রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

দাম্পত্যজীবনে সংকট ও সমাধান

আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ০৩:১১ এএম

দাম্পত্য মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। এটি যেমন ভালোবাসা ও করুণার বন্ধনে গড়া, তেমনি এতে ধৈর্য, আত্মত্যাগের মাধ্যমে পরীক্ষিত হতে হয়। একজন মানুষের প্রকৃত চরিত্র কখনো কখনো সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার দাম্পত্য জীবনে। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা, সংকট ও সমাধান সম্পর্কে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

সমস্যার উৎস : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয় সাধারণত পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব থেকে। সম্পর্কের শুরুতে যে কোমলতা ও মধুরতা থাকে, সময়ের প্রবাহে তা ধীরে ধীরে কমে যায়। একে অপরের চাওয়া-পাওয়ায় অমিল, স্বার্থপরতা, কর্র্তৃত্বপ্রবণতা অথবা অহংকার, সব মিলিয়ে জন্ম নেয় মানসিক দূরত্ব।

অনেক স্ত্রী আছে যারা সবসময় অভিযোগের সুরে কথা বলে, স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনে কৃপণতা করে। আবার কিছু স্বামী আছে যারা স্ত্রীর ভালোবাসার মর্যাদা দেয় না, স্ত্রীর প্রতি দুর্ব্যবহার করে, কখনো অন্য নারীর দিকে ঝুঁকে পড়ে। কোনো দাম্পত্য সমস্যা শুধু একতরফা নয়; বরং উভয়ের ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতাই এর মূল কারণ।

আত্মমর্যাদাহীনতা ও অবহেলা : অনেক স্ত্রী অভিযোগ করে, স্বামী তার কথা শোনে না, সম্মান দেয় না। আবার অনেক স্বামী বলে, স্ত্রী তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না, নিজের পরিবারের চেয়ে স্বামীর পরিবারের প্রতি তার শ্রদ্ধা কম। এ থেকে জন্ম নেয় এক ধরনের অবহেলা। এই সমস্যা সমাধানে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে হবে। পরস্পর পরস্পরকে গুরুত্ব দিতে হবে।

রাগের বশে কথা বলা : দাম্পত্য জীবনে রাগ অনিবার্য। কিন্তু রাগের মধ্যে যদি কথায় বিষবাক্য ঢুকে যায়, তবে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে সময় লাগে না। অনেক সময় কথার ঝাঁজ দাম্পত্যে স্থায়ী দূরত্ব সৃষ্টি করে। অনেক স্বামী রেগে গিয়ে স্ত্রীর আত্মসম্মানে আঘাত করে, আবার অনেক স্ত্রীও তেমনিই তির্যক বাক্যে স্বামীকে অপমান করে। এর প্রতিকারে কোরআন-সুন্নাহ আমাদের শেখায়, ‘যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, তারা আল্লাহর প্রিয়।’ (সুরা আলে ইমরান ১৩৪)

সন্দেহ ও অবিশ্বাস : দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত গড়ে ওঠে বিশ্বাসের ওপর। কিন্তু সেই বিশ্বাস যখন সন্দেহের আগুনে পুড়ে যায়, তখন জন্ম নেয় শিথিলতা, ক্লান্তি ও ভাঙন। একজন স্ত্রী যখন স্বামীর প্রতি অহেতুক সন্দেহ পোষণ করে বা স্বামী যখন স্ত্রীর মোবাইল, কথাবার্তা, চলাফেরায় অতিরিক্ত নজরদারি করে, তখন তা দাম্পত্য সুখকে বিষিয়ে তোলে। সমাধান একটাই, পরস্পরের মধ্যে গভীর যোগাযোগ স্থাপন।

অপরের হস্তক্ষেপ : অন্যের হস্তক্ষেপ অনেক সময় দাম্পত্য সম্পর্কের ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, দাম্পত্য দ্বন্দ্বের মীমাংসায় বাইরের লোক জড়ায়। অথচ দাম্পত্যে সমস্যা হলে স্বামী-স্ত্রীর দুপক্ষ থেকে নিরপেক্ষ সালিশ নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। (সুরা নিসা ৩৫)

ধর্মীয় অনুশাসন অবহেলা করা : দাম্পত্যজীবন শুধু সামাজিক বিষয় নয়, বরং এটি একটি ইবাদতও বটে। যখন একজন স্বামী নামাজ ছেড়ে দেন, উপার্জনে হালাল-হারামের বোধ হারান কিংবা একজন স্ত্রী দ্বীন-ধর্ম পালনে গাফেল হয়, তখন সেই পরিবারে আল্লাহর বরকত থাকে না। তাই দাম্পত্য জীবনে আল্লাহভীতি ও তাকওয়া অবলম্বন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্য সংকট উত্তরণের পথ সম্পর্কে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

কৃতজ্ঞতার চর্চা : প্রতিটি সম্পর্কেই কৃতজ্ঞতা ও স্বীকৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। একে অপরের অবদানকে সম্মান জানানো, ছোট ছোট ভালো কাজের প্রশংসা সম্পর্ককে দৃঢ় করে।

সহনশীলতা ও ক্ষমার মানসিকতা : ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া, আর অন্যজন ভুল করলে ক্ষমা করে দেওয়া এই দুটি গুণ দাম্পত্য জীবনের জটিলতা অনেকটাই সহজ করে দিতে পারে। এটি কোনো কৌশল নয়, বরং ভালোবাসারই প্রকাশ।

আন্তরিক যোগাযোগ : পরস্পরের অনুভূতি জানার জন্য প্রতিদিন কিছু সময় একান্তে কাটানো, একে অপরের কথা মন দিয়ে শোনা এবং মন খুলে ভাব বিনিময় করা, এসবই সম্পর্ককে গভীর করে।

দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা : যে সম্পর্কের ভিত রচিত হয় দায়িত্ববোধ দিয়ে, সেটি সহজে ভেঙে পড়ে না। দাম্পত্য জীবনে দায়িত্বশীল আচরণ মানেই হলো একটি সুখী ও কল্যাণময় পরিবার গড়ে তোলা।

আল্লাহভীতি : যেখানে আল্লাহর ভয় থাকে, সেখানে অন্যায়, অবিচার বা অপমানের জায়গা থাকে না। দাম্পত্য জীবনে বরকত তখনই আসে, যখন উভয়েই আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে জীবনযাপন করে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত