শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চান হিলির ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৪ এএম

সরবরাহ কমের অজুহাতে সম্প্রতি দিনাজপুরের হিলিসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমদানি শুরু না হলে দাম আরও বাড়বে বলে দাবি বিক্রেতাদের। দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আবেদনসহ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বন্দরের আমদানিকারকরা। অনুমতি পেলেই পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। এতে পেঁয়াজের দাম কমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে আসবে বলে দাবি আমদানিকারকদের।

হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা যেমন পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ কমিয়েছেন, তেমনি পেঁয়াজের বেচাকেনা আগের চেয়ে কমে গেছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে যদি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা গরিব মানুষ কীভাবে পেঁয়াজ কিনব। এখন দিন গেলেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, কমার কোনো লক্ষণ নেই। এত দাম দিয়ে তো পেঁয়াজ কিনে খেতে পারছি না।’

হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হাসনাত বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেই আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এর কারণ পাবনার যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছিল, সেটি শেষপর্যায়ে। যে কারণে মোকামে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ আগের তুলনায় কম। এতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া নতুন করে রাখি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই পেঁয়াজের দাম বেশি। আগে যে পেঁয়াজ আমরা মোকামে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ কিনতাম, এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। আবার কিছু কিছু পেঁয়াজ ২২০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। যদি এখন দেশীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়, তাহলে হয়তো পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।’

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক বাবলুর রহমান বলেন, ‘সরকার যেহেতু পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে, তাই হিলিসহ দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এবার ভারতে ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। যার ফলে ভারতে বর্তমানে ভালো মানের পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। এ ছাড়া পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকার যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছিল, সেটি ১ এপ্রিল থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এখন যদি সরকার আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। ২৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। সে সময় অনেক পেঁয়াজের চাহিদা থাকে। আর যদি কোরবানির আগে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে দেশীয় যে পেঁয়াজ রয়েছে, তার দাম বেড়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হক। তাতে ব্যবসায়ীদের যেমন সুবিধা হবে, তেমনি দেশের মানুষ কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারবে।’

হিলি স্থলবন্দরের অন্য এক পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার পেঁয়াজ আমদানির যে অনুমতি দিয়েছিল, সেটির মেয়াদ ছিল সর্বশেষ ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু সে সময় দেশীয় পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। তাতে করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে পড়তা না থাকায় আমরা সে সময় পেঁয়াজ আমদানি করিনি। সরকার দেশীয় কৃষকের স্বার্থে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রেখেছে। কিন্তু কৃষকরা তো সেই সুবিধা বা সেই ন্যায্য দাম পান না। কিছু অসাধু মজুদদার এমনভাবে মজুদদারি শুরু করেছেন, ৩০ থেকে ৩৫ টাকার পেঁয়াজ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াতে বাড়াতে ৫৫ টাকায় দাঁড় করিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু দেশীয় পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তাই আমরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ রাখছি। সরকার যদি আজকেই আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে এলসি খোলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা যাবে। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে যাবে।’

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ-সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সর্বশেষ ৩ মার্চ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যদিও ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি ছিল, তারপরও দেশীয় পেঁয়াজের দাম কম থাকায় আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন। পরে ১ এপ্রিল থেকে অনুমতি বন্ধ রেখেছে সরকার। দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রেখেছে সরকার। সম্প্রতি দেশীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ইতিমধ্যেই আমদানিকারকরা নতুন করে আমদানির অনুমতির (আইপি) জন্য যোগাযোগ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত