রাজধানীর মোহাম্মদপুরে র্যাব সদস্যের মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে চারজনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার চারজন একটি ডাকাত দলের সদস্য এবং তারা বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় রেকি করে তথ্য সংগ্রহ করত। পরে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যের মিথ্যা পরিচয়ে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাত।
গ্রেপ্তার চারজন হলো মো. বিল্লু মিয়া (৩৫) এবং তার সহযোগী আবু জাহের (৩০), আল আমিন ওরফে পাঁঠা আল আমিন (২০) ও মো. আলমগীর (৩২)। র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে বিল্লু মিয়া ডাকাত দলটির প্রধান। ডাকাতির আগে বিল্লু অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন জায়গায় রংমিস্ত্রির ছদ্মবেশে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করত।
তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা একটি রিভলবার, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি করে পাইপ গান, কার্টিজ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, চাকু, রেঞ্জ, সামুরাই, শাবল, স্ক্রু ড্রাইভার, দুটি প্লায়ার্স, র্যাব-পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করা জ্যাকেটের মতো দেখতে কালো রঙের একটি জ্যাকেট, কালো ক্যাপ ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খালিদুল হক হাওলাদার এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক সব অপরাধী চক্রকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে র্যাব-২ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার বাঁশবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত সর্দার বিল্লুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেহ তল্লাশি করে একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচ রাউন্ড গুলি, গুলির একটি খালি খোসা ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।’
গ্রেপ্তার বিল্লুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, অস্ত্র-মাদক কারবার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিল্লু মোহাম্মদপুর ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, ভূমি দখল, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। পাশাপাশি গ্রুপটি নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিল্লুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার চাঁদউদ্যান লাউতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী আবু জাহের (৩০), আল আমিন ওরফে পাঁঠা আল আমিন (২০) ও মো. আলমগীরকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের অন্য দুই সহযোগী মো. রাজা (৩৬) ও মো. নাগর (৩০) পালিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-২ অধিনায়ক বলেন, ‘ডাকাত সর্দার বিল্লু আট বছর আগে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় আসে। সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রংমিস্ত্রির কাজ করত। মূলত সে এই পেশার আড়ালে ডাকাতি করার জন্য রেকি করত, এরপর তার সংগ্রহ করা তথ্য নিয়েই দলের সদস্যদের নিয়ে ডাকাতি করত। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পেয়েছে র্যাব। ডাকাত বিল্লুর দলে একাধিক নারী সদস্য রয়েছে। যাদের ব্যবহার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে মারধর করে গাড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার কাজ করত।’