নাসরিন স্পোর্টস অ্যাকাডেমি ২-২ আতাউর রহমান ভুঁইয়া কলেজ এসসি
সুরভী আখন্দ প্রীতির জোড়া গোলে আতাউর রহমান ভুঁইয়া কলেজ এফসি'র সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়েছে তারকা খচিত নাসরিন স্পোর্টস অ্যাকাডেমি। তাতে জমে উঠেছে নারী ফুটবল লিগ। দু'দলের ২-২ ড্রয়ে স্ফিত হাসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্পোর্টস ক্লাব লিমিটেডের। প্রথমবার অংশ নিয়েই তাদের সামনে শিরোপা জয়ের হাতছানি। ২০ মে অলিখিত ফাইনালে নাসরিনের সঙ্গে হার এড়াতে পারলেই শিরোপা অনেকটা নিশ্চিত হবে তাদের।
অথচ এই লিগটাও একপেশে হওয়ার কথা ছিল। আগের তিনবারের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবার অংশ না নেওয়ায় সেই দলে খেলা জাতীয় দলের সব তারকা যোগ দিয়েছিলেন নাসরিন স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে। শুরুর চার ম্যাচে জয় পাওয়া নাসরিন বৃহস্পতিবার প্রথম কোন শক্ত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়। আর এই চ্যালেঞ্জটা উতড়াতে পারেনি সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদা, মারিয়া, মনিকাদের নিয়ে গড়া নাসরিন। আসলে তাদের জিততে দেননি প্রীতি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ফরোয়ার্ড ম্যাচের শুরুতেই আতাউরকে এগিয়ে নেন। এরপর অবশ্য কৃষ্ণা ও সাবিনার গোলে লিড নিয়েছিল নাসরিন। তবে শেষ দিকে সেয়ানে সেয়ানে লড়ে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় আতাউর। প্রীতির লক্ষ্যভেদে মূল্যবান এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে গত দু'বারের রানার্স-আপ দলটি।
পয়েন্ট খুইয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান হারানোর শঙ্কায় এখন নাসরিন। পাঁচ ম্যাচ শেষে তাদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। এক ম্যাচ বেশি খেলা আতাউর দুইয়ে আছে সমান ১৩ পয়েন্ট নিয়ে। এই দুই দলকে আগামীকাল টপকে শীর্ষে উঠে যেতে পারে চার ম্যাচে শতভাগ জয়ে ১২ পয়েন্ট পাওয়া সেনাবাহিনী। সদ্যপুস্করিনি জেএসসিকে হারালেই তাদের সংগ্রহ দাঁড়াবে ১৫ পয়েন্ট।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দুই দলে লড়াইটা উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল আক্রমন-প্রতি আক্রমণে। জাতীয় দলের বেশিরভাগ থারকাদের নিয়ে গড়া নাসরিনকে শুরুতেই থমকে দেন প্রীতি। কিক-অফ থেকে প্রথম আক্রমণে উঠে ৪২ সেকেন্ডে গোল করেন তিনি। সতীর্থের থ্রু পাস দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলেও ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি প্রীতি। তবে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে নাসরিনের তারকা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার ক্লিয়ারেন্স প্রীতির গায়ে লাগলে তড়িৎ সেটা ফাঁকা পোস্টে জড়িয়ে দেন। তবে এই লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি আতাউর। পঞ্চম মিনিটেই সমতায় ফিরেছে নাসরিন। সাবিনার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে উঠেন ঋতুপর্না চাকমা। নিজে শট না নিয়ে ক্রস বাড়ান দূরের পোস্টে থাকা কৃষ্ণার কাছে। ছুটে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড। এরপর ২১ মিনিটে নাসরিনকে এগিয়ে নেন সাবিনা। কৃষ্ণার থ্রু পাস দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের শটে গোলের আনুষ্ঠানিকতা সাড়েন জাতীয় দলের অধিনায়ক।
এরপর নাসরিন সহজাত আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে পুরোটা সময়। তবে ফরোয়ার্ডদের অবিশ্বাস্য ভুল আর আতাউর গোলরক্ষক সাথী বিশ্বাসের দৃঢ়তায় আর প্রতিপক্ষের গোলের দরজা খুলতে পারেননি জাতীয় দলের তারকারা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে সাবিনার কর্নারে হেড করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। শেষ মুহূর্তে তা আটকে দেন সাথী। ছয় মিনিট পর আবারও সুযোগ পেয়েছিল নাসরিন। সাথীকে পোস্ট ছেড়ে অনেকটা বের হয়ে আসতে দেখে দূর থেকে বল জালে রাখার চেষ্টা করেছিলেন ঋতুপর্ণা। তবে তা লক্ষ্যে থাকেনি অল্পের জন্য। ৭৪ মিনিটে ফের হতাশা দলটির জন্য। এবার শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট গোলরক্ষকের গায়ে লেগে কর্নার হয়।
অন্যদিকে ঘর সামলে লম্বা বল ফেলে আতাউরও চেষ্টা করেছে প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল আদায় করে নিতে। যার ফলটা তারা পায় ম্যাচের ৮৫ মিনিটে। জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুনের কাছ থেকে বল পেয়ে শাহেদা আক্তার রিপা থ্রু পাস বাড়ান প্রীতিকে। সেটা আয়ত্বে নিতে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন রূপনা। তবে প্রীতি ঠান্ডা মাথায় চিপ করে রূপনার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন। এই গোলেই শেষ পর্যন্ত স্বস্থির ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে আতাউর। আর জয় না পাওয়ার হতাশা সঙ্গী হয় নাসরিনের।