরের বলও একইভাবে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেহেদী তার মুভমেন্ট বুঝে ফেলেন। বলে কোনো স্পিন ছিল না, গতি কমিয়ে আর্ম ডেলিভারির মতো সোজা পিচ করান। তাতেই বোল্ড ঢাকার অধিনায়ক। ছয় বলে এক ছক্কায় সাত রান করেন তিনি।
২৯ রানে চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সুনীল নারিন হাল ধরার চেষ্টা করেন। এদিন ওপেন থেকে সরিয়ে পাঁচ নম্বরে নামানো হয় তাকে। পোলার্ডকে নিয়ে দলীয় সংগ্রহ ৭১’এ নিয়ে যান। এই জুটি ভাঙেন আফ্রিদি। ২৪ বলে ২২ করা নারিনকে ওয়াহাব রিয়াজের হাতে ধরা পড়তে বাধ্য করেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
সাইফউদ্দিন চার উইকেট নেন ২২ রান খরচ করে । দুই উইকেট মেহেদীর। একটি করে শিকার রিয়াদ, মোশাররফ এবং আফ্রিদির।