মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

টিসিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম হয়েছে

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৩ এএম

নির্দিষ্ট কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে চাল, তেল, চিনি, মসুর ডাল বিক্রি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে সম্প্রতি পাঁচতলা বাড়ির মালিক, প্রশাসনে কর্মরতদের পরিবারেও টিসিবির এই কার্ড পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার আর্মি গলফ ক্লাবে টিসিবি আয়োজিত ‘ট্রেড উইথ টিসিবি ‘শীর্ষক বিজনেস টক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা জানান। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফয়সল আজাদসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘পাঁচ আগস্ট বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন খাতে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল টিসিবি তা থেকে মুক্ত ছিল না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিজিটকালে তার অনেক প্রমাণ পেয়েছি।’ তিনি বলেন ‘উপকারভোগী বাছাই করতে বিগত সময়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিদর্শনকালে জুট মিলের মালিকের টিসিবি কার্ড দেখেছি, পাঁচতলা বাড়ির মালিকের এবং প্রশাসনে কর্মরতদের বাড়িতেও তিনটি কার্ড দেখতে পেয়েছি।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দুর্বৃত্তায়নের যে প্রতিচ্ছবি দেখেছি সেখান থেকে মনে হয়েছে মানুষের মনে সরকারের ব্যবস্থাপনা ও মাঠ প্রশাসনের ওপর যে আস্থা, সেটা কখনই কাজ করবে না; যদি মানুষ দেখে যে, প্রতিদিন তার অধিকার অতিক্রম করছে (বঞ্চিত করছে) দুর্বৃত্তরা। এই দুর্বৃত্তায়ন সামাজিকভাবে সামগ্রিকভাবে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।’

টিসিবির কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবিকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে চাই। ১ কোটি পরিবারের জন্য সরকার ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য ক্রয় করে। আমরা এই টাকার যোগ্য ব্যবহার দেখতে চাই। এটার জন্য যোগ্য উপকারভোগী নির্বাচন করতে চাই এবং একই সঙ্গে এই টাকায় অধিক পণ্য ক্রয় করতে চাই। সে জন্য ব্যবসায়ীদের টিসিবির কাজের সঙ্গে অংশগ্রহণ দেখতে চাই। এর মধ্যে দিয়ে বাণিজ্য সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে, মানুষ তার যোগ্য স্থান ফিরে পাবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হচ্ছে। রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি বন্ধের কারণে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে। টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে পণ্য কিনতে গেলে বাজারে প্রভাব পড়ে। সে জন্য কিছু পণ্য টিসিবি নিজেরা আমদানি করবে।

এ সময় ব্যবসায়ীদের নানা অভিযোগের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পণ্য সরবরাহকারীদের লেনদেনে কীভাবে আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ চলছে।

সভায় টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফয়সল আজাদ বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। যার জন্য নতুন আবেদনকারী ও পুরনো ডিলারদের ডিসি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। ১ জুলাই থেকে এসব ডিলারের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে টিসিবি। ভোজ্য তেলসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য টিসিবি সরাসরি আমদানি করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সংস্থাটি।

ফয়সল আজাদ বলেন, প্রকৃত উপকারভোগীরাই যেন কার্ড পায়, সেজন্য কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। ১ কোটি পূরণে বাকি ৪০ শতাংশ কার্ড জুনের মধ্যে শেষ করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, টিসিবি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে, লাভের জন্য নয়। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শুধু টিসিবি একা নয়, সবাইকে এক সঙ্গে থাকতে হবে। তবে সিন্ডিকেটসহ সবকিছুর মধ্যেই টিসিবি তার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে, আটকানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে মুক্ত আলোচনায় টিসিবির সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন এবং ব্যবসা করতে চান এমন অনেক ব্যবসায়ী তাদের অভিযোগ ও পরামর্শ তুলে ধরেন। টিসিবিকে পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হতে বাড়তি সময় লাগে। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিল পরিশোধ করে না টিসিবি। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, পণ্য সরবরাহের চুক্তি থাকার পরেও তা গ্রহণ করে না টিসিবি। ফলে আমদানি করা পণ্য নিয়ে তাদের বিপাকে পড়তে হয়।

পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে বন্দরের জটিলতার কথাও উঠে আসে আলোচনায়। তারা বলেন, পণ্য শিপমেন্টের ক্ষেত্রে কয়েকটি জাহাজ পরিবর্তন করতে হয়। শিপমেন্টের সময় কীভাবে কমানো যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময় তারা দরপত্রের সময় কমিয়ে আনার অনুরোধ জানান। এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন টিসিবির চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত