মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হারিয়ে গেছে টেলিভিশনের ঈদ নাটকের আনন্দ

আপডেট : ১৯ জুন ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম

ঈদ মানেই আনন্দ আর ঈদের আনন্দের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ ছিল টেলিভিশন নাটক। হ্যাঁ, ‘ছিল’ শব্দটাই এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের রঙিন সময়ে ঈদ আনন্দে ঈদের নাটক ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ‘অবশ্যই দেখতে হবে’ বিনোদন। শূন্য দশকের গোড়া থেকে প্রথম দশকেও এর আবেদন ছিল বেশ ভালো। বলা যায়, কয়েক বছর আগেও ছিল আবেদন। কিন্তু সেই আবেদন এখন অনেকটাই ফিকে। হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন কিংবা হানিফ সংকেত, আনিসুল হকের নাটকের জন্য যে উন্মাদনা ছিল তা ক্রমে ধূসর হতে হতে হারিয়ে গেছে।

এখন ঈদ হলে টেলিভিশন নাটক নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। টেলিভিশনের জায়গাটা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে ইউটিউব। সামাজিক মাধ্যমের এই প্ল্যাটফরমে ঈদে প্রচুর নাটক মুক্তি পাচ্ছে। প্রযোজকরাও সামাজিক মাধ্যমে মুক্তির জন্যই নাটক বানাতে আগ্রহী। নির্মাতাদের দিক থেকে বাণিজ্যিক একটা বিষয় থাকে। কেননা একটি নাটক নির্মাণে যে খরচ তা অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেল থেকে পুরোটা পাওয়া যায় না। আর দর্শকদের আগ্রহের যে জায়গাটা ছিল, সেটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। ফলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে বড় বাজেটে নাটক নির্মাণ করবে, সেটাকেও ঝুঁকি মনে করছে। কোনো কোনো চ্যানেল নাটক নির্মাণ করছে, আবার তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ওই নাটকের মুক্তি দিচ্ছে। ফলে দর্শকরা দেখতে চাইলে ধীরে-সুস্থে পরে দেখে নিচ্ছেন। তবে এসব নাটকের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।

ঠিক এভাবেই চোখের সামনে টেলিভিশন নাটকের আবেদন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফরমও দেশীয় বিনোদনের মাধ্যম দখল করে নিচ্ছে। তবে টেলিভিশন-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নাটকের আবেদন কমেনি; বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন বৈশাখী টেলিভিশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু আলম মিলন। বললেন, ‘দেখুন, টেলিভিশন নাটকের আবেদন কমেনি। টেলিভিশনে দেখার আবেদনটা কমেছে বলতে পারেন। একটি নাটক যখন মুক্তি পায়, তখনই দেখার যে প্রবণতা ছিল, সেটা কমে গেছে। প্রত্যেকের হাতে হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। তাই পরে সবাই আলাদা আলাদাভাবে বসে নাটক দেখে। আগে যেমন একসঙ্গে টেলিভিশনের সামনে বসে নাটক দেখত, সেই চিরচেনা দৃশটা আসলে ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’ 

তবে টেলিভিশন নাটকের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের আরেকটি কারণ বিজ্ঞাপনের আধিক্য। এমনটাই মনে করছেন নির্মাতা ইশতিয়াক আহমেদ। এবারের ঈদে ইশতিয়াক আহমেদ চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করছেন ‘পরাজিত’ ও একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নির্মাণ করেছেন ‘পিতা ও পুত্র’।

এই নির্মাতা বললেন, ‘টিভির প্রতি অনীহার প্রধান কারণ সম্ভবত বিজ্ঞাপনের আধিক্য। রিল, শর্টসের এই যুগে দর্শকদের ধৈর্য এখন এমনিতেই কিছুটা কম। তাই বসে বিজ্ঞাপনসহ কোনো প্রোডাকশন দেখা হয়তো দর্শক আগের মতো মানতে পারে না। উল্টোদিকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একই বিষয় আবার চলে আসছে হাতের মুঠোয়। তার ওপর সেটা ইচ্ছা অনুযায়ী সময় মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে। সে কারণে হয়তো সবকিছু মিলিয়ে টিভি একটু বিপদেই আছে।’ 

 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত