বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

স্বজন ভেবে লাশ নিয়ে  অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন

আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:৩৮ এএম

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় অজ্ঞাতনামা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ওই লাশটি নিজেদের স্বজনের দাবি করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় একটি পরিবার। বাড়িতে নিয়ে গোসল শেষে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তারা জানতে পারেন এই লাশ তাদের স্বজনের নয়। যাকে মৃত ভেবে তারা লাশ শনাক্ত করেছেন, তিনি আসলে বেঁচে আছেন। এরপর লাশটি থানা-পুলিশের কাছে ফেরত দিতে চাইলে পুলিশ তা না নিয়ে দাফনের পরামর্শ দেয়। সে অনুযায়ী লাশটি দাফনও করা হয়েছে।

গত রবিবার জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে দাফন করা লাশটি কার। এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবেই দাফন করা হয়েছে। দাফনের আগে লাশের ছবি তুলে রাখা হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, যে ব্যক্তি মারা গেছেন ভেবে লাশ শনাক্ত করা হয়েছিল, তার স্ত্রী-সন্তান নেই। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে জীবনযাপন করেন। তার ভাই লাশটি শনাক্ত করেছিলেন। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তি বেঁচে আছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার জকিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মারা যাওয়া ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের বাবুল আহমদ সেটি তার ভাই সাবু আহমদের (৫৫) বলে শনাক্ত করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার রাতে বাবুল আহমদ ও তার মামাতো ভাই উজির উদ্দিন লাশ বাড়িতে নিয়ে যান। রবিবার সকালে দাফনের প্রস্তুতির সময় উপজেলার গঙ্গাজল এলাকা থেকে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানান, সাবু আহমদ জীবিত এবং তিনি গঙ্গাজল বাজারে অবস্থান করছেন। এরপর উজির উদ্দিন সেখানে গিয়ে সাবুকে জীবিত দেখতে পান।

এ ব্যাপারে বাবুল আহমদ জানান, তার ভাই সাবু আহমদ ভবঘুরে জীবনযাপন করেন। বাড়িতে খুব একটা থাকেন না। বিভিন্ন জায়গায় রাতযাপন করেন। মৃত ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে সাবু আহমদের চেহারা হুবহু মিলে যায়। তাই তিনি ভেবেছিলেন সাবু মারা গেছেন এবং সেজন্য হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে দাফনের আয়োজন করেন। পরে সাবু আহমদের সন্ধান পাওয়ায় তারা লাশ পুলিশের কাছে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফনের অনুমতি দেয়। সে অনুযায়ী স্থানীয় এতিছানগর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।      

সুলতানপুর ইউপি সদস্য শামীম আহমদ জানান, স্বজনরা ভুল করে সাবু আহমদ মারা গেছেন ভেবে লাশ বাড়িতে নিয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন সাবু বেঁচে আছেন। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে হাসপাতাল থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ হাসপাতালে যাওয়ার পর জানানো হয়, লাশ শনাক্ত হয়েছে এবং আত্মীয়স্বজনরা নিয়ে গেছেন। পরে আবার জানানো হয়, যারা লাশ নিয়েছেন তারা ভুল করেছেন। তাদের স্বজন বেঁচে আছেন এবং লাশ ফেরত দিতে চান। এ অবস্থায় লাশটি দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোনো আত্মীয়স্বজনের সন্ধান পেলে কিংবা কেউ অভিযোগ দিলে আইনানুগ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত