রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা খরচ করে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফর এবং বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পেছনে ‘অর্থ অপচয়’ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এ ছাড়া ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে বিশাল বহর নিয়ে ৪৮ বার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে আক্তার হোসেন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি সংগ্রহ করেছেন। দেশের সরকারি টাকা লবিস্টের পেছনে ব্যয় করে অনিয়মের মাধ্যমে এসব ডিগ্রি সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি হলো- ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় অব ব্রাসেলস, ভারতের বিশ্ব-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। তিনি যেসব পদক ও ডিগ্রি সংগ্রহ করেছেন, তার প্রায় সবগুলোর পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ বা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী চুক্তির বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া এসব তথ্য পর্যালোচনা করে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।’
ডিজি আক্তার হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে গেলে সরকারি টাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ সিরিজের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ ভাড়া করতেন। সঙ্গে নিয়ে যেতেন সফরসঙ্গীদের বিশাল বহর। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রতি বছর বিশাল বহর নিয়ে জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে ২২৭ জনের একটি দল নিয়ে নিউ ইয়র্কের ৭০তম সাধারণ অধিবেশন এবং টেকসই উন্নয়ন-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যান। ২০১৪ সালে ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে এই সংখ্যা ছিল ১৭৮ এবং ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৪।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছয় বছরে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ বার বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে গেছেন। এসব সফরে শেখ হাসিনা খরচ করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। তিনি ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেলে হেলসিংকির ভানতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-১৯০২) যোগে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা করেন। ঢাকা সরাসরি থেকে নিউ ইয়র্ক যাত্রা না করে ফিনল্যান্ডে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওই ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ এবং সেখানে দুদিনের ল্যান্ডিং চার্জসহ সফরসঙ্গীদের যাবতীয় খরচ বহন করতে অতিরিক্ত সাত কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। সরকারের কাছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিমানের প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।’