দেশের উপকূল জুড়ে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। রবিবার (২৬ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাবে গতকাল সোমবারও উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে দিনভর বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এমনকি আজ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় এই ঝড়ের প্রভাবে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে রিমালের তাণ্ডবের মধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল এক মা ও শিশুর ছবি। এতে দেখা যাচ্ছে, কর্দমাক্ত স্থানে মা তার সন্তানকে জড়িয়ে শুয়ে আছেন। বিভিন্ন পেজ ও ব্যক্তি ছবিটি শেয়ার দিয়েছে এবং অনেকেই দাবি করছেন ছবিটা ভোলার চরফ্যাশন থেকে তোলা। আর এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক রিউমর স্ক্যানার জানায়, রিমালের তাণ্ডবে চরফ্যাশনের কর্দমাক্ত স্থানে মা ও সন্তানের যে ছবিটি প্রচারিত হচ্ছে তা বাস্তব নয়। গত মার্চ থেকেই ছবিটি ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে, যা এআই দিয়ে তৈরি।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে তায়েফ রাব্বানী নামে বাংলাদেশি এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ক্যাপশনে ছবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। পরে ০৩ থেকে ০৭ মার্চ বিভিন্ন প্লাটফর্মের (ইউটিউব, এক্স, ফেসবুক) একাধিক অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট হতে দেখে রিউমর স্ক্যানার। গত মার্চে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘নিউজমোবাইল’ও ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি বলে জানায়।
বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির ফেসবুকে শেয়ার করা এক পোস্টে জানান, ছবিটি এআই জেনারেটেড বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সাহায্যে বানানো। ওই পোস্টে ছবিটির দুটি অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এতে দেখা যায়, ছবিতে যে মা রয়েছেন তার এক পায়ে ছয়টি আঙুল, আর এক হাতে চারটি আঙ্গুল।
অন্যদিকে নির্মাতা পিকলু চৌধুরী পৃথক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এই ছবিটা আমার এলাকা ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার বলা হচ্ছে ... ছবিটা অনেক সুন্দর কিন্তু ছবিটা ফেক! এআই দিয়ে তৈরি করা ছবি। ফেক ছবি দিয়ে একটি মানবিক বিষয়ে ভাইরাল হওয়ার নেশায় মেতে উঠেছি আমরা ...।’
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ ঝড়ে উপকূলীয় জেলাগুলোয় ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯০০ ঘরবাড়ির।
সব মিলিয়ে ঝড়ে উপকূলের ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। ভেসে গেছে শত শত ঘের-পুকুরের মাছ। আর জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এছাড়াও রিমালের প্রভাবে দেশজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে।