ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পশুর হাটে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক কেনাবেচা। ইতিমধ্যে পশুর হাটগুলো বিভিন্ন ধরনের পশুতে ভরে গেছে। অস্থায়ী হাটগুলোর ইজারার শর্ত অনুযায়ী রোববার (২৫ জুন) থেকে বিক্রি শুরু হওয়ার কথা। তবে পশু আগে ওঠায় হাটগুলোতে স্বল্প পরিসরে বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাস্তবতা মেনে চুপ রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
প্রতি বছরই পশুর হাটগুলোর ব্যবস্থাপনার নানা রকম শর্ত দেওয়া থাকলেও তার সিংহভাগই উপেক্ষিত হয়ে থাকে। এ বছরও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।
২৯ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০টি পশুর হাট বসেছে। শর্ত অনুযায়ী, আগামীকাল থেকে হাট শুরুর কথা। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলো ছোট, বড় ও মাঝারি গরুতে পূর্ণ। স্থায়ী দুটি হাট গাবতলী ও সারুলিয়ায় গরু-ছাগল, মহিষ-ভেড়া এবং দুম্বাও উঠেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইজারার শর্ত অনুযায়ী রবিবার থেকে হাটে বেচাকেনা শুরু হওয়ার কথা। এর আগে ইজারাদাররা প্রস্তুতি নিতে পারবেন। তবে এবার সব হাটে একটু আগেই পশু চলে এসেছে। বিক্রি শুরু হয়েছে বলে খবর পাইনি। কোরবানি হাটের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন।’
রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ হাট কানায় কানায় ভরে উঠেছে। যদিও এই হাটের বিশেষ আকর্ষণ মীর কাদিমের গরু এখনো এসে পৌঁছায়নি। লোকজন হাটে পশু দেখতে ভিড় করছে। আর দনিয়া হাটটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন আকারের গরুতে ভরে উঠেছে। এই হাটে গরু ছাড়া অন্য কোনো পশু দেখা যায়নি। হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের সামনের খালি জায়গার হাটও কোরবানি পশুতে ভরে গেছে। প্রতিবারের মতো এবারও হাটটি বিস্তৃত হয়ে বেড়িবাঁধ সড়ক পর্যন্ত পৌঁছেছে।
শ্যামপুরের শ্মশানঘাট হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এই হাটটিতে প্রচুর গরুর সমাগম। মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশুতে ভরে উঠেছে হাট। তবে এ হাট বনশ্রী এইচ ব্লক, এভিনিউ সড়ক, জে, কে, এল, এম ও এন ব্লকের সব সড়কে বসেছে। বাসাবাড়ি, রাস্তা, ফুটপাত, দোকান, হাসপাতাল, মসজিদের আশপাশে, সামনে ও পেছনে সর্বত্রই বেঁধে রাখা হয়েছে গরু এবং ছাগল। আবাসিক এলাকার রাস্তার উভয় পাশে সারি সারি বাড়ি। এসব ভবনের সামনে গরু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। যেসব গলিতে পশু রাখা হয়েছে; সেই সব গলিতে চলাচল করা যাচ্ছে না। আর মাইকে সারা দিনই চলছে উচ্চ শব্দে পশু বিক্রির ঘোষণা।
আফতাবনগর হাটও পশুতে ভর্তি। আমুলিয়া, সারুলিয়া, তেজগাঁও পলিটেকনিক মাঠ, সাঈদ নগর পশুর হাট, উত্তরা হাটও কানায় কানায় পূর্ণ।
হাজারীবাগ হাটের পশু ব্যবসায়ী মো. আজগর আলী বলেন, পাবনার বেড়া থেকে ৫টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে বড় গরুটির দাম ১৮ লাখ টাকা চাইছেন; তবে দাম উঠেছে মাত্র ৮ লাখ টাকা।
উত্তরার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিন উত্তরা হাটে গিয়েছিলেন তিন বন্ধু মিলে। আগেভাগে পশু কিনতে দামাদামি করেছেন। দাম বেশি হওয়ায় কেনেননি। বিক্রি জমে উঠলে কিনবেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোরবানি পশুর অস্থায়ী হাটগুলো ইতিমধ্যে পশুতে ভরে উঠেছে। এ খবর আমরা পেয়েছি। কোথাও কোথাও স্বল্প পরিসরে বিক্রিও হচ্ছে; এটাও অসত্য নয়। আগেভাগে পশু হাটে আসায় এবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে পর্যাপ্ত খালি জায়গা নেই। এরপরও হাট বসানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নগরবাসীর চাহিদা বিবেচনায় সিটি করপোরেশন হাট বসিয়ে থাকে। পশু হাটের কারণে শহরে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখছি আমরা।’