মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শঙ্কা

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম

কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা উপত্যকা পেহেলগাম দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। মিনি সুইজারল্যান্ডখ্যাত এই এলাকায় প্রতি বছর হাজারো পর্যটকের সমাগম হয়। তবে গত মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি গোষ্ঠী। 

তারা দাবি করেছে, অঞ্চলটিতে ৮৫ হাজার বহিরাগত বসতির প্রতিবাদে এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে ভারতের পুলিশ বলছে, ভারতীয় শাসনের বিরোধী সন্ত্রাসীরা এ হামলার পেছনে রয়েছে। ভারতের সাবেক সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ হামলার নেপথ্যে রয়েছে। এর বিরুদ্ধে দৃঢ় ও দ্রুত জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন তারা। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায় লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে ভারত সরকার যে দাবি করে আসছিল, এ হামলা সেটিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিল। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া ভারতবিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। এ সিদ্ধান্তের ফলে বহিরাগতরা এলাকায় জমি কেনা ও চাকরি পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, পর্যটনও বেড়েছে। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে দিন দিন অবনতিই ঘটেছে। 

সম্প্রতি এক ভাষণে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীরকে ‘পাকিস্তানের শিরার ধমনির সঙ্গে যুক্ত’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা কাশ্মীরের কথা ভুলব না এবং আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের ন্যায়সংগত সংগ্রাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব না। ভারতের সাবেক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফরের সময় এ হামলা চালানো হয়েছে আন্তর্জাতিক নজর কাড়ার জন্য এবং কাশ্মীরের পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত বন্দুকধারীদের খুঁজতে বুধবার সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। সন্ত্রাসীদের অনুসন্ধান অভিযান ত্বরান্বিত করতে হামলায় জড়িত তিন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে কর্র্তৃপক্ষ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। 

নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, হামলাকারীদের সবাই লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। এ ঘটনাকে ২০০০ সালের পর ওই অঞ্চলে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং একজন নেপালের নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া দুজন স্থানীয় বাসিন্দাও রয়েছেন।

হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামের একটি গোষ্ঠী। এটি পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি শাখা। হামলার সময় সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর পাওয়া মাত্রই সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার ভোরে দিল্লি পৌঁছান তিনি। 

মোদি বলেন, এই নৃশংস হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তাদের বিচার হবেই। কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সবসময়ই অটুট ছিল। এখন সেটা আরও দৃঢ় হবে। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন তিনি। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী ওমার আবদুল্লাহ এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা প্রথমে পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চায়। এরপর পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মরদেহ যার যার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কর্র্তৃপক্ষ।

এদিকে পেহেলগামে হামলার ঘটনায় থমথমে হয়ে আছে কাশ্মীর। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাশ্মীর ছাড়ার চেষ্টা করছেন পর্যটকরা। কাশ্মীর জুড়ে সব ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পর্যটকই এখন কাশ্মীর ছাড়ার চেষ্টা করছেন। একই তথ্য জানিয়েছে শ্রীনগর বিমানবন্দরের ট্যুর অপারেটররা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) একটি দল ইতিমধ্যেই শ্রীনগরে পৌঁছেছে। পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও পেহেলগাম পরিদর্শনে যাবেন। তবে বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না সাংবাদিকদের। এমনকি এ ঘটনায় আহতদের সঙ্গে কথাও বলার সুযোগ মিলছে না তাদের। যেতে দেওয়া হচ্ছে না হাসপাতালে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

বুধবার বিবিসির সাংবাদিক ইউগিতা লিমায়ে বলেন, আমরা পেহেলগামে হামলার স্থান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) দূরে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ বলছে, এ স্থানের বাইরে মিডিয়াকে যেতে না দিতে তাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে। যদিও এখানে বেসামরিক চলাচলের ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। এর ফলে আমাদের পক্ষে আহত ও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য রাখা হাসপাতালে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই কিছু সাংবাদিক সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হন বলেও জানান ইউগিতা লিমায়ে।

অন্যদিকে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্কের মধ্যেই কাশ্মীরের বারমুলা জেলার উরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবারের এ ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সকালে সন্ত্রাসীরা উরিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুই অনুপ্রবেশকারী নিহত হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও স্পষ্ট করে জানিয়েছে, দুই-তিনজন সন্ত্রাসী সাধারণ এলাকা দিয়ে বারামুল্লার উরি নালায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় সেনাসদস্যরা বাধা দিলে তারা গুলি ছোড়ে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত