রমজান এলেই ইফতারের স্বাদে ও মানে একে অপরের থেকে আলাদা আকর্ষণ নিয়ে হাজির হয়ে থাকেন দোকানীরা। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বগুড়ায় ইফতারে সাদা বা টক দইয়ের কদর বেশি। তাই দুপুরের পর থেকে সাদা বা টক দই কিনতে দোকানগুলোতে ভিড় করছেন রোজাদাররা। এবারের রমজান মাসে জেলায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার দই বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের শতাধিক দইয়ের দোকানে এখন টক বা সাদা দইয়ের কদর বেশি।
জেলার সদর, গাবতলী, শেরপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, ধুনট, দুপচাঁচিয়া, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও শিবগঞ্জে সব ধরনের দইয়ের কারখানা রয়েছে। সারাবছর সাদা বা টক দই উৎপাদন কম হলেও রোজার মধ্যে বেশি হয়। জেলার শেরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দই উৎপাদন হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ইফতারে দইয়ের জন্য শহরের মানুষের ভরসা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আকবরিয়া হোটেল, সেলিম হোটেল, শ্যামলী হোটেল, কোয়ালিটি হোটেল, মহররম দই ঘর, শেরপুর দইঘর, রফাত দইঘর, মিস্টিমেলা, রুচিতা, মিস্টিমহল, ঘোষ দইঘর, পিংকি সুইটস, খাজা দইঘর, মডার্ন দইঘর সহ শহরের সাতমাথা এলাকার শতাধিক দোকানগুলো।
সরেজমিন বগুড়া শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, গোহাইল রোড, স্টেশন সড়ক, কাঁঠালতলা, ফতেহ আলী বাজার, চেলোপাড়া, জলেশ্বরীতলা, বাদুরতলা, কালিতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার দইয়ের দোকানগুলোতে এখন মিষ্টি দইয়ের তুলনায় সাদা দইয়ের কদর বেশি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে ইফতারিতে সাদা দই দিয়ে তৈরি পানীয়র জুড়ি মেলা ভার। তাই সাদা দইয়ের বিক্রি এ সময় বেশি হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ায় সাদা দইয়ের হাড়ি বা আকার ভেদে শহরে দোকানগুলোতে ৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং ফুটপাতে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৭০ টাকা অব্দি বিক্রি হচ্ছে।
শহরের আকবরিয়া দই বিপণন শাখার ম্যানেজার ইমরান জানান, সারাবছর আকবরিয়ার দই বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের শাখা রয়েছে। মিষ্টি দই বিক্রি হয়। কিন্তু রমজানে সাদা দইয়ের চাহিদা বেশি। তাই মিষ্টি দইয়ের তুলনায় সাদা দইয়ের উৎপাদন বেশি করা হয়।
শহরের স্টেশন রোডের মহররম আলী দইয়ের ঘরের ফয়জুল ইসলাম সাকিব জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী দই সরবরাহ করা হয়। আকার ভেদে সাদা ৮০ টাকা ও ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি।
শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় ভাড়ে করে ফুটপাতে দই বিক্রেতা গাবতলীর মিথুন ঘোষ, চেলোপাড়ার মৃগেন জানান, বাড়িতে দই তৈরি করে তা বগুড়া শহরে এনে বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০ পিস এর মতো বিক্রি হয়। ছোট হাড়ি ৬০ টাকা ও বড় হাড়ি ১২০ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন তারা।
ফতেহ আলী বাজারের মডার্ন দই ঘরের রনজন ঘোষ জানান, এবার দুধের দাম বেশি। তাই বেশি দামে বেচতে হচ্ছে। তবে রমজান মাসে টক দইয়ের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি হয়।
শহরের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সাদা দই বিক্রি হচ্ছে। যাতে করে মাসে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটির টাকার সাদা দই বেচাকেনা হবে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি।
এদিকে ইফতারিতে বাহারী সামগ্রী নিয়ে শহরের মোড়ে বসেছে দোকান। এর মধ্যে শহরের জলেশ্বরীতলায় ইফতার সামগ্রী বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি দাম দিতে হয়। কারণ এসব এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ইফতার সামগ্রীর দাম প্রায় আকাশ ছোঁয়া।
শহরের সাদা দই কিনতে আসা শহরের ফুলবাড়ি এলাকার সজল শেখ, বিসিক এলাকার রাশেদ রহমান জানান, ইফতারিতে সাদা দই অনেক উপকারী। সারাদিন পর রোজার ক্লান্তি দূর করতে সাদা দইয়ের ঘোল খুব উপকারী। আর পরিবারের সবার পছন্দের।
শহীদ নগর এলাকার মাসুকুর রহমান জানান, দিনশেষে বাসায় সাদা দই নিয়ে ফিরি। বাসায় অন্য ইফতার তৈরি হয়। কিন্তু সাদা দই আমাদের তৃষ্ণা মিটাতে খুব কার্যকরী ও হজমে ভালো কাজ দেয়।