‘আমার বাড়ি আমার ঘর’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পের মালিক পুলিশ কনস্টেবল মশিউর রহমান। মশিউর এক সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি চলে যান অবসরে। তারপরও পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করতে ভুলছেন না তিনি। তার ব্যবসায়ীক পার্টনার পুলিশের আরেক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। তিনি সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে বর্তমানে কর্মরত আছেন কর্মরত ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে।
তিনি একজন সাব ইন্সপেক্টর হয়েও কিন্তু পরিচয় দিচ্ছেন উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসাবে। তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সবাই মিলে একটি আবাসন প্রকল্পের নামে অর্থ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। প্লট দেওয়ার কথা বলে অনেককে করেছেন সর্বস্বান্ত। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ মহলে দাখিল করা হয়েছে অভিযোগ। আর নানা অপকর্ম করে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার মালিক তিনি। তার একটি আলিশান ফ্ল্যাট ও গাড়ি থাকলেও সেটি তার স্ত্রীর নামে বলে বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তার প্রতারণার কোনও পরিবর্তন হয়নি। নিজেকে রথী-মহারথী হিসাবে উপস্থাপন করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চলছেন। তাদের ক্ষমতার এই অবৈধ দাপটে নিঃস্ব হওয়ার পথে অনেক মানুষ। সরকারি চাকরি বিধিমালার কোনও তোয়াক্কা না করে ভূমিদস্যুর ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেন এই মোজাম্মেল। সম্প্রতি ‘আমার বাড়ি আমার ঘর’ নামক একটি আবাসন কোম্পানির গ্রাহকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক কনস্টেবল মশিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করার প্রশ্নই উঠে না। চাকরি শেষ করে আবাসনের ব্যবসা করছি। এতে দোষের কিছু নেই। প্লট দেওয়ার কথা বলে কাউকে সর্বস্বান্ত করেছি তা একদম সঠিক না। একটি গ্রুপ আমার প্রকল্প থেকে জায়গা ক্রয় করেছে। তাদের রেজিস্ট্রি,খাজনা দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। আপনি (সাংবাদিক) অনুসসন্ধান করেও অপকর্মের কোনও কিছু পাবেন না।
সম্প্রতি, প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, রাজউক চেয়ারম্যান, রিহ্যাব সভাপতি, দুদক চেয়ারম্যান, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রকল্পের ভ‚ক্তভোগী গ্রাহকরা। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক মশিউর রহমনা এবং তার সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ দবি করেন তারা। প্রতারণার শিকার ৪৫ ভুক্তভোগী স্বাক্ষরিত সেই অভিযোগের একটি কপি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
মেরুল বাড্ডার মদিনা টাওয়ারের পেছনে থাকা ‘আমার বাড়ি আমার ঘর’ কোম্পানির হাতিরঝিল প্রকল্পের প্লট ডি-এর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা মশিউর রহমানের মাধ্যমে মেরুল বাড্ডার এই জমিটি ক্রয় করি। উনি মিডিয়া হিসেবে মূল মালিকের কাছ থেকে আমাদের জমিটি কিনে দেন। একইসঙ্গে উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার কোম্পানি দিয়ে জমিটি ডেভলাপ করে দেবেন। এ কথা বলে আমাদের থেকে ৬৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। ৫০ লাখ টাকায় রাজউকের প্ল্যান পাস করে দেওয়ার কথা বলে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছে। রাস্তার কথা বলেও টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার কোনও কথা রাখেননি। আবার জাল দলিল করে আরও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
তিনি বলেন, টাকা চাইতে গেলে নানা রকম হুমকি-ধমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য পুলিশ ও সিআইডি পরিচয়ে মালিকদের কাছে ফোন আসছে। আমরা টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। আমাদের জমিতে আমরা বসবাস করতে চাই।
সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশের একাধিক সদস্য সম্পৃক্ত:
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কোম্পানিটির মালিক মশিউর রহমান সিআইডির সাবেক কনস্টেবল। মশিউর তার গ্রাহকদের নানা প্রতারণা ঢাকাতে নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দেন। এমনকি ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মোজাম্মেল হক প্লট ক্রেতাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, গ্রেপ্তার করা, এমনকি গুম করে আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও পেয়েছেন তারা। ভয়-ভীতি দেখাতে মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির হাতিরঝিল প্রজেক্টে সিআইডি ও ডিবি পুলিশের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন। যেসব গ্রাহক তাদের ন্যায্য পাওনার জন্য বেশি চাপ দেন, তাদের মোজাম্মেল ফোন দিয়ে হুমকি দেন। মোজাম্মেলের পাশাপাশি বাড্ডা থানার এক ইন্সপেক্টর, এসআই ইয়াসিনসহ আরও বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য জড়িত।
পুলিশের দুটি ইউনিটের দোহাই করে জিম্মি:
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইউনিটের দোহাই দিয়ে গ্রাহকদেও জিম্মি করে রেখেছেন মশিউর। যার বিনিময়ে মোজাম্মেলসহ দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুস হিসাবে ফ্ল্যাট দেওয়ার অঙ্গিকার করেন মশিউর। তাছাড়া পুলিশ যাতে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ না করে, সেজন্য বাড্ডা থানার ওসি, ডিবি পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানদের নিয়মিত টাকা দেন মশিউর। প্রতিষ্ঠানটির হাতিরঝিল প্রকল্পের খরচের এক হিসাবে দেখা গেছে, ডিবি পুলিশকে ২ লাখ টাকা, বাড্ডা থানাকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নামে স্থানীয় মাস্তানদের ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশের ২ লাখ টাকা মোজাম্মেলকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান একাধিক গ্রাহক। তাদের ভাষ্য, ডিবি পরিচয়ে এখানে মোজাম্মেল হক ছাড়া আর কেউ আসেনি। কিন্তু মোজাম্মেল গ্রাহকদের স্বার্থে তো কোনও কাজ করেনি, বরং গ্রাহকদের হুমকি-ধমকির মাধ্যমে হয়রানি করে যাচ্ছেন।
ভুঁইফোড় আবাসন প্রকল্প:
গ্রাহক হয়রানি আর প্রতারণা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে ‘আমার বাড়ি, আমার ঘর’ নামক ভুঁইফোড় ডেভলাপরস কোম্পানি কর্তৃপক্ষের। মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে জমি বুঝিয়ে না দেওয়া এবং অন্যের জমিতে সাইবোর্ড টাঙিয়ে গ্রাহকদের ধোকা দেওয়াসহ নানা অপকর্ম করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিকার চাইতে গেলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন তারা।
থানায় অভিযোগ করেও আসছে না প্রতিকার:
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সারা জীবনের জমানো টাকা দিয়ে জমি কিনে এখন তাদের জীবন নিয়ে টানাটানি। থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় মাস্তানদের দিয়ে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে কোম্পানির প্রধান মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। যখন যে সরকার আসে, তখন সেই সরকারের প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহকদের জিম্মি করে রাখেন তিনি। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থ নিয়েও দিতে পারছে না জমি:
মেরুল বাড্ডায় প্রতিষ্ঠানটির হাতিরঝিল প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দেড় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে এখন জমি বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। উপায় না পেয়ে পার্শ্ববর্তী জমি দখল করে টাঙিয়েছিলেন সাইবোর্ড। জমির প্রকৃত মালিকদের প্রতিরোধে সেই সাইবোর্ড তুলে নিলেও এখনো নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি স্থানীয় মাস্তানদের সহায়তায় মেরুল বাড্ডার মদিনা টাওয়ারের পেছনে জমি দখল করতে যান মশিউর রহমান। সেখানে দলবল নিয়ে জনৈক শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনের জমির দেওয়াল ভেঙে ফেলেন। এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ওই অভিযোগে মোয়াজ্জেম বলেন, দক্ষিণ বাড্ডায় তার মায়ের কেনা সম্পত্তিতে মশিউর ৩০ থেকে ৪০ জন নিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। সীমানা প্রচীর ভাঙচুর শুরু করলে আমরা বাধা দেই। এতে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে। একইসঙ্গে এই জমিতে আমরা গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
জোর করে জমিতে বিক্রির সাইনবোর্ড:
আলাপকালে ভুক্তভোগী মোয়াজ্জেম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও একাধিকবার আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। মশিউরদের চাওয়া আমারা যাতে এই জমি তাদের কাছে বিক্রি করে দেই। কিন্তু আমাদের এই সম্পত্তি বিক্রির কোনও ইচ্ছা বা পরিকল্পনা নেই। এর আগেও আমাদের না জানিয়ে জমিতে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিল। এসব বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আমাদের হয়রানি করছে।
৩৮ কাঠা জমির নামে প্রতারণা:
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ’আমার বাড়ি আমার ঘর’ ডেভলাপারস কোম্পানির হাতিরঝিল প্রকল্পে ১৪৯ জন শেয়ার হোল্ডারদের মাধ্যে ৩৮ কাঠা জমি বিক্রি করা হয়। প্রবেশের ৩০ ফুট রাস্তা এবং ভেতরের ২০ ফুট রাস্তা বাদ দিলে এই পরিমাণ জমি সেখানে থাকে না। তাছাড়া প্রথমে ১৪৯ জনের কাছে শেয়ার বিক্রি করলেও পরে জাল দলিলের মাধ্যমে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫টি শেয়ার বৃদ্ধি করা হয়। যে কারণে সাবাইকে জমি দিতে পারছেন না মশিউর। গ্রাহকদের চাপে মেয়াজ্জেমদের জমিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দখল করতে চেয়েছেন। সেখানে ব্যার্থ হয়ে নাম মাত্র দামে তা বিক্রি করতে চেয়েছেন। বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হাতিরঝিল প্রকল্পের গ্রাহকরা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আমার বাড়ি আমার ঘর কোম্পানির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে তারা ১৪৯ জন মিলে ৩৮ কাঠা জমি ক্রয় করার কথা জানান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক আশা নিয়ে জীবনের সঞ্চিত টাকার মাধ্যমে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থার জন্য ১৪৯ জন একত্রিত হন। কিন্তু মশিউর রহমান তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যা জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সকল শেয়ার হোল্ডারদের দীর্ঘদিন যাবত হয়রানি করে আসছেন। অন্তত ৫ বছরে ও জমি বুঝিয়ে না দেওয়া আমরা জমির শেয়ার ক্রয়ের সময় মশিউর জমি রেজিস্ট্রি দেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে রাজউক থেকে প্লান পাসের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশন শুরু এবং তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। প্লটগুলোর জন্য ২০ ফুট রাস্তা দেখিয়ে বিক্রি করেছেন। প্রজেক্টের প্রবেশের জন্য ৩০ ফুট রাস্তা সৃজনের কথা বলে শেয়ার বিক্রি করেছেন। বাস্তবে সে রাস্তা আমরা পাইনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো নানা টাল বাহানার মাধ্যমে ২-৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও ফ্ল্যাট তো দূরের বিষয় আমাদের জমিগুলো নিষ্কণ্টকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেননি।
তাদের আরও অভিযোগ, ৭৬ লাখ টাকা নিয়ে কোনও কাজ না করা ও টাকা ফেরত না দেওয়ায় মদিনা টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তা ৩০ ফিট বড় করার জন্য ৩০ লাখ টাকা নিয়ে কোনও কাজ করা হয়নি। দুই বছর পূর্বে হাতিরঝিলের পকেট গেইট ভেঙে ১ মাসের মধ্যে ৩০ ফুট রাস্তা বের করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে কোনও কাজ ও হয়নি এবং টাকাও ফেরত দেয়নি। দেড় বছর পূর্বে রাজউক থেকে তিন মাসের মধ্যে ল্যানড ইউজেস ক্লিয়ারেন্স অনুমোদনের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০ লাখ টাকা নিয়ে কাজও করেনি, পক্ষান্তরে টাকাও ফেরত দেয়নি। এই তিনটি কাজ করার জন্য মশিউর ৭৬ লাখ টাকা নিয়ে কাজও করেননি এবং টাকা ফেরত দেয়নি। অথচ কাজ না হলে টাকা ফেরত দেবে এই মর্মে অঙ্গীকার করেছিল।
মশিউরের নিয়ন্ত্রণে ভাড়াটে সন্ত্রাসী:
মশিউরের কাছে প্রতিশ্রুতি টাকা চাইতে গেলে মশিউর নানা টালবাহানা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে তার ভাড়াটে গুন্ডাকে আমাদের অপমান এবং অন্যান্য সকলকে গায়ে ধাক্কা দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। সে বলে এই সরকার এবং এই প্রশাসনকে তিনি তোয়াক্কা করেন না এবং তাকে রাজউক, রিহ্যাব, থানা, দুদক, যৌথবাহিনী কেউই কিছু করতে পারবে না, আপনাদের টাকা আমি দেব না, আপনারা যা পারেন করেন বলে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন। ৭৬ লাখ টাকার ব্যাংকের চেক ডিজওনার পরবর্তীতে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেওয়া হলে ৭৬ লাখ টাকার বিপরীতে ৪টি চেক দেন। দুঃখের বিষয় এই চেকগুলি ডিজঅনার হয়ে যায়। এখন টাকাগুলো চাওয়া হলে দেব-দিচ্ছি বলে হয়রানি করছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেকের মাধ্যমে দেওয়া পাওনা ৭৬ লক্ষ টাকা দিয়ে দেবেন বলে চূড়ান্ত অঙ্গীকার করলেও টাকা ফেরত দেননি। এই প্রেক্ষিতে কয়েকবার মিটিংয়ের সময় দিয়েও তাকে সে সময় অফিসে পাওয়া যায়নি।
ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ও জাল দলিল তৈরি:
কোনও ল্যান্ড ইউজেস ক্লিয়ারেন্স, ড্রয়িং, ডিজাইন এবং প্লান পাস ছাড়াই ১৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেবেন এবং ১৮ তলা বিশিষ্ট কনডোমোনিয়াস বিল্ডিং হবে এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ লক্ষ্যে একটি জাল দলিল তৈরি করে ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে নিজেকে আমাদের সকল জমির মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালিয়েছেন। প্রজেক্ট সংলগ্ন মোয়াজ্জেম ও মধু ভাইয়ের জমি পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে মালিকানা দাবি কবে ১২ জনের নিকট শেয়ার বিক্রি করেছেন। অথচ মোয়াজ্জেম ও মধু ভাই এ ধরনের কোনও পাওয়ার দেননি। বরং মশিউর প্রতারণার আশ্রম নিয়েছে সিডিই এবং এফ প্লটের শেয়ার বিক্রির পর সেগুলার সীমানা নির্ধারণ করেননি এবং দখল বুঝিয়ে দেননি। এ ছাড়া আরো ১ জনের নিকট ডামি ব্যতীত অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করেছেন। পরবর্তীতে আরো ১২ জনের নিকট জাল দলিলের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করেছেন। এখনও ২১ জনের এই জমিগুলি বুঝিয়ে দিতে পারেনি।
বহিরাগত মাস্তান পোষা ও শেয়ার হোল্ডারদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার বহিরাগত ফয়সাল, সনি, হাসান, মাইনুল, তথাকথিত বিএনপি নেতা আলমগীর এবং অন্যান্য স্থানীয় মাস্তানরা আমাদের এই প্রজেক্ট থেকে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। আমাদের প্রজেক্ট সংলগ্ন মোয়াজ্জেম ও মধু ভাইয়ের জমি আত্মসাৎ করার জন্য মশিউর এ সকল মাস্তানদের মোটা অংকের টাকার লোভ, প্রজেক্টে রিকশার গ্যারেজের মাধ্যমে টাকা আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে মাস্তানদের মোয়াজ্জেম ভাই ও আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং নানা ষড়যন্ত্র ও অপকৌশলের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশানের কাজ ও মোয়াজ্জেম ও মধু ভাইদের জমি হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টায় নিয়োজিত আছে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের প্রজেক্টের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ:
অভিযোগে বলা হয়েছে, ফয়সাল, সানি, হাসান, আলমগীর এবং অন্যান্য দখলদার ও মাস্তানদের উচ্ছেদের বিষয়ে ১৭ বার অঙ্গীকার করেও তাদের উচ্ছেদ করা হয়নি। পরবর্তীতে সকল শেয়ার হোল্ডারগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করে সনি, ফয়সালদের রিকশার গ্যারেজ ভাঙা ও অন্যান্য দখলদারদের উচ্ছেদ করেন। এই কার্যক্রমে মশিউরের কোনও সহযোগিতা করেননি বরং বিভিন্নভাবে এ কাজ যাতে না হয় তার চেষ্টা করেছেন। প্রজেক্টের চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ না করা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রজেক্টের চারিদিকে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কথা বলে তিন মাসের মধ্যেও শেষ করতে পারিনি। তার কথা ও কাজের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনও মিল পাওয়া যায়নি। শেয়ারহোল্ডারকে জীবননাশের চেষ্টায় গত ২০ জানুয়ারি মশিউর ও রাজনৈতিক চাঁদাবাজ আলমগীরের উসকানিতে হাসান গং ও ফয়সাল গং আমাদের প্রজেক্টের শেয়ারহোল্ডার ইলিয়াস ভাইকে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেন। থানায় মামলা করতে গেলে বাড্ডা থানার ওসি সহযোগিতা করেননি।
মশিউরের প্রাপ্ত বিলের মধ্যে দেখা যায়, বাড্ডা থানার ওসিকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। ফলে অনেক চেষ্টার পরও চাঁদাবাজির মামলা নেননি এবং মামলার এফআইআর প্রস্তুত করতে যে ইনজুরি রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট লাগে তার উপদেশও দেননি এবং চাঁদাবাজি বাদ দিয়ে মামলা হালকা করার ফলে আসামিরা ছাড় পেয়ে যায়। পরবর্তীকালে মসিউরের মদদপুষ্ট এবং খানার আশীর্বাদপুষ্ট ফয়সাল গং ও হাসান গং বিভিন্নভাবে প্রজেক্টে এসে চুরি করেন এবং চুরি শেষে গার্ডদের প্রাণনাশের হুমকি দিলেও খানায় রিপোর্ট করার পরে তারা অ্যাকশন নেননি।
ডিবির এসআই মোজাম্মেলকে দিয়ে হুমকি:
ডিবিতে কর্মরত এসআই মোজাম্মেলকে দিয়ে আমাদের বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়েছে যাতে মশিউরের যত অপরাধ ও বাটপারি ভুলে যাই এবং মশিউরকে দিয়ে কাজ করাই। থানার ওসি এবং এসআই মোজাম্মেলকে মশিউর আমাদের সকলের শেয়ার থেকে দুটি ফ্ল্যাট ঘুষ দেবেন বলে মিথ্যা লোভ দেখিয়েছেন। এসআই ইয়াসিন ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মশিউর আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে মশিউরের বিজনেস পার্টনার পুলিশে কর্মরত এসআই ইয়াসিন, টিপু সুলতান, সাব্বির, সাখাওয়াত, সাইফুল, খালেদ আল মামুন, মাইনুর, রুশো বনিক, জি এম রব, মফিজদের কনস্ট্রাকশনের কাজের লোভ দেখিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ভাড়াটে গুন্ডাদের ব্যবহার করে ভুয়া শেয়ারহোল্ডারদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়াস গত ২২ ফেব্রুয়ারি মশিউর তার প্রায় ১৫ জন ভাড়াটে গুন্ডাদের নিয়ে অতিরিক্ত ২১ জন ভুয়া শেয়ারহোল্ডারসহ সবাইকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালান। তবে যখন শেয়ারহোল্ডারদের সংখ্যা বেশি দেখা দিল তখন বাধ্য হয়ে সি ডি ই এবং এফ প্লটের ৮.৩২ কাঠা জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর বাকি ২১ জনকে দেওয়ার মতো জমি না পেয়ে অন্য দাগের জমি এবং খাস জমিতে তাদের জায়গা রয়েছে বলে মিথ্যা আশ্বাস দেন। সি ডি ই এবং এফ প্লটের ৩৮ শতক জমি বুঝিয়ে দিয়ে খুঁটি গেড়ে সীমানা বুঝিয়ে দেওয়ার পর ও তার দুইদিন পরে মশিউর বিবৃতি দেয় তাকে দিয়ে জোর করে সীমানা দেওয়া হয়েছে। প্রতারক মশিউর উল্টো আমাদের হুমকি দেয় যে সে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
তথ্য গোপন করে শেয়ার বিক্রি:
সংশ্লিষ্টরা জানায়, তথ্য গোপন ও দলিল দিতে অস্বীকার মশিউর তার নামে যে ৪টি শেয়ার ছিল তার সবকটি শেয়ার বিক্রি করার পরেও মালিক দাবি করেন। শেয়ার কাকে কখন বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে রেগে যান এবং এ তথ্যগুলো সব সময় গোপন রাখেন। আমাদের সব প্লটের গুরুত্তপূর্ণ মূল দলিল ও কাগজসমূহ আনতে গেলে দিতে অস্বীকার করে। ভুয়া ৩৩ লাখ টাকার বিল শেয়ারহোল্ডার দের চাপিয়ে দেওয়া আমাদের জমি বুঝিয়ে দখল দেওয়ার পূর্বে যত কাজ সম্পন্ন করা দরকার তার সকল কাজের দায়িত্ব ও খরচ মশিউরের থাকলেও আমাদের ভুয়া ৩৩ লাখ টাকার বিল জমা দেন। বিলে গত পাঁচ বছরে “আমার বাড়ি আমার ঘর” কোম্পানির যত খরচ আছে তার সবকিছুই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। গত পাঁচ বছরে “আমার বাড়িতে মশিউরের ঘর” কোম্পানি কোথায় চা নাস্তা খাইয়েছে সেগুলোও এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি থানায় দুই দফায় ৩৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে সে খরচ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বা খানায় টাকা দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করার জন্য মশিউরের নির্দেশ রয়েছে।
প্রজেক্টই নানা প্রতারণা মশিউরের:
মশিউরের বিভিন্ন প্রজেক্টে খবর নিয়ে জানা যায়, সব প্রজেক্টেই বিভিন্নভাবে প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে শেয়ার হোল্ডারদের প্রতারিত করছে এবং সবমিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। তার সম্পত্তির হিসাব ও বাৎসরিক আয়কর রিটার্ন দেখলেই সহজেই বেরিয়ে আসবে সে সরকারকে কি ভুল তথ্য দিয়েছে এবং কত টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। “আমার বাড়ি আমার ঘর” এর অন্যান্য প্রজেক্টের প্রতারনা মশিউরের বিভিন্ন প্রজেক্টের শেয়ারহোল্ডাররা তার প্রতারণা ও বাটপারি জানার পর তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। আফতাব নগরের প্রজেক্টে শেয়ার হোল্ডার রা নিজেরা দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া নন্দীপাড়া ও বনশ্রী প্রজেক্ট ও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। সেখানে শেয়ার হোল্ডাররা পাওনা কোটি টাকার জন্য মশিউরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সে আরও দু একটি নতুন বাটপারির প্রজেক্ট খুলেছে এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারণার জন্য জমির শেয়ার বিক্রি করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাথে দহরম-মহরম:
৫ আগস্টের আগে পুলিশের সাবেক কনস্টেবল মসিউর নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করতেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শেয়ার হোল্ডারদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম সুমন ও তথাকথিত বিএনপি নেতাকে নিয়ে সন্ত্রাসীরা গত ১৫ মার্চ মশিউর প্রজেক্টের ভেতরে মোয়াজ্জেম ও মধুর বাউন্ডারি ভেঙে দেয়। ওইদিন আরও চারটি প্লট সিডি ই এবং এফ প্লটের ১৪৯ জন শেয়ারহোল্ডার কোনও জমি বুঝিয়ে না দিয়ে হুমকি এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে।
স্ত্রীর নামে আলিশান গাড়ি:
নিজের একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার থাকলেও সেটির রেজিস্ট্রেশন তার স্ত্রীর নামে। ২০১৮ সালে মডেলের গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিআরটিএ এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাড়িটি তার স্ত্রী ও একটি ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।