মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ সময় কেউ কাউকে ছেড়ে আর কথা বলছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণের ঘটনা তেমন না দেখা গেলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বলার ক্ষেত্রে বরাবরই লাগামহীন। কথা বলার সময়, বিশেষ করে কাউকে অভিযোগ করার সময় তিনি শালীনতা বা যৌক্তিকতার ধার ধারেন না। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনও এখন আর বসে নেই। প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে তীব্র পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছেন।
গত শনিবার দুই প্রার্থীই একে অন্যকে আক্রমণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদিন পুরোটাই ব্যয় করেছেন পেনসিলভানিয়ায়। চারটি পৃথক নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে জয়ের জন্য এ রাজ্য উভয় প্রার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জো বাইডেন প্রথমবারের মতো সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে একযোগে নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিয়েছেন মিশিগানে। মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পকে আটকে দিতে পারলে বাইডেনের জয় সহজ হয়ে উঠবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবরই খারাপ হলেও নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই তা নতুন মাত্রা পায়। ট্রাম্প বাইডেনকে ‘স্লিপি বাইডেন’ বলে বিদ্রুপ করে আসছেন। বাইডেন ঘরের বেজমেন্টে লুকিয়ে থাকেন ও পুরো পরিবারসহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এমনই আক্রমণ করে আসছেন ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ ছাড়া মার্কিন রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ এমন দুর্নীতিবাজ হিসেবেও ঢালাওভাবে বলতে তেমন শোনা যায় না।
শনিবার পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনী সভায় ট্রাম্প জো বাইডেনকে বিদ্রুপ করে বলেন, প্লাস্টিক সার্জারি করে তিনি চেহারা পরিবর্তন করেছেন। কীভাবে প্লাস্টিক সার্জারি আরও ভালোভাবে করলে বাইডেনকে সুদর্শন দেখাত তা নিয়েও তিনি বিদ্রƒপাত্মক কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন বড় আকারের সানগ্লাস দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখেন, যাতে লোকজন তার চেহারা দেখতে না পারে।
অন্যদিকে মিশিগানের মঞ্চে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন প্রতিপক্ষের বিদ্রুপের জবাবে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পোষা কুকুর। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ট্রাম্পের কোনো সম্মানবোধ নেই। বাইডেন বলেন, সবাই জানে ট্রাম্পের পরিচয়; তিনি কেমন লোক। এবারে সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে আমরা কারা।
ভোটারদের উদ্দেশ্য করে জো বাইডেন বলেন, ট্রাম্প গত চার বছরে দেশ ও দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমেরিকানদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। যে প্রেসিডেন্ট জাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছেন, জাতিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং দেশে ঘৃণা ছড়িয়েছেন তিন দিনের মধ্যেই আমরা তার সমাপ্তি ঘটাতে পারি।
জো বাইডেন বলেন, তিনি এই নির্বাচনে বেশ আশাবাদী যে, আমেরিকানরা ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এবার ভোট দেবেন। তিনি বলেন, লাখ লাখ আমেরিকান এর মধ্যেই ভোট দিয়েছেন। আরও কয়েক লাখ মানুষ সামনের দিনগুলোতে ভোট দেবেন। আপনাদের জন্য আমার একটি সহজ বার্তা হচ্ছে, এ দেশের শক্তি পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনাদের হাতে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে চেষ্টা করেছেন সে বিষয়ে আমি মাথা ঘামাই না। এ দেশের জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে কেউ বিরত রাখতে পারবে না।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে বলেন, এখন ট্রাম্পের সময় শেষ। তার ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। বিশৃঙ্খলা, টুইট, ক্ষোভ, ঘৃণা, ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
বাইডেন বলেন, আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আমি যদি আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হই তবে আমরা এসব কাজ করব। আমরা কভিড-১৯ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাব।
রয়টার্স বলছে, আসলে জনমত জরিপের ফলকে মিথ্যা প্রমাণ করে, পিছিয়ে থাকা অবস্থা থেকে জয় ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে শেষ দুই দিনের প্রচারে নেমে ট্রাম্প বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোতে রিপাবলিকান এ প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে দুজনের ব্যবধান খুবই কম। হোয়াইট হাউজের দখল ধরে রাখতে হলে ট্রাম্পকে এবারও ২০১৬ সালের মতো ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, আইওয়া ও অ্যারিজোনায় সামান্য ব্যবধানে হলেও জয়ী হতে হবে এবং পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনের মতো মধ্য পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অন্তত একটি ধরে রাখতে হবে।
তবে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগেই যে বিপুল পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে তাতে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক রিপাবলিকানই হতাশ হয়ে পড়ছেন। আগাম ভোটে প্রেসিডেন্ট তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছেন বলেও ধারণা তাদের।