বৃষ্টির মৌসুমে অনেক সময় দেখা যায়, প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার পরও তাপমাত্রা কমে না, বরং গরম আরও বেশি মনে হয়। এতে অনেকেই অবাক হন—বৃষ্টি হলে তো স্বাভাবিকভাবে শীতলতা আসার কথা, তবে কেন এত গরম? এর পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
আর্দ্রতার প্রভাব
বৃষ্টি হলে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত আমাদের শরীর ঘাম তৈরি করে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করে, কিন্তু যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তখন ঘাম সহজে শুকায় না। এতে আমাদের শরীর থেকে তাপ বের হতে পারে না, ফলে আমরা আরও বেশি গরম অনুভব করি। এ কারণে আর্দ্র আবহাওয়ায় গরম অনুভূত হয়, যদিও তাপমাত্রা খুব বেশি না-ও হতে পারে।
সূর্যের তাপ ও বৃষ্টি
বৃষ্টির সময় আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে, তাই সূর্যের তাপ সরাসরি মাটিতে পৌঁছায় না। কিন্তু বৃষ্টি থামার পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে সূর্যের তাপ আবার ফিরে আসে। এর ফলে মাটি, ঘরবাড়ি ও অন্যান্য বস্তু দ্রুত গরম হয়ে ওঠে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গরম আরও বেশি অনুভূত হয়, বিশেষ করে যদি বাতাসের গতি কম থাকে।
নিম্নচাপ ও বৃষ্টিপাত
বৃষ্টি সাধারণত নিম্নচাপের কারণে হয়। এই নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে আর্দ্র ও গরম বাতাস আসে, যা বৃষ্টির আগে ও পরে তাপমাত্রা হ্রাস করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বৃষ্টির পরেও গরম অনুভব হয়। বিশেষ করে যখন বাতাস ভারী ও আর্দ্র থাকে, তখন শরীরের তাপ বের হতে না পেরে আরও গরম অনুভব হয়।
শহরের তাপমাত্রা ও বৃষ্টির প্রভাব
বিশেষ করে শহরের মতো জায়গায় যেখানে বিল্ডিং, পিচের রাস্তা, এবং অন্যান্য কংক্রিটের স্থাপনা প্রচুর তাপ ধরে রাখে, সেখানে বৃষ্টি হলেও সেই তাপ দ্রুত ঠান্ডা হয় না। তাছাড়া, বৃষ্টির পানি মাটি বা রাস্তায় পড়ার পর বাষ্পে রূপান্তরিত হয়ে সেই তাপ আবার বাতাসে ছড়িয়ে দেয়, যা গরমের অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
বাতাসের অভাব
বৃষ্টির সময় বা তার পর বাতাসের গতি সাধারণত কমে যায়। বাতাসের চলাচল কম থাকলে তাপমাত্রা কমে না, বরং তাপ ভারী হয়ে পরিবেশে আটকে থাকে। ফলে শীতল হাওয়ার প্রবাহের অভাবে গরমের অনুভূতি আরও তীব্র হয়।
বৃষ্টি সাধারণত শীতলতা বয়ে আনলেও কিছু বিশেষ কারণের জন্য অনেক সময় বৃষ্টির পরও গরম লাগে। উচ্চ আর্দ্রতা, সূর্যের তাপ, নিম্নচাপ অঞ্চল এবং বাতাসের অভাব সব মিলে বৃষ্টির পর গরমের এই অনুভূতি তৈরি করে। তাই বৃষ্টির পরপরই শীতল অনুভূতি আশা করা সবসময় বাস্তবসম্মত নয়, বিশেষ করে যদি বাতাস আর্দ্র এবং স্থির থাকে।