আগের ম্যাচেই স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের এলিট মঞ্চে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তাই শনিবারের ম্যাচটি ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষার। তারপরও বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ অপরিবর্তিত রাখলেন সেরা একাদশ। আর সেরা দলটা প্রথমার্ধেই দুর্বল প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তানের জালে করল গোলৎসব। গুনে গুনে সাত গোল করা বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আর সংখ্যাটাকে বাড়াতে পারেনি। তারপরও বড় জয়েই স্বপ্নের এশিয়ান কাপ বাছাই অভিযান শেষ করল বাংলাদেশ শতভাগ জয়ের রেকর্ড গড়ে। তারা ‘সি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় ১২ দলের এশিয়ান কাপে প্রথমবারের মতো দেখা যাবে বাংলাদেশকে।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে শনিবার ছিল ‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ। আগেই লক্ষ্যপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দেখার ছিল বাংলাদেশ কোচ কেমন একাদশ সাজান। অনেকেরই ধারণা ছিল সুযোগ পেয়ে ব্রিটিশ কোচ তার সাইড বেঞ্চ পরখ করে দেখবেন। তবে শুরুর একাদশে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি অভিজ্ঞ কোচ। চেয়েছেন শুরুতেই আগের দুই ম্যাচের একটিতে হারা এবং আরেকটিতে ড্র করা তুর্কমেনিস্তানকে শেষ করে দিতে। তাই মিয়ানমারের বিপক্ষে খেলা একাদশকেই এই ম্যাচে নামিয়েছিলেন তিনি। সুফলও পেয়েছেন। প্রথমার্ধেই শিষ্যরা উপহার দিয়েছেন সাত গোল। দলের জয়ে জোড়া গোল উপহার দেন শামসুন্নাহার জুনিয়র ও আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা। একটি করে গোল করেন স্বপ্না রানী, মনিকা চাকমা ও তহুরা খাতুন। বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের বাছাই অভিযান। মিয়ানমারকে বাটলারের দল হারায় ২-১ ব্যবধানে। এরপর শেষটাও তারা জয়ে রাঙিয়েছে ৭-০ জয়ে।
শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবলে দুর্বল তুকর্মেনিস্তানকে কোণঠাসা করে ফেলা বাংলাদেশ প্রথম গোলের দেখা পায় চতুর্থ মিনিটে। তহুরার সাজিয়ে দেওয়া বলে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন স্বপ্নারানী। দুই মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। আফিদা খন্দকারের হেড তুর্কমেনিস্তান গোলকিপার ফেরালেও ফিরতি বল বক্সের জটলায় পেয়ে নিখুঁত প্লেসিংয়ে গোল করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। ম্যাচে ১৩ মিনিটে আবারও গোল পায় বাংলাদেশ। এবার ডান দিক থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্রসে আলতো টোকায় গোলের আনুষ্ঠানিকতা সারেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। এর কিছুক্ষণ বাদেই বক্সের ওর থেকে বল পেয়ে জায়গা তৈরি করে অসাধারণ গোলে দলকে ৪-০ লিড এনে দেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা। ১৭ মিনিটে গোলের দেখা পান মিয়ানমারের বিপক্ষে জোড়া গোল করে দলকে এশিয়ান কাপে নিয়ে যাওয়া ঋতুপর্ণা চাকমা। বক্সের বাইরে থেকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিয়েছিলেন এই প্লে-মেকার। তুর্কমেনিস্তান কিপার আইশা আমানবেরদুয়েভার হাত ফসকে বল চলে যায় জালে। এর শাস্তিও এই কিপারকে পেতে হয়েছে কয়েক মিনিট পরেই। তাকে উঠিয়ে তুর্কমেনিস্তান কোচ মাঠে পাঠান এলনুরা মাকসুয়েতোভাকে। যদিও প্রথমার্ধে বাকি দুই গোল হজম করেন তুর্কমেনিস্তানের বদলি এই কিপার। মাঠে এসেই তাকে গোল হজম করতে হয়। বাংলাদেশের একটি আক্রমণ ফিরিয়ে দিলেও ঠিকঠাক বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। ঋতুপর্ণা বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্রস ফেলেন গোলমুখে। তা থেকে গোলের আনুষ্ঠানিকতা সারেন তহুরা খাতুন। আর ৪০ মিনিটে বক্সের ওপর থেকে ঋতুপর্ণার বাম পায়ের শট নতুন গোলকিপারের গ্লাভস ছুঁয়ে জালে জড়ায়।
প্রথমার্ধেই সাত গোলের লিড নেওয়ায় বিরতি থেকে ফিরেই বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। বিশেষ করে আক্রমণের মূল দায়িত্বে থাকা ঋতুপর্ণাকে তুলে নেন তিনি। সাইড বেঞ্চারদের সুযোগ দিতেই তিনি আরও বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। তাতে আক্রমণের গতি কমেনি মোটেও, তবে ফিনিশিং হয়নি ঠিকঠাক। তাই পুরো ৪৫ মিনিট বাংলাদেশকে গোলশূন্য রাখতে পারার কৃতিত্ব সঙ্গী হয় তুর্কমেনিস্তানের।
বিরতি থেকে ফিরেই বাটলার নিয়মিত কিপার রুপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা ও শিউলি আজিমকে তুলে স্বপ্নারানী মন্ডল, উমেহ্লা মারমা ও হালিমা আক্তারকে নামিয়েছিলেন। নতুনরা নেমেও প্রাধান্য বিস্তার করে গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। ৫৭ মিনিটে ভালো জায়গা থেকেও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। ফলে তার হ্যাটট্রিকের সুযোগ নষ্ট হয়। একটু পর মনিকার দূরপাল্লার শট দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় রুখে দেন তুর্কমেনিস্তান গোলকিপার। চার মিনিট পর স্বপ্নাকে তুলে শাহেদা আক্তার রিপাকে নামান বাটলার। এরপর শামসুন্নাহার জুনিয়রের জায়গায় নামেন সুলতানা। ৮০ ও ৮২ মিনিটে মারিয়া মান্ডার দুটি চেষ্টা রুখে দেন তুর্কমেনিস্তানের গোলকিপার। তাতে সাত গোলের জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তিন ম্যাচে তিন জয়, ১৬ গোলের বিপরীতে এক গোল হজম, সব মিলিয়ে দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসের সেরা একটা অভিযান শেষ করে বাংলাদেশ দল ফিরবে আগামীকাল। ফিরেই তাদের শুরু হবে মার্চে মূল পর্বের বড় পরীক্ষার প্রস্তুতি।