মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কোরবানি ঈদের পর খাদ্যাভ্যাসে যে নিয়ম মানবেন

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম

একটানা কোরবানির মাংস খেলে তৈরি হতে পারে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকি। সাধারণত কোনো সুস্থ ব্যক্তি সপ্তাহে দুদিন লাল মাংস গ্রহণ করলে তা তেমন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তবে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতাসহ অন্যান্য রোগ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে মাংস খেতে হবে।

কোরবানির ঈদ মানেই বিভিন্ন ধরনের রেড মিটের খাবার। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কারণে এ সময় নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে মাংস খাওয়াটা জরুরি। খাবার হজম, শোষণ ও অপসারণের জন্য আমাদের গ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ট্র্যাক্ট প্রতিনিয়ত কাজ করছে। সবচেয়ে দ্রুত হজম হয় কার্বোহাইড্রেট, অন্যদিকে ফ্যাট হজম হতে দীর্ঘসময় লেগে যায়। মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে।

অন্যান্য খাবারের তুলনায় প্রোটিন ও ফ্যাট হজম হতে বেশি সময় নেয়। পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হজম হতে তুলনামূলক বেশি সময় লেগে যায়, মূলত এসব খাবারের ফ্যাটই প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করে থাকে। ফ্যাট একটি কমপ্লেক্স মলিকিউল, যা অন্যান্য খাবারের তুলনায় পাকস্থলী হতে দেরিতে অপসারিত হয়।

অনেকেরই খাওয়ার পর ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাংস হজম হয়ে যায়। আবার অনেকেরই দুদিন লাগতে পারে। এমনকি কারও কারও তিন-চারদিনও লেগে থাকে। মাংস ভোজন পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ হলো- হজম হতে বেশি সময় প্রয়োজন হওয়া।

কোরবানি ঈদের পর নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত :

যতটা সম্ভব চর্বি বাদ দিয়ে মাংস খাওয়া : কম তেল এবং চর্বি ফেলে দিয়ে মাংস রান্না করতে হবে। মাংস খাওয়ার পরপরই এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটে জমা ফ্যাট তখনই কেটে যাবে।

ডায়েটে গ্রিন টি, ব্ল্যাক কফি রাখা : খাদ্য তালিকায় গ্রিন টি, ব্ল্যাক কফি রাখতে হবে। এতে করে হজম প্রক্রিয়া খুব দ্রুত কাজ করে।

খাদ্য তালিকায় সবজির আইটেম রাখা : দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রঙিন শাকসবজির আইটেম রাখা। মাংসের পাশাপাশি সবজি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা : কোরবানি ঈদের পরপর যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই ছুটি থাকে ও মাংস জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়, তাই অবশ্যই শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে।

পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা : উৎসব উপলক্ষে পর্যাপ্ত রকম লোভনীয় খাবার থাকলেও তা পরিমিত পরিমাণেই গ্রহণ করতে হবে।

মাংস গ্রহণের পর হজম বাড়ানোর উপায়

মাংসের হজম দ্রুতকরণের একটি কার্যকরী উপায় হলো, ভালোমতো চিবানো। যত বেশি চিবানো হবে, তত দ্রুত হজম হবে। কেননা, মাংসকে বেশি ভাঙলে অর্থাৎ চিবালে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়ে। এটা পাকস্থলীর পরিবেশকে অধিক অ্যাসিডিক করে তোলে, যার ফলে মাংস দ্রুত হজম হয়।

আনারস, পেঁপে খেলেও মাংস দ্রুত হজম হয়। মাংস খাওয়ার সময় অথবা আগে কয়েক টুকরো আনারস খেলে দ্রুত হজম হবে। আনারসে ব্রোমিলেন নামক প্রাকৃতিক এনজাইম থাকে, যা প্রোটিনের মধ্যকার সংযুক্তি ছাড়াতে সাহায্য করে, ফলে মাংস হজমে সাহায্য করে। পেঁপেতে পাপাইন নামক প্রাকৃতিক এনজাইম রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এই ফল মাংস খাওয়ার পরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতেও সাহায্য করে, যেমন- পেটফাঁপা ও বদহজম।

মাংস খাওয়ার পরপরই দই খেলে হজমে গতিশীলতা আসবে। দইয়ে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা দ্রুত হজম প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করে।

মাংস হজমের একটি সেরা উপায় হলো, মাংসকে রান্নার আগে অ্যাসিড জাতীয় খাবার বা ভিনেগার দিয়ে কিছু ঘণ্টা মেরিনেট করা। এভাবে মেরিনেট করলে মাংসের প্রোটিন সহজে ভেঙে যাবে ও হজমের গতি বাড়বে।

অনেকের মাংস হজমে বেশি সমস্যা দেখা দেয় তাই বেশি মসলাজাতীয় অতিরিক্ত মাংস খাওয়া যাবে না। খুব বেশি সিদ্ধ করে খেতে হবে। এ ছাড়া মাংস খাওয়ার পর দ্রুত হজম হতে আদা পানি অথবা শুধু আদাও খাওয়া যেতে পারে।

মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টক দই, পেঁপে বাটা, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।

প্রতি বেলায় খাবারের সঙ্গে এক কাপ পরিমাণ শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সালাদের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভূসিসহ ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে।

লেখক: স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, নারী মৈত্রী

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত