বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ইজারার জুটমিলেও অস্বস্তি!

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৫ এএম

খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের মধ্যে চারটি ইজারায় চালু হলেও বড় পরিসরে উৎপাদনে যায়নি তিনটি। বাকি পাঁচটি পাটকলের চারটি বেসরকারিভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিলছে না প্রত্যাশিত বিনিয়োগকারী। এ ছাড়া অন্যটির মালিকানা নিয়ে মামলা চলায় কোনো সিদ্ধান্তই নেই। ফলে ইজারাবিহীন মিল কবে চালু হবে তা অনিশ্চিত। যা নিয়ে হতাশ ও অস্বস্তিতে শ্রমিকরা। ক্ষুব্ধ খুলনাবাসীও।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জুলাই লোকসান ও উৎপাদন খরচের কারণ দেখিয়ে খুলনা অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক চাকরি হারান। এরপর বিজেএমসি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) বন্ধ পাটকল চালুর পরিকল্পনা করে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা পিপিপিতে পাটকল চালাতে রাজি হননি। দীর্ঘমেয়াদি ইজারা চান তারা। পরে পাটকল চালুর পথ খুঁজতে কারিগরি কমিটি করা হয়। কারিগরি কমিটি স্বল্প সময়ের জন্য পাটকল ইজারা দিতে সুপারিশ করে। সুপারিশের প্রেক্ষিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে পাটকল ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর ইজারা দিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের শর্তে ছিল ইজারাদার শুধু পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। আর মেয়াদ হবে ২০ বছর। কিন্তু টেন্ডারে কেউ তেমন আগ্রহ দেখায়নি। পরে পাটজাত পণ্যের বাইরে টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দৌলতপুর জুটমিলের প্রকল্প প্রধান তানজিলা মাহমুদা জানান, তার মিলে মোট ২৫০টি তাঁত রয়েছে, চালু করা হয়েছে ৩০টি। মিল বন্ধের আগে ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন, এখন শ্রমিক কাজ করে ছয়শত। বন্ধের আগে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ টন, তবে এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র দেড় টন।

উৎপাদন কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে দৌলতপুর জুটমিল ইজারা নেওয়া ফরচুন গ্রুপের আইনি পরামর্শক মো. মাসুম বিল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাটকলের সবগুলোই ১৯৫৪ সালের মেশিন। আগে যারা কাজ করছেন, কেবল তারাই পরিচালনা করতে পারেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক। এক্ষেত্রে তরুণ শ্রমিক কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, বাকি ৫টি পাটকলের মধ্যে খালিশপুর জুটমিল ইজারা নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিস্ট গ্রুপ। কিন্তু এখনো হস্তান্তর হয়নি। তবে ক্রিসেন্ট জুটমিল, স্টার জুটমিল ও প্লাটিনাম জুটমিল ইজারা দিতে আগ্রহীদের থেকে আন্তর্জাতিক আবেদন আহ্বান করেছে বিজেএমসি। শর্ত শিথিল করে বিভিন্ন মিলে ৬ থেকে ৭ দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও প্রত্যাশিত বিনিয়োগকারীদের খুব একটা সাড়া মিলছে না।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, লিজ প্রক্রিয়ায় আমরা চারটি মিল চালু করেছি। এর মধ্যে জেজেআই খুব ভালোভাবে উৎপাদন করছে। অন্য তিনটি মিল খুব বেশি উৎপাদন না করলেও মিলগুলোকে উৎপাদনমুখী রেখেছে। এ ছাড়া বাকি মিল চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা আশা করি দ্রুত সবগুলো মিল চালু হয়ে যাবে।

তবে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি মিল সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লোন নিচ্ছে। পরে সেই টাকা মেরে দিয়ে তাদের নিজস্ব জায়গায় স্থাপনা করেছে কিন্তু সরকারি জায়গায় কোনো স্থাপনাই করছে না। এ ছাড়া জুটমিলের কথা বলে ইজারা নেওয়া হলেও করছে অন্য ফ্যাক্টরি। এগুলো প্রহসন হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত