প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সাধারণ নাগরিকের জীবনে সংবিধানকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে হলে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। গতকাল শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘দ্য ফিউচার অব কনস্টিটিউশনাল জাস্টিস ইন দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ শীর্ষক এক বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্যকালে একথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের সাংবিধানিক পথচলা ভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠলেও দুই দেশের অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ-জাতি নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিকের জীবনে সংবিধানকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে হলে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগের পাশাপাশি জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, তা বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।’
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমান যুগে সাধারণ মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় সাংবিধানিক আদালতগুলোর আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, জলবায়ু ন্যায়বিচার (ক্লাইমেট জাস্টিস), ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য সুরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আন্তঃদেশীয় বৈষম্য মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে এমন একটি ন্যায়বিচার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা জরুরি যা একদিকে নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তেমনি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করবে।’
বিভিন্ন দেশের বিচার বিভাগের প্রতিনিধিরা ও আইনজ্ঞদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই সফর এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশের বিচার বিভাগ একটি সুদূরপ্রসারী ও কাঠামোগত সংস্কারের পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ আরও দৃঢ়ভাবে বিচার বিভাগীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক সপ্তাহের সফরে তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যান। আগামী ২৮ এপ্রিল আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থিত নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি কর্র্তৃক আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্যানেল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন। ৩০ এপ্রিল দেশে ফিরবেন তিনি।