শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

এপিএসদের দুর্নীতি হাসিনাকেও বিস্মিত করবে : রিজভী

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২২ এএম

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দুই উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) দুর্নীতির কাহিনি শুনলে শেখ হাসিনাও বিস্ময়ে তিনবার ডিগবাজি খেতে পারেন। হয়তো শেখ হাসিনাও বলতেন, তোমরা আমাদের বলো এখন দেখো কী অবস্থা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছাত্র সংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে, এতে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সমাজের কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি ছাত্রদের বিপথে পরিচালিত করছে, প্রলোভনে ফেলছে। ছাত্রদের কাজ মন্ত্রণালয়ে নয়, তাদের ঠিকানা ক্যাম্পাস।’ গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় ৬০ লাখ আসামি, মুক্তি কতদূর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় রিজভী এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু ছাত্ররা ভালো করতেন, যদি তারা রাষ্ট্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে সোচ্চার থাকতেন। কারণ অনেক অনাচার ঘটে গেছে রাষ্ট্রের মধ্যে। সেটাকে ঠিক করার জন্য ছাত্রদের কণ্ঠের শক্তি আরও তীব্র করার দরকার ছিল। যখন তারা ক্ষমতার অংশ হয়েছেন, তখন তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কেন তাদের এপিএসের নামে শতকোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আসবে? কেন তাদের বিরুদ্ধে বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠবে?’

শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা গর্ব করে বলেন, তার পিয়ন হেলিকপ্টার ছাড়া বাড়িতে যায় না। এ কথা বলে তিনি দুঃখ বা আফসোস করেন না, ভেতরে ভেতরে তিনি গর্ববোধ করেন। হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম বাড়ির একজন কাজের লোকের নামে তার লুট করে নেওয়া একটি ব্যাংক থেকে ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল।’

ফ্যাসিবাদের বিচারকদেরও বিচার হওয়া উচিত মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘তাদের বিচার নিশ্চিত করলে ভবিষ্যতে কেউ কোনো আদালতকে দিয়ে তার অশুভ ইচ্ছা ও অগণতান্ত্রিক নির্যাতন-নিপীড়ন মানুষের ওপর চালানোর সাহস পাবে না। এটাই হওয়া উচিত। যারা এই ফ্যাসিজমকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছেন, তাদের অন্যতম হচ্ছে আদালত। বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (চাকরিরত) এ রকম অসংখ্য নাম। এরা সবচেয়ে নির্দোষ যে নারী, জনগণের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে, শত নিপীড়ন-নির্যাতন ভোগ করে জনগণকে ছেড়ে যাননি, মাটিকে ছেড়ে যাননি, সেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় আসাদুজ্জামান তাকে সাজা দিয়েছেন। সেই বিচারকরা কেন শাস্তির আওতায় আসবেন না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিচারক, তাদেরও বিচার হতে হবে। আমরা নুরেমবাগ ট্রায়ালে দেখেছি। হিটলারের আদালতের যারা বিচারক ছিলেন, কোনো ধরনের যুক্তির কথা না শুনে হিটলারের কথায় লাখ লাখ কয়েদিকে পুড়িয়ে মারার যারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বিচার করেছেন, তাদের বিচার হয়নি? তাদের যদি বিচার হতে পারে, তাহলে আজকে শেখ হাসিনার আমলের ফ্যাসিবাদকে যারা প্রলম্বিত করেছেন, তাদের কেন বিচার হবে না। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সময় হওয়া ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা, তা আট মাস চলে যাওয়ার পরও আদালতের সেলফে থাকার কথা ছিল না। অতি দ্রুত এ মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘ডেনমার্কে ৫০ লাখ লোক বসবাস করেন। অথচ আমাদের দেশে বিএনপির ৬০ লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের সময় হওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের সব মামলা প্রত্যাহার হলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলাগুলো প্রত্যাহার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন প্রমুখ। সংগঠনের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত