স্থানীয়দের মারধরে সাভারের খাগান এলাকায় অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থী-এলাকাবাসীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ওই এলাকার অর্ধশত দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করলে এলাকার মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। উভয় পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিরসন ও সংঘর্ষ এড়ানোসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কারণে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ১১ দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রবিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হাবিব কাজল জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সোমবার (০৬ নভেম্বর) থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীদের দ্রুত সম্ভব হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রবিবার বিকেলে অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৭ দিন (১২ নভেম্বর পর্যন্ত) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলী। শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, সব শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসায় বা নিরাপদ স্থানে থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করে পড়াশোনা ও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
সরজমিন সোমবার সকালে আশুলিয়ার চাঁনগাও এবং খাগান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে হল ছেড়ে যাচ্ছেন। এর আগে, রবিবার রাতে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে।
পুলিশ, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক শিক্ষার্থীকে হত্যার বিচারের দাবিতে কয়েকদিন ধরে ছাত্ররা বিক্ষোভ করে আসছিল। এঘটনায় তারা ওই এলাকার বেশকিছু দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে পাশের চানগাঁও এলাকার স্থানীয় লোকজন অতর্কিত ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে স্থানীয় চানগাঁও মসজিদে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘোষণা দেয়। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে স্থানীয়রা ভোতরে ঢুকতে পারেনি। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা এসময় বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ক্যাম্পাস বন্ধের কথা শুনেছি। তারপরও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সেখানে অবস্থান করব।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ অক্টোবর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম অন্তরকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে খাগান এলাকায় ফেলে রেখে যায় স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আশুলিয়ার রাজু জেনারেল হাসপাতাল পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যান। এরপর পরিবারের তত্ত্বাবধানে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ নভেম্বর মারা যান অন্তর। এঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। অন্তরের মৃত্যুর ঘটনায় রাহাত নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হলে উভয় পক্ষের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তজেনা রিবাজ করছিল।