রাজধানীর দনিয়ায় কলেজছাত্র মিনহাজুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার কয়েক আসামি এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের গ্রেপ্তার না করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যা তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ভাষ্য নিহত মিনহাজুলের পরিবারের সদস্যদের। তারা অভিযোগ করে বলেন, এই হত্যার ঘটনায় সরাসরি ও পরিকল্পনায় জড়িত কয়েকজনকে বাঁচাতে এলাকায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত একাধিক পরিবার চেষ্টা চালাচ্ছে।
নিহতের বাবার দাবি, আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাদের পক্ষে মামলার সব খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে আসামিদের বাঁচাতে নেপথ্যে যেসব বিত্তশালী কাজ করছেন তাদের চাপের কারণে পুলিশ সব আসামি ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত চলছে, আসামি ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
নিহত মিনহাজুল ইসলামের বাবা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ছেলে মিনহাজুল হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিনিয়ত চোখের পানি ফেলছেন।
মিনহাজের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আমির হামজা ও তার বাবা আব্দুল জলিলসহ কয়েক আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তারা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। তবে এই হত্যা মামলার তদন্তের বর্তমান তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) মো. ফজলুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও যেসব আসামি বাইরে রয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘মিনহাজুল ইসলাম দনিয়া কলেজের ¯œাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ২৬ জানুয়ারি কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিনহাজুলের সঙ্গে মাহফুজ ওরফে কিং মাহফুজসহ কয়েক যুবকের তর্কবিতর্ক হয়। পরে ২৮ জানুয়ারি বিকালে মিনহাজ ও তার বন্ধু আহাদ দনিয়া কলেজের সামনে গেলে মাহফুজসহ অন্যরা চাকু, চাপাতি ও রামদা দিয়ে তাকে গুরুতরভাবে আঘাত করে। সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মিনহাজুলকে মৃত ঘোষণা করেন।’ এই হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে মামলা করেন।
অভিযোগ উঠেছে, মিনহাজুল হত্যায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা হত্যার ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের নাম প্রকাশ করেনি। কিশোর গ্যাং প্রধান কামাল হোসেনের ভাগ্নে আমির হামজা এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিল। আর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের জোগানদাতা ছিল আমির হামজা। এ ছাড়া, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত একাধিক পরিবারের নামও সামনে এসেছে, যারা হত্যাকারীদের বাঁচাতে পুলিশ এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।
নিহতের বাবা হাফেজ রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা এতটাই অভাবী যে আমাদের পক্ষে এই মামলার সব খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যারা আসামিদের পেছনে রয়েছে, তারা অনেক বিত্তশালী এবং তাদের চাপের কারণে পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমার ছেলের স্ত্রী সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমরা দ্রুত হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘মিনহাজুল হত্যার পর প্রথমদিকে পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে এই মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।’